Sunday, September 9, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং১৭ - অড্রে ট্রুস্কে

(ছবিতে আওরঙ্গজেব)
আগরার লাল দুর্গে হজাহান আওরঙ্গজেবের সঙ্গে দ্যাখা করতে মরিয়া। কোরাণের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বার্তা পাঠিয়ে তিনি তাঁকে বললেন বহু বছর আলাদা থাকার পর যোশেফ, তাঁর পিতা জেকবের কাছে ফিরে ফিরে এলে রাজা তাকে মিষ্টি কথায় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন কেন তাকে তিনি দূরে রেখেছিলেন। এটা প্রতারনার ফাঁদ হতে পারে আন্দাজ করে আওরঙ্গজেব তার সঙ্গে দ্যাখা করতে অস্বীকার করলেন। বরং ১৬৫৮ সালের জুনের প্রথম দিকে শাহজাহানকে দুর্গের ভেতরে রেখে তিনি আর মুরাদ আগরা দুর্গ অবরোধ করে জলের সরবরাহ ছিন্ন করে দিলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই সম্রাট আগরা দুর্গের জরজা খুলে তার দুই ছেলের কাছে তোষাখানা, বারুদঘর এবং নিজেকে সঁপে দিলেন। বড় মেয়ে জাহানারাকে মধ্যস্থ করে শাহজাহান শেষ চেষ্টা করলেন রাজ্যকে পাঁচভাগে ভাগ করে চার ভাই এবং আওরঙ্গজেবের বড় ছেলে মহম্মদ সুলতানের(মৃ ১৬৭৬) মধ্যে বেঁটে দিতে। শাহজাহানের পক্ষে থাকা অধিকাংশ অভিজাত আওরঙ্গজেবের দিকে ঝুঁকে পড়লেন এবং অবরোধ শেষ হবার আগেই তাদের আনুগত্য পাল্টে ফেললেন।
পরের কিছু বছরে আওরঙ্গজেব আর মুরাদের মধ্যে জোটে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মুরাদ তার বাহিনীর সেনাদের মধ্যে মাইনে বাড়িয়ে চেষ্টা করছিলেন পরোক্ষে আওরঙ্গজেবের বাহিনীর সেনারা যাতে তার পক্ষে চলে আসে। দারাকে মানিয়ে নেওয়ার অনুরোধ রাখলেন না মুরাদ। এমন কি আওরঙ্গজেবের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠকেও তিনি অনুপস্থিত থাকলেন। আওরঙ্গজেব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তার কাছে মুরাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে।
আওরঙ্গজেব অসুস্থতার ভান করে ১৬৫৮ সালের গ্রীষ্মে তার ভায়ের সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত বৈঠকের আয়োজন করলেন। খাওয়া দাওয়ার পর মুরাদ বিশ্রাম নিতে চেয়ে অস্ত্র নামিয়ে রাখলেন। এর পরের ঘটনা নিয়ে একটি সংস্করণে শোনা যায় মুরাদকে প্রচুর মদ্য পান করিয়ে বেসামাল করিয়ে দেওয়া হয়(এবং আওরঙ্গজেব নিজেকে ঠিক রাখেন) অথবা আরেক সংস্করণে পাওয়া যায় অঙ্গসংবাহকদের হাতের জাদুতে তিনি কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ে ঘুমিয়ে পড়তে থাকেন। সুরক্ষাহীন মুরাদকে আওরঙ্গজেবের সেনা গ্রেফতার করে। আওরঙ্গজেব ভায়ের কুড়ি হাজার সেনা নিজের দিকে টেনে নেন।
হিন্দুস্থানের রাজা
যখন উৎসব নিজেই বেহেস্তের মত সজ্জিত হয় তখন আকাশ উঠে দাঁড়িয়ে নিজের মত করে নৃত্য করে – অষ্টাদশ শতকের ঐতিহাসিক কাফি খাঁ, আওরঙ্গজেবের সিংহাসনে আরোহনের প্রেক্ষিতে
মুরাদ কারাগারে, শাহজাহান বন্দী এবং দারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে সে সময় আওরঙ্গজেব তার দুবারের সিংহাসন আরোহনের অনুষ্ঠানের প্রথম উৎসবটা বেশ দেরি করে আয়োজন করলেন। ১৬৫৮ সালের ৩১ জুলাই গণক, জ্যোতিষদের তৈরি করে দেওয়া তারিখে দিল্লির শালিমার বাগে আলমগির উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরোহন করলেন।
আওরঙ্গজেব মুঘল প্রথা অনুযায়ী গান বাজনার নির্দেশ দিয়ে উপহার ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন কিন্তু মুদ্রা ছড়ানো এবং তার রাজত্বকালের নামে শুক্রবার খুতবা দেওয়া থেকে অনুগামীদের নিবৃত্ত করলেন। ছোট, সরলভাবে হলেও শুরু হল তার দীর্ঘ রাজত্বকাল। কিছু বছর পরে বেশ কিছু ঐতিহাসিক তার সিংহাসনে আরোহনের সারল্য এবং স্মরনীয়তা স্মরণ করেছেন। যুবা আওরঙ্গজেবের তখনও দাড়ি সাদা হয় নি, বসে সামনে ঝুঁকে রয়েছেন, দরবারে আসা এক মুসাফির সম্রাটের তীক্ষ্ণ নাক এবং অলিভ রঙের চামড়া লক্ষ্য করেছিলেন, এবং সেটা হয়ত আপতিক ছিল। পরের দিকে ছবিতে তাকে দেখি বরাবরই সোজা শিরদাঁড়ায় বসতে। এই অনুষ্ঠানের মাত্র দুটি ছবি পাওয়া গিয়েছে, তাতে অনুষ্ঠানের গুণমান আর সরলতা প্রমান হয়। আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধ ধর্মাচারী মুঘল রাষ্ট্র শাসনের উচ্চাশা আমরা দেখতে পাই একটি অন্ধকার ঘরে বসে থাকা আওরঙ্গজেবের মাথায় এসে পড়া আলোয় মেঘ কেটে যাচ্ছে এবং যেন সর্বশক্তিমানের দোয়া চাইছে।

No comments: