Monday, October 16, 2017

পরম্পরার গ্রামীন উদ্যমীদের সংঘ - অনঅপচয়ের বিশ্ব বাঁচানোর ব্যবহারিক তত্ত্ব

পরম্পরার গ্রামীন উদ্যমীদের সংঘ
অনঅপচয়ের বিশ্ব বাঁচানোর ব্যবহারিক তত্ত্ব
বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ, ব্যবসায়া উদ্যম শিক্ষা কেন্দ্র আইবিএসএর সঙ্গে মিলে বাংলার পরম্পরার গ্রামীন উদ্যোগী হস্ত, বস্ত্র ও অভিকর শিল্পীদের সংঘ(গিল্ড) তৈরির উদ্যম নিয়েছে। সেই উদ্যমের ধরতাই করতে একটি আলাপ আলোচনার উদ্যম নিয়েছে ৯ নভেম্বর, ২২ কার্ত্তিক, ১৪২২, বিকেল দুটো থেকে পাঁচটা পর্যন্ত, সেক্টর পাঁচে, সেই উপলক্ষ্যে বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ এই মানুষদের উদ্যমের তত্ত্ব বিষয়ে কিছু লেখা প্রকাশ করবে। সেই ধারার প্রথম লেখা এটি।
গাঁইয়া পরম্পরার শিল্পের পৃথিবী বাঁচানোর কতগুলি গুণ রয়েছে। সেই গুণগুলি আগে বহুবার আলোচনা করা গিয়েছে - যেমন উৎপাদনের বিকেন্দ্রিতা, যতসম্ভব একালার বাইরের সম্পদ ব্যবহার না করা, বিদ্যুৎ কম ব্যবহার করা, যন্ত্রপাতি যত সম্ভব কম ব্যবহার করা, ইত্যাদি। এ নিয়ে অতীতে আমাদের ব্লগে(http://lokfolk.blogspot.in/), ফেবুকে এবং পরমএর পাতায় বেশ কিছু লেখা বেরিয়েছে।
আজকের বিষয় সম্পদ সংরক্ষণের।
চোখে দেখা সেই বিষয় নিয়ে এই লেখা।
--
দিন দুয়েক আগে এই ছবিগুলি জুড়ে বলা গিয়েছিল আরও কিছু বলার আছে।আদতে সম্পদ বাঁচানোর দর্শনে এই পরম্পরার গ্রামীন শিল্পের সঙ্গে জুড়ে থাকা মানুষেরা লিপ্ত - যার সঙ্গে সম্পদ অপচয়ী এই পশ্চিমী বড় পুঁজির, বেকনিয় দর্শনে গড়ে ওঠা শিল্প উদ্যমের বিশাল ফারাক। যত দিন যাচ্ছে, তত যেন এই ফারাকটা চোখে লাগছে ক্যাট ক্যাট করে।কেননা বিশ্বজোড়া একচেটিয়া ব্যবসা করেও এই সম্পদ বাঁচিয়েই এই গ্রামীন শিল্প বিশ্বকে বয়ে নিয়ে এসেছেন কয়েক হাজার বছর, এই শিল্পবিপ্লবের শুরুর সময়, কর্পোরেট লুঠের সময়ের শুরুর সময় পর্যন্ত।
দিন তিনেক আগে বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘের সম্পাদক মধুমঙ্গল মালাকার তাঁর পরের প্রজন্ম ভাস্তা গৌরব মালাকার, বংশ পরম্পরায় তৈরি শোলার মুখোশ নিয়ে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে তৈরি বিশ্ববঙ্গএ দেওয়ার জন্য। বিধাননগরে সংগঠনের কেন্দ্রিয় দপ্তরে বসে তিনি তাঁর মুখোশগুলি সাজাচ্ছিলেন। এর আগে তাকে কাজ করতে দেখেছি দিনাজপুরে, কলকাতায়। কিন্তু সেদিন তাঁর কাজ দেখে যেটি বুঝলাম তাঁর সত্য আমার গ্রামশিল্পের বিশ্ব সম্পদ বাঁচিয়ে চলার তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করেছে। বলা দরকার মনের মধ্যে ঢুকে দেখছি এই সত্য সামগ্রিকভাবে গ্রামীন ছোট উদ্যোগের মানুষদের জন্য পরম সত্য।
সামনে বসে বসে দেখছি, তিনি মুখোশগুলি সাজাচ্ছেন শুধু অসম্ভব মমতায়ই নয় অসম্ভব সম্পদীয় মিতব্যয়ীতায়। এই বিষয়টি গ্রামীণ পরম্পরার উদ্যোগের সঙ্গে যে সব মানুষ জড়িয়ে রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের জন্য সত্যি। দেখছি, যতটুকু যা প্রয়োজন ততটুকুই তিনি ব্যবহার করছেন, এবং কাজ শেষে যতটুকু ব্যবহার হল, তা থেকে বিন্দুমাত্র জিনিস/সম্পদ যদি পড়ে থাকে তা পরম যত্নে কুড়িয়ে নিয়ে রেখে দিচ্ছেন পরেরবার ব্যবহারের জন্য।
তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাইপো গৌরব। পড়াশোনায় যেমন চৌখস, তাঁদের বংশ পরম্পরার কাজেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার - বাংলার মা্লাকার পরম্পরার যোগ্য উত্তরসূরী। জেঠার সঙ্গে তাঁর কাজও চোখ টানে। এবং মধুদার থেকে নতুন প্রজন্ম সম্পদ বাঁচানোর সেই পরম্পরার শিক্ষা, দর্শন অর্জন করছে সে।
যে খবরের কাগজগুলো মুড়ে মুখোশগুলো নিয়ে এসেছিলেন তারা, কাজ শেষে সেই দলা পাকানো উদ্বৃত্ত হয়ে যাওয়া খবরের কাগজগুলোকেও তারা পরম যত্নে বাঁজ করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দিনাজপুরে। শোলার ছোট ছোট ফুল তারা পরম মমতায় কুড়িয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁদের বাড়ির পানে। কাজ শেষে দেখলাম সে অবস্থায় তারা কাজ করতে বসেছিলেন চার ঘন্টা আগে কাজ শেষ করার পর সেই যায়গাটি তারা ছেড়ে দিয়ে গেলেন আগের মতই, দৃশ্যত কোন দূষণ ঘটল না। অথচ, বড় পুঁজির কোনো এই ধরণের কাজে যে দূষণ বের হয় তা শুধু অসহ্য নয়, বিশ্বকে আজ সেই দূষণ, ফেলে-ছড়িয়ে কাজের দর্শন ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ভারত তথা এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা বহু হাজার বছর ধরে সারা বিশ্বে নিজেদের নানা উতপাদন নিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে এসেছে। তাঁর জন্য সারা বিশ্ব ধ্বংসের মুখোমুখি হয় নি, আজও সেই বাঁচিয়ে চলা সম্পদ নিয়ে কর্পোরেটরা হরির লুঠ চালাচ্ছে সারাবিশ্বে।
আজ বড় পুঁজির তাত্ত্বিকদের এই শিল্প থেকে এ ধরণের নানান বিষয় শিখতে হবে, যদি তারা সত্যিই বিশ্বকে বাঁচাবার শপথ নিয়ে থাকেন।
পরের লেখার জন্য অলমিতি।
(দুবছর আগের লেখা)

No comments: