Tuesday, October 3, 2017

পলাশীর পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার রাশ হাতে রাখার ইচ্ছে একান্তভাবেই রাজনৈতিক কেন

এক ভদ্রলোক শুধিয়েছেন, আমরা কেন বলেছি, পলাশীর পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার রাশ হাতে রাখাটার একান্তভাবেই রাজনৈতিক-
আমরা মনে করি ইওরোপিয়দের ব্যবসাটা ছিল ঘোমটা। ইওরোপিয় কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর মূল কাজ ছিল অধমর্ন ইওরোপকে উত্তমর্ণে পরিণত করা। সেটা রাজনৈতিক কাজ, যে জন্য সেনা পুষত সক্কলে। ডেনেরা সেনা পুষতে পারে নি তারা ক্ষমতার লড়াই থেকে স্রেফ উবে গিয়েছিল।
লুঠের লাঠি হাতে নিয়ে, সাম্রাজ্যবাদী খ্রিস্টিয় ভাবধারার(যার সঙ্গে খ্রিষ্টের শিক্ষার বিন্দুমাত্র সংযোগ নেই) ইওরোপিয়রা বিশ্বকে তিনভাগে ভাগ করে নিল। স্পেন, পর্তুগাল, ইতালিকে নিয়ে, প্রথম দল। নেতৃত্ব দিল ইতালি। এরা সকলে ইওরোপিয় ক্যাথলিক। দ্বিতীয় দলে রইল জার্মানি, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া। নেতৃত্বে জার্মানি। এই দলটি ইওরোপিয় প্রোটেস্টান্ট। শেষ দলটির নেতৃত্বে ব্রিটেনের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি- সদস্য ব্রিটেন, ফ্রান্স, হল্যান্ড আর বেলজিয়াম, যারা আদতে ইলিউমিনাতি রূপে খ্যাত, এদের ব্যবসায়িক নাম- এংলো ভেনিসিয়ান মার্চেন্টস অথবা এংলো ডাচ এরিস্ট্রোক্রাটিক এলিট।
পর্তুগিজ থেকে ডাচ সকলেই চেষ্টা করেছে বাংলা দখলের, সফল হল ব্রিটিশ। তখন পলাশীর পর সদ্য প্রস্ফুটিত শিল্প বিপ্লব বিকাশের সময়। তখন হামাগুড়ি দিচ্ছে সবে। বাংলা থেকে জ্ঞান আর সম্পদ লুঠ হয়ে যাচ্ছে ইওরোপের নানা দেশে, বিনিয়োগ হচ্ছে কারখানা আর কেন্দ্রিভূত মারণ, লুঠেরা প্রযুক্তি তৈরি করতে গবেষণাগারগুলিতে। কারখানাগুলি লাভের মুখ দেখতে আরও অর্ধশতাব্দ, উৎপন্ন নানান পণ্যের বিশ্ব বাজার নেই। শিল্পবিপ্লবের সসেমিরা অবস্থা। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বাংলা/ভারতকে উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যে রাজনৈতিক চেষ্টায় তারা দেড় শতক আগে বেরিয়েছিল ভারত দখলের উদ্দেশে সেনা নিয়ে।
সেই জন্য মীর কাশিমের বাংলার ব্রিটিশদের ব্যবসা দখলের বিরুদ্ধে বিখ্যাত চিঠি। লবন,তামাক আর সুপুরি কেন, বাঁশ চট ইত্যাদি তুচ্ছ পণ্যের ব্যবসা দখল হয়ে দাঁড়াচ্ছে একচেটিয়া চরিত্রে। চাষীর রাজস্ব দিয়ে কেনা হচ্ছে তাঁতির কাপড়। দেশ থেকে আর লুঠ করে বাংলায় সম্পদ(বিনিয়োগ) আনতে হচ্ছে না। এর পর থেকে বাংলার প্রযুক্তি আর শিল্প ধ্বংসে উঠেপড়ে লাগবে কোম্পানি। আর সাড়ে তিন দশক পরেই উদ্বৃত্ত বাংলা, অধমর্ণে, শুধুই ব্রিটেনের কাঁচামাল রপ্তানির ক্ষেত্র রূপে পরিণত হবে।
আর এক দশকও নেই লুঠেরা পিটের নাতি কোম্পানির মাথায় বসিয়ে দেবে চারজন সরকার নির্বাচিত ডিরেক্টর - ব্যবসায়ীর ঘোমটা খুলে কোম্পানি তখন পুরোপুরি ঔপনিবেশিক শাসক - তার দুদশক পরে বিকশিত হবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, বাংলা তথা ভারতের নব্য লুঠেরা জমি ব্যবস্থা।
এগুলি যদি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী/পদক্ষেপ না হয়, রাজনীতি তাহলে কোনটা আর ব্যবসাইবা কোনটা।

No comments: