Wednesday, September 13, 2017

বাংলা যখন বিশ্ব সেরা - রাস্তাঘাট, যানবাহন১

ভ্যান্ডেনব্রুকের মানচিত্রে সেকালের যানবাহন আর যোগাযোগের একটা ছবি পাওয়া যায়। সে সময়ের সড়ক পরিবহনের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নাম পাই। বাণিজ্যের পণ্য পরিবহনের জন্য রাস্তা ও নদীপথ উভয়েই ব্যবহার করা হত। এখন যেমন (এ বাংলায়)ব্রিটিশদের দেখানো উন্নয়নের পথ ধরে নদীপথ পরিবহন প্রায় অবহেলিত, পলাশীর কাছাকাছি সময়ে সে অবস্থা ছিল না প্রায়।

বাংলার তিনটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র হল কলকাতা, মুর্শিবাদাদের ভগবানগোলা আর ঢাকার রাজনগর। এগুলোর সঙ্গে উত্তরের নেপাল ভূটান হয়ে চিন, দক্ষিণেজঞ্জাম জেলা, দক্ষিণ অশ্চিমে সিংভূম, পালামৌ আর ছোটনাগপুর, পশ্চিমে কাশী ও গাজীপুর, উত্তরপশ্চিমে বিহারের বাতিয়া, উত্তরপূর্বে শ্রীহট্ট, জয়ন্তিয়া এবং খাসপুর, দক্ষিণ পূর্বে চটতগ্রাম, রাজঘাট এবং জুলকুদ্দার সংযোগ ছিল। তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রও সড় আর নদীপথে প্রধান বা অপ্রধান কেন্দ্রর সঙ্গে যুক্ত ছিল।

বর্ধমান ততটা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র না হলেও দেশের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে এর বাণিজ্য যোগাযোগ ছিল। বর্ধমান থেকে দুটো শহর চন্দননগর হয়ে কলকাতা গিয়েছিল। পুরনো ব্যবসায়িক রাস্তাকে নতুনভাবে তৈরি করা ব্যবসায়িক রাস্তা, যাকে ইংরেজরা গ্রাণ্ড ট্রাঙ্ক রোড নাম দিয়েছিল, তার সঙ্গে বাংলার বিভিন্ন এলাকা যেমন ধনেখালি, তমলুক, বজবজ, নদীয়া, জলঙ্গী, রাজমহল, রাধানগর, চন্দকোণা ও গঙ্গা ও ভাগীরথীর সঙ্গমস্থলের ফারুকাবাদের রাস্তা এসে মিশত। বর্ধমান-মেদিনীপুরের যোগাযোগের রাস্তার নাম ছিল বাদশাহী সড়ক। নবাবদের সৈন্যবাহিনী ওডিসায় গতায়াত করত এই রাস্তা ধরে, অবশ্যই বাণিজ্য হত। কাশিমবাজারের সঙ্গেও নানান এলাকার যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। সেখান থেকে পাটনা পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তার কথা উল্লিখিত আছে। কাশিমবাজার থেকে রাস্তা বর্ধমান, জলঙ্গী, ঢাকা, রামপুর, বোয়ালিয়া, মীনখোত, দিনাজপুর, বালিটুঙ্গি, বীরভূম, মালদা, রংপুর-রাঙ্গামাটি-গোয়ালপাড়া, বীরপীটি, কাঁদি আর সুরুলের দিকে গিয়েছিল।

জেলাগুলোর মধ্যের রাস্তার পরিচয় পাওয়া যায় যেমন বীরভূমে নগর থেকে দেওঘর, কুমিরাবাদ, মালুটি আর নগর হয়ে মোরগ্রামের রাস্তা। নগর থেকে তিন্টে রাস্তা বেরিয়ে সিঊড়িতে শেষ হয়। এছাড়াও কৃষ্ণনগর, ইলামবাজার, উখড়া, পঁচেট(রাণীগঞ্জ) ও সুপুর পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল। সিউড়ি থেকে গোমী, বাহারি, সুরুল, কর্ণগড় ও লাখনপুর পর্যন্ত রাস্তা গিয়েছিল। এছাড়াও বহু ছোটখাট রাস্তা এই বড় রাস্তাগুলোয় সংযোগ রাখত।

কলকাতা, হুগলি, মুর্শিদাবাদ আর ঢাক্র মধ্যে একাধিক প্রশস্ত রাজপথ ছিল। এ গুলি যে কোন ঋতুতে ব্যবহার করা যেত। এমন কি বর্ষাকালেও। কলকাতা থেকে সাঁওতাল পরগণার পঁচেট পর্যন্ত একটা রাস্তা ছিল। যদিও অসংখ্য নদি, নালা বিল, খাল হাওড় বাংলাকে জালের মত ঘিরে রেখেছে, তবুও সড়ক যোগাযোগ ছিল বেশ উন্নত। কলকাতা থেকে দুটি রাস্তা ঢাকা আরও দুটি বাখরগঞ্জ পর্যন্ত গিয়েছ্যিল। আরও দুটি রাস্তা চট্টগ্রাম আর একটি ঢাকা হয়ে শ্রীহট্ট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মেঘনার পূর্ব দিকের রাস্তাগুলির অবস্থা ভাল ছিল না। রেনেলের জার্নাল আর ডেস্ক্রিপশন অব রোডস ইন বেঙ্গল এন্ড বিহার থেকে পাচ্ছি লখিপুর(নোয়াখালি) থেকে চন্দরগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তাগুলো অনেক যায়গায় ভাঙ্গা আর চন্দরগঞ্জ থেকে কালিন্দা পর্যন্ত অঞ্চল নিচু বলে রাস্তা খারাপ হয়ে পড়ে থাকত। কালিন্দা থেকে ফেণী পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ। ফেণী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রাস্তার মাঝে প্রায়ই নালা পড়ত এবং বেশিরভাগ নালায় সেতু থাকতপ্না বলে বর্ষায় এগুলি পার হওয়া দুঃসাধ্য ছিল।
(চলবে)

No comments: