Monday, September 24, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৩

ভূমিকা
মধ্যঅষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি বাংলার সমৃদ্ধি বিষয়ে এত সচেতন হয়ে পড়ে যে তারা বাংলাকে জয় করার পরিকল্পনার স্বপ্ন ছকতে থাকে। বহু উদাহরণে আমরা দেখাতে পারি, ১৭৫০এর আগে বাংলা দখলের পরিকল্পনা করে লেখালিখি করতে থাকে(Brijen K. Gupta, Sirajuddaullah, pp."35-37.)। ফলে ব্রিটিশদের হাতে পলাশী বিজয় কোন পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনাও নয় বা এটা হঠাতও ঘটে নি। পলাশী ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তনের সূচনাবিন্দু। বাংলায় উপনিবেশ স্থাপন, ইওরোপিয়দের কাছে এমন একটি সুযোগ এনে দিল, যেখান থেকে ব্রিটিশেরা তাদের সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করে সারা ভারত দখল করতে শুরু করে। অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদে যে বাংলা ছিল সমৃদ্ধশালী ভৌগোলিক এলাকা, সেটি নিতান্তই গরীব এক উপনিবেশের পরিণত হল ব্রিটিশদের হাতে পড়ে। ঔপনিবেশিক শাসনে বাংলা বিশ্বের উতকৃষ্টতম কারিগরি শিল্পকেন্দ্র থেকে রূপান্তরিত হল শুধু একটি কাঁচামাল রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবে। এই পরিবর্তনের মাত্রা বুঝতে আমাদের উপনিবেশপুর্ব র সময়ের ব্যবসা, শিল্প, বাজার এবং সওদাগরদের অবস্থা বোঝা জরুরি। এই বইটার উদ্দেশ্যও তাই। উপনিবেশের সময়ে পরম্পরার শিল্প বিশেষ করে তাঁত এবং রেশম, উনবিংশ শতকে এক্কেবারেই পর্যুদস্ত হয়ে যায়, এই তথ্যে আজ আর কোন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় হয় না। কিন্তু মনে রাখতে হবে এই দুটি শিল্প অষ্টাদশ শতকের প্রথমপাদ পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান বিশ্ববাজারের খাঁই মিটিয়েছে। এরই সঙ্গে আমরা এই শিল্পের কাঠামো এবং সংগঠন বিশদে বুঝব ৬, ৮, ৯ অধ্যায়ে, যার মাধ্যমে অমরা আন্দাজ করতে পারব কিভাবে বাংলার শিল্প এশিয় এবং ইওরপিয় বিপুল চাহিদা পূরণ করত বিন্দুমাত্র উতপাদনের প্রযুক্তি পরিবর্তন না ঘটিয়েই।
এই বইটি এই সময়ের এবং এই অঞ্চলের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বৃহত্তর বিষয় আলচনা করবে। ভারত বিষয়ক অধিকাংশ কাজে বিশেষ করে বাংলা নিয়ে কাজে ইওরোপিয় ব্যবসাকে বিপুল গুরুত্ব দেওয়া হয়(S. Bhattacharya, East India Company ( 1954); S. Chaudhuri, Trade and Commercial Organizataion (1975); K.N. Chaudhuri, Trading World (1978); Om Prakash, Dutch Company (1985); S. Arasaratnam, Merchants, Companies and Commerce (1986))। এই কাজে এশিয় বণিকদের বাণিজ্যের বিষয়টি ঢাকা পড়ে যায়। আমরা অস্বীকার করছি না আলোচ্য সময়ে ক্রমশ বাড়তে থাকা ইওরপিয় বাণিজ্যের সূত্রে বিপুল পরিমান দামি ধাতু আমদানি ঘটতে থাকে। একই সঙ্গে এটাও দেখান যাক মধ্য অষ্টাদশ শতকে বাংলা থেকে এশিয় বণিকদের এই দুটি দামিতম পণ্য সুতি আর রেশম বস্ত্রের রপ্তানির পরিমান ইওরপিয়দের রপ্তানির পরিমান থেকে অনেক বেশি। এর থেকে এটাও প্রমানিত হয় যে বাংলা থেকে পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ায় পণ্য পাঠানোর ভূপথের রাজপথ বাণিজ্য মুঘল, সাফাভি এবং অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরেও এক্কেবারে ধ্বংস হয়ে যায় নি, এটাওগুরুত্বপূর্ণ যে ১৭৭০এর দশকে এশিয় বানিকেরা ইওরোপিয় বণিকদের চাপে যখন বিপর্য্যন্ত, তখনও বেশ কিছু পরিমানে রেশম রপ্তানি হচ্ছে লাহোর এবং মূলতানে, বহুকাল ধরে যেটা যাযাবরদের ক্যারাভান করে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার পরম্পরার মুল কেন্দ্র(নোডাল পয়েন্ট) হিসেবে পরিগণিত হত। ইওরোপিয় এবং এশিয় মহাফেজখানা জুড়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে অষ্টাদশ শতাব্দের প্রথম পাদের রাজপথীয় বাণিজ্যের বিপুল তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব।
প্রখ্যাত ডাচ ঐতিহাসিক, J.C.van Leur এশিয় বাণিজ্যকে চরিত্রায়িত করেছেন মূলত পথবাণিজ্য(peddling trade) বা হকার বাণিজ্য এবং ধনীদের জন্যে বিক্রিত পণ্যের বাণিজ্যের মিলিত রূপ হিসেবে(J.C: van Leur, Indonesian Trade and Society, pp. 132-33, 197-201, 219-20.)। এই পথ ব্যবসায়ের তত্ত্বটি সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরেকজন প্রখ্যাত গবেষকের কাজে, এবং তিনি বিষয়টাকে এমন এক পর্যায়ে নামিয়ে এনে দাবি করেন যে সুরাটের প্রখ্যাত সওদাগর মুল্লা আবদুল গফফর নাকি ছিলেন একজন পথব্যবসায়ী বা হকার(Niels Steensgaard; Asian Trade Revolution, pp. 22-59; Ashin Das Gupta, Indian Merchants, pp. 11-13)। তবে নীলস স্পষ্টভাবে দেখান যে এশিয় বাণিজ্য মূলত ছিল অবিলাসদ্রব্য ভিত্তিক(Ashin Das Gupta, 'The Maritime Merchant, 1500-1800', Proceedings of the Indian History. Congress, Presidential Address, 35th Session, pp. 99-111)। বাংলার ক্ষেত্রেও দেখানো যায় বাংলা থেকে এশিয়া জুড়ে মূলত রপ্তানি হচ্ছে সাধারণ ক্যালিকো, দামিতম মসলিন বা সূক্ষ্ম ক্যালিকো নয়(সপ্তম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। পথের হকার ব্যবসা হিসেবে বলা যায় আমরা এই বইএর পঞ্চম অধ্যায়ে দেখিয়েছি, বাংলার প্রধান সওদাগর-ব্যাঙ্কার জগত শেঠ, কলকাতার উমিচাঁদ এবং আরমেনিয় খ্বাজা ওয়াজিদকে আমরা কোন ভাবেই, কোন সূত্রেই হকার বণিক বলতে পারি না। তাদের কাজের বিস্তৃতি, তাদের বাণিজ্য সাম্রাজ্য সূত্রে হয়ত তারা মেদিচি, ফুগার্স বা ট্রিপসের সঙ্গে তুলনীয়।

No comments: