Tuesday, August 7, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - মেকলিয় ইংরেজি শিক্ষিত ভদ্রবিত্ত - উপনিবেশূর্ব ছোটলোকেদের জ্ঞানচর্চা

ঠিক এর আগের প্রকাশনায় Debabrata Chakrabartyর উত্তর দিয়েছি। তার পরেই আমরা হাল ধরলাম।

'রামমোহন রায় অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ভাবেই পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান শিক্ষা চালু করার সপক্ষে আমহার্স্টকে চিঠি লিখেছিলেন। উনি না জন্মালে আপনি আজ এক হিন্দু রাষ্ট্রের বাসিন্দা হতেন' এরকম একটা প্রগতিশীল উক্তি দেখলাম।
সে সময়ের ভারতীয় পড়াশোনায় কি ধরণের অঙ্ক শিক্ষা হত তার উদাহরণ পাই চন্দ্রকান্ত রাজুর ভারতীয় অঙ্কের ইতিহাসে। যে যাককে যাক - শুধু উদাহরণ দেব ১৯৯১ সালের ইন্ডিয়ান জার্নাল অব হিস্ট্রি অব সায়েন্সে লিখত কে ভি শর্মা আর এস হরিহরণের লেখা জৈষ্ঠদেবের যুক্তিভাষা নামক প্রবন্ধটি, যেখানে ২নম্বর পাতায় বলা হয়েছে , দ্য ওয়ার্ক ফাইন্ডস ইটস ফার্স্ট রেফারেন্স ইন মডার্ন রাইটিং ইন এন আর্টিকল বাই সি এম উইশ ইন ১৮৩৫ হওয়ার ইট ইস রেফার্ড টু টুওয়ার্ডস দ্য ভেরিফায়িং দ্য অথার অব তন্ত্রসংগ্রহ। উইশ হ্যাড কন্টেমপ্লেটেড 'আ ফারদার একাউন্ট অব যুক্তিভাষা, ইত উইল বি গিভন ইন আ সেপারেট পেপার' (সূত্র https://web.archive.org/.../insa/INSA_1/20005ac0_185.pdf)। অর্থাৎ রামমোহন আর বিদ্যাসাগর যখন পশ্চিমি বিদ্যাচর্চার ওকালতি করছেন তখন সে সময়েই এদেশেই যুক্তিভাষার মত কলন বিদ্যা পড়ানো হচ্ছে।
আজ এই কলনবিদ্যার শিক্ষা দিচ্ছেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে চন্দ্রকান্ত রাজু ক্যালকুলাস উইদাউট লিমিটস নামে - যার দুটি মানে - ১) কেরল থেকে যখন জ্ঞানটা জেসুইটসরা ইওরোপে নিয়ে গেল নকল করে, নিউটন বা লিবিনিতজ এই অঙ্কবিদ্যার মূল সূত্র বুঝতে পারছেন না, ফলে তারা লিমিটএর ধারণা নিয়ে এলেন কলন বিদ্যায়, ভারতে যে বিদ্যা মাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়ানো হত, সেটা ইওরোপে গিয়ে দুর্বোধ্য উচ্চশ্রেণীর অঙ্কে রূপান্তরিত হল, এই নিয়ে চন্দ্রকান্ত রাজুর ক্যালকুলাস উইদাউট লিমিটস লেখা পড়তে পারেন (সূত্র - http://ckraju.net/.../calculus-without-limits-background...)। আর ২) কলন বিদ্যার প্রয়োগ আসীম কারণ তাঁর মতে ভারতে দুটি পেশা কলন বিদ্যা প্রায়োগিক/ফলিত চর্চা করত কৃষক - যাদের মৌসম বুঝতে কলন চর্চা করতে হত আর নাবিক - যারা দিনের বেলায় তারা ছাড়া আলোকোজ্জ্বল আকাশে যখন মাঝ সমুদ্রে যাত্রা করতেন তখন দিক খুঁজে পেতেন। এইগুলো আমাদের ভদ্রদের গায়ে লাগবে যারা খুব কষ্ট করে কলনবিদ্যা অর্জন করেছি, সেটা ছোটলোকেরা কিভাবে শিখতে পারে এই বিতর্কে।
যাই হোক দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধর্মমূলক এই অভিযোগে রামমোহন-বিদ্যাসাগর পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা চালিয়ে যেতে বলেছিলেন। হায় তারা জানার চেষ্টা করেন নি, এদেশে কয়েক হাজার বছর ধরে কলনবিদ্যা চর্চার শেকড় সেদিনও শেষ হয়ে যায় নি।
কোন এক যুক্তিবাদীর কোন এক প্রশ্নের উত্তরে দেবুবাবু লিখলেন, এইবার আপনার(জনৈক যুক্তিবাদীর) বোকা বোকা প্রশ্ন -যে রামানুজন অঙ্কবিদ্যা শিখতে ইংল্যান্ডে গেলেন কেন তার উত্তরে ভলতেয়ার কে কোট করি -যেখানে উনি বলেছেন " I am convinced that everything has come down to us from the banks of the Ganges, - astronomy, astrology, metempsychosis, etc... It is very important to note that some 2,500 years ago at the least Pythagoras went from Samos to the Ganges to learn geometry...But he would certainly not have undertaken such a strange journey had the reputation of the Brahmins' science not been long established in Europe." তাহলে কি তাকেও " unjustified claims , paranoid and ridiculous and pro saffron বলে দেগে দেবেন ? @ Biswendu Nanda কি বলেন ?
সমস্যা হল সেই আর্যভটের(ভট্ট = বামুন আর ভট = শূদ্র, আমরা উচ্চবর্ণ আজও উচ্চারণ করি আর্যভট্ট, যা মিথ্যা। এবং ইতিহাস পাল্টাতে তার গলায় পৈতে পরিয়ে দিয়েছে ভারত সরকারের এক মহাকাশ বিদ্যা সংগঠন, ঠিক যেমন করে কালো গ্রিসকে দেখায় না ইওরোপ,আফ্রিকার আলেকজান্ড্রিয়ার অঙ্কবিদেরা সক্কলে ত কালো হওয়ার কথা, অঙ্ক বইতে কেন তাদের চেহারা ককেসাসিয়?) সময় বা তারও আগে থেকে জ্ঞানচর্চা শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান-আদিবাসীদের পকড় ছিল। যে পকড়ের জোরে বিদ্যা আর জ্ঞানচর্চায় এবং তার ফল উৎপাদন ব্যবস্থায় শূদ্র-বৈশ্য(বাংলায় বৈশ্যরা সেদিন পর্যন্ত শূদ্র ছিল)এবং মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের পকড়। এবং তারই ফল কিছুটা পাই এডামের সমীক্ষায় যেখানে দেখা যায় প্রতিষ্ঠিত পাঠশালায় শূদ্র সন্তানের সংখ্যা ৮৫%। এটা দীর্ঘকালে লেগ্যাসি - এবং মোগল এবং নবাবী আমল এতে হাত দিতে চায় নি - আপনি যদি মুঘল বিরোধী আচার্য যদুনাথের এডমিনিস্ট্রেশন পড়েন দেখবেন চাষী আর কারিগর(যারা মূলত শূদ্র-মুসলমান-আদিবাসী)দের রক্ষা করা রাষ্ট্রের ঘোষিত নীতি - নবাবি আমল নিয়ে কয়েক দিন আগে লিখেছি কিভাবে কারিগর আর চাষীদের রক্ষা করতেন নবাবেরা।
এক হাজার বছর ধরে আরব-পারস্য-ভারত-চিনের মিলিত জ্ঞানচর্চায় ইওরোপ নস্যি, তার ফলে বাংলা ছিল উদ্বৃত্ত অর্থনীতির দেশ। ইওরোপের পঞ্জিকা ছিল এক্কেবারে ভুলে ভরা, পৃথিবীর ব্যাসার্ধের মাপ তখনও দাঁড় করাতে পারে নি, ফলে সমুদ্রে নামলে সে এক যায়গার যায়গায় অন্য যায়গায় পৌঁছে যেত - আমেরিকা বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো আবিষ্কার করতে চায় নি, ওরা আসতে চেয়েছিল ভারতে। মালামো কানা নামক এক গুজরাটি মুসলমান নাবিক হাতে রূপলাগি নামক খেলনা দিগদর্শক যন্ত্র নিয়ে আফ্রিকার মেলিন্দের উপকূলে পথ ভোলা ভাস্কোকে পথ দেখিয়ে না আনলে ইওরোপের ভারতে আসা যে আর কত দিন পিছত কে জানে, হয়ত ভারতের ইতিহাসিটাই পাল্টে যেত। বাংলা-তথা ওডিসা বা গুজরাট বা কোঙ্কণের নাবিকেরা যেখানে যেতে চেয়েছে সেখানেই গেছে দিক না ভুলে। এটা এই শূদ্র জ্ঞানচর্চার জন্যেই।
তো তারা প্রথমে ধর্মযুদ্ধে বুঝল ইওরোপ আরবের থেকে জ্ঞানচর্চায় কতটা পিছিয়ে, ভারতে এসে পর্তুগিজেরা সেটা হাড়ে হাড়ে সেটা টের পেল। ফলে ইওরোপ গোটা এশিয়ায় জ্ঞানচুরির কাজটা করতে হয়েছে দীর্ঘসময় ধরে, যে কাজটা নথিকরণ করেছেন গীতা ধরমপাল পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইটালি এবং অন্যান্য পুরোনো গ্রন্থাগারে ভারতীয় পুঁথির টাল দেখে, যেখানে জেসুইট পাদ্রিদের নথিকরা পুঁথি প্রচুর।
এদেশে ইওরোপকে তার জ্ঞানচর্চার অনুপস্থিত হেজিমনিটা তৈরি করার চেষ্টা করতে হল। তারজন্য তৈরি হল ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়া উচ্চবর্ণ, যারা দীর্ঘকাল ধরে প্রথমত শূদ্র এবং মুসলমান বিদ্বেষী। নবাবেরা তাদের পাশে থাকায় তারা কিছু একটা করে উঠতে পারে নি। ব্রিটিশেরা উচ্চবর্ণের মাথায় হাত রাখল। প্রথমে জ্ঞানচর্চার ফলিত বিদ্যা উৎপাদন ব্যবস্থা ধ্বংস করা হল, দখল করা হল, বিশ্ব বাজার থেকে বাংলার কারিগরদের উচ্ছেদ করা হল আর একে একে বাংলার বেশ কিছু প্রযুক্তি ধ্বংসের কাজ শুরু হল, আর বাংলার শূদ্র-জ্ঞানচর্চা ধ্বংস করা হল প্রতীক হিসেবে - কোপ পড়ল বাংলার পাঠশালায় আর নবাবী আমলের মক্তবে।।
প্রথমে মেকলে ট্রেভলিয়ান পরে ম্যাক্সমুলারকে দিয়ে বলা হল ভারত এখন অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে আছে, তার বর্ণিল অতীত(উচ্চবর্ণ সঞ্জাত, যা অর্ধসত্য)এর জ্ঞানচর্চা ধ্বংস হয়ে গেছে। সমস্যা হল যে সময় মেকলে খিস্তি করছেন তখন চার্লস উইশ কলনবিদ্যা খুঁজে পেলেন দক্ষিণ ভারতে তারপরে সে সব ইতিহাস। যদিও সে ইতিহাস আজও মুখ গুঁজে আছে।
এই ইতিহাসের সামনে সব উচ্চবর্ণ মূক।
আর ছোটলোকেরা জ্ঞানচর্চা, অঙ্ক, কলনবিদ্যা শিখত এবং প্রয়োগ করত, এটা ভদ্রলোকের কাছে দারুণ জ্বালা। এই তত্ত্বে আমাদের ভদ্রদের মাথায় চিনিচিনে ব্যথা, রাগে গা জ্বলে ওঠে মশাই। আমরা ভদ্র ছাত্রছাত্রীরা কি কষ্ট করে হায়ারসেকেন্ডারি আর কলেজে উচ্চঅঙ্কর ক্যালকুলাস শিখি। সেটা ছোটলোকেরা কিভাবে সেই আদ্যিকালে টোলে না কোথায় কোথায় শিখত আর প্রয়োগ করত। শালারা আমাদের শ্রমের খ্যাতিতে, মেধায় ভাগ বসাচ্ছে ভাবলেই রাগে শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে।
তাঁরা কিভাবে শিখতেন এটা আমরা জানি না - চন্দ্রকান্ত রাজুর লেখায় পেয়েছি। চন্দ্রকান্ত রাজু ভারতীয় মতে সাতদিনে কলনবিদ্যা শেখাচ্ছেন বুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে - নাম ক্যালকুলাস উইদাউট লিমিটস - যোগাযোগ করতে পারছি না। খুব শেখার ইচ্ছে।


কেউ সাহায্য করতে পারেন?

No comments: