Saturday, May 21, 2016

দ্য মুঘল এডমিনিস্ট্রেশন, যদুনাথ সরকার

অর্থ ও হাউসহোল্ড দপ্তর
খাজাঞ্চিখানার নেতৃত্ব দেন দিওয়ানি আলা যার পদের নাম উজির। এনার দুজন সহকারী দেওয়ানিতান, মাইনে দেওয়ার দেওয়ান এবং দেওয়ানি খালসা, রাষ্ট্রের দেওয়ান।
দেওয়ান(শব্দের উতপত্তি নিয়ে এর আগে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন সরকার মহাশয়- ফলে সেটা এড়িয়ে যাওয়া গেল) পদের কাজকর্ম বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের কিছু জরুরি তথ্য মনে রাখা দরকারঃ
১) তিনি সম্রাট এবং অন্যান্য কর্মচারীর মধ্যের যোগসূত্র,
২) বাস্তবিকভাবে প্রত্যেকটি সরকারি নথি(কিছু প্রযুক্তিগত বিষয় এবং কিছু বৈঠকের বিস্তৃত বিবরণ(মিনিট) বাদ দিলে) তাঁর দপ্তরে, তাঁর নিরীক্ষণের জন্য পাঠাতে হত। তিনি সেই নথির নকল রাখতেন। আদতে তাঁর দপ্তর ছিল পাবলিক রেকর্ড অফিস বা মহাফেজখানা,
৩) খুব ছোটখাট ব্যয় ছাড়া প্রত্যেক দপ্তরের ব্যয় তাঁর নিরীক্ষণের এবং মন্তব্যের জন্য তাঁর দপ্তরে পাঠানো হত,
৪) ছোটখাট ভৃত্য, কিছু সাধারণ শ্রমিক বা অস্থায়ী সেনা ছাড়া সাম্রাজ্যের প্রত্যেকটি পদে নিয়োগ, পদোন্নতি, বড় ব্যয়ের বিশদ বিবরণ তাঁর দপ্তরে পাঠানো হত এবং তাঁর স্বাক্ষর ছাড়া সেগুলি ছাড়পত্র পেত না,
৫) সারাদেশের ভূমিরাজস্ব আদায় এবং ব্যয়ের বিশদ বিবরণ তাঁকে নখদর্পণে রাখতে হত। বাদশাহ নিজে সারাক্ষণ রাষ্ট্রের আর্থব্যবস্থার ওপর নির্দিষ্টভাবে নজর রাখতেন দেওয়ানের দপ্তর মার্ফত এবং প্রায় দৈনিকভাবে এই আয়-ব্যয়ের বিশদ বিবরণ সম্রাটের কাছে পাঠানো হত। প্রায়ই সম্রাট, দেওয়ানকে বিশদে এই আয়-ব্যয়ের হিসেব পড়ে শোনাতে বলতেন,
৬) তাঁর পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কোন কোন বিষয় তিনি সম্রাটকে জানাবেন এবং তাঁর নির্দেশ নেবেন, আর কোনটা নেবেন না, সেটা তাঁর নিজস্ব এক্তিয়ারে পড়ত,
৭)প্রশাসনের পক্ষে তিনি ছিলেন সরকারের প্রতিমূর্তি(embodiment), তিনি উচ্চপদস্থ আমলাদের সরকারিভাবে ছুটি দিতেন, তাঁদের কাজ আর দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতেন, তাঁদের থেকে নিয়মিত রাষ্ট্র বা তাঁদের সুবার সমীক্ষা পেতেন,
৮) সুবার দেওয়ানেরা সারাক্ষণ তাঁর এবং সাম্রাজ্যের দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হতেন। রাজস্ব তাঁর নিজস্ব বিভাগ ছিল। সুবার দেওয়ান আর তাঁদের অধস্তনরা সরাসরি তাঁর নির্দেশে চলতেন,
৯) যে কোন সরকারি নথির বৈধতার জন্য তাঁর দপ্তরের পাঞ্জা(seal) এবং তাঁর স্বাক্ষর আবশ্যিক ছিল(এমন কি সম্রাটের হস্তাক্ষরের বা তাঁর মৌখিক আদেশেরর অনুকৃতিতেও) এবং প্রত্যেকটা নথির নকলের বৈধতার জন্যও সেদুটিও আবশ্যিক ছিল।
(চলবে)

No comments: