Saturday, September 8, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং৫ - অড্রে ট্রুস্কে

অন্যান্য মুঘল শাসক যতটা আধুনিক ঐতিহাসিকদের দাক্ষিণ্য পেয়েছেন, আওরঙ্গজেবকে নিয়ে তার কাছাকাছি গভীর কাজ গত কয়েক দশকে হয় নি বললেই চলে। যে সম্রাটের জীবন নিয়ে আমরা প্রায় কিছুই জানি না, যার জীবন নিয়ে গবেষণা প্রায় হয় নি বললেই চলে, দুর্ভাগ্যক্রমে তাকে সাদায় কালোয় দুষ্কৃতি হিসেবে উপস্থাপন করার উদ্যম নেওয়া হয়েছে এত দিন। আওরঙ্গজেব এমন একজন শাসক, যার জীবনের অধিকাংশ সময় মুঘল আদিবাসিত্বের নানান চাহিদার সঙ্গে জুড়েছিল বিচিত্র বৈপরীত্যের সমাহার, ক্ষমতায় যাবার উদগ্র বাসনা, বিচার দেওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছে, আর মহানুভবতা। তিনি যে সময়তা বেঁচেছেন, সে সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের কৃষ্টিগত জ্ঞানের যে দূরন্ত ব্যবধান তৈরি হয়েছে, সেই ব্যবধানকে মাথায় রেখে যে কোন ঐতিহাসিকের কাছে এই ধরণের মানুষের জীবন নিয়ে কাজ করা যে কোন সময়ে কড়া চ্যালেঞ্জের মত।
আওরঙ্গজেব যেন ইতিহাসের বিদ্যুতবাহী তার, যা আজকের দিনেও আগুণ বর্ষণ করেচলে। বর্তমানে গণমানসে তাঁকে নিয়ে যে সব কাহিনী রচনা হচ্ছে, তা বাস্তবতা থেকে বহুদূরে দাঁড়িয়ে রচিত। আমরা যদি আজকের মিথ-মিথ্যার ঘোমটার আবরণ উন্মোচন করে কুজ্জ্বটিকার আস্তরণ সরিয়ে ফেলতে পারি, তাহলে হয়ত সপ্তদশ শতকের গুরুত্বপূর্ণতম সম্রাটের জীবনে সত্যিকারের তথ্যের প্রতি উঁকিঝুঁকি মারতে পারব। অতীতের কোন পথ আজকে আর অবশিষ্ট নেই, তাই আজ আমরা আওরঙ্গজেবকে এই সময়ে দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করে যাব। এর পরে আমরা দেখব তাঁকে তাঁর সময় কিভাবে তৈরি করেছে এবং দেখব তিনি কিভাবে তাঁর সময়কে গড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন সেই তথ্যগুলিও।
ইতিহাসের খলনায়ক হিসেবে আওরঙ্গজেব
ইতিহাসের শেষতম তথাকথিত ‘গ্রান্ড মুঘল’ আওরঙ্গজেব, ঘড়ির সময় পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যার জন্যে তা থেমে গিয়েছিল এবং ভেঙ্গেও যায় – জবাহরলাল নেহরু
২০১৫ সাল আওরঙ্গজেবের জন্য খুব খারাপ বছর। ভারতের রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কি করে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নামে চিহ্নিত হয়, তাই নিয়ে তীব্র বিতর্ক ওঠে। স্থানীয় এক শিখ গোষ্ঠী এর কারণ হিসেবে জানাল “তাঁর সময়ের ভারতে জঘন্যতম অসহ্য অমানবিক পীড়া দিয়ে নানান দুষ্কর্ম করার নায়ক” ছিলেন আওরঙ্গজেব, তাই তাদের বিরোধিতা। বিজেপির কিছু জনপ্রতিনিধি এই সুযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিল্লির জন্য ব্যথা হিসেবে ব্যখ্যা করে এই সময়ের পুরোনো পাতাকে সরিয়ে দিতে উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। সেই সুযোগে অতীতের পীড়ক শাসকের নাম অন্তত প্রাথমিকভাবে দিল্লির রাস্তার নাম থেকে মুছে দেওয়ার দাবি জানালেন। ২০১৫র আগস্টের শেষের দিকে একদিন দ্যাখা গেল এই রাস্তাটি ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের নামে চিহ্নিত হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে পৌর সংস্থার কর্মীরা কোন এক রাত জুড়ে সেই রাস্তা থেকে আওরঙ্গজেবের নাম চেঁছে তুলে দিল।
এই কাজে সমাজে আওরঙ্গজেবের নাম তলিয়ে গিয়ে গনমানস থেকে মুছে যাওয়া তো দূরস্থান, তিনি হঠাতই জনগণের স্মতি কণ্ডুয়ন করে সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় তীব্রভাবে উঠে এলেন। এর এক মাস পরে অক্টোবরে একটি রেকর্ড করা আলাপচারিতায় স্থানীয় মুসলমান পৌর কর্মীদের তীব্রভাষায় গালি দিতে শোনা গেল শিবসেনা সাংসদকে “আওরঙ্গজেবের বাচ্চা” হিসেবে। মুসলমানেদের বিরুদ্ধে ছোঁড়া এই লব্জ আমরা আগে শুনিনি, বরং অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস কাণ্ডের মিছিলে কর সেবকদের মুখে আমরা মুসলমান বিরোধী ‘বাবর কে আওলাদ’ নামক স্লোগান শুনেছিলাম। কিন্তু কি করে বাবরকে তার উত্তরপুরুষ আওরঙ্গজেব হঠিয়ে দিলেন?

No comments: