Wednesday, September 27, 2017

প্রযুক্তির গুণাগুণ আর চরিত্র

গত বছর দীপঙ্করদা লিখেছিলেন কিছু প্রযুক্তি ভাবনা-
1.ভারতে এখনো সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি..তবু সেখানে কোনো না কোনো উৎপাদন ব্যবস্থা,যা হয়তো হাজার বছর ধরে চলে আসছে, টিকে আছে বিদ্যুৎ এর ব্যবহার ছাড়াই. তাই যে প্রযুক্তি ব্যবহারে বিদ্যুৎ অপরিহার্য নয় সেটাকে আমরা গ্রামীণ বা পরম্পরাগত প্রযুক্তি বলছি. বিদ্যুৎ আবিষ্কারের অনেক আগে স্রেফ একটা সুতো কাটার কাঠি ও বাঁশের তাঁত দিয়ে বাংলার কারিগররা বিশ্ব জয় করেছে ..
২. যে প্রযুক্তি 'কারিগর' কে শ্রমিকে পরিণত করে, তার জ্ঞান আত্মসাৎ করে তাকে কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য করছে, যে প্রযুক্তি কৃষকের কৃষি জ্ঞান অস্বীকার করে তাঁকে পশ্চিমি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করছে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতির স্বার্থে, সেটাকে কি আমরা 'আধুনিক' প্রযুক্তি
বলবো? পশ্চিমের সব প্রযুক্তিই বর্জন করবো সেটা নয়. যে প্রযুক্তি আমার গলা কাটবে তার বিরোধিতা করবো.
3. এই বিশ্বায়নের যুগে পশ্চিমি শিক্ষার সুবাদে স্বদেশী, বিদেশী প্রযুক্তি বলে আলাদা কিছু হয় বলে মনে হয়না. প্রযুক্তিকে দুটো ভাগে স্রেফ ভাগ করা যেতে পারে 'যে প্রযুক্তি বিদ্যুৎ নির্ভর নয়, কারিগর নির্ভর, স্থানীয় জ্ঞান নির্ভর' আর 'যে প্রযুক্তি বিদ্যুৎ নির্ভর, আন্তর্জাতিক, স্থানীয় জ্ঞান নির্ভর নয়'. প্রথম ধরণের প্রযুক্তি আমি চাইবো আরো শক্তিশালী হোক. আর দ্বিতীয় ধরণের প্রযুক্তির ব্যবহারে আমি সিলেক্টিভ হবো. যে আধুনিক প্রযুক্তি আমার বন্ধু সেটাকে গ্রহণ করবো, যে বিশ্ব পুঁজির বন্ধু, তার বিরোধিতা করবো.
4.আজ লড়াইটা মূলত 'আধুনিক প্রযুক্তি যে আমার বন্ধু নয়' বনাম আমার 'গ্রামীণ প্রযুক্তি যা স্থানীয় জ্ঞান নির্ভর', এ দুয়ের মধ্যে.
5. আমরা যদি বলি 'দুনিয়ার মজদুর এক হো' তা হলে বিশ্বপুঁজির বিরোধিতার জায়গা থাকেনা ..নীতিগত ভাবে আমাকে 'বিশ্ব পুঁজি এক হো' স্লোগানটা মেনে নিতে হয় কারণ 'আধুনিক' উৎপাদন ব্যবস্থায় পুঁজি ও
শ্রম অকে অন্যের পরিপূরক...
6.তাই আজ স্লোগান উঠুক 'দুনিয়ার কারিগর এক হো'! বিশ্ব পুঁজির বিরোধিতায় সেটাই আমাদের একমাত্র হাতিয়ার.
----
এর সঙ্গে ওয়াপাগের সংযোজন
আমরা প্রযুক্তির গুণাগুণ আর চরিত্রও দেখব।
- সেটি কি কেন্দ্রিভূত প্রযুক্তি না কি সর্বজন(ব্যক্তি/পারিবারিক কারিগর বা সামাজিক) ব্যবহারের উদ্যেশ্যে বিকশিত।
- সেটির নিয়ন্ত্রণ কার হাতে - কয়েকজনের হাতে না কি সমাজের বা কারিগরের বা ছোট উতপাদকের হাতে।
- যন্ত্রটি খারাপ হলে সারান কে? কারিগর/স্থানীয় মানুষ না কি বিশেষভাবে শিক্ষিত যন্ত্রের মালিকদের পক্ষ থেকে নিযুক্ত কিছু ভদ্রলোক?
- যিনি এটি ব্যবহার করছেন, তিনি কি তার পেটেন্টমূল্য দিতে বাধ্য হন?
- এই প্রযুক্তির উদ্দেশ্য কি - সামাজিকভাবে মূল্যমান তৈরি করা না অবাধ লুন্ঠন/হত্যা বা বাজার দখলের জন্য অতি উৎপাদন তৈরি করা?
- প্রযুক্তির জ্ঞান অবাধে/সহজে বংশপরম্পরায়, সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া যায় কি না।
- যিনি/যাঁরা এটি ব্যবহার করছেন তিনি/তাঁরা এই প্রযুক্তির সঙ্গে ঘর করেন কি না?
- আর এটি বিশ্বায়িত কি না - অর্থে - এটি বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ কি না - বিশ্বের যে কোন যায়গায় চালানো যায় কি - Dipankarদা যাকে বলছেন প্রযুক্তি বিদ্যুৎ চালিত কি না, এ্টা তারই অন্যরূপ।
অথচ পশ্চিমি প্রযুক্তিকে বিশ্বপ্রযুক্তি বলা হচ্ছে - অথচ এটি সরাসরি বিদ্যুৎ নির্ভর - দেশজ প্রযুক্তি কোনভাবেই বিদ্যুৎ নির্ভর নয়, বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ - বিশ্বের যে কোন যায়গায় মধুমঙ্গল মালাকারকে বসিয়ে দিলে তিনি তার যে কোন উতপাদন অবলীলায় তৈরি করে দেবেন - কিন্তু বিদ্যুৎ নির্ভর শিল্পে তা হবে বলা যায় না।
মন্তব্যগুলি
Biswendu Nanda আমরা কারা এই সাধারণ প্রশ্নটা জানতে চেয়েছি
পরিচালনা করুন
Souvik Ghoshal আমার চলবে না বললাম যে। আমরা বলিনি তো।
পরিচালনা করুন
Souvik Ghoshal আমায় তো বৈদ্যুতিক বৈদ্যুতিন অনেক জিনিস ব্যবহার করতে হয়। স্বভাবে অভ্যাসে। এমনকী যানবাহন সবই প্রায় নানা ধরনের যন্ত্রনির্ভর। যন্ত্রবিহীন যানবাহন পাই ই না। কি করবো। তবে অস্বীকার করবো না ছোটবেলায় টগবগ টগবগ ঘোড়া ছুটিয়ে চলাচলের একটা ইচ্ছে হতো নানা রূপকথার গল্প শুনে।
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda যাদিও এগুলি চিমিটি কাটা লেখা। 
বামপন্থা(অন্তত বাংলার) বিদ্যুৎ নিরপেক্ষতা শব্দটা বুঝবেই না, ঐতিহাসিকভাবে, পশ্চিমের প্রতি নিবেদনময়তার চরিত্রগতভাবে।

No comments: