Thursday, September 6, 2018

আহকমইআলমগিরি১০ - হামিদুদ্দিন খাঁ বাহাদুর

যদুনাথ সরকারের অনুবাদ
(ছবি - শিবিরে ঝরোখায় আওরঙ্গজেব)
১৬৮৮র নভেম্বরে বিউবনিক প্লেগ দেখা দিল বীজাপুরে। রাজ পরিবার থেকে সাধারণ চাষী কেউই ছাড়া পেল না। সম্রাটের স্ত্রী আওরঙ্গাবাদী মহল, সদর ফয়জল খাঁ এবং যশোবন্ত সিংহের মিথ্যা ছেলেটিও মারল। কম করে হলেও এক লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
শম্ভুর গ্রেফতারের পর তার ভাই রাজারাম শ্বাসরোধকারী ঘটনায় জিঞ্জি (মাদ্রাজের দক্ষিণে আর্কটএ) দুর্গ থেকে পালায়। জিঞ্জি দুর্গ অবরোধ করে রেখেছিলেন সেনাপতি জুলফিকার খান নসরত জং এবং শাহজাদা কম বক্স (সেপ্ট ১৬৯০)। এটির পতন হয় ৭ জানু ১৬৯৮। দুবছর পরে মারাঠা শেষ রাজা রাজারাম মারা যায়। কিন্তু মারাঠা সেনাপতিরা মুঘলদের সঙ্গে চোরাগোপ্তা লড়াই চালিয়ে তাদের ব্যতিব্যস্ত এবং সম্ভাব্য প্রচুর ক্ষতি করতে লাগল। এই সময়ের দুজন প্রখ্যাত সেনা নায়ক দানা সিং জাধব এরবং শান্ত ঘোড়পাড়ে (পরে নানা সিন্ধিয়া) মুঘলদের প্রচুর ক্ষতি করতে থাকেন।
শেষ সময়
দক্ষিণে বিজাপুর এবং উত্তরে মঞ্জিরা নদী পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক বছর সেনাবাহিনী নিয়ে অভিযান করতে করতে ভীমা নদীর পূর্বে পান্ধারপূরের পাশে ব্রহ্মপুরীতে নিজের থাকা গাড়েন, এটির নাম দেন ইসলামপুরী ২১ মে ১৬৯৫। তাঁবু খাটানোর পর আস্তে আস্তে একটি দেওয়াল ঘেরা শহর গড়ে উঠল। যখন তিনি অভিযানে যেতেন, তখন তার পরিবার এখানে থাকত।
১৬৯৯ সালে তখন তিনি ৮১ বছরের, ইসলামপুরীতে চার বছর থেকেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে চললেন মারাঠা দুর্গ অবরোধে। এরপরে তার জীবনে পৌনপুণিকভাবে একই ঘটনা ঘটতে থাকে, তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সৈন্যক্ষয় করে, সময় নষ্ট করে একটির পর একটি দুর্গ জয় করতে থাকেন আর তিনি চলে যাওয়ার কয়েক মাস পরে অরক্ষিত দুর্বল মুঘল সেনা থেকে সেই দুর্গটা কেড়ে নেয় মারাঠারা। আবার এক বছর দুবছর পর একই দুর্গ সম্রাট দখল করতে যান! তার শিবিরের সেনা আর সেনাকর্তারা অস্বাভবিক এই কাজে কাদা পথ বেয়ে, ভর্তি নদী পেরিয়ে, ভাঙ্গা পাহাড়ি পথে উঠে যে মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট করেছেন তা অবর্ণনীয়, পথে মালবাহক পালিয়ে গ্যাছে, পশু খিদেয় যন্ত্রনায় এবং অতিরিক্ত বোঝায় মরে গ্যাছে, এবং তার শিবিরে খাদ্যের বার বার অভাব দেখা দিয়েছে। কিন্তু আওরঙ্গজেব সিসিফাসের মত অটল এবং তাকে যদি কোন পরামর্শদাতা হিন্দুস্থানে ফিরে আসার কথা সাহস করে বলত তিনি তাকে ব্যঙ্গে ব্যঙ্গে ভরিয়ে দিয়ে বলতেন ডরপোক। আর সেনানায়ক নুসরত জং আর ফিরুজ জং, সুজাত খান আর মুহম্মদ মুরাদ খান, তারবিয়ত খান এবং ফাতুল্লা খানের পরস্পরের মধ্যে ঈর্ষা নেপলিয়নের সেনানায়কদের পেনিনসুলার যুদ্ধে ঈর্ষার কতাহ স্মরণ করিয়ে দ্যায়। ফলে সম্রাট যদি নিজে কোন অভিযান করে তাহলে কিছু হলেও হতে পারে, নাহলে সব শূন্য।
এই অবরোধগুলির ধারাবাহিক কাহিনী
বসন্তগড় ২২-২৫ নভ ১৬৯৯
সাতারা ৮ ডিসে ১৬৯৯ – ২১ এপ্রিল ১৭০০
পারলিগড়(সাতারার কাছে) ৩০ এপ্রিল – ৯ জুন
১৭০০ সালে খাওয়াসপুরে বর্ষার জন্যে শিবির পাতা ৩০ আগস্ট – ১৬ ডিসে
পানহালা ৯ মার্চ – ২৮ মে, ১৭০১, পানহালা দখল
১৭০১এ বর্ষার জন্য খাতানএ শিবির ফেলা ২৯ মে – ৭ নভে
ওয়ার্ধনগড় দখল (১৬ জুন ১৭০১), নন্দগির, চন্দন, এবং ওয়ান্ধন(৬ অক্টো) দখল করেন ফাতুল্লা খান
খেলনা ২৬ ডেসে ১৭০১ – ৪ জুন ১৭০২
১৭০২এর বর্ষার সময় কুচ করেন(১০ জুন – ১৩ নভ) খেলনা থেকে বাহাদুরগড়, মাঝে আগস্টে ভাদাগাঁওতে এক মাসের বিশ্রাম
কোণদানা ২৭ ডিসে ১৭০২-৮ এপ্রিল ১৭০৩
১৭০৩এ পুনায় বর্ষার জন্যে বিশ্রাম ১ মে – ১০ নভ
রাজগড় ২ ডিসে ১৭০৩ – ১৬ ফেব ১৭০৪
তোর্না ২৩ ফেব – ১০ মার্চ ১৭০৪
১৭০৪এর বর্ষার জন্যে খেডএ বিশ্রাম ১৭ এপ্রিল – ২১ অক্টো
ওয়াগিনগেরা ৮ ফেব্রু – ২৭ এপ্রিল ১৭০৫
বর্ষার জন্যে ওয়াগিনগেরার থেকে আট মাইল দূরে দেবপুরে ১৭০৫এ বিশ্রাম ১ মে ২৩ অক্টোবর

No comments: