Thursday, August 23, 2018

লাইব্রেরিজ এন্ড লাইব্রেরিয়ানশিপ ইন এনসিয়েন্ট এন্ড মেডিভ্যাল ইন্ডিয়া - বিমল কুমার দত্ত - মুঘলযুগে গ্রন্থাগার৪

(মহাভারতের ফার্সি অনুবাদ রাজমনামার দুটি পাতার ছবি দেওয়া গেল)
মুল সংস্কৃত এবং অন্যান্য ভাষায় লিখিত বহু পুঁথি পাদসাহের নির্দেশে ফারসিতে অনুদিত হয়। মহাভারত অনুবাদ করেন পার্সি বিদ্বান নাকিব খান, বাদাউনের মৌলানা আদুল কাদির এবং থানেশ্বরের শেখ সুলতান। ১০০০ শ্লোক অনুদিত হওয়া মহাভারতের নাম হয় রাজমনামা(ফেবু পাঠকদের কয়েক মাস আগে(২৯ মে তারিখের) বইটির কয়েকটি সংস্করণের কয়েকটি পাতার নকলসহ আমার রাজমনামার প্রকাশনাটা আরেকবার মনে করিয়ে দিই – রাজমনামা, আকবরের নির্দেশে মহাভারত অনুবাদ।। ১৫৮২ সালে মহাভারতের ফার্সি অনুবাদের নির্দেশনামা প্রকাশিত হয়। ১ লক্ষ শ্লোকের মহাভারতের ফার্সি অনুবাদের সময় ১৫৮৪-৮৬ সাল। এর নাম হল রাজমনামা বা যুদ্ধ-কাহিনী। আবুল ফজল রাজমনামার মুখবন্ধ রচনা করেন। জয়পুরের প্রাসাদের পুথিখানায় এইটির প্রথম অনুবাদটি পাওয়া গিয়েছে। এই নকলের ১১ নম্বর পাতায় আবুল ফজল বইটির অনুবাদের সাল লিখেছেন ১৫৮৮। ১৬৯ পাতার জয়পুর রাজমনামাটিতে দেখা যাচ্ছে দৌলতাবাদে তৈরি কাগজে অনুবাদ করেন খ্বাজা ইনায়েতুল্লা। আঁকিয়ের নাম প্রতি পাতায় উল্লিখিত হয়েছে। এই নকলের আঁকিয়ের নাম বাসাওয়াঁ, দাসোয়ান্থ এবং লাল (Basawan, Daswanth and Lal)। এটি ১৮৮৩ সালে জয়পুর প্রদর্শনীর T.H. Hendly book Memorialsএ প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৫৯৮-৯৯তে দ্বিতীয় নকল হয়। আকবরের নির্দেশে। রাজপরিবারের সদস্যদের হিন্দুদের ভালভাবে জানতে উপহার দেওয়া হয়। এটি আগের তুলনায় অনেক বেশি বিশদে করা। আকবর যে শিল্পীদের পছন্দ করতেন, সেই বার্তা এই পুঁথির প্রতি পাতার ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে আছে। বদাউনি জানাচ্ছেন আকবর এটি তাঁর রাজত্বের প্রত্যেক আমীরকে সর্বশক্তিমানের ইচ্ছা হিসেবে দেখে পড়তে নির্দেশ দেন। আবুল ফজলের মতে এটির বিতরণ করা পুণ্যতম কর্ম রূপে পরিগণিত হত।) বা যুদ্ধের পুস্তক।
১৫৮৯ সালে বাদাউনি চার বছরের কঠোর পরিশ্রমে রামায়ন অনুবাদ করেন। হাজি ইব্রাহিম শিরহিদ অথর্ববেদ অনুবাদ করেন। অঙ্কের প্রাচীন পুস্তক লীলাবতী অনুবাদ করেন ফৈজী, প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক পুথি তাজাক অনুবাদ করেন গুজরাটের মোকম্মল খান, বাবরের তুর্ক ভাষায় রচিত স্মৃতিকথা ফারসিতে অনুবাদ করান মির্জা আবদুর রহিম খান, শাহবাদের মৌলানা শাহ মহম্মদ কাশ্মীরের ইতিহাস অনুবাদ করান, আরবিতে লিখিত শহর এবং দেশের পরিচিতি সংগ্রহ মুয়াজ্জমআলবুলদান নানান বিদ্বানদ্বারা অনুদিত হয়।
যে উদাহরণগুলি আপনাদের দিলাম তাতে পরিষ্কার, আকবরের রাজত্বে একটা অনুবাদের দপ্তর তৈরি হয় এবং এই বিভাগ প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ পুথি অনুবাদ করায় এবং রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারে রাখতে শুরু করে।
রাষ্ট্রীয় এবং সম্রাটের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে প্রচুর মৌলিক পুথিও ছিল। গাজালি, ফৈজী, নিসাপুরের মহম্মদ হুসেন নাজিরি, সঈয়দ জামালুদ্দিন, শিরাজুর উর্ফি ইত্যাদির লিখিত পুস্তকও ছিল। এক ব্যতিক্রমী জেসুইট জেরোম জেভিয়ার খ্রিষ্টিয় ধর্ম এবং দর্শন বিষয়ে বহু ফারসি বই আকবর এবং জাহাঙ্গিরকে উপহার দেন।
বইগুলির উতকর্ষ বাড়াতে আকবর হস্তলিখন এবং পুস্তক চিত্রণ ইত্যাদি গুরুত্ব দিতে থাকেন। অসাধারণ হস্তাক্ষরে লিখিত এবং অসামান্য চিত্রণে চিত্রিত বই তিনি ভালবাসতেন। তাঁর সময়ে লিখিত আইনি আকবরী আটটি সুলস, তাউলি, মুকাহকক, নকশ, রাইহান, রিকা, ঘুবার এবং তালিক নামক আলাদা আলাদা হস্তাক্ষরে লিখিত সংস্করণ হয়। আকবর নিজে নাস্তালিক নামক হস্তাক্ষরের দিওয়ানা ছিলেন এবং এই হস্তাক্ষরের প্রখ্যাত লিখনবিদ কাশ্মীরের মুহম্মদ হুসেইনকে তিনি জারিন-কলম অর্থাৎ সোনালি-কলম উপাধি দান করেন। সে সময়টি যেহেতু হস্তাক্ষর আর পুস্তকের অঙ্গসজ্জার অসামান্য নজির সৃষ্টি করেছিল এই উপমহাদেশ, তাই তাঁকে প্রথম জেসুঈট মিশন ছাপা বই উপহার দিলেও সেদিকে যেতে তিনি এবং তাঁর উত্তরাধিকারীরা খুব একটা উৎসাহ বোধ করেন নি। তবে আকবর ইতালির উরবিনোর ডিউক ফেডেরিগো/ফেডেরিকোর মত এক্কেবারে ছাপা অক্ষর বিরোধী ছিলেন না।
(চলবে)

No comments: