Saturday, September 30, 2017

জমির বিলিবন্টন ও রাজস্ব আদায়ের পদ্ধতি৬

আকবরের প্রশাসনিক ও রাজস্ব পরিকল্পনা

জাবতি নিয়মে খাজনা ধার্য দুটি জিনিসের ওপর নির্ভর করত
ক) দস্তুর(দস্তুর কি এর আগে বিশদে বলা হয়েছে – উত্তম, মধ্যম এবং সাধারণ জমির বিঘা প্রতি গড় ফলন হার বার করা হত। তার গড় ফলনের একতৃতীয়াংশ সরকারি প্রাপ্য খাজনা। প্রথম দিকে এই হার দিল্লি থেকে তৈরি হত, ফলে তাতে রাজস্ব আদায়ে বিলম্ব হত। বিলম্ব রুখতে আকবর ১৫৭১-১৫৮০ এই দশ বছরে বিভিন্ন ফসলের গড় মূল্য নিয়ে দস্তুর তৈরির আদেশ দিলেন, ফলে দস্তুর তালিকা আর প্রতিবছর করতে হল না। বিভিন্ন অঞ্চল বা সুবায় বিভিন্ন শ্রেণীর শস্যের জন্য বিশদ দস্তুর থাকত।

প্রতিবছর চাষের মরশুমে রাজস্ব কর্মচারীরা আগের বছরের উৎপাদন অঙ্ক মিলয়ে কোন কোন নতুন জমি চাষ করা হল মেপে পরিমান নির্নয় করতেন। কোন গ্রামের সম্পূর্ণ জমি মাপা(কিস্তোয়ার) হলে মুকদ্দম(গ্রাম প্রধান) তা মুনতাখাব তালিকায় লিখতেন, এবং দুটি নকল করে আলমগুজারের কাছে প্রতিসপ্তাহে পাঠিয়ে দিতেন। তাতে লেখা থাকত গ্রামের নাম, মুকদ্দমের নাম, কৃষকের নাম, শস্যের নাম, জমির পরিমান ইত্যাদি। তাতে চাষীর মোট জমির থেকে পতিত জমির(নাবুদ) পরিমান বাদ দিয়ে কর্ষিত জমি(বুদ) পরিমান নির্নয় করা হত। তারপর বিতিকিচি তালিকা দেখে দস্তুর মিলিয়ে রাজস্ব নির্নয় করতেন। ফসল কাটার আগে প্রত্যেক চাষীকে তার দেয় রাজস্বের অঙ্ক জানিয়ে দেওয়া হত।)

খ) দ্বিতীয়টি হল, গ্রামের বিভিন্ন জমির পরিমানের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হত। এটা করা হত জরিপ পদ্ধতিতে। জাবতি জরিপ পদ্ধতিতে মাপজোক করা হত একটা বাঁশ দিয়ে, বাঁশের দুদিকে হাতল থাকত। যে সব জরিপ কর্মী কাজ করতেন তাদের পারিশ্রিমিক ছিল বিঘা প্রতি ১ দাম। নিরাপত্তা সরকার থেকে করা হত। আহারের খরচও পেতেন। আকবরের মাপার একক ছিল এলাহি গজ। ৩৬০০ বর্গগজে এক বিঘা। জাবতি পোলজ জমির ক্ষেত্রে সারা বছর প্রযোজ্য হত। পারৌতিতে যখন চাষ হত তখন পুরো খাজন ধার্য হত। চাঁচর বা বানজর জমিতে নামমাত্র রাজস্ব নেওয়া হত। জাবতি প্রথায় যদি দেখা যেত খাজনা ধার্যের পরে প্রাকৃতিক কারণে শস্য হানি ঘটেছে, তাহলে খ্যাজনা রেহাই দেওয়া বা কমানো হত।

৩) নসক – এই নিয়মে সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে কৃষকদের থেকে খাজনা নেওয়া হত। অনেকটা জমিদারি পদ্ধতিতে এই আদায় হত। ফসল কত হত দেখা হত না। বাংলা, বেরার, কাশ্মীর এবং গুজরাটের কোন অংশে নসক প্রথায় খাজনা আদায় করা হত।নসকে জমি মাপার দরকার হত না, দস্তুর তৈরি হত না বা মুকদ্দমের প্রয়োজন ছিল না। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চাষ নষ্ট হলে খাজনা মকুবের ব্যবস্থা ছিল। পতিত জমির জন্য কোন খাজনা নেওয়া হত না।


আকবরের সময় জমির মাপ
এক বিঘে হত ৩৬০০ বর্গগজে। এক গজ ছিল ৪১ আঙ্গুল(১ আঙ্গুল = ৩/৪ ইঞ্চি), আজকের আড়াই ফুটের একটু বেশি। এই গজকে বলা হত এলাহি গজ। ১ বিঘার ২০ ভাগের ১ ভাগকে বলা হত বিশওঁয়া(কাঠা) বা ১৮০ বর্গগজ। ১ বিশওঁয়ার ২০ ভাগের ১ ভাগকে বলা হত ১ বিশওঁয়াশা অর্থাৎ ৯ বর্গগজ।

তাঁর সময়ে ৯ বিশঁওয়া বা ৮১ বর্গগজের জমি খরাজ মুক্ত ছিল, কোন রাজস্ব দিতে হত না। কিন্তু কেউ যদি ১০ বিশওঁয়া জমি বন্দোবস্ত নিতেন তার ১ বিশওঁয়ার জন্য রাজস্ব দিতে হত।


এর আগে জানিয়েছি আকবরের সময়ে জমি মাপা হত লম্বা বাঁশের সাহায্যে। তার আগে দড়ি মাপে বেড়ে যেত বলে এই ব্যবস্থা। এটা এক জরিপ।

No comments: