Tuesday, September 11, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং২১ - অড্রে ট্রুস্কে

(ছবিতে দৌলতাবাদের ধ্বংসস্তুপ)
তার রাজত্বকালে আওরঙ্গজেব প্রায় প্রত্যেকটি বিদ্রোহ ধ্বংস করেছিলেন, ঠাণ্ডা মাথায় সাম্রাজ্য বিস্তারে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিলেন, এবং প্রচুর নির্মম অবরোধও তৈরি করেছেন। মুঘল শক্তি বিস্তারে বিশেষ করে তার প্রথম জীবনের শাসনকালে(১৬৫৮-৮১) দৌত্য নীতি অবলম্বন করেছিলেন। কিন্তু সামরিক শক্তি ব্যবহার করে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারে তাঁর কোন দ্বিধা ছিল না। ১৬৬০ সালে মারাঠাদের মুঘল বিরোধিতার শক্তি খর্ব এবং প্রতিরোধ দুর্বল করতে শিবাজীকে সাম্রাজ্যের ছাতার তলায় আনতে বহু চেষ্টা করেছেন আওরঙ্গজেব। তাঁর দৌত্য ব্যর্থ হল। তিনি বলপ্রয়োগ করলেন। সারা জীবন মারাঠারা তাকে ভুগিয়েছে। বলপ্রয়োগকরেও তিনি যে খুব বেশি সাফল্য পেয়েছেন সে কথা বলা যাবে না। শিবাজী যাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছিলেন, তাদের শাস্তি দিয়েছেন বেনারস আর মথুরার মন্দির ধ্বংস করে।
শাসনের প্রথমার্ধে তিনি প্রভূত সামরিক হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু কোথাও ক্ষমা প্রদর্শন করেন নি। উদাহরণস্বরূপ মুঘল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শিখ গুরু তেগবাহাদুর অস্ত্র ধরায় তাঁকে হত্যা করেন। ১৬৭০এর দশকে রাঠোড় আর শিশোদিয়া রাজপুতেরা বিদ্রোহ করলে তিনি সামরিক ওষুধ প্রয়োগ করে তাদের সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসেন। যে সব পারিবারিক সদস্য মুঘল রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব, স্বার্থ বিঘ্নিত করতে চেয়েছে, তাদের তিনি ছেড়ে কথা বলেন নি। শাহজাদা আকবর, আওরঙ্গজেবের পুত্র ১৬৮১তে বিদ্রোহ করলে তাকে দাক্ষিণাত্য পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিনি শেষ পর্যন্ত ইরানে পালিয়ে বাবার রোষের হাত থেকে বাঁচেন। যেখানে তিনি ১৭০৪ সালে মারা যান।
---
১৬৮১ সালে তিনি দক্ষিণভারতকে তার মত করে মুঘল সাম্রাজ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে, গোটা দরবারকে দাক্ষিণাত্যে তুলে নিয়ে যান তাঁর সঙ্গে। আকবরের সময় থেকে মুঘলেরা দাক্ষিণাত্য দখলের সক্রিয় চেষ্টা করছিল। কোন কোন সম্রাট দাক্ষিণাত্যে কিছুটা পা জমাতে পারলেও, আওরঙ্গজেব প্রথম সম্রাট যিনি দাক্ষিণাত্যে মুঘল সাম্রাজ্য সফলভাবে বিস্তার করেন।
আওরঙ্গজেব তার শাসনকালের অর্ধেকেরে বেশি সময়(১৬৮১-১৭০৭) মুঘল সাম্রাজ্য দাক্ষিণাত্যের প্রায় শেষ সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যেতে ব্যয় করেন। ১৮৬০তে তিনি বিজাপুর, গোলকুণ্ডা অবরোধ করে দুই সুলতানকে মুঘল পক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। ১৬৯০ থেকে ১৭০০র মধ্যে আরও দক্ষিণে তামিলনাড়ুর বহু পাহাড়ি দুর্গ মারাঠাদের থেকে কেড়ে নেন। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর বছরে মুঘল সাম্রাজ্যের জনগণের সংখ্যা ইওরোপের জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি ছিল, এবং মুঘল সাম্রাজ্যের ভূমিক্ষেত্র সব থেকে বেশি হল।
যুদ্ধ ও ক্ষমতা বাড়াবার ক্ষেত্রে আওরঙ্গজেব তার পূর্বজদের মতই ব্যাপক আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেছেন এবং সব থেকে বড় কথা সাফল্যও পেয়েছেন। ঐক্যবদ্ধ মুঘল সাম্রাজ্য রক্ষার গুরু দায়িত্ব তাঁর কাঁধে ন্যস্ত ছিল, এবং যেখানে সম্ভব সেখানে সীমান্ত বাড়াবার কাজ করেছেন সেনাবাহিনীর বল প্রয়োগ করে। কিন্তু যুদ্ধবিগ্রহের মাঠে রক্ত ঝরিয়ে জয় আর সীমান্ত বাড়াবার চিরাচরিত উচ্চশার থেকে অনেক জটিল কাজ ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে নিজেকে টিকিয়ে রাখা। আওরঙ্গজেবের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তিনি সামরিক শক্তি ব্যবহার করে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছেন ঠিকই তার সঙ্গে কিন্তু ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্তও রেখেছেন।

No comments: