Monday, August 21, 2017

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা ১ শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের উদ্যোগী(ওয়াপাগ)দের দাবি- এমএসএমই নয় আলাদা পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক চাই

{এটা কয়েকটা কিস্তির ধারাবাহিক। Somnath Roy, Rouhin Banerjee চেয়েছিলেন এই ধরণের লেখা। এবং যারা মনে করছেন এই উৎপাদন ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা দরকার তাদের জন্য।
বনেদিয়ানার ঢঙেই বলি, এটা তাত্ত্বিক তাথ্যিক লেখা হবে। সবার জন্য নয়। সুখপাঠ্য তো নয়ই। দাবিটি আপাদমস্তক রাজনৈতিক। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার ছাপ অনপনেয়ভাবেই পড়েছে। যাদের এই রাজনৈতিক বক্তব্য অস্বস্তির এবং এই বিশাল লেখাটি ঝামেলাদার মনে হবে স্বচ্ছন্দে এড়িয়ে যেতে পারেন।
এর আগে কয়েকবার এই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম - কিন্তু সাঁটে। এবারে বিশদে প্রেক্ষাপট এবং তার ঐতিহাসিক ভূমিকা তৈরি করে দেওয়া গেল।}
---
গাঁইয়া বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমানেদের মত ছোটলোকেদের সংগঠন বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ বা উইভার্স আর্টিজান এন্ড পার্ফর্মিং আর্টিস্টস গিল্ডের(ওয়াপাগ) কাছে, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনটা খুব অদ্ভুত ঢাপুয়া বাতাস। সদস্যরা চোখ ফেড়ে ফেড়ে দেখছিলাম বাংলায় পুঁজির তাত্ত্বিক আর অনুগামীদের তাত্ত্বিক হেঁটমুণ্ডউর্ধপদীকরণ। সে এক মজার কান্ড। যে রাজনৈতিক দলের চোখের পাতা না ফেলে বড় পুঁজির ব্যবসার দালালি করার কথা – তারা গ্রামের মূলতঃ শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরপম্পরার ছোট উদ্যমী বা পথের ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে – তেলেভাজা শিল্পকে মদত দেওয়ার কথা বলছে আদতে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর উদ্যম তৈরি এবং পৃষ্ঠপোষকতা করার কথা বলছে। খুব সাধারণ গ্রামীন শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য স্বউদ্যমী উতপাদক বিতরক, যাদের নিজের বাজারে দাঁড়িয়ে থাকার দক্ষতা, ধার পাওয়া বা ব্যাঙ্কেবিলিটি বা পুঁজি বিনিয়োগ বা প্রযুক্তি কেনা নয়, বরং পরম্পরা, জ্ঞান, দক্ষতা, প্রজ্ঞা এবং স্থানীয় বাজার নির্ভরতা এবং নতুন সময়ে সেই পরম্পরাকে নতুন করে ব্যবহারের উদ্যমে গ্রামীন অর্থনীতিকে জোরদার এবং শহরের টাকা গ্রামে আনার রাজনীতি করেন - তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন - ঘোমটা পরে নয়, সরাসরি - ভদ্র শিক্ষিত বামপন্থী পুঁজিবাদী কুতসা সত্ত্বেও।
আর যাদের তাত্ত্বিকভাবে বড় পুঁজির পাশে দাঁড়াবার কথা নয়, বড় পুঁজির তৈরি শৃঙ্খল ভেঙ্গে যারা সমাজে সাম্য আনার ব্রতী - তারা বড় পুঁজির পাশে দাঁড়াবার কাজ খুব সফলভাবে করে চলেছেন – কোন নেতা উদ্বাহু হয়ে কৃষি থেকে শিল্পায়ন(বড় পুঁজির)এর ‘উত্তীর্ণ’ হওয়ার তত্ত্বের তরফদারি করছেন, কেউ আবার চাষার ছেলে চাষা হবে নাকি এই অশ্লীল বিতর্কে ভোট জমাবার চেষ্টা করছেন, কেউ আবার বড় পুঁজির বাজারে বাতিল চার চাকা চড়ে সেই প্রকল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া অঞ্চলে ভোট প্রচারে ব্রতী - সেই পরিচয় বদলের কম্মটা দেখে শুনে, বোধহয় নতুন সময়ে, নতুন করে শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের স্বউদ্যমী, জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান, দক্ষ, প্রযুক্তিবিদ এবং নিজের বাজারে নিজে দাঁড়িয়ে নিজের কাঁচামাল নিয়ে বড় পুঁজির সঙ্গে লড়াই করে চলা মানুষদের জন্য আলাদা মন্ত্রক দাবি করা আর ঔপনিবেশিক হস্তশিল্পী তকমা ঝেড়ে ফেলার নতুন করে দেশিয় উতপাদন ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়ার।
আজ সেই দাবির যৌক্তিক বিস্তৃতিতে ঢোকার আগে সময় এসেছে গাঁয়ের অর্থনীতির কুড়টি ধরে বসে থাকা এই মানুষগুলি ব্রিটিশ সময়ের পূর্বে কি ছিল তা বোঝা।
***
পলাশী চক্রান্তের আগে কয়েক হাজার বছর ধরে বাংলা তথা এশিয়ার নানান কৃষি আর শিল্প দ্রব্যই ছিল সমগ্র এশিয়া/আফ্রিকা/ইওরোপের ভোগ্য। ১৮০০র আগের চার শতকে, বংলা/ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া নানান পণ্য ব্রিটেন তথা ইওরোপিয় জীবনযাত্রার মান নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে – যা আমরা এই বিশ্বায়নের সময়ে ভুলতে বসেছি। বিগত দুশ বছর ধরে একটি উলট পুরাণ অভিনীত হয়ে চলেছে ‘ফোরেন গুডস’এর প্রতি ভারতের ভদ্র উচ্চমধ্যবিত্তের আদেখলেপনার দেখনদারিতে – বড় পুঁজির লুঠেরাভূমি ভারতবর্ষের মাটিতে। পলাশির আগে লন্ডনসহ ইওরোপে বাংলার চা, মসলিন ইত্যাদি মূলত বাঙলার ভোগ্যপণ্য ভোগের উচ্চ-মধ্যবিত্তের অসম্ভব আদিখ্যেতার বর্ণনা, জেন অস্টিনের উপন্যাসেরমত রিজেন্সি যুগের নানান সাহিত্যে ফুটে রয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে রপ্তানিমুখী আর বিপুল আভ্যন্তরীণ দেশিয় বাণিজ্যের হাত ধরে কারিগরির যন্ত্রের বিকাশ, ভারতে আর বিশ্বে নতুন নতুন বাজার তৈরি, নতুন নতুন পণ্যদ্রব্যের উদ্ভাবনী দক্ষতায় বাংলার গ্রাম উতপাদকেরা ছিলেন মাহির। মনে রাখতে হবে ভারতের উৎপাদনের মাত্র ১০ শতাংশ ইওরোপে যেত রপ্তানির জন্য – বাকিটা কিন্তু দেশে/এশিয়ার আভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হত। শুধু বস্ত্র উত্পাদনে অসাধারণ দক্ষতাই নয়, নানান ধরণের ধাতুজ সংকর দ্রব্য(ক্রুসিবল স্টিল – প্রখ্যাত দামাস্কাস তরোয়ালের পিন্ডটি তৈরি করতেন বাংলা/ভারতের ডোকরা কামারেরা। আজও তাঁরা যে লোহার দ্রব্য তৈরি করেন, তাতে মাথা খারাপকরা জং ঢাকতে, বিন্দুমাত্র রংএর প্রয়োজন হয় না – যে প্রযুক্তি আজও প্রযুক্তিগর্বী ইওরোপের অধরা – দিল্লির লৌহ স্তম্ভ অথবা বিষ্ণুপুরের মদনমোহন কামান মাথায় ছাতা ছাড়াই শয়ে শয়ে বছর খোলা আকাশের তলায় পড়ে থাকে মাথা উঁচু করে, কোণার্কের ৮০ ফুটের শোয়ানো বিম আজও বিষ্ময় জাগায়, এখোনো বাংলার যে কোনও পুরোনো পরিবারের ঠাকুর ঘরের কাঁসা-পিতলের তৈরি দেবতা কোনও বিশেষ প্রসাধন ছাড়াই বিরাজমান রয়েছেন কয়েকশ বছর অক্লেশে), খাবারদাবার (পান, সুপুরি, গুড়, চা, নুন, মশলা, চাল, মিষ্টি, ফল, আচার, সাদা চাটনি, চিনি, মদ্য (গৌড়ি বা রাম), মধু, চিনি, গুড় ইত্যাদি), পরিধেয় (চামড়া, সুতো, সিল্ক, তসর, মুগা, এন্ডি, পাট), রং(নীল অর্থাত ইন্ডিগোসহ হাজারো প্রাকৃতিক রং), শিল্প-শিল্পী(মুর্শিদাবাদের হাতির দাঁতের কারুশিল্পী, হাতির দাঁতের তৈরি নানান আসবাব তৈজস রপ্তানি হত পারস্যে ইওরোপে, মস্করী বা পটুয়ারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানান বৌদ্ধ গুম্ফায় ছবি এঁকেছেন, মগধের (পাটনা – সে সময়ের বাংলার সীমানার মধ্যেই ছিল) বঙ্গের পাথর শিল্পীরা অজন্তা ইলোরা বরবুদর, চম্পা (কাম্পুচিয়ায়)মন্দির খোদাই করেছেন, আরব সহ বিশ্বের দামিতম ভারি জাহাজগুলি তৈরি হত সন্দ্বীপ আর হুগলীর বলাগড়ে, বাংলা থেকে তাঁত শিল্পী বস্ত্র শিল্প শেখাতে গিয়েছেন পারস্যে- আজকের বড় পুঁজির প্রয়োজনে ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ইরাকে), মাটির বাড়ি তৈরির (পোড়া মাটির মন্দির অন্ততঃ তিনশো বছর ধরে রোদ, জল, ঝঞ্ঝায় দাঁড়িয়ে থেকেছে বাংলার প্রযুক্তির অনন্য বিজ্ঞাপন হয়ে, আজও বিলাসবাহুল বাড়ির ব্রিটিশ নাম কিন্তু বাংলা আঙ্গিকের বাড়ি যার পোশাকি নাম বাংলো) প্রযুক্তি আর পণ্য সরবরাহ করত নিজের জ্ঞান, প্রযুক্তি, দক্ষতা, প্রজ্ঞা, কাঁচামাল আর বাজার নির্ভর বাংলার গ্রাম শিল্পীরা। অকলঙ্ক খ্যাতি ছিল নানান ধরনের বস্ত্র উত্পাদনে, লৌহ দ্রব্য তৈরিতে, শিল্পীর গুণমানে আর কারিগরীর চূড়ান্ত দক্ষতায়।
(এরপরে দ্বিতীয় পর্ব)
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
মন্তব্য করুন
1টি মন্তব্য
মন্তব্যগুলি
Souvik Ghoshal দরকার ছিল বিস্তারিত এই ধারাবাহিকের
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
3
23 ঘণ্টা

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা ২ শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের উদ্যোগী(ওয়াপাগ)দের দাবি- এমএসএমই নয় আলাদা পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক চাই

{এটা কয়েকটা কিস্তির ধারাবাহিক - এবারে দ্বিতীয় কিস্তি। Somnath Roy, Rouhin Banerjee চেয়েছিলেন এই ধরণের লেখা। এবং যারা মনে করছেন এই উৎপাদন ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা দরকার তাদের জন্য।
বনেদিয়ানার ঢঙেই বলি, এটা তাত্ত্বিক তাথ্যিক লেখা হবে। সবার জন্য নয়। সুখপাঠ্য তো নয়ই। দাবিটি আপাদমস্তক রাজনৈতিক। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার ছাপ অনপনেয়ভাবেই পড়েছে। যাদের এই রাজনৈতিক বক্তব্য অস্বস্তির এবং এই বিশাল লেখাটি ঝামেলাদার মনে হবে স্বচ্ছন্দে এড়িয়ে যেতে পারেন।
এর আগে কয়েকবার এই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম - কিন্তু সাঁটে। এবারে বিশদে প্রেক্ষাপট এবং তার ঐতিহাসিক ভূমিকা তৈরি করে দেওয়া গেল।}
---
কয়েক হাজার বছর ধরে ১৮০০ সাল পর্যন্ত বাংলা সুবা শুধু উদ্বৃত্ত অর্থনীতির দেশ ছিল না, প্রযুক্তিতেও বাংলা ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা জনপদ। বেশকিছু প্রযুক্তি বাংলার নিজস্ব ছিল। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিশ্বদ্যালয়সম শিক্ষার্জন সংগঠন খুলে সে তত্ত্ব, দক্ষতা, তথ্য, ব্যবস্থাপনা শিখিয়েছে বিশ্বের নানান সমাজকে। তার নিজের মেধা আর পরিশ্রমে এতই বিশ্বাস ছিল, সে প্রযুক্তি ভাবনা কেউ চুরি করলেও সেই প্রযুক্তি অতিক্রম করে নতুন কিছু সৃষ্টি করার যোগ্যতা বিশ্বাস ছিল, তাই কোনও প্রয়ুক্তিই পেটেন্ট করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে নি। অন্তত ১৫০টির বেশি শিল্পদ্রব্য বাঙলার গ্রামীণেরা তৈরি আর ব্যবসা করে এসেছেন ১৮০০ সাল পর্যন্ত। বিশ্বের শিল্প উত্পদনের প্রায় ৮০ শতাংশ উত্পাদিত হত ভারত, চিন আর পারস্যে (আজকের ইরাকে)।
ভারতের উতপাদনের মধ্যে বাংলার অবদান খুব কম ছিল না কেননা ১৬৮০ সালে শুধু ইওরোপে রপ্তানি হচ্ছে ভারত থেকে ১০ কোটি গজ কাপড় – যা বাড়বে চক্রবৃদ্ধি হারে আগামীদিনে গায়ের জোরে তাঁতিদের শিল্পকর্ম আর তাঁত বোনার পরিকাঠামো ধ্বংস করে ম্যাঞ্চেস্টারের মিলের জন্য ভারতের বাজারের দ্বার খুলে না দেওয়া পর্যন্ত।
প্রায় প্রত্যেকটি দ্রব্যের বিশ্বজোড়া একচেটিয়া বিশ্ববাজার। অথচ বাঙলার ছোটবড় সব বণিক বা উত্পাদক সমাজের বিধিনিষেধের আওতার মধ্যে থেকেই বিশ্বজুড়ে ব্যবসা করতেন। দেশে তাদের একচেটিয়া কারবার করতে ভারতীয় সমাজ কোনওদিনও উত্সাহ দেয় নি। ইওরোপিয় উদ্যমী এবং বণিকদেরমত, নিজের দেশ অথবা সামগ্রিক বিশ্বের সামাজিক গঠন পাল্টে অথবা প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটিয়ে বিশ্ব বাজার দখল করার বিধ্বংসী পরিকল্পনা তৈরি করে নি - বলাভাল সমাজ করতে দেয় নি। এই উত্পাদন প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত ছিলেন বিকেন্দ্রিভূত কয়েক কোটি উতপাদক কয়েক কোটি বিক্রেতা – যেন রক্তবীজের বংশধর। আজকের বড় পুঁজির তৈরি করা আইনের মত এঁরা কেউ কারোর শিল্প বা ব্যবসা দখল – যাকে আইনে বলে হোস্টাইল টেকওভার বা জোর করে কিনে নিতে পারতেন না। এই বিকেন্দ্রীকৃত উত্পাদন ব্যবস্থার বড় অংশিদারিত্ব ছিল বাঙলার পারম্পরিক শিল্পী-ব্যবসায়ীদের, যাদের উদ্যমকে পরের দিকে অসংগঠিত অথবা হস্তশিল্প ছাপ মেরে দেওয়া হয়েছে বড় পুঁজির উৎপাদন আর ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য। ফলে লাভের গুড় সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে না গিয়ে, কয়েকটি মানুষের সিন্দুকে কেন্দ্রীভূত হয়ে চলেছে। পেছনে সরে গেছে সামাজিক সাম্য। বেড়ে চলেছে কর্পোরেট পুঁজির এলাকা।
বাঙালি বলা ভাল শহুরে ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালি ব্যবসায়ী থেকে চাকরিজীবী হল দেশের প্রথম কর্পোরেট তাত্ত্বিক দ্বারকানাথ ঠাকুরের সময়ের কিছু আগে থেকে। ইওরোপিয় আধিপত্য বিকাশের সঙ্গে চাকরি আর দালালির টোপ দিয়ে বাঙালি উচ্চমধ্যবিত্ত সাম্রাজ্যের লুঠের ছোট অংশিদার করে নেওয়া হল। এই চাকুরীজীবীদের হাত দিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রথমে বাঙলা-বিহার, পরে সারা ভারতের জনপদে অসীম অত্যাচার, দখল-ধ্বংসমূলক বাণিজ্য এবং উত্পাদনের পরিকাঠামো ধ্বংস করায় অযুত গ্রামীণ কারিগরের স্বনির্ভরতার বিলয়, বাংলার বিশ্বজয়ী বণিকদের পরাধীণতা, বাংলার অর্থনীতি-প্রযুক্তির ধংসের যুগ শুরু হল।
হাজার হাজার বছরের গ্রামভিত্তিক পঞ্চায়েতি গণতন্ত্র ধ্বংস করে শহরকেন্দ্রিক পশ্চিমি সংসদীয় গণতন্ত্রের বনিয়াদ যত দৃঢ় হচ্ছে, ভারতের মাটিতে ততই গ্রাম-শিল্পী-উদ্যমীরা বিলুপ্তপ্রায় হচ্ছেন। এই কাজের ঋত্ত্বিক ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি সরকারি আর বড় পুঁজির আমলারা। তাদের পরিকল্পনায় আগ্রাসী কর্পোরেট বাজারের বিপুল খাঁই আর বড় পুঁজির নিশ্ছিদ্র লুঠ চাহিদা সফল করতে গ্রামীণ উৎপাদক আর বিক্রেতারা রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় হয়ে গেলেন উদ্বৃত্ত। ইংরেজ আমল থেকেই এদের গরীব, আনপড়, অজ্ঞানী, পরনির্ভর, আদিবাসী, প্রান্তিক, তপশিলী জাতি উপজাতি ইত্যাদিরূপে চিহ্নিত করার যে চেষ্টা চলেছে, তার প্রভাব পড়েছে স্বাধীণতার পরের সরকারি-বেসরকারি পরিকল্পনায়। ফলে অদম্য ভারতীয় তথা বাঙলার সভ্যতা সৃষ্টিকারী শিল্পী-উদ্যমী থেকে স্বাধীনতার পর থেকে নানান উদ্যমে, গ্রাম শিল্পীদের পিঠে সাধারণ দিনমজুর, খেটেখাওয়া, গরীব, বিপিএল, অথবা করুণাযোগ্য হস্তশিল্পীর অনপনেয় ছাপ পড়ে গিয়েছে। এরা সকলেই যে দাগি শ্রমিক সরকারি পরিকল্পনা আর অনুদানরাশিতে তা স্পষ্ট। পারম্পরিক শিল্পীরা বিপিএলশ্রমকার্ডধারী, ভারত সরকারের বছরের একশ দিনের কাজের পরিকল্পনার কয়েকশ টাকার মাটি কাটার মজুরমাত্র। সামাজিক নিরাপত্তা প্রায় শূন্য, রোজগারও তথৈবচ, লুঠ হয়ে যাওয়া সামাজিক সম্মানের কথা যত কম বলাযায় তত ভাল।
তবুও নতুন সময়ে নতুনভাবে, মধ্যবিত্ত প্রজন্মের একটি অংশ সামাজিকভাবে আবার শেকড়ে ফিরতে চাইছেন, এটিই সব থেকে বল-ভারসার কথা – তাই কলকাতা তথা জেলার নানান শিল্প মেলায় বিক্রি বাড়ছে – নতুন করে তাঁরা তাঁদের ঐতিহ্যকে দেখতে চাইছেন – নতুন করে সম্মান ফিরিয়ে দিতে চাইছেন এই গ্রামীণ উতপাদকেদের। শহরের নতুনতম প্রজন্মের দিকে গ্রাম শিল্পীদেরও নতুন প্রজন্ম তাকিয়ে রয়েছেন বড় আশায়। এই শেকড়ছেঁড়া উদ্দাম সময়ে বৃন্দাবন চন্দ, মধুমঙ্গল মালাকার, গীতা কর্মকার বা নিতাই নন্দীরমত শিল্পীদের এবং তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সবলে টিকে থাকা একান্ত প্রয়োজন। কেননা তাঁরা আজও ধরে রেখেছেন সেই কয়েক হাজার বছরের আজেয় বাংলার নিজস্ব প্রযুক্তি, যে প্রযুক্তির বলে এই অনবদ্য সম্মানীয় মানুষগুলি বলতে পারেন, তাঁরা বিন্দুমাত্র বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে, স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করে, স্থানীয় মানুষকে রোজগার দিয়ে, পরিবেশের কম ক্ষতি করে, কমতম সম্পদ ব্যবহার করে গ্রামীণদের বাজারের চাহিদা পূরণ করছেন। এঁরা নিজেরা তৈরি করেছেন সংগঠন। কারোর দয়ায় নয়, নিজেদেরই বলে বাঁচতে চাইছেন। এঁরা বাঁচলে তবেই বাঙলার শিল্প-প্রযুক্তির ইতিহাস বাঁচবে বাংলার ঐতিহ্য পরম্পরা বাঁচবে, বাংলা তার নিজস্ব পরিচয়ে বাঁচবে। আশ্বাসের কথা মধ্যবিত্ত নতুন প্রজন্ম বোধ হয় সেটুকু বুঝতে পেরেছেন।
(দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত)

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা ৩ শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের উদ্যোগী(ওয়াপাগ)দের দাবি- এমএসএমই নয় আলাদা পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক চাই

{এটা কয়েকটা কিস্তির ধারাবাহিক - এবারে তৃতীয় কিস্তি। Somnath Roy, Rouhin Banerjee চেয়েছিলেন এই ধরণের লেখা। এবং যারা মনে করছেন এই উৎপাদন ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা দরকার তাদের জন্য।
বনেদিয়ানার ঢঙেই বলি, এটা তাত্ত্বিক তাথ্যিক লেখা হবে। সবার জন্য নয়। সুখপাঠ্য তো নয়ই। দাবিটি আপাদমস্তক রাজনৈতিক। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার ছাপ অনপনেয়ভাবেই পড়েছে। যাদের এই রাজনৈতিক বক্তব্য অস্বস্তির এবং এই বিশাল লেখাটি ঝামেলাদার মনে হবে স্বচ্ছন্দে এড়িয়ে যেতে পারেন।
এর আগে কয়েকবার এই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম - কিন্তু সাঁটে। এবারে বিশদে প্রেক্ষাপট এবং তার ঐতিহাসিক ভূমিকা তৈরি করে দেওয়া গেল।}
---
গত বিধানসভা ভোটের আগে, ভোটের পরেও বলেছিলাম, মমতা সরকার তৈরি হওয়ার পাঁচ বছর ছমাস পরে বিন্দুমাত্র রাখঢাক না করেই বলছি- ১৭৫৭র ঔপনিবেশিক বাংলা তথা ভারতে, ব্রিটিশ আর ইংরেজি শিক্ষিত চাকুরিজীবী বাঙ্গালির হাতে বাংলার বিশিল্পায়ন, ধ্বংস, লুঠের পরে এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একমাত্র সরকার, যারা বাংলার গ্রাম বিকাশকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা রূপায়িত করছে। বিশ্ববাংলা উদ্যম বিশ্বকে পথ নির্দেশ করছে। সরকারি নীতি সমূহ পরম্পরার বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান গ্রামীণ উদ্যোগীদের বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
সেটা হয়েছে সেটা বর্তমান সরকারের গ্রাম-প্রাধান্য নীতি নেওয়া এবং প্রয়োগ করার জন্যই। স্বাধীনতা পরবর্তী জাতিরাষ্ট্রীয় বড় পুঁজি এবং পশ্চিমী প্রযুক্তি নির্ভর ভারত এবং রাজ্যগুলির নীতি নির্ধারণের ইতিহাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের গ্রাম-প্রাধান্যের নীতি নির্ধারণ এক্কেবারে নতুন ধরণের ভাবনা চিন্তা নয় সেগুলিকে মধ্যবিত্তের এবং তাঁর সঙ্গে কর্পোরেটদের সক্রিয় বিরোধিতা এড়িয়েও সাধ্যমত প্রয়োগ করে চলেছে। তাতে সরাসরি গ্রাম বাঙলার বিকাশ ঘটছে, সরাসরি গ্রামে সম্পদ যাচ্ছে, আড়াইশ বছর লুঠ আর নিপীড়নে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া গ্রামের মানুষ নতুন করে বাঁচতে চাইছেন, শহরমুখী না হয়েও। আমাদের সঙ্গঠনের অন্যতম সক্রিয় উদ্দেশ্য শহরের অর্থ গ্রামে পাঠানো – কন্যাশ্রী, যুবসাথী, সবুজসাথী,লোকপ্রসার প্রকল্পের মত হাজারো প্রকল্পে কিন্তু গ্রাম থেকে লুঠ হওয়া টাকা আবার গ্রামের সাধারণতম মানুষের হাতে পৌঁছাচ্ছে।
স্বীকার করা দরকার আমাদের মত গ্রামীন সংগঠকও অন্তত লোকপ্রসার প্রকল্পর মত বৈপ্লবিক কোন প্রকল্প ভেবে উঠতে পারতাম না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা নতুন বাংলায় আমাদের নতুন করে ভাবার নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
তাই দুটি দাবি এই কয়েক কিস্তির প্রবন্ধে করছি -
১) বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার গ্রমীন উদ্যোগীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্র এবং
২) ব্রিটিশ আর তার অনুগত শিক্ষিত ভদ্রলোকেদের দেওয়া গ্রামীন পরম্পরার উদ্যমীদের হস্তশিল্পী তকমা মুছে ফেলা
***
এই সারকারের গ্রাম-প্রাধান্য নীতির সুযোগে বাংলা-সরকারের কাছে আমাদের দাবি, বাংলার পরম্পরার গ্রামীন উদ্যোগের জন্য আলাদা মন্ত্রক আশু তৈরি হোক। বর্তমানে গ্রাম শহরের বাজারের প্রজ্ঞা, বংশপরম্পরার জ্ঞান আর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত দক্ষতা, নিজস্ব বিদ্যুৎ বিহীন প্রযুক্তি আর স্থানীয় কাঁচামালের ওপর নির্ভর ছোট গ্রামীন উদ্যমীরা আজও সরাসরি নিজেদের কাজকর্মের চালিয়ে যাচ্ছেন সরাসরি নিজেদের পরিকল্পনায় এবং উদ্যমে। সেই উদ্যমকে সরকারি সিলমোহর দেওয়া প্রয়োজন, গ্রাম উদ্যমীদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
মুশকিল হল, আজও এই গ্রামীন পরম্পরার উদ্যমীদের নিজেদের কোন মন্ত্রক নেই – তাঁরা আজও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তর বা এমএসএমইর অধীনে। আমরা মনে করি, এই গ্রামবাংলা পুণর্গঠনের কাজটা এমএসএমই মন্ত্রক দিয়ে হবে না – স্বাধীনতার পর এত দিনেও সম্পন্ন হয় নি – শিল্প উতপাদনে বাংলা যেখানে ছিল তাঁর থেকে ক্রমাগত পিছিয়েছে। তাই পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক তৈরি করার পথেই এগোতে হবে। এমএসএমই উদ্যমী আর পরম্পরার গ্রামীন উদ্যমীদের স্বার্থ, চরিত্র দুটোই আলাদা। যদিও স্পষ্ট করে বলা যাক এই দুই আলাদা চরিত্রের উতপাদকেরা কিন্তু পরস্পরের প্রতিযোগী নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীও নয়।
মনে রাখতে হবে, এমএসএমই মন্ত্রকের সৃষ্টি হয়েছিল বড় পুঁজির উদ্যোগীদের অনুসারী হিসেবে, গ্রাম উদ্যমীদের স্বনির্ভর, স্বনিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে তাড়িয়ে নিয়ে বড় পুঁজি নির্ভর, বিদ্যুৎ পশ্চিমী শিল্পের অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ সম্পন্ন করতে। অনুসারী শিল্প বাংলায় বলা ভাল কলকাতার আশেপাশের শিল্পাঞ্চলে ছিল কিন্তু আজ সেগুলি অস্তমিত। তাদের উতপাদন, প্রযুক্তি, উদ্যমের নিজস্বতা ছিল না। ছিল বড় পুঁজির ওপর প্রগাঢ নির্ভরতা। ফলে বড় পুঁজির প্রযুক্তি, উতপাদনের চেহারা বদলাতে অনুসারী শিল্পগুলি হারিয়ে গিয়েছে বাংলার বড়পুঁজির শিল্প মানচিত্র থেকে। আমরা যারা বাঙলার গ্রামীন বৈশ্য শুদ্র মুসমমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের ছোট উদ্যমীদের সংগঠন যাঁদের সদস্যদের মূল নির্ভরতা জ্ঞান, দক্ষতা আর নিজস্ব বাজার – পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষমতা বা ব্যাঙ্কেবিলিটি নয়, সরাসরি মনে করি লুঠেরা শিল্পবিপ্লবীয় বড় পুঁজি আদতে গ্রামীন ছোট উদ্যমের স্বার্থের সরাসরি বিরোধী – বাঙলার সরকার যে নীতি নিয়ে চলেছে, গ্রামনির্ভরতা বাড়ানো, সেই নীতির বিরোধী।

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা ৪ শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের উদ্যোগী(ওয়াপাগ)দের দাবি- এমএসএমই নয় আলাদা পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক চাই

{এটা কয়েকটা কিস্তির ধারাবাহিক - এবারে চতুর্থ কিস্তি। Somnath Roy, Rouhin Banerjee চেয়েছিলেন এই ধরণের লেখা। এবং যারা মনে করছেন এই উৎপাদন ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা দরকার তাদের জন্য।
বনেদিয়ানার ঢঙেই বলি, এটা তাত্ত্বিক তাথ্যিক লেখা হবে। সবার জন্য নয়। সুখপাঠ্য তো নয়ই। দাবিটি আপাদমস্তক রাজনৈতিক। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার ছাপ অনপনেয়ভাবেই পড়েছে। যাদের এই রাজনৈতিক বক্তব্য অস্বস্তির এবং এই বিশাল লেখাটি ঝামেলাদার মনে হবে স্বচ্ছন্দে এড়িয়ে যেতে পারেন।
এর আগে কয়েকবার এই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম - কিন্তু সাঁটে। এবারে বিশদে প্রেক্ষাপট এবং তার ঐতিহাসিক ভূমিকা তৈরি করে দেওয়া গেল।}
---
***
বড় পুঁজি নির্ভর লুঠেরা শিল্পবিপ্লবের প্রাথমিক দর্শন হল উৎপাদনের কেন্দ্রিকতা এবং এই কেন্দ্রিকতা সফল হয় না যদি না শ্রমকে বৃহৎভাবে প্রতিস্থাপন করা যায় বিপুল যন্ত্র ব্যবহার এবং বিশ্বজোড়া প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করে। ফলে শ্রম প্রতিস্থাপনকারী প্রযুক্তি বিকাশ ঘটতে শুরু করে বিদ্যুৎবাহী স্বতঃচল মাকু চালানোর মাধ্যমে। তাতেও কাপড়ের মিলের লাভ দেখা যায় নি, যতদিন না পলাশী উত্তর সময়ে বাংলা লুঠের সম্পদ লন্ডনে যায় নি আর ভারতের আড়ং নির্ভর বস্ত্রশিল্পকে গায়ের জোরে উচ্ছেদ আর দেশিয় বাজার দখল করে লুঠের সম্পদের ভর্তুকি নির্ভর মিলগুলির খুব খারাপ উৎপাদন এই বাজার গুলোতে বিক্রির ব্যবস্থা করা যায় নি এবং লন্ডনে বাঙলা তথা ভারতীয় বস্ত্র পণ্যের ওপর ৮৫%এর ওপরে শুল্ক লাগু হয় নি।
বড় পুঁজির এই দখলদারির কাজে সরাসরি সাহায্য করেছে ঔপনিবেশিক প্রযুক্তি আর শিক্ষায় শিক্ষিত ভদ্র মধ্যবিত্ত এবং তাঁদের উচ্চমধ্যবিত্ত হয়ে ওঠার প্রণোদনা। সে পলাশির পর থেকেই বাংলার সম্পদ লুঠ আর শ্রম প্রতিস্থাপনের কাজে বড় পুঁজিকে নিঃশর্ত সাহায্য করে গিয়েছে। সিঙ্গুর আন্দোলনে দেখা গিয়েছিল, ১৫০০ কোটি টাকার কোম্পানিতে সরাসরি কাজ হওয়ার কথা মেরে কেটে ১০০০-১৫০০ পশ্চিমি প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করা শ্রমিকের। সেটা সরাসরি আসত শহরের আশেপাশে বা অধিকাংশ বাঙলার বাইরের ভদ্র পরিবার থেকেই। বড় পুঁজির বিকাশের সঙ্গে ভদ্র-মধ্যবিত্তের স্বার্থ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত - ফলে বড় পুঁজির দখলদারির স্বার্থ তারা দেখবে এটা আর আশ্চর্যের কি?
আমরা যারা ছোট গ্রামীন উতপাদকেদের রাজনীতিতে জড়িয়ে রয়েছি, তারা মনে করি বাংলা/ভারত/এশিয়ার গ্রামীন উৎপাদন ব্যবস্থা, বিশ্ব উতপাদন ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দর্শন। এই ক্ষেত্রে হাজারো বিক্রেতা, হাজারো উৎপাদক বিরাজ করে - পুঁজির, লাভের মালিকানা একজন বা কয়েকজনের হাতে জড়ো হয় না, সারা সমাজে ছড়িয়ে যায়। সামাজিক সাম্য বজায় থাকে।
বড় পুঁজি প্রণোদিত হোস্টাইল টেকওভারের মত শুধুই গায়ের জোরে, বড় পুঁজির তৈরি প্রশাসনের আইনের লাঠি দেখিয়ে অনিচ্ছুক উতপাদকের উৎপাদন পরিকাঠামো কিনে নেওয়ারও সুযোগ নেই গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবস্থায়। এই উৎপাদন ব্যবস্থা অনেক বেশি গণতান্ত্রিক, অনেক বেশি পরিবেশ বান্ধব, কম অপচয়ী, প্রযোজনভিত্তিক, স্থানীয় অর্থনীতিকে জোরদার করে, স্থানীয়ভাবে কর্ম সৃষ্টি করে, স্থানীয় জ্ঞান, দক্ষতা আর বাজারভিত্তিক - লাভ দূর দেশে বসে থাকা একজন বা কয়েকজনের হাতে গিয়ে সে লাভ জড়ো হয় না। ফলে আমরা সরাসরি শ্রম প্রতিস্থাপন দর্শনের বিরোধী, বড় পুঁজির গায়ের জোরে দখলদারির বিরোধী, শ্রমের, জ্ঞানের, দক্ষতার অবমাননার বিরোধী।
অবশ্যই এই দক্ষতা জ্ঞান প্রজ্ঞা আর গ্রামীন নিজস্ব বাজার, কাঁচামাল নির্ভর উতপাদন ব্যবস্থায় বড় পুঁজির মূল ব্যবস্থাপক মধ্যবিত্তের পুনর্বাসনের জায়গা নেই। স্বাভাবিকভাবেই এই বিকেন্দ্রিভূত দর্শনটি মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক তাঁদের স্বার্থেই অপছন্দ করবেন এবং করছেনও। তাই তাদের জগতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তেলেভাজা শিল্প তৈরির ডাকে ব্যঙ্গের মিচকি হাসির হররা। অথচ গত কয়েক দশক ধরে বাংলার উন্নয়ন মানচিত্রে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, হরিপুর ইত্যাদি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বড় পুঁজি, জমি, মালিকানা, উৎপাদন পদ্ধতি বিষয়ে যে বিতর্ক জমে উঠেছে তা মনের জানালা খুলে দেয়। নতুন করে ভাবতে শেখায় – কিন্তু ইংরেজী শিক্ষিত ভদ্র বাঙালি কলার তোলা কর্পোরেট তল্পিবাহকই থেকে যায়।
***
মূল বিতর্কে ঢোকার আগে দেখে নেওয়া যাক গ্রাম উতপাদকেদের বাংলা বাজার কতটুকু। বাংলায় অন্তত ৫০ লক্ষ ছোট উদ্যমী, ৭ লক্ষর বেশি তাঁতি এবং অন্তত ৩ লক্ষ পরম্পরার অভিকর শিল্পী রয়েছেন – মোট সংখ্যা ৬০ লক্ষ। এবারে বোঝা যাক – যদি প্রত্যেককে মাসে দুহাজার টাকা রোজগার করতে হয়, তাহলে নিশ্চই বছরে ন্যুনতম ১ লাখ টাকার উতপাদন এবং ব্যবসা করতে হবে। তাহলে ৬০ লক্ষ গুণ ১ লক্ষ – অর্থাৎ ন্যুনতম ৬০ হাজার কোটির ব্যবসা দেয়। এর সঙ্গে প্রায় ১০ কোটির বাংলায় অপরম্পরাগত ছোট গ্রামীন ব্যবসা, কৃষি ইত্যাদির যোগ করলে সেটি আকাশ ছোঁবে।
বাংলার ক্ষেত্রফল এবং জনসংখ্যা ভারতের গড় জনসংখ্যার কাছাকাছি – এই অঙ্কের সঙ্গে যদি আমরা রাজ্যগুলির গুণিতক করে ফেলি তাহলে যে অঙ্কটা দাঁড়াবে তা চোখ কপালে তোলার মতই। কর্পোরেট ব্যবসার উচ্চতার শ্রেষ্ঠতার ফানুষ চুপসে যায়। তাই এই বিশাল বিপুল অর্থনীতির জোরে ২০০৮এর ইওরোপ আমেরিকার বিষকে নীলকণ্ঠের মত ধারণ করে গ্রাম ভারত, কর্পোরেট ভারতকে উদ্ধার করে আর সেই বেল আউটের জেরে কর্পোরেট অর্থিনীতির ফাণ্ডামেন্টাল কত জোরদার সেই ফানুসে বাতাস ভরে বড় পুঁজি পোষিত ফেউয়েরা।
ফিরি আমাদের বিতর্কে – জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, নিজের বাজার, নিজস্ব প্রযুক্তি, নিজের কাঁচামাল, আর নিজের এলাকায় শ্রম বাজারের ব্যবস্থাপনা নিজের হাতে রাখার বৈশ্য শূদ্র মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের গ্রাম উদ্যমের জন্য কেন এমএসএমই মন্ত্রকের বাইরে আমরা একটা আস্ত মন্ত্রকএর দাবি জানাচ্ছি সেই যুক্তি-প্রতিযুক্তিতে। আমাদের প্রতীতি প্রমান করতে আমরা একটা পথ নিয়েছি – দুটি বিষয়ের তুলনা।
বিতর্কে ঢোকার আগে, আগেই যেটা বলেছি, সেটা নতুন করে বলে নেওয়া দরকার, এমএসএমই উদ্যোগীরা আমাদের ভাই। সেই উদ্যোগীদের সঙ্গে পরম্পরার গ্রামীন উদ্যোগের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু দুটি উদ্যম আলাদা। তাদের মধ্যে শুধু উৎপাদন করা ছাড়া কোন কিছুতেই যে মিল নেই তা আমরা এবারে দেখাব।
(চতুর্থ কিস্তির সমাপ্তি)

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা ৫ শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের উদ্যোগী(ওয়াপাগ)দের দাবি- এমএসএমই নয় আলাদা পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক চাই

{এটা কয়েকটা কিস্তির ধারাবাহিক - এবারে পঞ্চম কিস্তি। Somnath Roy, Rouhin Banerjee চেয়েছিলেন এই ধরণের লেখা। এবং যারা মনে করছেন এই উৎপাদন ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা দরকার তাদের জন্য।
বনেদিয়ানার ঢঙেই বলি, এটা তাত্ত্বিক তাথ্যিক লেখা হবে। সবার জন্য নয়। সুখপাঠ্য তো নয়ই। দাবিটি আপাদমস্তক রাজনৈতিক। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার ছাপ অনপনেয়ভাবেই পড়েছে। যাদের এই রাজনৈতিক বক্তব্য অস্বস্তির এবং এই বিশাল লেখাটি ঝামেলাদার মনে হবে স্বচ্ছন্দে এড়িয়ে যেতে পারেন।
এর আগে কয়েকবার এই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম - কিন্তু সাঁটে। এবারে বিশদে প্রেক্ষাপট এবং তার ঐতিহাসিক ভূমিকা তৈরি করে দেওয়া গেল।}
---
বিতর্কে ঢোকার আগে, আগেই যেটা বলেছি, সেটা নতুন করে বলে নেওয়া দরকার, এমএসএমই উদ্যোগীরা আমাদের ভাই। সেই উদ্যোগীদের সঙ্গে পরম্পরার গ্রামীন উদ্যোগের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু দুটি উদ্যম আলাদা। তাদের মধ্যে শুধু উৎপাদন করা ছাড়া কোন কিছুতেই যে মিল নেই তা আমরা এবারে দেখাব।
ধারণা
• বাংলার বিপুল বৈশ্য শূদ্র মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার গ্রামীন উদ্যোগীদের সংগঠনের দাবি গ্রামীন পরম্পরারা ছোট উদ্যোগীদের মন্ত্রক তৈরি করা দরকার –নাম হোক পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক। এই পরম্পরার গ্রাম শিল্পের জোরেই ১৭৭০এর আগে বিশ্বে বাংলার কৃষিজ-বনজ দ্রব্য – নীল, আফিম, চাল, পান, সুপারি, মশলা, সুগন্ধি, মধু, চিনি, মোম, পাট, কাঠ, হাতি, গুড় ইত্যাদি; শিল্পজ পণ্য নুন, সোরা, লোহা, ইস্পাত, দস্তা, বস্ত্র(রেশম, সূতি), হাতির দাঁতের কাজ, পাথরের কাজ, কাঠের কাজ, চিত্র শিল্প, পাথ খোদাই, মোষের শিঙের কাজ, আসবাব, দামি পাথর ইত্যাদি একচেটিয়া বিশ্ব বাজারে একচেটিয়া বিক্রি হত।
• বাংলার বিশ্বে পরিচয় ছিল এই পণ্যগুলিতেই। সারা বিশ্ব বাংলাতে আসত এই পণ্যগুলি কেনার জন্য দুশ কুড়ি তিরিশ বছর আগে। পলাশির পরের অবর্ননীয় লুঠ, ছিয়াত্তরের গণহত্যা আর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পর্যন্ত বাংলার বৈশ্য শূদ্র মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের উদ্যোক্তারাই বাঙলাকে উদ্বৃত্ত অর্থনীতি তৈরি করেছিল।
• পলাশীর এবং ভারত স্বাধীনতার পর পরিকল্পনা করে এই উদ্যমটিকে হতোদ্যম করে দেওয়া হয়েছে – যাতে বড়পুঁজির উতপাদনের বাড়বাড়ন্ত হয়। আজ বঙ্গ সরকার যখন নতুনভাবে উন্নয়নের পথ নজর করে এগোচ্ছে, তখন এই দিকে নজর দিয়ে নতুন মন্ত্রকটির নাম দেওয়া হোক পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক।
• তাতে গ্রামীন পরম্পরার উদ্যমীদের জন্য নতুন ধরণের নীতি নেওয়া যাবে, গ্রামের বেকার সমস্যার সমাধান হবে, রাজ্যের সম্পদ রাজ্যে থাকবে, শহরের টাকা গ্রামে যাবে, গ্রামের মানুষেরা আরও স্বচ্ছল হবেন – গ্রামের মানুষের হাতে টাকা এলে রাজ্যের রোজগার বাড়বে। মনে রাখতে হবে, এমএসএমই আর গ্রামীন পরম্পরার ছোট উদ্যোগের শর্ত আলাদা, তাদের ভাবনা আলাদা, কাজের দর্শন আলাদা।
এসএমএসই ক্ষেত্রের বাস্তবতা
ক। ন্যুনতম বিনিয়োগের শর্ত - সেবা ক্ষেত্রে ১০ লক্ষ টাকা, উতপাদনে ২৫ লক্ষ টাকা
খ। বিনিয়োগ খোঁজার সমস্যা - সাধারণত উদ্যোগীর নিজের বিনিয়োগে সাধারণত ব্যবসা শুরু করতে পারে না। ফলে প্রধানতম বিচার্য সেই ব্যবসা ব্যঙ্ক ঋণের উপয়োগী (ব্যাঙ্কেবল) কি না – সে বিনিয়োগ কোথায় পাবে এবং তা প্রক্রিয়া করে উৎপাদন তৈরি করবে। আদতে বড় পুঁজির ওপর নির্ভরশীল ছোট উদ্যমের বাঁচা মরা কিন্তু বড় পুঁজির আবহেই নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত ব্যাঙ্ক যেহেতু বড় পুঁজিরই উদ্যম, সেহেতু বড় পুঁজির অনুসারী আদতে বড় পুঁজির ইচ্ছে অনিচ্ছের(কেউ কেউ বলেন অর্থনৈতিক আর ব্যবস্থাপনার তত্ত্ব – আদতে তা ইচ্ছেই – যাকে ব্যবস্থাপক আর অর্থনীতিবিদেরা তত্ত্বে রূপান্তরিত করেছেন) ওপরে নির্ভরশীল। আদতে তার অস্তিত্বের ওপর বড় পুঁজির অদৃশ্য হাত সবসময় ক্রিয়া করে। সে বিন্দুমাত্র স্বনির্ভর নয়।
গ। কাঁচামালের জন্য উদ্যমীকে নির্ভর করতে হয় বড় পুঁজির উতপাদনের বা ক্রিয়ার ওপর। কাঁচামালও সাধারণত তাকে জোগাড় করতে হত কিছু দিন পূর্বে রাষ্ট্রের দয়ায়(যারা আদতে পুঁজি নিয়ন্ত্রিত) আজ বড় পুঁজির দয়ায়।
ঘ। প্রযুক্তি তার নিজস্ব নয়। তাকে সেটা মূলত বড় পুঁজি জাত। সেটা তাকে কিনতে হয়। তার পিছনে প্রচুর সময় অর্থ পরিশ্রম ব্যয় হয়। আর নতুন প্রযুক্তি এলে তাকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তার বিনিয়োগ, শ্রমশক্তি তার জন্য ব্যয় করার পরিকল্পনা করতে হয়।
ঙ। ব্যবসার দক্ষতা সাধারণত উদ্যমীর থাকে না। তাকে হয় সেটা গাঁটের কড়ি ফেলে অর্জন করতে হয়, না হয় ভাড়া নিতে হয় কর্মীরূপে।
চ। গত দুদশকে কলকাতার আশেপাশের বড় পুঁজির শিল্পের আবনতির সঙ্গে অনুসারী শিল্পের হ্রাসের মধ্যে একটা তাত্ত্বিক সাজুজ্য রয়েছে – হাতে গোণা ব্যতিক্রম ছাড়া, এমএসএমই উদ্যম বড় পুঁজি শিল্পের অনুসারী। ফলে এলাকায় বড় পুঁজির শিল্পের উচ্চাবচতার সঙ্গে তাঁর ভাগ্য জড়িয়ে রয়েছে।
ছ। আর যদি যে স্বাধীন উতপাদক হয় – তাহলে তার উৎপন্নের বাজার খুঁজতে হয় নিজেকেই, লড়াই করতে হয় বাজারে থাকা বড় প্রতিযোগীর সঙ্গে, বাজারের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে থাকে না।
জ। তাকে যন্ত্র চালাতে সরাসরি নির্ভর করতে হয় বিদ্যুতের ওপর। তার দাম, তা পাওয়া, তার গুণমান সব নির্ভর করে বড় পুঁজির ইচ্ছের ওপর।
(পঞ্চম কিস্তি শেষ)

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা ৬ শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের উদ্যোগী(ওয়াপাগ)দের দাবি- এমএসএমই নয় আলাদা পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক চাই

{এটা কয়েকটা কিস্তির ধারাবাহিক - এবারে ছয় নম্বর কিস্তি। Somnath Roy, Rouhin Banerjee চেয়েছিলেন এই ধরণের লেখা। এবং যারা মনে করছেন এই উৎপাদন ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা দরকার তাদের জন্য।
বনেদিয়ানার ঢঙেই বলি, এটা তাত্ত্বিক তাথ্যিক লেখা হবে। সবার জন্য নয়। সুখপাঠ্য তো নয়ই। দাবিটি আপাদমস্তক রাজনৈতিক। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার ছাপ অনপনেয়ভাবেই পড়েছে। যাদের এই রাজনৈতিক বক্তব্য অস্বস্তির এবং এই বিশাল লেখাটি ঝামেলাদার মনে হবে স্বচ্ছন্দে এড়িয়ে যেতে পারেন।
এর আগে কয়েকবার এই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম - কিন্তু সাঁটে। এবারে বিশদে প্রেক্ষাপট এবং তার ঐতিহাসিক ভূমিকা তৈরি করে দেওয়া গেল।}
---
কিন্তু এর তুলনায় বাংলার পরম্পরার গ্রামীণ ছোট উদ্যোগীদের নিজস্ব জোরের জায়গাটি দেখি -
১। বৈশ্য শূদ্র মুসলমান এবং অন্যান্য গ্রামীন পরম্পরার উদ্যমীদের বিনিয়োগের পুঁজি খুব বড় সমস্যা নয় – সে তার জীবনে ১০ লক্ষ টাকা হয়ত রোজগারই করে না - অথচ সে তার নিজের কারখানার মালিক – সেটা তৈরি করতে সে ব্যাঙ্ক বা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে না। ফলে তাঁর উদ্যম পুঁজি নির্ভর নয় – ব্যাঙ্কের দরজা সে হয়ত তাঁর জীবনে একবারও মাড়ায় না, ফলে চাইলেও ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা মার্ফত বড় পুঁজি তাকে দখল করতে পারে না। সে স্বাধীন। সে নিজের সমাজের সঙ্গে যুক্ত। তাকে রাষ্ট্র পুঁজি কেউই সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে না।
২। কাঁচামাল সমস্যা নয়। শাঁখ, ধাতু আর তাঁতের সুতো(আমরা বাংলায় গ্রামে তুলো চাষ করেছি – ক্রমশঃ তাহলে সুতোর ওপরে তাঁতিদের নিয়ন্ত্রণ এসে যাবে। তাকে আর মিলের খারাপ সুতোর ওপরে নির্ভর করতে হবে না, এমন কী রঞ্জক পদার্থর জন্য মিলের ওপরেও নির্ভর করতে হবে না) ছাড়া কাঁচামাল সাধারণত উদ্যোগী তার গ্রামের আশেপাশ থেকেই সংগ্রহ করে।
৩। তাকে দক্ষতা সংগ্রহের জন্য আলাদা করে পাঠ নিতে হয় না। পরম্পরার ছোট উদ্যোগীদের মূল কাঠামো হল তার বংশপরম্পরায়/সামাজিকভাবে বয়ে যাওয়া সামাজিক দক্ষতা, যে দক্ষতা সে চারিয়ে দিয়ে যায় তার উত্তরপ্রজন্মের কাছে বা তার সমাজে।
৪। তার জোর বংশপরম্পরার বাপ-দাদার বা সামাজিক জ্ঞান। তার জ্ঞান সে হয় তার পরিবারের লোককে বা তার কর্মচারীকে দিয়ে যায় – ফলে সমাজে নিত্যনুতন দক্ষতা আর জ্ঞানে নতুন নতুন উদ্যোগী তৈরি হয়। এবং সেটা তাকে কিনতে হয় না।
৫। প্রযুক্তির জন্যও তাকে কাউকে পয়সা দিতে হয় না, যন্ত্র সারাই করতে তাকে এমন কিছুই খরচ করতে হয় না বা যন্ত্র খারাপ হলে দক্ষ যন্ত্রবিদের জন্য তাকে হাপিত্যেস করে বসে থাকতে হয় না – সে সারাইয়ের দক্ষতা তার নিজের না হয় গ্রামেই না হয় আশেপাশেই থাকে – নতুন প্রযুক্তি এলে পুরোনোকে ফেলে দিয়ে, তা সংগ্রহ করতে দৌড়োদৌড়ি করতে হয় না। নতুন প্রযুক্তি জোগাড় এবং কেনার জন্য বিনিয়োগ আর তা চালাবার জন্য শ্রমিক খুঁজতে হয় না। তার জোর বংশ পরম্পরার নিজস্ব সামাজিক প্রযুক্তি – এখনও জং না পড়া লোহা তৈরি করেন ডোকরা কামার – বড় রোলিংমিল নয়; আজও ভাল সুতো, শাড়ি, জামাকাপড় তৈরি হয় তাঁতে – কাপড় মিলে নয়; আজও সূক্ষ্ম শাঁখে কাজ হয় হাতে, যন্ত্রে নয়।
৬। আর বাজার সাধারণত তার নিজের, হাতের কাছের হাট, বাজার বা গঞ্জ, না হলে কাছের শহর।
৭। ছোট উতপাদকেদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার নিজস্ব উতপাদনের ইতিহাস, নিজস্ব প্রযুক্তির গর্ব, আর ঐতিহ্য যা বাংলার জ্ঞানচর্চা ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে – একদা বাঙ্গালার বিশ্বপরিচিতির সঙ্গে জড়িয়ে।
৮। আরও গুরুত্বপূর্ণ কথা এই উদ্যমে গ্রামের বা স্থানীয় শ্রমশক্তির নিয়োজন হয়। গ্রামের শ্রমিক আরও বেশি কাজ পায়। তাদের কাজ খুঁজতে গ্রামের বাইরে আর যেতে হয় না। আর বিনিয়োগের হারের তুলনায় গ্রামীন ছোট উদ্যোগে অনেক বেশি মানুষ নিয়োজিত হন, তাতে বেকার সমস্যার সমাধান হয়।
৯। আর যেহেতু তার উদ্যম বিদ্যুৎ নির্ভর নয় - নিরপেক্ষ, রাসায়নিক নির্ভর নয় মূলত প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে তাকে উৎপাদন করতে হয় তাই তাকে বড় পুঁজির উতপাদনের সঙ্গে লড়াই করতে হয় না, তার উৎপাদন অনেক বেশি দামে শহুরে বাজারে বিকোয় – তার রোজগার, রাজ্যের রোজগার আর গ্রামের স্বনির্ভরতা বাড়ে। গান্ধীজীর গ্রামস্বরাজের স্বপ্ন সাকার হয়।
১০। এরা কেউ রাজ্যসরকার বা কেন্দ্র সরকারের ভর্তুকি বা বিনিয়োগ পেতে উতসাহী নয়। ফলে এই উদ্যোগী তৈরি করতে সরকারের বিন্দুমাত্র অর্থ ব্যয় হয় না; বরং সরকারের সঙ্গে গ্রামে বসে উৎপাদন করা উদ্যোগী গ্রামন্নয়নের কাযে অংশিদার হয়। তাকে আর উতপাদনের জন্য শহরে আসতে হয় না।
১১। জ্ঞান প্রযুক্তির প্রজ্ঞা নিজের পরিবারে বা সমাজে থাকে তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে যায়। তাই দেশকে জ্ঞান আর প্রযুক্তি কেনার জন্য গাঁটের কড়ি বিনিয়োগ করে বড় পুঁজিকে উৎসাহিত করতে হয় না।
ফলে তাকে আলাদা করে যদি গ্রামীণ ছোট উতপাদকেদের উতসাহিত করা যায়, তাহলে যেমন গ্রামের টাকা গ্রামে থাকে, রাজ্যের টাকা রাজ্যে থাকে, তেমনি দক্ষ শ্রমিক রাজ্য ছেড়ে বিদেশে রোজগারের জন্য পাড়ি দেয় না।
ফলে এই মানুষদের উদ্যম কোনভাবেই এমএসএমই দপ্তরের অধীন হতে পারে না। যে দপ্তর ন্যুনতম দশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করাকে তাঁর আধীনে থাকার উদ্যমীর চরিত্রভাবে, সেই এমএসএমই দপ্তরের অধীন গ্রাম পরম্পরার জ্ঞান, দক্ষতা, নিজের বাজার আর প্রযুক্তি নির্ভর উদ্যমীরা হতে পারে না। গ্রাম উদ্যমীরা স্বাধীন, তাঁরা পুঁজি নির্ভর নয়। তারাই ভারত – তাঁর ইন্ডিয়া নয়। তারাই গ্রাম ভারতের প্রতিনিধি। বাংলা, ভারতের গর্বের প্রতিনিধি। তাঁরা হস্ত শিল্পী নয়, তাঁরা গ্রাম উদ্যমী।
(ছয় নম্বর কিস্তি শেষ))
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
মন্তব্য করুন
1টি মন্তব্য
মন্তব্যগুলি
Tapas Ghoshhajra Laday karo , laday karo jato din na bijoyee hao.

Pratul Mukherjee
খুব ভালোআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
গতকাল 08:33 AM-এ

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা ৭ শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের উদ্যোগী(ওয়াপাগ)দের দাবি- এমএসএমই নয় আলাদা পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক চাই

{এটা কয়েকটা কিস্তির ধারাবাহিক - এবারে সাততম ও শেষ কিস্তি। Somnath Roy, Rouhin Banerjee চেয়েছিলেন এই ধরণের লেখা। এবং যারা মনে করছেন এই উৎপাদন ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা দরকার তাদের জন্য।
বনেদিয়ানার ঢঙেই বলি, এটা তাত্ত্বিক তাথ্যিক লেখা হবে। সবার জন্য নয়। সুখপাঠ্য তো নয়ই। দাবিটি আপাদমস্তক রাজনৈতিক। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার ছাপ অনপনেয়ভাবেই পড়েছে। যাদের এই রাজনৈতিক বক্তব্য অস্বস্তির এবং এই বিশাল লেখাটি ঝামেলাদার মনে হবে স্বচ্ছন্দে এড়িয়ে যেতে পারেন।
এর আগে কয়েকবার এই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম - কিন্তু সাঁটে। এবারে বিশদে প্রেক্ষাপট এবং তার ঐতিহাসিক ভূমিকা তৈরি করে দেওয়া গেল।}
---
শেষ কথা
আমরা যাকে হস্তশিল্প বা হ্যান্ডিক্র্যাফট বলছি সেই বলাটা কতটা সামাজিক, বাস্তবসম্মত সেটা ভাবা দরকার। এ বিষয়ে উইভার্স আর্টিজান এন্ড পারফর্মিং আর্টিস্টস গিল্ডের(ওয়াপাগ) একজন হয়ে কিছু কথা বলার অনুমতি চাইছি।
১৮০০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৭০টি শিল্প দ্রব্য(সোরা, লোহা পিণ্ড, দস্তা, জং ছাড়া ইস্পাত মণ্ড ইত্যাদি) আর ১০০টির বেশি কৃষি দ্রব্য(কাপড়, নীল, আফিম, চাল, নুন, মোম, সুপুরি, তামাক, ভোজ্যতেল, অন্যান্য বনজ দ্রব্য, পান, কাঠ, হাতি ইত্যাদি) প্রায় একচেটিয়া রপ্তানি করত বৃহত বাংলা - আজকের পোকায় কাটা বাংলা নয়, সে ছিল পূর্বের মায়ানমারের প্রান্ত থেকে পশ্চিমে উত্তরপ্রদেশের প্রান্ত, উত্তরে তিব্বতের সীমা থেকে দক্ষিণে ওডিসা পর্যন্ত অঞ্চল - কিন্তু এর পশ্চাদভূমি আরও বড় ছিল - পশ্চিমে রাজস্থান পর্যন্ত আর দক্ষিণ পশ্চিমে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত - তো ভারতে, এশিয়, আফ্রিকার বাজারে কয়েক হাজার বছর ধরে এই জিনিসগুলি সরবরাহ করেছে গ্রামের ছোট উতপাদকেরা, যাদের আমরা হস্তশিল্পী বলে আসছি উপনিবেশের অনুসরণে।
ঔপনিবেশিক বা বড় পুঁজির অর্থনীতিবিদেরা মনে করত, এবং আজও করে, গ্রামীন এই উতপাদকেরা প্রান্তিক, এরা উতপাদন না করলেও অর্থনীতির ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। এরা জাদুঘরের সামগ্রী, এরা যদি না বাঁচে তাহলেও খুব একটা ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। এই অর্থনীতি মৃত। এদের রাষ্ট্রীয় সহায়তার বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
এই ভাবনার বেলুনটির গ্যাস নির্গত হতে শুরু হয়েছিল বহু কাল – কিন্তু তাকে শেষ ধাক্কাটা দিয়ে গিয়েছে গিয়েছে ২০০৮-১১ সালের ইওরোপিয় বিষ। আমরা আজও মনে রাখি না যে বৈশ্য শূদ্র মুসলমান এবং অন্যান্য-গ্রামের বংশ পরম্পরার ছোট উদ্যোগীরা এখনও ভারতের অর্থনীতির ৮০%র অংশিদার, এখনও তারা বড় পুঁজির ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার বাইরে, রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে ২০০৮ সালের ইওরোপ আমেরিকার অর্থনীতির মন্থনে উদ্ভুত বিষ তাঁদের পেড়ে ফেলতে পারে নি। বরং গ্রামীন উতপাদকেদের স্থিতিশীল অর্থনীতি ভারতীয় অর্থনীতিকে বাঁচতে সাহায্য করেছিল। অথচ নাম কিনেছিল, ভেঙ্গে পড়তে পড়তে বেঁচে ওঠা রাষ্ট্রীয় বড় পুঁজির অর্থনীতি, পিঠ চাপড়ানি পেয়েছিল ব্যাংক ব্যবস্থার অর্থনীতির মৌলিক চলকগুলির (বেসিক ফান্ডামেন্টালস) ভিত্তিগুলি।
আমরা এখনও মনে করি, সেটাই বাস্তব, গ্রামের আর্থব্যবস্থার জোরে টিকে রয়েছে ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা - ব্যাংক ব্যবস্থা খুব বেশি হলে ১৫-১৭ শতাংশ মানুষকে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের ব্যবস্থায় - উচ্চমধ্যবিত্তের বাইরে কত শতাংশ মধ্যবিত্তের জীবনের কতটা ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে তা কিন্তু গবেষণাযোগ্য; তার বাইরে রয়েছে বিশাল বিপুল গ্রামীন অর্থনীতি, যার পরিমাপ আমরা এঁকেছি আগেই - ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি, ফলে এই অঙ্কে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির কঙ্কালসার চেহারাটা উলঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়, বড় পুঁজির বাহ্বস্ফোটকে প্রকাশ্যে এনে ফেলে।
এবং সেই গ্রাম্য আর্থব্যবস্থার মূল ভারসাম্য বজায় রাখছে কৃষক আর গ্রামের শূদ্র বৈশ্য মুসলমান এবং অন্যান্য সমাজের বংশপরম্পরার উদ্যমীরা।
যদি আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে স্থিতিশীল বাংলা চাই, তাহলে শহরের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের অর্থিনীতির সবলীকরণ করার দিকে এগোতে হবে, শহরের অর্থ গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে, গ্রামের অর্থনীতিকে আঘাত না করে তাকে জোরদার করতে হবে - যে কাজটা আজ বাংলা শুরু করেছে - আর আমরা করতে যাচ্ছি।
একটা প্রশ্ন উঠবে, যদি গ্রামীন অর্থনীতি এতই সবল হয়, তা হলে আমাদের এই অর্থিনীতিকে নতুন করে সবল করার দরকার কি?
আমাদের সহজ উত্তর, আমাদের জন্য, ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়ানো বিশ্বকে বাঁচাবার জন্য। আজ প্রমাণিত এই দুষণের রাজা, লুঠের সম্রাট শিল্পবিপ্লবীয় উতপাদন ব্যবস্থা বিশ্বকে ধ্বংস করার মুখোমুখি করে ফেলেছে - সেটা অনেকে বুঝলেও অন্তত ভদ্র মধ্যবিত্তর কিস্যু করার নেই - তারা এই লুঠেরা খুনি অত্যাচারী বড় পুঁজির উতপাদন বিতরণ ব্যবস্থার চালকের আসনে। দিনের পর দিন এই উতপাদন বিতরণ ব্যবস্থা বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। আমরা এই গ্রাম্য অর্থনীতির মৌলিক তত্ত্বগুলি আলোচনা করার মাধ্যমে, এই অর্থনীতিকে জোরদার করার মাধ্যমে, ধ্বংস হতে বসা মধ্যবিত্ত, এই অর্থনীতি আর সর্বোপরি এই বিশ্বকে বাঁচাতে চেষ্টা অন্তত করতে পারি।
উইভার্স আর্টিজান এন্ড পারফরমিং আর্টিস্টস গিল্ডের(ওয়াপাগ) পক্ষ থেকে বন্ধুদের বিনীত নিবেদন, যাদের জোরে আজকের ভারত/ইন্ডিয়া দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাদের হস্তশিল্পী না বলে গ্রামভিত্তিক ছোট পরম্পরার উতপাদক বলা চালু করি। অন্তত এই নবতম ভাষ্যটা চালু করার আমরা ভগীরথ হওয়ার সম্মান অর্জন করি।
(শেষ)
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
মন্তব্য করুন
15টি মন্তব্য
মন্তব্যগুলি
Tapas Ghoshhajra Dinga bhasao sagore satheere
Dinga bhasao sagore 


Pratul Mukherjee
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
গতকাল 08:44 AM-এ
পরিচালনা করুন
Susovan Maity smart machines are coming to change everything .. and nobody can stop them ..  অনুবাদ দেখুন
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর23 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda শুভেচ্ছা!
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর23 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Susovan Maity nothing depends on anybody's wish ..   ( good or bad ..)অনুবাদ দেখুন
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর23 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Rouhin Banerjee এই সিরিজটার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ Biswenduদা -
খুব ভালোআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
2
23 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর16 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda Somnath সে আশা ছেড়ে দিয়েছি।ইপ্সিতার কথায় গুরুতে নোট বাতিল সম্বন্ধে দুটো লেখা দিই দুমাসে অন্তর, তাত্ত্বিক লেখা, কেন নোট বাতিল গাঁয়ে কাজ করবে না। Rouhin আর একজন মহিলা মন্তব্য করেছিলেন। Ipsitaও দুঃখ পেয়েছিলেন। মধ্যবিত্তের এ সবে অনাগ্রহ দেখে খুব একটা হতাশ হই না। এটাকেই বাস্তব ধরে নিয়েছি, আপনাদের আগ্রহ দেখে অবাক হই।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর16 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Somnath Roy আগ্রহ থাকলেই সবাই মন্তব্য করেন এরকম তো নয়। তাছাড়া লেখকের কাজ ডকুমেন্ট বানিয়ে যাওয়া।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
16 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Ipsita Pal আরে সেত Somnath Roy ও মন্তব্য করেনি। পড়ে অনেকেই কিন্তু।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
2
16 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda বলেছি, আর অবাক হই না।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর16 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Ipsita Pal এই সিরিজটা পুরো সাইটে থাকলে ভাল হত। শাড়ি নিয়ে যা লিখছিলেন, অনেকেই আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলেন তো!
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর16 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda শাড়ির পোস্টটার লিঙ্ক আছে? তখন নকল করতে পারতাম না। এখন পারি। সেটাকে রেখে দিতাম। Ipsita?
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর16 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Ipsita Pal সাইটে? আছে
। কিন্তু লিখবেন কবে?
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর16 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Somnath Roy তবে, আমি একটা জায়গায় একমত, আমাদের অনেকে নেটিভিস্ট বলে, কিন্তু এই চর্চাটা আদতে নেটিভিসম নয়, বরং একটা উন্নততর পন্থা কে দেখানোর চেষ্টা। আর, বাংলার পাশাপাশি পৃথিবীর অন্যত্রও এই পরম্পরার ইতিহাস আছে হয়তো, সেগুলোকে অস্বীকার করা হচ্ছে না এই আলচনায়। একে কখনওই যেন বাংলা-কেন্দ্রিকতা বলে ভুল না করা হয়।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
16 ঘণ্টাসম্পাদনা করা হয়েছে
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda Somnath আমরা বিশ্বাস করি, যে ব্যবস্থা হাজার হাজার বছর ধরে কাউকে চরমতম ধনী না করে কোটিকোটি মানুষষের দার্শনিক অবস্থা নির্নয় করেছে, সে ব্যবস্থাকে নিয়ে চিন্তা করা দরকার গভীর ভাবে - আমিরা গাঁইয়া উতপাদকেদের সংগঠন করি বলে তো বটেই, কিন্তু সাম্যের একটা দার্শনিক যায়গা থেকেও এটাকে আলোচনা করা উচিৎ।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
3
16 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Souvik Ghoshal Biswendu দার এটা ঠিক ধারণা নয় যে লোকে পড়ছে না। বিশ্বেন্দুদার লেখার জোরের জন্যই ওনার লেখা অনেকেই মন দিয়ে পড়েন। প্রভাবিত হন। সেই সূত্রে চিন্তাভাবনা করেন। 
কোনও কোনও বিষয়ে কারো কিছুটা ভিন্নমত থাকে। তাই নিয়ে তর্ক বিতর্ক হয় যা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। আমার সাথে
ই অনেক বিষয়ে হয়ে থাকে। আর সেগুলিকে আমার দিক থেকে আমি অন্তত বেশ লাভজনক বিবেচনা করে এসেছি।
এই বিষয়টি - এই নোট বাতিল এবং ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার বা ক্যাশলেস/লেসক্যাশ ইত্যাদি দিকে যাবার চেষ্টা করা নি:সন্দেহে একটি গ্রান্ড ডিজাইনের অঙ্গ, যা ছোট মাঝারি পুঁজিকে এলবো আউট করে বিগ মনোপলি ক্যাপিটালকে জায়গা করে দিতে চায়। খানিকটা গুঁতিয়ে মার্কেট করে দিতে চায়।
তা এই গুঁতোর জায়গাগুলো আমরা সেই সময়ে খানিক চর্চা করছিলাম। তারপর ইউ পি ইলেকশনের রেজাল্ট ইত্যাদির ফলে সেই আলোচনা কিছুটা পেছনের দিকে চলে যায়।
কিন্তু জিএসটির পর আবারো সেটা নতুনভাবে সামনে আসছে, আসা দরকার। নোট বাতিল, জি এস টি এসব সম্পর্কিত ব্যাপার। যদিও আপাতভাবে জি এস টি প্রকাশ্যে বহু আলোচিত ও একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া এবং নোটবাতিল ছিল প্রায় একটি বোল্ট ফ্রম দ্য ব্লু। কিন্তু তাদের লক্ষ্যবস্তু বা হিডেন (?) অ্যাজেন্ডাগুলির মিলের জন্যই আবার এগুলি নিয়ে জোরেসোরে আলোচনা তোলা দরকার। সেটা চলুক।
খুব ভালোআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
5
15 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Rouhin Banerjee Sanjib Chakraborty সময় পেলে পুরো সিরিজটা পড়িস
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর14 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Arka Saha Ashadharon lekha Biswendu da
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
14 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda আমি আপনার লেখার নিয়মিত পাঠক। চেষ্টা করবেন সাতটা কিস্তি চোখ বোলাতে।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর14 ঘণ্টাসম্পাদনা করা হয়েছে
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda Souvik Rouhin Somnath Ipsita, আমাদের প্রশ্নটা পড়া নিয়ে নয়, প্রশ্নটা হল প্রশ্ন করা নিয়ে - মার্ক্স বলেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হল না। 
একটা বিমূর্ত ধারনাকে আমরা গাঁইয়ারা তাত্ত্বিক অবস্থানে তুলতে চাইছি, যেটা তাত্ত্বিক অবস্থায় আজও গ্রামের নাটক, গ
ান, গল্প, কথকতায়, বাদ্যে, পুজোয়, আচারে, জীবনযাত্রায় ভুরি ভুরি আছে। গানে, নাটকে, বাদ্যতে, সাধারণ কথাবার্তায়, চিকিৎসায় তাত্ত্বিক আলোচনা হামেসাই হয় - খেউড়, কবিগান, তুখ্যা, বন্ধুপুছা, বন্ধুআলা, বাউল এবং হাজারো প্রকাশভঙ্গীতে মানুষেরা আজও পরস্পরের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন, তত্ত্ব আর তথ্যকে দিনরাত জাগিয়ে রাখেন - এই করে গ্রাম সভ্যতা জেগে থাকে - নিজের পায়ে, নিজের তত্ত্বে, কোন রকম ভনিতা ছাড়া, নিজের মেধার, সামাজিকতার জোরে - যে সামাজিকতায় ভোজে সমাজের প্রত্যেকের অংশগ্রহণ জরুরি - এবং যে যত বেশি বাস্তব সম্পদ-রিক্ত, সেই যেন বড় তাত্ত্বিক। 
আমরা শহুরেরা অপটুত্বের পটুত্ব বা স্বভাব কবি বা স্বভাব গায়ক বলি - স্বভাবে কিস্যু হয় কি না জানি না - দীর্ঘকাল ধরে গ্রামে গঞ্জে যে বিপুল জ্ঞানচর্চা চলে, সেই চর্চার পরিবেশে মানুষ হতে হতে একজন আধজন লালন, হাউড়ে গোঁসাই, মধুমঙ্গল মালাকার, হরকুমার গুপ্ত, করুণাকান্ত হাজারা, বাদল ঢুলি, নেপাল সূত্রধর বা হরিপদ বসাক হয়ে বেরোন। আর প্রত্যেকই গাঁইয়াই যেন দার্শনিক - কিরকম সান্ধ্যভাষায় কথা বলেন একটু ঘনিষ্ঠ হলে। বয়স জিজ্ঞেস করায় লেটোর সংদার হরকুমার গুপ্ত বলেছিলেন ২০০ বছর, আমি আবাল যৌবনে অবুঝের মত হেসে দিয়েছিলাম, বুঝেছিলেন বুঝিনি - বললেন বাবু বয়স কি দেহে হয়, বয়স হয় মনে, আমি আমার পাঁচ পুরুষের গান এই দেহভাণ্ডে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি - এটাই ত আমার বয়েস। সেই যে পৃথিবীটা হেঁটমুণ্ডউর্ধ্বপদ হয়ে গিয়েছিল ব্যক্তি আমি'র, তারপরে আর সোজা হয় নি।
মনের মানুষ উপন্যাস লেখার সময় লেখক এবং ছবি করার সময় পরিচালকবাবু বুঝতেই পারছেন না যে লালন বিদ্যালয়ে যান নি, পড়াশোনা করেননি বিধিবদ্ধভাবে, তিনি কি করে এত দার্শনিকস্তরের কথা বলেন, যা তিনি তো বটেই, ব্রিটিশেরাও বলতে পারে নি? এটা যে ছোটবেলা থেকেই পথে ঘাটে শুধু লালন নন, প্রত্যেক গাঁইয়া নদীর পাড়ে চণ্ডীমণ্ডপে, পালাগানে দেখে শুনে আত্মস্থ করতে করতে বড় হচ্ছেন এবং তার প্রকাশ ঘটছে কারোর কাজে, কারোর গানে, কারোর নাট্যে, কারোর বাদ্যে - কিন্তু পুরোটাই আপনারা বিশ্লেষন করুন দেখবেন গাঁইয়া বিকেন্দ্রিভূত তত্ত্ব ভুরভুর করছে। কারোর প্রকাশ ঘটে কারোর ঘটে না।
ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের কথা আমরা জানি না, কিন্তু বাংলার গাঁইয়ারা অসাধারণ ঔদার্যে ঠাঁই দিয়েছেন তাদের সঙ্গ করার কাজে, বুঝতে পারছি আবছা আবছা, এটা তাত্ত্বিকতার অসাধারণ বৌদ্ধিক প্রকাশভঙ্গী যা আমরা ভদ্ররা ভাবতেও পারি না। এটার অভাব খুব টেরপাই শহরে। খুব হোঁচট খেয়ে খেয়ে এগোতে হয়।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
4
14 ঘণ্টাসম্পাদনা করা হয়েছে
পরিচালনা করুন
Souvik Ghoshal লেখাটা কথাগুলো বুকের মধ্যে ভালোবেসে রেখে দিলাম। ছুঁয়ে যাওয়া একটা অনুভব হরকুমার গুপ্তর কথাটা। বহন করে চলা একটা পরম্পরা। সেটা ধারণ করে থাকা শরীরে মনে স্মৃতিতে। নিবিড় এক অনুভব থেকে বলা।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
3
14 ঘণ্টাসম্পাদনা করা হয়েছে
পরিচালনা করুন
Bikram Aash "বয়স জিজ্ঞেস করায় লেটোর সংদার হরকুমার গুপ্ত বলেছিলেন ২০০ বছর"..... এইভাবেই বোধহয় পরম্পরা ধমনীতে বাহিত হয়।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
2
13 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda পরম্পরাকে সম্মান দেওয়া তো বটেই কিন্তু দার্শনিকতা দেখুন। একটা মানুষ তার ঐতিহ্যকে কতটা গুরুত্ব দিলে এই কথা বলতে পারেন, সেই দার্শনিকতাটা বোঝা জরুরি - না ইনি রবীন্দ্রনাথ পড়েন নি, মার্ক্স পড়েন নি, কিয়ের্কাগার্ড পড়েন নি - লিখতেও জানেন না, কিন্তু কি যে দার্শনিকতা তার মধ্যে রয়েছে - তখন অবাক হয়েছিলাম আজ হই না - তিনি হয়ত লিখতে পড়তে জানেন না কিন্তু অসাধারণ জ্ঞানী।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
4
13 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Rouhin Banerjee আমরা যাকে "শিক্ষা" বলি, তার সাথে সত্যিকারের জ্ঞানের বহু যোজন ফারাক। এ কথাটা নিজের জীবনে এখনো শিখে চলেছি।
খুব ভালোআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
3
13 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda Rouhin অসাধারণ বলেছেন।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
13 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Bikram Aash এঁদের কথা আরও লিখুন। কারণ ভদ্রসমাজ এঁদেরকে করুণার পাত্র মনে করে। তাই এঁদের দর্শনকে বোঝার জন্য আপনাদের মতো মানুষকে আরও বেশি করে লিখতে হবে!!
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
13 ঘণ্টাসম্পাদনা করা হয়েছে
পরিচালনা করুন
Somnath Roy শিক্ষা তো চাকরি পেতে লাগে
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
3
12 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda এই গানটা প্রথমে পড়ুন, তার পরে শুনুন। এটা শিক্ষা নয়, জ্ঞান-
কালু শাহ ফকির (১৮১০-১৯০৫, ঢাকা) - নিরিখ বান্ধো রে দুই নয়নে ( শিল্পী আব্দুল আলীম )
নিরিখ বান্ধোরে দুই নয়নে

নিরিখ বান্ধোরে দুই নয়নে
ভুইলো না মন তাহারে।
ওরে ভুল করিলে যাবি রে মারা
পড়বি রে ভীষন ফেরে...
ভুইলো না মন তাহারে
আগে আপনাকে চেনো
পরে, গুরু কে মানো
দেহ ,পাশ করে আনো।
ওরে সইমোহরের নকল গুরু
দেবেন তোমায় দয়া করে ওরে
দেবেন তোমায় দয়া করে
ভুইলো না মন তাহারে
প্রেমের গাছে একটি ফল
রসে, করে টলোমল
তাতে ভ্রমর হয় পাগল
সে ফল, গুরু কে দিয়ে শিষ্য খাইলে
অমর হয় সে সংসারে, ওরে
অমর হয় সে সংসারে
ভুইলো না মন তাহারে
নিরিখ বান্ধোরে দুই নয়নে
নিরিখ বান্ধোরে দুই নয়নে
ভুইলো না মন তাহারে।
ওরে ভুল করিলে যাবি রে মারা
পড়বি রে ভীষন ফেরে...
ভুইলো না মন তাহারে

https://www.youtube.com/watch?v=IYflJLNq_8Y&feature=youtu.be
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তরপূর্বরূপ মুছে ফেলুন
3
11 ঘণ্টা