Sunday, May 22, 2011

মেদিনীপুরের চোয়াড় বিদ্রোহ৬


১৭৯৯এর জুনে চোয়াড়-পাইকদের সঙ্গে পাশের রাজ্য মারাঠা অধিকৃত ওড়িশার পাইকরা এসে যোগ দেয় এরপর রায়গড়, বীরভূম, শতপতি, শালবনী পরগণায় নতুন করে খন্ডযুদ্ধ শুরু হয় বিদ্রেহ দমন করা যাচ্ছেনা দেখে রেভিনিউ বোর্ড ভুল বুঝতে পেরে চোয়াড়দের বিষয়ে জমিদারদের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু আক্রমণ আর লুঠ নিরবিচ্ছন্নভাবে চলতেই থাকে সেপ্টোম্বরে শিরোমণি গ্রামে সরকার পক্ষের আটজনকে খুন করে চোয়াড় বিদ্রোহীরা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মানবাজার লুঠ হয় অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বীরভূমের নানান অঞ্চলের ধনীদের বাড়ি লাল সিংএর নেতৃত্ব লুঠ হয় গ্রামের পর গ্রামে সরকারের অনুপস্থিতির বহর বাড়তে থাকায় ১৮০০র জানুয়ারিতে পুরাবিত্রা আর আনন্দিনী দুটি তালুকের চাষীরা খাজনা বন্ধকরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয় ১৮০০র পর প্রাইসের লেখায় বিদ্রোহীদের কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না, কিন্তু ওম্যালির রচনায় আমরা পাচ্ছি যে এি বিদ্রোহের আগুন কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে দ্বলতে থাকে
আশংকার ব্যাপার হল ইংরেজদের আলোচনার প্রস্তাব রেভিউনিউ বোর্ডে ঠিক হয় পাইক আর চোয়াড় এবং জমিদারদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে হবে সুপারিশ হল পাইকদের খাজনাহীন জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে জঙ্গলমহলে সমস্ত শান্তিরক্ষার দায় থাকবে জমিদারদের ওপর পাইকদের নানান সুযোগসুবিধে দিতে হবে রাজস্ব বাকি পড়লে জঙ্গলমহলে জমিদারি নীলামে উঠবেনা মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ দিলেন পাইকদের, করদারদের থানার কাজে নিযুক্ত করা হবে হাড়ি, বাগহি প্রভৃতি যে সব অনুন্নত সম্প্রদায়ের মনে ক্ষোভ আছে তাদের তালিকাভুক্ত করতে হবে এবং নিজের সম্প্রদায়ের সর্দারদের অধীনে রাখতে হবে এ ছাড়াও আলাদা পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হবে
প্রাইস বলছেন, অনুচরদের ওপর চোয়াড় সর্দারদের প্রভাব অসাধারণ একজন সর্দারের অধীনে দুই থেকে চারশ চোয়াড় থাকেন তারা বাসকরে জঙ্গলের গভীরতম অঞ্চলে এর নাম কেল্লা ।।এরা কোনোদিনই জমিদার বা ভূস্বামীদের সেবা করেনি, সর্দারের নির্দেশ এদের কাছে চরমতম নির্দেশ সেনাবাহিনী দিয়ে জয় করতে না পেরে কৌশলে এদের অনেক ক্ষোভ প্রশমিত করে এদের বিদ্রোহ দমন করা হয় তবে এই বিদ্রোহের ফলে মেদিনীপুর বা বাঁকুড়ার সীমান্ত নতুন করে সাজানো হল বাঁকুড়া, মেদিনীপুর আর মানভূম এঞ্চল নায়ে তৈরি হল জঙ্গলমহল জেলা এই জঙ্গলহমলই বাঁকুড়া জেলা ক্রমশঃ ইংরেজদের সুকৌশলী শাসনে সর্দাররা নিস্তেজ হয়ে পড়েন এবং বাংলার অন্যতম প্রধাণ বিদ্রেহ ক্রমশঃ নির্বাপিত হল

No comments: