Monday, September 10, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং১৯ - অড্রে ট্রুস্কে

আওরঙ্গজেবের হত্যাকর্ম অবশ্যই আধুনিক পাঠকের বিবিমিষা উদ্রেক করবে, কিন্তু প্রশ্ন হল তার ভায়েরা ক্ষমতায় এলে কি অন্য কোন পথ নিতেন? মানুচি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে এই বিষয়টা ধরেছেন। মৃত্যুদণ্ডের দিন আওরঙ্গজেব দাদাকে প্রশ্ন করলেন, তিনি কি করতেন যদি পাশার দান পাল্টে যেত? দারা বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করেই উত্তর দিলেন তিনি আওরঙ্গজেবের দেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটে দিল্লির সদর দরজায় ঝুলিয়ে রাখতেন। আওরঙ্গজেব তার দাদার মৃতদেহ হুমায়ুনের সমাধিপাশে কবর দ্যান।
মুঘল প্রথা অনুসরণ করে আওরঙ্গজেব দারা শুকোর সমর্থক এমন কি তার অন্য ভাইদের প্রতি ধৈর্য এবং বিবেচনাও প্রদর্শন করেন। তিনি তার ভায়ের সৈন্যবাহিনী এবং পরামর্শদাতাদের নিজের প্রশাসনে যোগ দিতে সাদরে আহ্বান জানান। মুরাদ গুজরাটি ধনী জৈন সওদাগর শান্তিদাসের থেকে যে বিপুল অর্থ ধার নিয়েছিলেন, সে ধার আওরঙ্গজেব শোধ করে দ্যান। ১৬৭০ সালে আওরঙ্গজেব তার কন্যার সাথে দারার ছোট ছেলে সিপিহার শুকোর আর সুলেইমান শুকোর কন্যার সঙ্গে শাহজাদা আকবরের বিবাহ দ্যান। দারার ধর্মগুরু শরমাদএর মত কয়েকজন মাত্র হাতে গোনা আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণ্য পায় নি যিনি দাদার জয়ের দৈববাণী করেছিলেন। ১৬৬১তে আওরঙ্গজেব তাঁকে হত্যা করেন।
দারা শুকোর কৃষ্টিগত উত্তরাধিকার নিয়ে আওরঙ্গজেব আরও কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৬৪০ থেকে ১৬৫০এর দশক জুড়ে শাহজাহানের দরবারে থাকার জন্যে তিনি বিপুল সময় পেতেন তার ধর্মীয়, সাহিত্যিক এবং আধ্যাত্মিক কাজকর্ম সম্পাদন করার। তাঁর নির্দেশে এক দল ব্রাহ্মণ পঞ্চাশটা উপনিষদ ফারসি ভাষায় অনুবাদ করেন। এই অনুবাদটি পরে ফ্রান্সে যায় এবং সংস্কৃত সাহিত্য হিসেবে পরিগণিত হয়। তিনি পাঞ্জাবি আধ্যাত্মিক নেতা বাবা লালের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন। তিনি হিন্দুবাদ এবং ইসলামের লক্ষ্য যে এক সে কথা বলার জন্যে ফারসি ভাষায় Confluence of Two Oceans লেখেন এবং এই বইটা সংস্কৃততে সমুদ্রসাগরম নামে অনুবাদ হয়।
হিন্দু দর্শনের প্রতি দারার গভীর উৎসাহ দেখে তিনি দাদার এই পরীক্ষানিরীক্ষার বিষয়টার চর্চা তুলে দ্যান। যে ব্রাহ্মণের মাধ্যমে এই কাজটা ঘটিছিল শাহজাহানের দরবারে বেনারসের কবীন্দ্রাচার্য সরস্বতীর যে দরবারি ভাতা পেতেন তা বন্ধ করে দ্যান। কবীন্দ্রাচার্য আওরঙ্গজেবকে তার ভাতা চালু করার আবেদন করলেও তিনি তা মানেন না। এইভাবে তিনি তার দাদার কৃষ্টির উত্তরাধিকার থেকে নিজেকে বার করে নিয়ে আসেন।
---
দারার এবং তার কৃষ্টির উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করা আওরঙ্গজেবের বাঁ হাতের খেলা হলেও আসল প্রশ্ন, তার বাবাকে কিভাবে সামলাবেন সেই বিশাল প্রশ্ন তার সামনে উঠতে শুরু করে। বিশেষ করে আওরঙ্গজেব সিংহাসনে বসার পরে তার স্বাস্থ্য ভাল হতে শুরু করায় আওরঙ্গজেবের মাথা ব্যথা বাড়ে। কেউ কেউ বলেন আওরঙ্গজেব তার বাবাকে আগরা দুর্গের একটা ঘর, যেখান থেকে দূরে তার স্ত্রীর সমাধি তাজ মহল দ্যাখা যেত, সেটি বন্ধ করে চাবিটি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। পঞ্চম মুঘল সম্রাট তার জীবনের বাকি সাড়ে সাত বছর দুর্গে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটান। সঙ্গী ছিলেন শুধু বড় মেয়ে জাহানারা। কেউ কেউ এও বলেন আওরঙ্গজেব যেভাবে শাহজাহানকে সিংহাসন চ্যুত করে বন্দী বানান, সে জন্যে যুবা বয়সে তার প্রতি পিতার ব্যবহার দায়ি।

No comments: