Thursday, September 6, 2018

আহকমইআলমগিরি৫ - হামিদুদ্দিন খাঁ বাহাদুর

যদুনাথ সরকারের অনুবাদ
(ছবিতে আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শিবাজী পুত্র সম্ভাজীর বিচার)
আওরঙ্গজেবের উত্তরভারত শাসন
নতুন শাসক হয়ে ঔরঙ্গজেব দীর্ঘসময় ধরে তুলনামূলকভাবে শান্তি উপভোগ করেছেন। তার সিংহাসনে আরোহন করাকে ধন্যবাদ জানিয়ে যেতে মুঘল দরবারে ২২মে ১৬৬১তে পারস্য থেকে দূত বাহিনী আসে, বুখারা থেকে দৌত্য সম্মান আসে ১৯ নভেম্বর ১৬৬১, মক্কা, আবিসেনিয়া এবং আরব থেকেও দূত আসে। প্রত্যেক দৌত্য বাহিনীকে মুঘল রাজদরবারের পক্ষে বিপুল ঔজ্জ্বল্যে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় আসা বার্নিয়ে, তাভার্নিয়ে এবং অন্যান্য ইয়োরোপীয় দূতেদের চোখ সেই ঔজ্জ্বল্য ধাঁধিয়ে যায়। ইতোমধ্যে ১২ মে থেকে ২৪ জুন ১৬৬২ পর্যন্ত তার স্বাস্থ্যর বিপুল অবনতি ঘটতে থাকলে তার নবতম আধিকৃত সিংহাসনে বসার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠতের থাকে। কিন্তু সেরে উঠে সমস্ত অভিযোগকারীর মুখ বন্ধ করে স্বাস্থ উদ্ধারে কাশ্মীরে ঘুরতে গেলেন ১ মে ২৯ সেপ্টেম্বর ১৬৬৩।
সাম্রাজ্যের অক্ষহৃদয়ে শান্তি বিরাজ করলেও সীমান্তে কিন্তু যুদ্ধ লেগেই রইল। উচ্চাভিলাষী, উদ্যমী সেনাআমলারা পাদশার সাম্রাজ্য ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করছিলেন সীমান্তে যুদ্ধ লাগিয়ে। বিহারের সুবাদার দাউদ খাঁ ১৬৬১র এপ্রিলে পালামৌ দখল করেন। বাংলার সুবাদার মীর জুমলা ১৯ ডিসেম্বর ১৬৬১ থেকে ১৭মার্চ ১৬৬২ পর্যন্ত প্রথমে কোচবিহার দখল পরে আসামের রাজধানী দখল করলেও বর্ষা, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদির প্রকোপে তার সেনাকে ধ্বংস করল এবং তিনি ৩১ মার্চ ১৬৬৩তে সুবার রাজধানী ঢাকায় ফেরার আগেই পথে মৃত্যু বরণ করেন। ২৬ জানুয়ারি ১৬৬৬ সালে বাংলার সুবাদার শায়েস্তা খাঁ পর্তুগিজ এবং বর্মি জলদস্যুদের কব্জা থেকে চট্টগ্রাম ছিনিয়ে নেন এবং বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ন অঞ্চল সন্দ্বীপ দখল করেন। কাশ্মীর থেকে অভিযান চালিয়ে বৃহত্তর তিব্বতের রাজাকে ‘ইসলামে অন্তর্ভূক্ত’ করা হল নভেম্বর ১৬৬৫তে। সব থেকে বড় সাফল্য পেলেন জয় সিংহ শিবাজীর দুইতৃতীয়াংশ এলাকা এবং দুর্গ দখল করে নিয়ে(পুরন্ধরের চুক্তি ১১ জুন ১৬৬৫)। তাকে জয় সিংহ পাদশাহকে সম্মান জানানোর জন্য আগরা আসতে প্ররোচিত করলেন (১২মে ১৬৬৬)। সেই সুযোগে আওরঙ্গজেব অরাষ্ট্রনায়কচিতভাবে শিবাজীকে কারাগারে নিক্ষেপ করলেও শিবাজী ১৯ আগস্ট যেভাবে কারাগার থেকে পালিয়ে যান সেই গল্পটা এখন প্রায় লোককথা হয়ে উঠেছে। এটা সত্য যে ১৬৬৬র প্রথমার্ধে বিজাপুরে জয় সিংহের অভিযান সাম্রাজ্যের পক্ষে খুব বেশি কিছু লাভের হয় নি, বরং একে রাজ্য দখল না বলে হামলা, লুঠের জন্য অভিযান বলাই শ্রেয়।
তবে আফগান সীমান্তে ইয়ুসুফজাই আদিবাসী এবং তাদের সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে শুরু হওয়া লড়াই (১৬৬৭তে শুরু) জবরদস্তভাবে হয়েছিল। এই পাহাড়ি জনগোষ্ঠী যুদ্ধকে বহুকাল ধরে টেনে নিয়ে যায়। একের পরে এক প্রখ্যাত মুঘল সেনানায়ক এই অঞ্চলে গিয়ে হাতপুড়িয়ে তাদের সুনাম নষ্ট করেছেন। শেষে “খাইবার দরজার পাহারাদার” হিসেবে স্বীকার করে ইয়ুসুফজাইদের বিপুল সাম্মানিক দিয়ে মুঘল সাম্রাজ্যকে শান্তি কিনতে হয়।
বিজাপুর এবং শিবাজীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলতেই থাকে বহুবছর ধরে। প্রতিপক্ষ মুঘল সেনানায়কদের নিয়মিত উপঢৌকন দেওয়ায় তারা মন দিয়ে যুদ্ধ করত না, ফলে দাক্ষিনাত্যের রাজারা তাদের জমিন ধরে রেখেছিল। মুঘল পক্ষের এই অভিযানে কোন কিছুই সাধিত হয় নি। দাক্ষিণাত্যের মুসলমান রাজারা, মুঘলদের ভয়ে শিবাজীর সঙ্গে আঁতাত ক’রে শিবাজীর সম্পদ শক্তি, রাজ্য ক্ষমতা এবং সম্মান বাড়াতে সাহায্য করে। শিবাজী ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুর(৫ এপ্রিল ১৬৮০) আগে পর্যন্ত দাক্ষিনাত্যের সব থেকে বড় সামরিক শক্তি হয়ে উঠেছিলেন।

No comments: