Thursday, August 23, 2018

লাইব্রেরিজ এন্ড লাইব্রেরিয়ানশিপ ইন এনসিয়েন্ট এন্ড মেডিভ্যাল ইন্ডিয়া - বিমল কুমার দত্ত - মুঘলযুগে গ্রন্থাগার৩

স্বশিক্ষিত আকবর পাদশা ছিলেন সাহিত্যানুরাগী এবং জ্ঞানার্জনে অদম্য উৎসাহী। তিনি তার জীবনের যাত্রাপথে নিজেকে শুদ্ধ করেছেন এবং অপরের প্রতি সহিষ্ণুতার দর্শন তৈরি করেছেন এবং সত্যিকারের বৌদ্ধিক উৎসাহ তৈরিতে সাহায্য করেছেন। তুজুকইজাহাঙ্গিরিতে পড়ছি “আমার পিতা(আকবর) হিন্দুস্থানের সব ধরণের জ্ঞানী ব্যক্তির বিশেষ করে পণ্ডিত এবং বৌদ্ধিকদের সঙ্গে সঙ্গ করেছেন। তিনি অক্ষরজ্ঞানহীন হলেও সারাক্ষণ তিনি জ্ঞানী এবং বিদ্যোৎসাহীদের সঙ্গ করতেন। তাঁর ভাষা এতই প্রমিত ছিল যে তাঁর সঙ্গে আলাপ করা একজনও মানুষ আন্দাজ করতে পারত না যে তিনি অশিক্ষিত। তিনি কবিতা আর গদ্যের নান্দনিকতা এই ভাল বুঝতেন যে তার থেকে আর কেউ এই বিষয়টি ভাল বুঝত না”। পুত্রের কলম থেকে উৎসারিত এই বাক্য থেকে পরিষ্কার তার শৈল্পিক মনের প্রকাশ এবং জ্ঞানার্জনের জন্যে আকাঙ্ক্ষিত পরম উৎসাহের বিষয়টি।
আলোচনা বা কথোপকথনেই যে তার গভীর মানসিকতা বোঝা যেত তাই নয়, তিনি বিপুল বড় এবং বৈচিত্র্যময় গ্রন্থাগারও তৈরি করে তাকে রোজ পুঁথিগুলি পড়ে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যে করণিক নিয়োগ করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে আবুল ফজল আল্লামি লিখছেন, “মহামহিমের গ্রন্থাগার নানান অংশে বিভক্ত ছিল। কিছু অংশে বই থাকত আর কিছু অংশ ফাঁকা। হারেমে তিনি রোজ একটি করে প্রত্যেকটি বই আদ্যোপান্ত পড়াতেন। বইএর মাঝখানে রোজের পড়া বন্ধ হলে তিনি তার ব্যক্তিগত কলম দিয়ে তাঁর মত করে নির্দিষ্ট পাতায় দাগ চিহ্ন রাখতেন; এবং পড়ুয়া যতটা পাতা পড়ত তিনি তাঁকে ততখানি সোনা বা রূপার মুদ্রা দিতেন। তাঁর সময়ের প্রায় প্রত্যেকটি প্রখ্যাত বইই তিনি পড়েছেন, অতীতের কোন ঐতিহাসিক সত্য বা বিজ্ঞানের সূত্র বা দর্শনের আত্মকথা তার অজানা ছিল না, যা একজন জ্ঞানী ব্যক্তির কণ্ঠস্থ ছিল। একটি বই বার বার পড়ায়তেও তাঁর কোনও ক্লান্তি ছিল না, যেন প্রত্যেকবার আরও মন দিয়ে সেটি শুনতেন”। এইভাবে আকবর বিভিন্ন দার্শনিক ধারণা, সাহিত্যিক চলন এবং ঐতিহাসিক তথ্যের বিষয়ে অবগত থাকতেন।
তার বাবার থকে উত্তরাধিকার সূত্রে যে গ্রন্থাগার তিনি পেয়েছিলেন সেটিকে তিনি তাঁর বইএর প্রতি অসীম ভালবাসা দিয়ে বিপুলাকার চেহারা দিয়েছিলেন। পুঁথিগুলি এসেছিল মূলত ব্যক্তিগত সংগ্রহ এবং গুজরাট, জৌনপুর, কাশ্মীর, বাংলা এবং দাক্ষিণাত্যের নানান গ্রন্থাগার এছাড়াও দরবারের নানান অভিজাত এবং আমলার সংগ্রহ থেকে। এছাড়াও নতুন পুঁথি লেখানো, পুরোনোগুলি সম্পাদনা এবং অনুবাদও করানো হত।
ফৈজীর ব্যক্তিগত সংগ্রহে মোটামুটি ৪৩০০ পুঁথি ছিল। তাঁর মৃত্যুর পরে এই বিপুল সংগ্রহ চলে যায় রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারে এবং সেখানে প্রত্যেক পুঁথিতে সংগ্রহ ও পরিচিতি চিহ্ন দেওয়া হয়। ফৈজীর সংগ্রহকে তিনটিভাগে ভাগ করা হয় এবং প্রত্যেকটির বেশ কয়েকটা নকলও ছিল। যেমন নল দমন পুঁথি ছিল ১০০টা।
গুজরাট অভিযানে ইতিমদ খানের গ্রন্থাগার আকবর দখল করে নিয়ে এসে এটিকে রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারে জুড়ে দেন। যখন গুজরাট সম্পূর্ণভাবে দখল হল এবং মির্জা খান খানান দরতবারে নতুন করে যোগ দিলেন আকবরের ৩৪ তম রাজত্ব বছরে, তিনি পাদশাহকে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহের বাবরের পারসি ভাষায় লিখিত চাঘতাইস্মৃতি বা ওয়াকিয়াতিবাবরএর অনুবাদ উপহার দেন।
(চলবে)

No comments: