Thursday, September 6, 2018

আহকমইআলমগিরি৪ - হামিদুদ্দিন খাঁ বাহাদুর

যদুনাথ সরকারের অনুবাদ
(ছবিতে সমুগড়ের যুদ্ধ)
ইতিমধ্যে দারার দুটি বিপুল বাহিনী, একটি পুত্র সুলেইমান শুকো এবং মির্জা রাজার নেতৃত্বে বাংলা থেকে, আরেকটি যশোবন্ত সিং এবং কাশিম খানের নেতৃত্বে আওরঙ্গজেব আর মুরাদের বিরুদ্ধে বাহিনী পাঠাল সিংহাসন দখলের উদ্দেশ্যে। প্রথম বাহিনীটি ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৬৫৮য় বেনারসের উল্টোদিকে বাহাদুরপুরে সুজাকে হতচকিত করে তাকে মুঙ্গের পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু আওরঙ্গজেব এবং মুরাদের বাহিনী উজয়নীর ১৪ মাইল দূরে দীপালপুরে ভীষণ যুদ্ধে যশোবন্তর বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ১৫ এপ্রিল। দারা বিহার থেকে পুত্রকে জরুরি ডাক পাঠালেন। কিন্তু সুলেইমান দূরের বিহার থেকে ফিরে তার বাবাকে সাহায্য করা সম্ভব ছিল না। শত্রুকে ধ্বংস করে ফেলা আওরঙ্গজেবের হাতে ঘটনার লাগাম চলে আসে।
উজ্জয়িনী থেকে বিজীত ভায়েরা রাজধানীড় দিকে এগোতে শুরু করে। আগরা থেকে ১০ মাইল পূর্বে সমুগড়ে ২৯ মে, চরম গরমের দিনে দুই ভায়ের জোটকে আক্রমণ করেন, হেরে আগরা থেকে দিল্লি ছাড়িয়ে পাঞ্জাবের দিকে পালান। আওরঙ্গজেব আগরার দিকে রওনা হলেন। যমুনার পানীয় জলের সরবরাহ বন্ধ করে বাবাকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করে শেষ জীবন পর্যন্ত হারেমে বন্দী করে রাখেন। মথুরায় ২৫ জুন বিশ্বাসঘাতকতা করে মুরাদকে বন্দী করে ২১ হুলাই ১৬৫৮য় তিনি সিংহাসনে আরোহন করেন। দারার পেছনে সাম্রাজ্যের সৈন্য পাঞ্জাব পেরিয়ে সিন্ধ পেরিয়ে তাকে তাট্টার দিকে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে কচ্ছের রণে দুর্দশার মধ্যে কাটাতে বাধ্য করে। নতুন করে দ্বিতীয় সেনাবাহিনীক খাড়া করলেও সেটিও আজমেঢ়ে ধ্বংস হয় আওরঙ্গজেবের বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ১৪ মার্চ ১৬৫৯। আওরঙ্গজেবের সেনাপতিরা তাকে গরুখোঁজার মত করে খুঁজতে খুঁজতে বোলান গিরিপথে আদিবাদী রাজা তাকে ধরিয়ে দেয়। ধৃত দারাকে রাজধানীতে নিয়ে এসে রাস্তায় হাঁটিয়ে দাসেদের দিয়ে খুন করানো হয় ৩০ আগস্ট ১৬৫৯ এই বাহানায় যে, দারার অইসলামি আচরণে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জনৈক গুজরাটির পিতৃহত্যার অভিযোগে মুরাদ বক্সের শিরচ্ছেদ করা হয় গুজরাটের বন্দীশালায় ৪ ডিসেম্বর ১৬৬১। দারার জৈষ্ঠপুত্র সুলেইমান শুকোকেও তার অজান্তে একই বন্দীশালায় খুন করা হয় ১৬৬২র মে মাসে।
শুজা নতুন একটি বাহিনী নিয়ে এলাহাবাদ পেরিয়ে আসতে থাকেন সিংহাসন উদ্ধারের দ্বিতীয় চেষ্টায়। তার বাহিনী খাজোয়ায় ৫ জানু ১৬৫৯তে হেরে যায়। তাঁকে বাংলার দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জলে স্থলে দুবছরের মরণপণ লড়ায়ে শেষ পর্যন্ত তিনি আরাকানে পালিয়ে যান ১২ মে ১৬৬০ বর্মার রাজার আশ্রিত হয়ে। এখানে রাজা তার পরিবার সহ হত্যা করে।
সব কাঁটা সরিয়ে দিয়ে আওরঙ্গজেব ভারতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী শাসক হয়ে রাজত্ব চালানো শুরু করেন।

No comments: