Thursday, October 19, 2017

নকল গ্রাম শিল্পকে পণ্য করছে যারা

প্রজেক্ট বরাদ্দের উতপাতের ধন চিতপাতে দেওয়ার ব্যবসা
বিশ্ববাংলার বাংলার মুখোশের বইটার প্রথম সংস্করণ যদি কেউ দেখেন তাহলে দেখবেন একটা নকল রাবণকাটা মুখোশএর ছবি দেওয়া আছে। সেটা মহিষবাথানের/কুশমণ্ডিরমুখা শিল্পিকে দিয়ে বানিয়েছেন এক এনজিও। বিশ্ববাংলা যে মুখোশের প্রদর্শনী করেছিলেন, সেখানে রাবণকাটা মুখোশ আনার দায় ছিল তাদের। ওরা পান নি - তাই নকল করে দায় সারেন - রাবণকাটার ছবি দেখিয়ে মহিষবাথানের মুখা কারিগরদের দিয়ে করিয়েছেন। এবং সেটা শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় নি। শেষে আমাদের হাত দিতে হয় এবং সেই প্রদর্শনীতে রাবণকাটার দুটো মুখোশ দিতে পারি। সঙ্গের ছবিতে নকল রাবণকাটা মুখোশের ছবিটা হল দুর্গার চালির নিচেই।
---
অনেকেই বলেন একটা এনজিও বিপুল ফান্ডিং নিয়ে বাংলার গ্রাম শিল্পের জন্য বেশ ভাল কাজ করছে। আমরা বলি, যে ১০টা গ্রাম শিল্পের জন্য কাজ করছেন, সেগুলো কালই মরে যাবে না। কিন্ত যে গ্রাম শিল্পগুলো ধুঁকছে সেগুলি নিয়ে কাজ করলে, বাংলার গ্রাম উদ্যমীরা বাঁচত। তবে মনে রাখা দরকার স্থানীয় উৎপাদকেরা বেঁচে থাকেন(কয়েকটা জিনিস বাদ দিলে) স্থানীয় চাহিদার ওপর।
সমস্যা হল যে ক'টা উতপাদন নিয়ে ওঁরা কাজ করছেন সেগুলির দীর্ঘ ব্যবসায়িক এবং বিবর্তনীয় ঐতিহ্য বর্তমান। এগুলি শুধুই পণ্য নয়, এগুলি স্থানীয় আচার, বাংলার কৃষ্টির সঙ্গে লেপ্টেলুপ্টে আছে। ইতিহাস বাদ দিয়ে কিন্তু এই গ্রামীন কারু উদ্যমের ব্যবসা দাঁড়ায় না - এটা ওনারা মনে রাখলে ভাল করতেন। ওনাদের কাজে তার কোন ছোঁয়া পাই নি। শুধু ব্যবসা দিয়ে গ্রাম উৎপাদন বাঁচবে না।
---
বিদেশি ফান্ডিং আছে। এছাড়াও বহু রাজ্য সরকারের প্রচুর দপ্তরের এওয়ারনেস প্রোগ্রামের কাজ করে থাকেন, এবং সে বাবদে অপরিসীম অর্থ রোজগার করেন। গত দুবছর মমতা সরকার লোকপ্রসার প্রকল্পে টাকা সাহায্য পাওয়া শিল্পীদের দিয়ে সব ধরণের অনুষ্ঠান করাচ্ছেন, ফলে বাংলায় তাঁদের কপাল পুড়েছে এবাবদে।
বড় আমলাদের সম্পর্ক অস্বাভাবিক ভাল, চুটকিতে তাঁরা তাঁদের বিদেশ ভ্রমণ করান। ফলে সরকারি বেসরকারি ফান্ডিং তাঁদের কাছে নস্যি। ব্যবসা এর উপজাত কর্ম।
---
গত দেড় বছর আগে, বছর আপনাদের যদি মনে থাকে দেখবেন আমরা বিশ্ববাংলার মুখোশ প্রদর্শনীতে(যেটা শুরু হয়েছিল মোহরকুঞ্জে) বাংলার সব ধরণের মুখোশ দিয়েছিলাম। এই মেলাটার উদ্যোক্তা ছিলেন কিন্তু একটা এনজিও। যায়গা নিয়েছিল বিশ্ববাংলা। মধুদা আর সন্তোষকে শেষ মুহূর্তে কাজ দেখাবার জন্য নিয়ে আসা হয়।
দক্ষিণবঙ্গের মহুল করার মুখোশ থেকে শুরু করে রাবণ কাটা থেকে দার্জিলিঙ্গের ছম সব ছিল। বিশ্ববাংলার বাংলার মুখোশের বইটার প্রথম সংস্করণ যদি কেউ দেখেন তাহলে দেখবেন একটা নকল রাবণকাটা মুখোশএর ছবি দেওয়া আছে। সেটা মহিষবাথানের/কুশমণ্ডির(শিল্পীর নাম আর সংগঠনের নাম বলছি না, যাদের সঙ্গে ওঁরা এখন মেলা করছেন।) মুখা শিল্পিকে দিয়ে বানিয়েছেন। ওঁরা রাবণকাটা মুখোশ শিল্পীই পান নি। শেষে আমাদের হাত দিতে হয় এবং সেই মেলায় রাবণকাটার দুটো মুখোশ দিতে পারি।
---
এক বন্ধু বল ছিলেন বাউল ফকিরেরা তাদের কৃপা না পেলে কাজ পায় না। আমরা বলেছি,শুধু বাউল ফকিরদের কথা কি বলছেন, যে দশটা যায়গায় তাঁরা প্রকল্প করছেন সেখানেই শিল্পীদের মধ্যে বিপুল গন্ডগোল সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে।
পাঁচমুড়াতে গিয়ে দেখবেন, যে কমুনিটি হল ব্যবস্থা তাঁরা বানিয়েছেন, সেটা ব্যবহারযোগ্য নয়, আর ভাড়াও প্রচুর, গ্রামে অতটাকা দিয়ে কে এই কাঠামো ভাড়া নেবে? প্রত্যেক জায়গায় একই ঘটনা ঘটছে।
প্রজেক্টের উতপাতের ধন চিতপাতে।
---
শুনেছিলাম বিশ্ববাংলার সঙ্গে ওঁদের সম্পর্ক ভাল। দেখলাম বিশ্ববাংলা যে দুটো প্রদর্শনী করেছেন বাংলার পুতুল আর বাংলার মুখোশ সে দুটিতে আমরাই তাঁদের সাহায্য করি। পুতুল খুঁজে আনায় Somaর অবদান ভোলার নয়। এটা নিয়ে বিশদ লেখার ইচ্ছে আছে, আমি আর সোমা যেভাবে নিজেদের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে গাড়ি নিটে গোটা দক্ষিণ বঙ্গ থেকে পুতুল জোগাড় করেছি তা উপন্যাসকেও হার মানায়। বিশ্ববাংলা আমাদের সদস্যদের থেকে এবছরও পুতুল কিনছেন, তার ইতিহাস জানছেন জানাচ্ছেন শিল্পীকে সম্মান দিচ্ছেন এটাই অনেক।
শেষ পর্যন্ত ওদের মত বিশ্ববাংলা সমাজ সেবার ঘোমটা রাখছে না। বিশ্ববাংলা ব্যবসা করছেন, এবং এই ব্যবসায় কারিগরদের লাভ হচ্ছে। মধুদার মুখোশ কলকাতায় ক্রেতা দুজন বিশ্ববাংলা আর Soumenদা। বিশ্ববাংলার ওয়েবসাইটে যান দেখবেন দ্বিতীয় মুখোশ মধুদার।

No comments: