Friday, September 14, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং২৮ - অড্রে ট্রুস্কে

চতুর্থ অধ্যায়
হিন্দুস্থানের প্রশাসক
সম্রাটের নজরে বিপুল সাম্রাজ্য
শাহজাহান আদালত চালাতেন সপ্তাহে মাত্র এক দিন এবং তাঁর সর্বশক্তিমানের প্রতি নিবেদন এবং সত্যের প্রতি নিষ্ঠায় কেউ আসত না অভিযোগ দায়ের করতে। বর্তমানে সম্রাট আওরঙ্গজেব দিনে দুবার আদালত চালান এবং তাঁর কাছে বিপুল অভিযোগ জমা পড়ে – ভীমসেন সাক্সেনা, ফারসি ভাষায় আওরঙ্গজেবের প্রশাসনে কাজ করা এক আমলার বিবৃতি
বিশাল বড় সাম্রাজ্য নজরদারি করতে আওরঙ্গজেবের প্রয়োজন ছিল বিশাল বড় আমলাতন্ত্রের দক্ষতা। তিনি নিজে সাম্রাজ্যের এমুড়ো ওমুড়ো কোনো দিনই ঘুরে বেড়ান নি – শুধু এক দফা উত্তরভারতে কাটিয়েছেন, এবং সমগ্র শেষ দফা দক্ষিণ ভারতে। সম্রাটের অনুপস্থিতিতে আমলাতন্ত্রকে বিশাল বৃহৎ মুঘল সাম্রাজ্য চালানোর দৈনন্দিনতার কাজ করতে হয়েছে। ন্যায় বিচার দেওয়ার যুক্তিতে যে দাক্ষিণাত্য অভিযান করেন, সেই কাজে শারীরিকভাবে সাম্রাজ্যকেন্দ্রে উপস্থিত না থেকেও তিনি নিয়মিত প্রচুর খুঁটিনাটি প্রশাসনিক কাজ দেখাশোনা করতে অসুবিধা হয় নি।
সাম্রাজ্যের চার কেন্দ্র থেকে আওরঙ্গজেবের কাছে রোজ পাঠানো সংবাদচুম্বক(আখবারত) রাজকীয় দরবারে নিয়মিত পড়া হত। এতে থাকত আমলাদের কাজকর্মের নানান সমীক্ষা এবং সাম্রাজ্য জোড়া ঘটনাবহুল উল্লেখযোগ্য নানান সংবাদ। সে সময় সারা ভারতজুড়ে প্রত্যেক এলাকার নেতৃত্বই এই ধরণের সংবাদচুম্বকের ওপর ভরসা করতেন, একইভাবে সাম্রাজ্যের বন্ধু বা শত্রুর কাছে দরবারের নানান ঘটনা পৌঁছত। উদাহরণস্বরূপ ডাচ দূত হার্বার্ট ডি জ্যাগার বলছেন সারা রাজ্য থেকে আসা এই ধরণের সংবাদ পড়তে শিবাজী এতই ব্যস্ত থাকতেন যে তিনি ১৬৭৭ সালে শিবাজীর সময় চেয়েও পান নি।
এই পাঠানো সংবাদগুলিতে আওরঙ্গজেব বিশেষ করে আগ্রহী ছিলেন আমলাদের ব্যবহার জানতে। এই ফাঁকফোকরগুলো আওরঙ্গজেবের প্রয়োজন হত লজঝড়ে সাম্রাজ্যটাকে চালিয়ে নিয়ে যেতে।
---
সামগ্রিক মুঘল সাম্রাজ্যের মৌলিক নিরাপত্তা বিষয়ে আওরঙ্গজেব চিন্তিত ছিলেন। তার পুত্র এবং সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসক অভিজাতদের বার বার চিঠি লিখে রাজপথের নিরাপত্তা এবং সাধারণতম মানুষের ওপর অত্যাচার রুখতে নির্দেশ দিতেন, এবং বিফলে তার সুকঠোর প্রত্যাঘাত নিশ্চিত ছিল। আওরঙ্গজেবের সার্বিক চেষ্টা সত্ত্বেও সাম্রাজ্যে বিশেষ করে তার রাজত্বের সময়ের শেষের দিকে আইনশৃঙ্খলা একটা গুরুত্বপূর্ণ মাথা ব্যথা হয়ে ওঠে। সে সময় মোঘল সাম্রাজ্য যতটা পারা যায় নিজেকে ছড়িয়ে ফেলেছে এবং দশকের পর দশক জুড়ে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সে রিক্ত আর নিঃস্ব। নতুন যারা আমলাতন্ত্রে প্রবেশ করছেন তারা মুঘল সাম্রাজ্যের তত্ত্বে খুব একটা প্রভাবিত হচ্ছেন না। ১৬৯০ সালের মাঝামাঝি Gemelli Careri অভিযোগ করে বলছেন, তস্করদের থেকে মুসাফিরদের বাঁচাবার উপায় করে না মুঘল ভারত। অথচ সাফাভি বা অটোমান সাম্রাজ্যের অবস্থা তুলনামূলকভাবে উন্নত। আওরঙ্গজেব নিজেই অস্বস্তি প্রকাশ করে বলছেন নানান গুরুত্বপুর্ণ শহরের বাইরে, যেমন আহমেদাবাদ বা বুরহানপুরে গ্রামেও তস্করেরা আরও বেশি আঘাত হানছে।

No comments: