(ছবিতে আওরঙ্গজেব এবং দারা শিকোহ)
দুর্ভাগ্যজনকভাবে শতাব্দের পর শতাব্দ জুড়ে বহু শিক্ষিত মানুষ আওরঙ্গজেবের ধর্মান্ধতা, দুষ্কর্ম ইত্যাদি বিষয়ে নানা ধরণের মন্তব্য করে আসছেন জঘন্য রকমের কৃষ প্রমানের ওপর ভিত্তি করে। তিনি বহু লক্ষ হিন্দুকে হত্যা করেছেন অথবা বহু হাজার মন্দির ধ্বংসের হোতা এই ধরণের বহু মিথ্যা ধারণা কোটি কোটি মানুষের স্মৃতিতে গেঁথে গিয়েছে। এই ভুল তথ্যের গণস্মৃতিগুলির কোনটাই ঐতিহাসিক সতের ভিত্তিতে চরিত হয় নি, যদি বহু বিশেষজ্ঞ এই অদ্ভুত ধারনাগুলির সঙ্গে সাযুজ্য আছে এমন কিছু প্রমান জোগাড়েরও চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সেগুলি More common than bald-faced lies, however, have been biased interpretations of cherry-picked episodes selected with the unabashed goal of supporting a foregone rebuke of Aurangzeb।
উদাহরণস্বরূপ, বিরোধীপক্ষরা বলেন আওরঙ্গজেব কিছু নির্দিষ্ট হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছিলেন, কিন্তু বলেন না, তিনি তার থেকেও বেশি হিন্দু মন্দির রক্ষায় ফরমান জারি করেছিলেন এবং শিক্ষিত জ্ঞানী ব্রাহ্মণদের জন্যে জমি আর আর্থিক বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছিলেন। তারা তাঁর হোলি বন্ধ করার নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব হন, কিন্তু পাশাপাশি বলেন না, একই সঙ্গে তিনি মহরম এবং ঈদ উদযাপন দুটোই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তারা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ভুলে যান স্বাস্থ্য উদ্ধারে আওরঙ্গজেব হিন্দু জ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন এবং তার পূর্বসূরীদের থেকে অনেক বেশি হিন্দু আমলা নিয়োগ করেন। আমরা কখোনোই আওরঙ্গজেবের প্রশাসনিক সময়ে এই সব প্রায় অনালোচিত কিন্তু ভারতবর্ষের ইতিহাসে গুরুত্বতম তথ্যগুলো তুলে না ধরে তার সময়কে ধর্মান্ধতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে তাকে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।
না আমরা কেউই বলতে চাইছি না যে আওরঙ্গজেবের কোন ব্যর্থতা বা দোষ ছিল না। আজকের আধুনিক বহুত্ববাদী মানব অধিকারের শর্তে আমরা তার আচরণের অনেক কিছুই অগ্রহনীয় কাজ দেখতে পাব(যদিও আমরা বলব সেই সময়ের শাসকেরা ইওরোপিয়দের মত বাংলা তথা বিশ্বজুড়ে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে গণহত্যা করেন নি, পৌনপুনিকভাবে লুঠ করেন নি, নিজেদের কৃষ্টি, ভাষা, আচরণ সভ্য হিসেবে চিহ্নিত করে শাসিত সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন নি)। আওরঙ্গজেব একটি আধুনিকপূর্ব সময়ে বাস করতেন যেখানে হিংসা, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব, এবং অন্যান্য কিছুর ধারণা সেই সময়ে, যে সময়ে উনি বেচে ছিলেন, সেই অবস্থানক্রমে বাঁধা ছিল। আওরঙ্গজেবের সমসাময়িক যেমন ইংলন্ডের দ্বিতীয় চার্লস বা ফ্রান্সের চতুর্দশ লুই বা অটোমান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সুলেইমান। কেউই বলছেন না এই ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি আজকের শর্তে খুব মহান শাসক, কারণ আজকে দাঁড়িয়ে আমরা তাদের আজকের শর্তে দেখার চেষ্টা করছি, যে ঐতিহাসিক গবেষণার উদ্দেশ্যটাই সম্পূর্ণভাবে বিপ্রতীপ।
ঐতিহাসিকেরা ঐতিহাসিক চরিত্রগুলির সময়ের নিরিখেই তাদের কাজ এবং অবদান বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন। We need not absolve our subjects of study of guilt, and we certainly do not need to like them. But we strive to hold back judgment long enough so that the myth of Aurangzeb can fade into the background and allow room for a more nuanced and compelling story to be told.।
মানুষ আওরঙ্গজেবকে উদ্ধার
সার্ভৌমত্বের স্থায়িত্ব এবং ভিত্তি নির্ভর করে বিচারের(আদালত) ওপর – শাসকদের প্রতি প্রবচন, আওরঙ্গজেব একে সমর্থন করে উদ্বৃত করেছেন
সার্ভৌমত্বের স্থায়িত্ব এবং ভিত্তি নির্ভর করে বিচারের(আদালত) ওপর – শাসকদের প্রতি প্রবচন, আওরঙ্গজেব একে সমর্থন করে উদ্বৃত করেছেন
কিছু বিশেষ পূর্বনির্দিষ্ট ধারণার ওপর ভিত্তি করে আওরঙ্গজেব শাসক হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছিলেন। তিনি নিজেকে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন সম্রাট, শুদ্ধ মুসলমান এবং মুঘল কৃষ্টি আর প্রথাগুলির ধারক বাহক হিসেবে তৈরি করার চেশষ্টা করেন। আওরঙ্গজেব এমন এক রাষ্ট্রের সম্রাট হয়েছিলেন যেটির মৌল উদ্দেশ্য সম্প্রসারণবাদ এবং তিনি তার সারাজীবনের অধিকাংশ সময়ে ব্যয় করেছেন হিংসার মাধ্যমে এই উপমহাদেশ ও তার জনগণের ওপর সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে। আমি যে আওরঙ্গজেবকে চিনছি, তার সম্বন্ধে বলার চেষ্টা করছি, তিনি এই মৌল নীতিগুলি দ্বারা চালিত হন। তবে তাকে সব থেকে বেশি প্রাণিত করেছিল বিচার দেওয়ার উদগ্র বাসনা, যা তাকে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল যন্ত্রনাকাতরভাবে ক্ষমতা দখলের মৃগয়ায়।
No comments:
Post a Comment