Monday, July 16, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা৩ - উইলিয়াম জোনস ভদ্রলোক চরিত্রের জন্ম - অমেট্রোপলিয় তথ্যসংগ্রহঃ একটি সামাজিক ইতিহাস

আমার বক্তব্য হল বিচার বিষয়ক জ্ঞানের বৌদ্ধিক আলোচনা এবং সেটির প্রাতিষ্ঠনিকীকরণের অন্যতম উদ্যোক্তা জোনস, এবং এই জ্ঞান প্রশাসনিক জ্ঞানচর্চায় আর ঔপনিবেশিক তথ্য শাসনে এবং তার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে এই জ্ঞানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দৃষ্টিভঙ্গীতে আমি নতুন করে philologer’s passageটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করব। এটি মূলত ঔপনিবেশিক ইতিহাসের ভাষাতত্ত্ববিদ্যা এবং ভারততত্ত্ববিদ্যার অংশবিশেষ। আমি বলার চেষ্টা করব, জোনস, তার সমসাময়িকেরা এবং স্বয়ং কোম্পানি তারা ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনের আভ্যন্তরীণ মৌলকাঠামোর অংশ। জোনসও নিজেকে কোম্পানির সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবেই দেখতেন। তিনি উচ্চপদাধিকারিকদের জ্ঞানত তৈরি করে দেওয়া ভূমিকার অংশ হিসেবে সজ্ঞানে তার পদকে কাজে লাগিয়ে এশিয়ার তথ্যভাণ্ডার নথিকরণ করার উদ্যম নিয়েছিলেন।
বিশেষ করে আমি চেষ্টা করব ইন্দো-ব্রিটিশ ইতিহাসের বৃহত্তর সম্পর্ক প্রশ্নে জোনস এবং তার সমসাময়িকেরা দেশিয় মধ্যশ্রেণীকে কাজে লাগিয়ে নতুন ধরণের জ্ঞান উৎপাদন করছিলেন, এবং তাদের জ্ঞানচর্চাকে কাজ লাগিয়ে প্রশাসনের বৈধতা তৈরির কাজ করছিলেন তার বৃহত্তর প্রেক্ষিতটি। এই বৌদ্ধিক জ্ঞান উতপাদনের কাজটি আত্মিকভাবে জড়িয়েছিল কোম্পানির ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে। ফলে পাঠক, আপনাকে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, স্পেসালাইজড জ্ঞান উৎপাদন এবং সেটি ব্যবহারে কোমপানির ভূমিকা কি ছিল।

বিজ্ঞান এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি
কোম্পানি যে বৈদেশিক বাণিজ্য চালানো এবং তার এক্সপানসানে অঙ্কবিদ, প্রায়োগিক জ্যোতির্বিদ, হাইড্রোগ্রাফার, শল্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর মত বিশেষ পেশাদারদের দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল ছিল। অধিকাংশ প্রখ্যাত বিজ্ঞানী হয় কোম্পানির ডায়রেক্টর বোর্ডে, অথবা তার অংশিদার ছিলেন। এ ছাড়াও সমগ্র অষ্টাদশ শতাব্দ জুড়ে দ্রুত গজিয়ে উঠতে থাকা ইওরোপিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি খোঁজা পড়ুয়ারা বাড়তে থাকা কোম্পানির সেবা ক্ষেত্রের উচ্চ প্রযুক্তিবিদের পদ ভরাট করছিলেন। প্রযুক্তিবিদ, মিলিটারি কমাণ্ডার, পশু চিকিৎসক, রাজদূত, ডাক্তার, প্রকৃতিবিদ এবং ভূগোলবিদেরা প্রচুর প্রত্নতাত্ত্বিক এবং গাছগাছড়া সংগ্রহ করতেন এবং দেশে ফিরে ভদ্রলোক বুদ্ধিজীবি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে, মেট্রোপলিসের কোম্পানি আর বিভিন্ন পণ্ডিতি সমাজের মধ্যে মধ্যস্থতা করতেন।
কিন্তু কোম্পানি কোন public space ছিল না, যার মাধ্যমে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্রিটিশরা তাদের স্বপ্ন পূরন করতে পারে। এই উচ্চাকাঙ্খা এমন একটা public space তৈরি করল যার চাপে কোম্পানির প্রশাসন কিছুটা হাতড়ে হাতড়ে জ্ঞান বিকাশের কাজে লাগল যাকে আমরা আজ প্রাচ্যবিদ্যা বলে চিনি। এটাও মনে রাখা দরকার বিদেশে বিশেষজ্ঞতার কাজে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এত কম ছিল যে অধিকাংশ সময়ে কোম্পানিকে ভীষণভাবে দেশিয় মধ্যস্থর ওপর নির্ভর করতে হত।

পলাশী, কোম্পানিকে ভারতের ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তারে সাহায্য করল। শাসক হিসেবে মানিয়ে নিতে কোম্পানির আধিকারিকদের প্রচুর সময় লেগেছিল। শাসকেরা চোখের পাতা না ফেলে বাংলাকে লুঠ আর ধ্বংস করার কাজে মন দিল। তিন বছরের মধ্যে বাংলার ১কোটি মানুষের প্রাণ নিয়ে, সে সময়ের বাংলার জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ, অধিকাংশ চাষী আর কারিগর – কোম্পানির প্রশাসনকে বাঁধার উদ্যম দেখা দিল। পার্লামেন্টের চাপে ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং আইন করে কোম্পানির আমলাদের ব্যক্তিগত লুঠের রাজত্ব, তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে সুবিন্যস্ত স্থায়ী সরকারি প্রশাসনিক লুঠে পর্যবসিত হল।  


কপিল রাজের রিলোকেটিং মডার্ন সায়েন্স থেকে

No comments: