Wednesday, September 13, 2017

বাংলা যখন বিশ্ব সেরা রাস্তাঘাট, যানবাহন৩

সমসাময়িকদের বর্ননা থেকে যদিও একটা ধারণা তৈরি করা যায়, সব থেকে ভাল হল ১৭৯১/১১৯৮ সালে বাংলায় আসা বালথাজার সলভিনের আঁকা যানবাহনের উদাহরণ থেকে। এই সূত্রে আপনারা ওয়েবসাইটটি দেখতে পারেন http://www.laits.utexas.edu/solvyns-project/ । যদিও সময়টি পলাশীর প্রায় অর্ধশতক পরে, কিন্তু আমাদের ধারণা সেই যানবাহনগুলি আসলে পলাশীর আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে। বালথাজার সলভিনস সে সময় যে সব যানবাহনের ছবি এঁকেছেন - যেমন বাংলার পালকি আর নৈকোর বৈচিত্র্য, তা তাক লেগে যাওয়ার মতই।

স্থলপথের যানবাহন হল বলদ আর ঘোড়ায় টানা গাড়ি, পালকি আর সুখাসন গতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হত। পণ্য পরিবহনের জন্য বলদ ও ঘোড়ায় টানা গাড়ি ছাড়াও হাতি আর উটের টান গাড়ি ব্যবহার হত। বাংলাদেশে অবশ্য ঘোড়ার গাড়ি কম। খুলাসাৎ রচয়িতা সুজন ভাণ্ডারী জানাচ্ছেন বাংলাদেশে নৌকোর সংখ্যা হল ৪৪০০। তাদের নামগুলি, বালাম গোধা, স্তুপ, সারেঙ্গা, সাম্পান ও কেঁদা। করম আলি মুজফরনামায় ঘুরাব, স্লুপ, বজরা, মাসুয়া, পাতিলা, উলাখ, জালিয়া, ময়ূরপঙ্খী, ঘারদূর, কোষা, চলকর, ভাওলিয়া, পাঁসুলি, পলবর প্রভৃতি নৌকোর কথা বলেছেন, সেগুলির অনেকটা আবার সলভিনসের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়।

জেমস রেনেল বাংলার ডাকচৌকি আর ডাক রাস্তার কথা বিশদে বলেছেন। রাস্তাগুলোর মাঝে ডাক সরাইখানা আর ডাক দেওয়া-নেওয়ার চৌকি ছিল। এখানে পথিকেরা এবং হরকরারা বিশ্রাম করত, ঘোড়া, গাড়ির বলদ জল ও সেবা পেত। সংবাদ দেওয়া নেওয়ার জন্য চৌকিগুলো ব্যবহার হত। ডাক বাহকেরা এই চৌকিতে ডাক বিনিময় করতেন। কলকাতা থেকে অন্তত ছটা রাস্তা বিভিন্ন দিকে গিয়েছিল, এগুলি হল, ১) মুর্শিদাবাদ হয়ে রাজমহল হয়ে বক্সার পর্যন্ত, ২) যশোহর ঢাকা, ৩)মুর্শিদাবাদ হয়ে দিনাজপুর, ৪) বর্ধমান, ৫) মেদিনীপুর হয়ে বালেশ্বর, ৬) কুলপি।

সারা দেশে ডাক আদানপ্রদানের ব্যবস্থা ছিল। বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের সংবাদ পাঠানোর সুবিধে ছিল। ডাক হরকরা ছিল দুধরণের পায়ে হাঁটা নাম তাপ্পি বা সাধারণ হরকরা আর অশ্বারোহী হরকরা, যাদের নাম কসিদ। কসিদরা দিনে পঁচিশ তিরিশ মাইল পার হতে পারত। বিশেষ প্রয়োজনে এরা আরও দ্রুতগতিতে রাস্তা পাড়ি দিতে পারত। কাশিমিবাজার থেকে মাত্র সাতাশ ঘন্টায় কলকাতায় খবর পাঠাবার নজির এই যুগেই আছে। এস সি হিল-এর বেঙ্গল সূত্র জানতে পারছি, নবাব ১৭৫৬/১১৬৩ সালে কাশিমবাজার কুঠী দখল করেছিলেন। নবাব দরবারের ইংরেজ কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটস এই সংবাদ কলকাতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন পরের দিন। তবে সাধারণ ডাকের সময় লাগত দু থেকে চার দিন। বিশেষ পরিস্থিতিতে আরও তাড়াতাড়ি সংবাদ পাঠাবার ব্যবস্থা করা যেত। মুর্শিদাবাদ থেকে রংপুর যেতে কসিদদের লাগত চারদিন। যে জমিদারদের মধ্যে দিয়ে কসিদরা পার হতেন, সেই জমিদারদের দায় থাকত হরকরাদের আহার বাসস্থান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস ইত্যাদি ব্যবস্থা করে দেওয়ার। তাদের নিরাপত্তা আর নিরাপদ ভ্রমনের দায় ছিল জমিদারদের। সরকারি কর্মচারীরাও সব বিষয়ে নজরদাবি করত বলছেন বোলটস তার কনসিডারেশনসে।

No comments: