Saturday, September 30, 2017

জমির বিলিবন্টন আর রাজস্ব আদায়ের পদ্ধতি৩

তবে আঞ্চলিক নানান রীতি চালুছিল
১) উৎপন্ন ফসলের অংশ
এটা আগে আলোচিত হয়েছে - অনেকটা আধিয়ার বা ভাগচাষীদের মত। এই ভাগাভাগিতে চাষীদের সুবিধে ছিল প্রকৃত ফলনের ওপর চাষী তার খাজনা শোধ করলে, ভবিষ্যতে আর ধার বকেয়া কিছুই থাকত না।
২) জরীপ পদ্ধতিতে অর্থাৎ জমি মাপ করে, জমির পরিমান নির্ধারণ করে খাজনা ধার্য করা - এই উপায়ে বিঘা প্রতি প্রতিটি ফসলের ফলনের হার সরকার আগে থাকতেই তৈরি করত। পরে চাষীর বন্দোবস্ত নেওয়া জমির পরিমান স্থির করে তার জমির উৎপন্ন ফসলের হিসেব বার করা হত। এর একতৃতীয়াংশ সরকার খাজনা নিত। ধরা যাক কোন পরগনার আমন ধানের বিঘা প্রতি ফলনের সরকারি হার হল ২০ মণ। কারোর যদি দশ বিঘা জমি থাকে, ঐ পরিমান জমিতে সের যদি আমন ধান ফলিয়ে থাকে, তবে ধরে নেওয়া হবে সেই জমিতে ২০০ মণ ধান হবে। এক্ষেত্রে ঐ চাষী সরকারকে মোট উৎপন্নের ২/৩ অংশ খাজনা হিসেবে ধান দেবে।
৩) চুক্তিমত খাজনা আদায় – এছাড়া ছিল চুক্তি খাজনা। কোন কোন পরগণায় সরকার কৃষকের সঙ্গে বন্দোবস্ত দেওয়া জমির জন্য চুক্তিমত বাৎসরিক খাজনা ঠিক করত। যেমন ধরা যাক কোন রায়ত তার কুড়ি বিঘে জমির ওপর বাৎসরিক খাজনা দেবে ঠিক হল বিঘে প্রতি ৫ টাকা। মোট ১০০টাকা। জমিতে যতই ফসল ফলুক সেটা পাটোয়ারি বা মুকদ্দম দেখতে যাবে না। সরকার ঐ জমি থেকে ১০০টাকা পেয়েই খুশি।
৪) লাঙ্গল হিসেবেও খাজনা আদায় কোন কোন স্থানে চালু ছিল। এটা ভারতীয় পুরোনো পদ্ধতি। এক একটা লাঙ্গল আর উৎপাদন সরঞ্জামকে উৎপাদনের ক্ষমতা হিসেবে ধরা হত। কোন এলাকায় কোন রায়তের ১০ খানা লাঙ্গল আছে এবং তার জমি ৩০০ বিঘে। সরকার লাঙ্গল পিছু কর ধার্য করে বার্ষিক ১৭ টাকা। তিনি যাই চাষ করুণ না কেন সরকারকে ১৭০ টাকা খাজনা দিলের চাষীর দায় শেষ হয়ে যাবে। সরকারি কর্মচারী তার উৎপন্ন ফসলের পরিমান দেখতে যাবেন না।
জমিতে চাষীদের দখলি সত্ত্ব
এই আমলে চাষীরা ঠিকমত খাজনা না দিতে পারলে শাস্তি হত দৈহিক, কয়েদ বা স্ত্রীপুত্র কন্যাদের বেচে দিয়ে টাকা উসুল করা হত। কিন্তু চাষীকে কোনভাবেই উচ্ছেদ করা হত না – সেটা রাজস্ব বিভাগের আদেশ থেকেই বোঝা যেত। তখন জমি বেশি ছিল আর চাষী কম ছিল। কৃষকেরা জমি চাষ করলেই তো রাজস্ব আদায় এবং রাষ্ট্র আর কর্মচারীদের আয়। চাষী যত বেশি জমি চাষ করবেন রাজস্ব তত বৃদ্ধি পেত। যে রায়ত ঠিকমত চাষ করছে, নিয়মিত খাজনা দিচ্ছে তাকে উচ্ছেদ করে নতুন চাষী বসানোর প্রশ্নই উঠত না। যদি চাষী জমি চাষ না করত, তাহলেও বিকল্প চাষী না পাওয়া পর্যন্ত তাকে তার জমিতেই বসিয়ে রাখা হত। সরকারি নীতি ছিল নেই মামার থেকে কানা মামা ভাল। শতাব্দীর পর শতাব্দী চাষীকে নিজের জমিতে বসিয়ে রাখার চেষ্টা শেষে নিয়মের মত হয়ে দাঁড়াল, কালক্রমে এটা চাষীর প্রায় দখলিসত্ত্বে পরিণত হল। অর্থাৎ বছরে বছরে নর্দিষ্ট সময়ে খাজনা দিলে চাষীর জমি চাষীর দখলে থাকবে।
রাষ্ট্রর রায়ত বিষয়ে কয়েকটা নীতি ছিল
১) রায়ত চাষীকে জমিতে আটকে রাখার চেষ্টা
২) নতুন নতুন পতিত জমিকে উদ্ধার করে চাষীকে দিয়ে তাকে চাষ করানোর উৎসাহ দেওয়া।
৩) জমিতে যাতে উন্নত মানের ও উন্নত জাতের ফসলের চাষ হয় তা দেখা অর্থাৎ সে ধানের যায়গায় যদি আখের চাষ করে তাতে তাকে উৎসাহ দেওয়া। তাহলে রাজস্ব বেশি আদায় হবে।
এই খরাজ বা ভূমিব্যবস্থা হুমায়ুনের আমল পর্যন্ত চলেছিল।

No comments: