Tuesday, August 7, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - জাতিবাদী এবং ছোটলোক বিরোধী বিদ্যাসাগর

Debabrata Chakrabarty প্রায় এক বছর আগে "বিদ্যাসাগর ঃ- শিক্ষায় জাতিবর্নভেদ ব্যবস্থার সমর্থক" শীর্ষকে একটা লেখায় দেখিয়েছেন বিদ্যাসাগরবাবু স্বাভাবিকভাবে বর্ণব্যবস্থার ধারক। তাঁর মোদ্দা কথা বিদ্যাসাগরের সময় শিক্ষা সঙ্কুচন ঘটে।
এই লেখা নিয়েও বিদ্যাসাগরমুগ্ধরা রে রে করে লাফিয়ে পড়েছেন। বেশ বিতর্ক হয় কিন্তু দেবুবাবু আর আমরা লড়ে যাই। প্রথমে দেবুবাবুর উত্তর -
খুব সামান্য হিসাবে বিদ্যাব্যপ্তি তাকেই বলে যখন কোন একটি ভৌগলিক অঞ্চলে গত সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে শিক্ষিতের হার ,স্কুল কলেজ ছাত্র অনুপাত , জাতিবর্ন অনুপাত বৃদ্ধি পায়, কিন্তু যদি তা হ্রাস পায় তাহলে তাকে বিদ্যাপ্রসারে বাধাদান বলে । এখন ব্রিটিশপুর্ব ভারতে বিদ্যাশিক্ষার হাল বিষয়ে অবগত হতে খোদ ব্রিটিশ আমলা, পাদ্রি , বিশেষজ্ঞগন ডিটেল সার্ভে করেছিলেন সেই রকম একটি সার্ভে ছিল ম্যাড্রাশ প্রেসিডেন্সির - Thomas Munro, সেই সার্ভের হার্ড ডেটা থেকে দেখেন যে প্রত্যেক গ্রামে স্কুল বর্তমান অথচ ১৮০০ সালে খোদ ব্রিটেনে প্রাথমিক শিক্ষা র অবস্থা শোচনীয় । এই ডেটা অনুসার ১৮০০ এর সময়ে ভারতের স্কুলের ব্যবস্থা স্বয়ংসম্পুর্ন , ইংল্যান্ডের তুলনায় উন্নত এবং এক্সটেনসিভ , বিষয় বস্তু ইংল্যান্ডের তুলনায় উন্নত । শিক্ষাদানের পদ্ধতি ইংল্যান্ডের তুলনায় অনেক বেশী ভালো । সহজ , কম খরচ এবং স্বনির্ভর । এমনকি ১৮২০-২৫ এর সময়ের ভঙ্গ দশায় ইংল্যান্ডের স্কুল শিক্ষার তুলনায় উন্নত । ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা কেবল একটিমাত্র ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল তা হোল নারী শিক্ষার হার । কি পড়ত ছাত্রেরা? - Theology, Law, Astrono-my, Metaphysics, Ethics and Medical Science । 1823-24. সালে কেবল মাদ্রাস প্রেসিডেন্সি এলাকায় 13,000 স্কুল এবং 740 টি উচ্চ শিক্ষার কলেজ ছিল । ১,৮৮,৬৫০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে শূদ্র ছিল ৮৫৪০০ জন আর ব্রাহ্মণ মাত্র 42,502 জন । বেদ পুরান ইত্যাদিতে ব্রাহ্মণদের একছত্র আধিপত্য থাকলেও - চিকিৎসাবিদ্যা ইত্যাদিতে শূদ্ররা ছিল সংখ্যাগরিস্ট । মালাবারে ১৫৮৮ জন স্কলারের মধ্যে মাত্র ৬৩৯ জন ছিলেন ব্রাহ্মণ ,২৩ জন বৈশ্য ,২৫৪ জনা শূদ্র আর ৬৭২ জন অন্যজাতি । চিকিৎসাবিদ্যার ১৯০ জন ছাত্র দের মধ্যে মাত্র ৩১জন ছিল ব্রাহ্মণ বাকি শূদ্র এবং অন্যজাতি । তবে ছাত্রী সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৫৪০ জনা । সমস্ত জায়গায় শূদ্র ছাত্র /ছাত্রীর সংখ্যা ব্রাহ্মণদের তুলনায় অধিক ছিল -সালেম তিন্নিভেল্লু এলাকায় শূদ্র ছাত্র ছিল ৮৪% এর অধিক । ঠিক একই রকমের চিত্র পাঞ্জাব , মুম্বাই প্রেসিডেন্সি এবং বাংলা বিহারে । এই তথ্য আমার নয় ব্রিটিশ রাজপুরুষ দের হার্ড ডাটা ।
তা ব্রিটিশ সমর্থিত রামমোহন -বিদ্যাসাগরের বিদ্যাপ্রসার অভিযান এই চিত্র আমূল বদলে দিল , মাত্র এক শতকের ব্যবধানে শূদ্র, মুসলমান শিক্ষা ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ থেকে নেই হয়ে গেল । বিদ্যাচর্চা কেবলমাত্র উচ্চবর্নের হিন্দু বাঙালীর কুক্ষিগত হয়ে গেল । স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় অর্থের স্রোতের উৎসে লাগাম পরিয়ে সার্বজনীন শিক্ষার এতদিনের ভিত্তি উপড়ে ফেলা হোল। ১৮৫৮ সালের এডুকেশন রিপোর্টে স্থানীয় স্কুল বিষয়ে ব্রিটিশ মতামত হোল “A village school left to itself is not an institution which we have any great interest in maintaining.” পাঞ্জাব অধিগ্রহণের সময়ে একদম প্রান্তিক অঞ্চলে প্রতি ১৭৮৩ টি বাসিন্দা পিছু একটি স্কুল ছিল আর ব্রিটিশ শাসনের ৩০ বছরের মধ্যে ১৮৮১ সালে “there is one school of whatever sort, to every 9,028 inhabitants”। শিক্ষা প্রসার না সংকোচন ? ১৮৩০ সালে অ্যাডামের হিসাবে নাটোরে ১১% শিক্ষিতের হার ছিল । প্রায় এক শতাব্দী পরে ভারতের বহু অঞ্চলে শিক্ষিতের হার ১১% ব্রিটিশ শিক্ষা প্রসারের মানদণ্ড হিসাবে গণ্য হত । এই শিকড় উপড়ে ফেলা ব্রিটিশ শিক্ষা ঠিক কিরকম উন্নত ছিল সেই বিষয়ে এক গভর্নর রিপোর্ট “ “If a boy learns arithmetic in our school, he is of little use for the shop, because he finds there a different system of accounts, and the meanest Banya can cast up the intricacies of the grain trade accounts by a mental process far more rapidly than if he had taken honours in Mathematics at the Calcutta University.” দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় যেখানে প্রাথমিক শিক্ষাদান হোত স্থানীয় ভাষায় -সেখানে ব্রিটিশ উত্তরভারতে নিয়ে এলো উর্দু ,বাংলায় এলো ইংরাজি (বাংলা ) । বিদ্যাসাগর শিক্ষায় এই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের অগ্রদূত । যে শিক্ষা ব্যবস্থা মাত্র এক দশকের ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ শূদ্রদের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে উচ্ছেদ করে দেয় , উচ্চ শিক্ষা স্থান শূদ্রদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায় । অশিক্ষা এবং অজ্ঞতা জাঁকিয়ে বসে দেশে । বিদ্যাসাগর ঠিক এইটিই করেছিলেন - দেশীয় শিক্ষার ভিত্তি উপড়ে সাম্রাজ্যবাদী শিক্ষার প্রসার । যদি ব্রিটিশ পূর্ব এবং পরবর্তি শিক্ষাব্যবস্থা তুলনায় আনা হয় । নতুবা ঠিকই আছে - গুরু পূজা চলুক ।

No comments: