Sunday, October 1, 2017

জমির বিলিবন্টন ও রাজস্ব আদায়ের পদ্ধতি৮

আকবরের বাংলার রাজস্ব জরিপ
আসলি জমা তুমহার(Your Original Rent Roll)

আকবর বাংলায় সেনা নিয়ে ঢোকেন ১৫৭৬ খ্রি। তার পাদশাহীর সময়ে মোট ছয় জন বাংলার সুবাদার ছিলেন, খানইজাহান, মুজফফরখান তুরমতি, টোডরমল্ল, খানইআজম(কোকা আজম), শাহবাজ খান, আর মানসিংহ। বাংলা জয় করেও মুঘল ভূমি ব্যবস্থা সুবা জুড়ে প্রয়োগ করতে সুবাদারদের প্রচুর বেগ পেতে হয়েছিল। ক্রমাগত বিদ্রোহের ফলে শেরশাহ কিন্তু বাংলায় সুবাদার নিযুক্ত না করতে পেরে গোটা বাংলা কিছু জায়গিরদারদের মধ্যে বেঁটে দেন।

আকবরের বঙ্গবিজয়ের পরে আফগান বা হিন্দু জমিদারেরা মুঘল শাসন ব্যবস্থা মেনে নিতে চান নি। দিল্লিতে বাংলা থেকে প্রথম রাজস্ব যায় মুজফফর খান তুরমতি ১৫৭৯ সালে, ৫ লক্ষ স্বররণমুদ্রা, কিছু হাতি ইত্যাদি। ১৫৮২ পর্যন্ত ছিলেন টোডরমল্ল। এখান থেকে তিনি কেন্দ্রের দেওয়ান হন। বাংলায় থেকে এই সুবার হালচাল কিছুটা বুঝেছিলেন। দিল্লীতে গিয়েই তিনি আসলি জমা তুমহার নাম্নী জরিপ বাংলায় চালু করেন।

এই জরিপ অনুসারে বাংলাকে ১৯টি সরকারে ভাগ করা হল – ১। উমদবর(তাণ্ডা), ২। জন্নতাবাদ লক্ষনৌতি(গৌড়) ৩। ফতাবাদ, ৪। মহম্মদাবাদ, ৫। খলিতাফাবাদ, ৬। বাকলা(বাখরগঞ্জ/বরিশাল), ৭। পূর্ণিয়া, ৮। তাজপুর, ৯। ঘোড়াঘাট(দিনাজপুর/হিলি/রংপুর), ১০। বিজারা/পিজ্জারহা, ১১। বরবকবাদ(দিনাজপুর মহী সন্তোষ ও বগুড়া), ১২। বাজুহা, ১৩। সোনারগাঁ, ১৪। সিলেট, ১৫। চট্টগ্রাম, ১৬। সারিফাবাদ, ১৭। সুলেইমান আবাদ, ১৮। সাতগাঁ(হুগলি নদিয়া ২৪ পরগণা), ১৯। মন্দারণ(বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর)। আর মোট পরগনা হয়েছিল ৬৮২টি।

আসলি জমা তুমহার(তুমার) জরিপে সরকার জন্নতাবাদ, তাজপুর, পিঞ্জরা/ঘোড়াঘাট।বরবকাবাদ, বাজুহা নিয়ে অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী বিভাগ ছিল। এটাকে মুঘলরা উত্তরবঙ্গ বা অতীতে পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তি বলত। এ সময়ে কটক, জলেশ্বর, ভদ্রক, কলিঙ্গ, দণ্ডপত, ও রাজামহেন্দ্রি মুঘল শাসনে আসে। সে সময়ে ওডিসা আলাদা সুবা না হওয়ায় সেটি বাংলা থেকেই শাসিত হত। ওডিসা নিয়ে বাংলা সুবার দিল্লিকে দেয় ছিল এক কোটি উনপঞ্চাশ লক্ষ একষট্টি হাজার চারশ বিরাশি টাকা পনের আনা সাত দাম। সে সময় ১ রূপোর টাকা সমান ৪০ দাম(তাম্রমুদ্রা)।

বাংলায় নসক প্রথায় খাজনা আদায় হত। জমিদারেরা প্রজাদের থেকে খাজনা আদায় করে সুবাদারদের দিতেন। অন্যান্য প্রদেশে যেমন গ্রাম পর্যন্ত রাষ্ট্র নানান কর্মচারী রাখতে হত বাংলায় সেটা করতে হত না, সে কাজ জমিদারেরা করেদিতেন।

মালদার রুকনপুর পরইগনা থেকে বাংলার জন্য একজন কানুনগো ভগবানচন্দ্র মিত্র নিযুক্ত হলেন আকবর পাদশাহের সময়ে। আকবরের পর শাহজাহানের সময় এই নীতিতে আবার জরিপ হয়। ব্রিটিশ আমলের আগে শেষ বার হয় মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ে।

No comments: