Saturday, April 21, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা৬১ - ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং তার জ্ঞানচর্চার আঙ্গিক - সাম্রাজ্যের মন ও মান ।। বারনার্ড কোহন

অধ্যায় ৪
উনবিংশ শতকে, বস্তুকে হস্তশিল্প, পুরাকীর্তি আর শিল্পে রূপান্তর

রাষ্ট্র এবং অতীত ভারত সমীক্ষা 
লোক্যাল ট্রাক্টস চিহ্নিত শ্রেণীর বস্তুগুলো, যেখানে স্থানীয় রাজা, পুরোহিত এবং বিদ্বানদের থেকে ম্যাকেঞ্জি যে সব নথিকৃত গল্প, ইতিহাস নথির নিষ্কর্ষ ছিল, সেই সব মালমশলা মাদ্রাজ লিটারারি সোসাইটিকে পাঠানো হল। এগুলি মাদ্রাজ পৌঁছলেন লছমিয়া বললেন যে তিনি ম্যাকেঞ্জির আরব্ধ কাজগুলি শেষ করতে চান। তাকে এই কাজ করার সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু তার এই অনুরোধ মান্য করা হল না। হতোদ্যম না হয়ে লছমিয়া মাদ্রাজের গভর্নরকে তার বিশদ পরিকল্পনা পেশ করলেন। গভর্নর সেগুলি বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়ে পাঠিয়ে দিলেন গভর্নর জেনারেলের কাছে এবং গভর্নর জেনারেল সেই প্রস্তাব এশিয়াটিক সোসাইটিকে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন এটি বাস্তবানুগ কি না খতিয়ে দেখতে। লছমাইয়া আদতে ম্যাকেঞ্জির মতই ঐতিহাসিক নানান দ্রব্য সংগ্রহ করে, সেগুলি নথিকরণ করার পরিকল্পনাটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিলেন নিজের মত করেই। শুরুতে তিনি ভারতের ইতিহাস আর প্রত্নতত্ত্ব জানতে চাইছিলেন, এই কাজে বৌদ্ধিক আর সাহিত্যিক প্রবণতা আছে এমন ভদ্রলোকেদের সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি চান। এছাড়াও তিনি দক্ষিণ ভারতের প্রত্যেক জেলায় বুদ্ধিমান শিক্ষিতকে নিয়োগ করতে চাইছিলেন, যার সংস্কৃত এবং অন্যান্য প্রাচ্যভাষা আর সাহিত্যে দখল আছে এবং যে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। পরিকল্পনাটি জেমস প্রিন্সেপএর নেতৃত্বে এশিয়াটিক সোসাইটির কমিটি অব পেপার্সে পেশ করা হল, তিনি লছমনিয়ার যোগ্যতা আর পরিকল্পনা বিষয়ে লিখলেন, সাচ এন এক্সটেন্সিভ স্কিম উড নিড দ্য কন্ট্রোল অব মাস্টার হেড, একাস্টমড টু জেনারেলাইজেশন, এন্ড ক্যাপেবল অব এস্টিমেটিং দ্য ভ্যালু অব দ্য ড্রিফট অব ইন্সক্রিপশন এন্ড লেজেন্ডারি এভিডেন্স। দ্য কোয়ালিফিকেশন্স অব কাভেল্লি ভেঙ্কটা ফর সাচ অফিস, জাজিং অব দেম বাই হিজ এবস্ট্রাক্ট অর ইন্ডিড অব এনি নেটিভ, কুড হার্ডলি বি প্রনাউন্সড ইকুয়াল টু সাচ আ টাস্ক, হাউএভার ইউজফুল দে মে প্রুভ এজ অক্সিলিয়ারিজ ইন সাচ আ ট্রেন অব রিসার্চ। মোটামুটি এই পরিকল্পনা বিশ বাঁও জলে চলে গেল।
প্রিন্সেপের নেতৃত্বে কমিটি বলল যে সংগ্রহগুলি থেকে নিকর্ষিত জ্ঞান আরও ছড়িয়ে দেওয়া দরকার এবং সেগুলি যাতে বিদ্বানদের আওতায় থাকে তাও দেখা উচিত। এই উদ্দেশ্য পূরণে তারা সরকারকে প্রস্তাব দিল, কিছু প্রাচ্য পুঁথি প্রকাশ করা মাদ্রাজের যাজক উইলিয়াম টেলর, ম্যাকেঞ্জির সংগ্রহগুলি অনুবাদ করে প্রকাশ করুক। টেলর এই কাজ করতে অতীব উৎসাহী ছিলেন, কোন সময় না নিয়েই তিনি মাদ্রাজ সরকারকে আট মাসের কাজের জন্যে ৭ হাজার টাকার একটা প্রস্তাব পেশ করলেন। এই কাজে তিনি ছজন মুন্সি আর পণ্ডিত এবং কিছু দেশিয় করণিক যোগাড় করলেন। পরের কয়েক বছর মাদ্রাজ লিটারারি সোসাইটির নামে কিছু সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রকাশিত হবে, শেষে ১৮৫৭ সালে মাদ্রাজ থেকে আ ক্যাটালগ রেইজনি অব ওরিয়েন্টাল ম্যানুস্ক্রিপ্টস ইন দ্য লিবার্টি অব দ্য (লেট) কলেজ ফোর্ট সেন্ট জর্জ নামে প্রকাশিত হয়। এই সনকলনে উইলসনের মাদ্রাজে পাঠানো নানান নথির অনুবাদই শুধু প্রকাশিত হল না, ১৮৩৮ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সি পি ব্রাউনের গ্রন্থাগারের সংগ্রহও ছিল। ব্রাউন তেলুগু আর তামিলে তার সংগ্রহ করা কিছু নথিও যোগ করলেন। ব্রাউনের সংগ্রহ মাদ্রাজের উদ্দেশ্যে রওনা হয় ১৮৪০এর পরের কোন এক সময়ে। উইলসনের ক্যাটালগ থেকে টেলর যে সব জিনিস ছেপেছিলেন, সেই ছাপাগুলিতে হিন্দু ভাবনা, ধর্ম, দর্শন বিষয়ে নিজের চিন্তায় ভারতের ইতিহাস কি হওয়া উচিত সে বিষয়ে নিজের ভাবনাচিন্তা প্রকাশ করেন। ভারতীয় স্থাপত্য খণ্ডে টেলর লিখলেন এর সঙ্গে যেহেতু জ্যোতিষবিদ্যা জড়িয়ে আছে, সেহেতু এর কোন মূল্য নেই। টেলর প্রথম থেকেই স্থির সিদ্ধান্ত এসেছিলেন যে ভারত মূলত ক্যালডিয়ান বা মিশরিয় সভ্যতাজাত। ভারতের নিজের বলতে কিছুই নেই। ভারত মধ্যপ্রাচ্যের আন্টিডিলুভিয়ান সভ্যতার খুব বাজে নকল। ভারতীয়দের মননের গভীরতাও নেই, ভিত্তিও নেই। এছাড়াও তিনি বললেন হিন্দুদের করোটি কেল্টিকদের এমন কি বাজে স্যাক্সনদের করোটির থেকেও খারাপ। তাদের লঘুমস্তষ্ক বিকশিত বলেই তারা তাদের পদ্যে যৌনতার ব্যাপক বিকাশ ঘটাতে পেরেছে।

No comments: