Wednesday, April 4, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা৩৬ - ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং তার জ্ঞানচর্চার আঙ্গিক - সাম্রাজ্যের মন ও মান ।। বারনার্ড কোহন

অধ্যায়২
শিক্ষা এবং অতীত সংরক্ষণ
আদতে কোম্পানির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতের দেশিয় জ্ঞানের সংরক্ষণের পাত্র হিসেবে ব্রিটিশ জাতির কৃতিত্ব দাবির এই রাজনৈতিক প্রকল্পে একটা ব্যাপার ঘটল যে গোটা ব্রিটিশ জাতি বিশ্বের বিপুল জাদুঘরে পরিণত হল এবং সেই কৃতিত্ব অবলম্বন করে তারা সংজ্ঞা নির্ধারণ করল কোনগুলিকে সংরক্ষণ করা দরকার আর কোনগুলি নয়। যেগুলিকে সংরক্ষণ করার কথা উঠল সেগুলির নমুনা এনে শ্রেণীবিন্যাস করার কাজ শুরু হল। ভারত শাসক মিন্টো ভারতের সাহিত্য আর বিজ্ঞানের অস্তাচলে যাওয়ার যুক্তি হিসেবে যা বললেন, সেটিই গোটা উনবিংশ শতকে প্রতিধ্বনিত হল – ইট ইজ আ কমন রিমার্ক দ্যাট সায়েন্স এন্ড লিটারেচার আর ইন আ প্রোগ্রেসিভ স্টেট অব ডিকে আমং দ্য নেটিভস অব ইন্ডিয়া। ফ্রম এভরি এনকোয়ারি হুইচ আই হ্যাভ বিন এনেবল টু মেক অন দিস ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট দ্যাট রিমার্ক এপিয়ার্স টু মে বাট টূ ওয়েল ফাউন্ডেড। দ্য মেম্বার অব দ্য লার্নেড ইজ নট অনলি ডিমিনিশড বাট দ্য সার্কল অব লারনিং ইভন এমং দোজ হু স্টিক ডিভোট দেমসেলভস টু ইট আপিয়ার্স টু বি কনসিডারেবলি কনট্রাকটেড। দ্য এবস্ট্র্যাক্ট সায়েন্সেস আর এবান্ডনড, পোলাইট লিটারেচার নেগলেক্টেড এন্ড নো ব্রাঞ্চ অব লার্নিং কাল্টিভেটেড বাট হোয়াট ইজ কানেকটেড উইথ দ্য পিকিউলিয়ার রেলিজিয়াস ডকট্রিনস অব দ্য পিপল। দ্য ইমিডিয়েট কনসিকোয়েন্স অব দিস স্টেট অব থিংস ইজ দ্য ডিসিউজ এন্ড ইভন একচুয়াল লস অব মেনি ভ্যালুয়েবল বুকস; এন্ড ইট ইজ টু বি এপরিহেন্ডেড দ্যাট আনলেস গভর্নমেন্ট ইন্টারপোজ উইথ আ ফস্টারিং হ্যান্ড দ্য রিভাইভ্যাল অব লেটার্স মে শর্টলি বিকাম হোপলেস ফ্রম আ ওয়ান্ট অব বুকস অর অব পার্সনস কেপেবল অব এক্সপ্লেইনিং দেম।
সাম্রাজ্যবাদী শাসনের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে চলা ওয়েলেসলি ১৮০০ সাল থেকে কোম্পানির আমলা হিসেবে যুবাদের প্রশিক্ষিত করার উদ্যম নিলেন। এই আমলারা কেউই কোম্পানির ব্যবসায়িক কাজকর্ম দেখবে না ঠিক হল, বরং তাদের কাজ হবে ক্ষমতাশালী সাম্রাজ্যের আমলা আর মন্ত্রিত্ব করা। কোর্ট অব ডিরেক্টর্সের অনুমোদন ছাড়াই ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়ামে কলেজ স্থাপন করলেন এই তত্ত্ব রূপায়িত করতে। তিনি লন্ডনে কর্তাদের লিখলেন ইওরোপে উচ্চদপ্তরের আমলা তৈরি করতে যে ধরণের সাহিত্য আর বিজ্ঞান পড়ানো হয়, ফোর্ট উইলিয়ামেও সেই ধরণের পাঠ দেওয়া হবে। এর সঙ্গে যুবারা শিখবে কোম্পানির আইন প্রথা ইত্যাদি এবং তার সঙ্গে ব্রিটিশ সংবিধানের নৈতিক এবং বিশুদ্ধ চরিত্রটিও। তারা যেহেতু অজানা অচেনা জাতিকে শাসন করবে তাই তাদের জানতে হবে ভারতের ধর্ম, ইতিহাস, ভাষা, প্রথা, আইনকানুন ইত্যাদি। এতেও শেষ হল না, এটাও ঠিক হল, কলেজে পাঠ নেওয়া ষোল সতের বছরের কিশোরদের শেখানো হবে উদ্যমতা, সাবধানতা, সাধুতা, এবং ধার্মিক চেতনা, যে নৈতিকতার বলে তারা যে কোন দুরাচারী ভারতীয় প্রণোদিত দুর্নীতি আর কুকর্মের প্ররোচনার হাত থেকে রেহাই পাবে। শুধু দুরাচারী ভারতীয় হলেও কথা ছিল, ওয়েলেসলির দাবি, তাদের শিক্ষা কোম্পানির অধিকাংশ শ্রমবিমুখ, দুর্নীতিপরায়ন, বিলাসী, কামুক, অসংযমী কোম্পানি আমলা আর শিক্ষার্থীদের মাঝে অসীম নিরাপত্তার দেওয়াল তুলবে।

এই বিপুল বিশাল উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প রূপায়নে ওয়েলেসলি একটি আবাসিক কলেজের পরিকল্পনা করলেন যাতে কিশোরদের ওপর সম্পূর্ণ নজরদারি চালানো যায়। ঠিক হল আটথেকে দশ জন ইওরোপিয় অধ্যাপক ভারতীয় ভাষা এবং ইওরোপিয় পাঠ্য শিক্ষা দেবেন। নীতি শিক্ষা দিতে উপপ্রধান হলেন একজন এংলিকান যাজক। দেশিয় বিষয় পড়াতে ৫০ জন মুন্সি চারটি দপ্তরে সংস্কৃত-বাংলা, আরবি, ফারসি এবং হিন্দুস্থানী শিক্ষায় কাজ পেলেন। প্রত্যেক দপ্তরে একজন ইওরোপিয় অধ্যাপক-প্রধান, প্রধান মুন্সি, দ্বিতীয় মুন্সি এবং অন্যান্য অধস্তন মুন্সি নিযুক্ত হলেন। ইওরোপিয়রা বেতন পেত ১৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ২০০ টাকা বরাদ্দ ছিল চারজন প্রধান মুন্সির জন্যে, ১০০ টাকা দ্বিতীয় মুন্সির জন্যে আর ৬০টাকা অন্যান্য মুন্সির জন্যে। মুন্সিদের কাজ হল শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে পাঠ দান(ইওরোপিয় অধ্যক্ষর অনুমোদন সাপেক্ষে), ব্যকরণ এবং শব্দকোষ তৈরি আর ছাপানো, শিক্ষার উপকরণ তৈরি করা, ভারতীয় ধ্রুপদী সাহিত্য প্রকাশনা করার জন্যে বিপুল প্রকল্প। 

No comments: