Wednesday, August 9, 2017

গ্রামীন পরম্পরার উদ্যোগ - দাবি পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক - ওয়াপাগের ডাক - বিতর্ক

ওয়াপাগের(উইভার্স আর্টিজান এন্ড পার্ফরমইং আর্টিস্টস গিল্ড) পক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ গ্রামীণ ছোট উদ্যোগিদের পক্ষে দাবি পরম্পরার গ্রামশিল্পের পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক তৈরি করার - ১৭৫৭র বাংলার বিশিল্পায়ন, ধ্বংস, লুঠের পরে এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একমাত্র সরকার, যারা বাংলার গ্রাম বিকাশকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা রূপায়িত করছে। বিশ্ববাংলা উদ্যম বিশ্বকে পথ নির্দেশ করছে। বিশ্ববাংলা বাংলার পরম্পরার গ্রামীণ উদ্যোগীদের বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সেটা বর্তমান সরকারের গ্রাম-প্রাধান্য নীতি প্রয়োগ করার জন্যই। আমাদের আশা বাংলার পরম্পরার গ্রামীন উদ্যোগের জন্য আলাদা মন্ত্রক আশু প্রয়োজন। এই পুণর্গঠনের কাজটা এমএসএমই মন্ত্রক দিয়ে হবে না – আমাদের নিজস্ব পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক তৈরি করার পথেই এগোতে হবে – এমএসএমই মন্ত্রককে দিয়ে হবে না, এত দিন হয় নি।
• এমএসএমই উদ্যোগীরা আমাদের ভাই। সেই উদ্যোগীদের সঙ্গে পরম্পরার গ্রামীন উদ্যোগের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু দুটি উদ্যম আলাদা। তাদের মধ্যে শুধু উৎপাদন করা ছাড়া কোন কিছুতেই যে মিল নেই তা আমরা পরে দেখিয়েছি।
• তাই বাংলার গ্রামীন উদ্যোগীদের সংগঠনের দাবি গ্রামীন পরম্পরারা ছোট উদ্যোগীদের মন্ত্রক তৈরি করা দরকার – যার নাম এখন হস্তশিল্প – তার নাম হোক পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক। এই পরম্পরার গ্রাম শিল্পের জোরেই ১৭৭০এর আগে বিশ্বে বাংলার কৃষিজ-বনজ দ্রব্য – নীল, আফিম, চাল, পান, সুপারি, মশলা, সুগন্ধি, মধু, চিনি, মোম, পাট, কাঠ, হাতি, গুড় ইত্যাদি; শিল্পজ পণ্য নুন, সোরা, লোহা, ইস্পাত, দস্তা, বস্ত্র(রেশম, সূতি), হাতির দাঁতের কাজ, পাথরের কাজ, কাঠের কাজ, চিত্র শিল্প, পাথ খোদাই, মোষের শিঙের কাজ, আসবাব, দামি পাথর ইত্যাদি একচেটিয়া বিশ্ব বাজারে একচেটিয়া বিক্রি হত।
• বাংলার বিশ্বে পরিচয় ছিল এই পণ্যগুলিতেই। সারা বিশ্ব বাংলাতে আসত এই পণ্যগুলি কেনার জন্য দুশ কুড়ি তিরিশ বছর আগে, ছিয়াত্তরের গণহত্যা আর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পর্যন্ত।
• পলাশীর এবং ভারত স্বাধীনতার পর পরিকল্পনা করে এই উদ্যমটিকে হতোদ্যম করে দেওয়া হয়েছে – যাতে বড়পুঁজির উতপাদনের বাড়বাড়ন্ত হয়। আজ বঙ্গ সরকার যখন নতুনভাবে উন্নয়নের পথ নজর করে এগোচ্ছে, তখন এই দিকে নজর দিয়ে নতুন মন্ত্রকটির নাম দেওয়া হোক পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক।
• তাতে গ্রামীন পরম্পরার উদ্যমীদের জন্য নতুন ধরণের নীতি নেওয়া যাবে, গ্রামের বেকার সমস্যার সমাধান হবে, রাজ্যের সম্পদ রাজ্যে থাকবে, শহরের টাকা গ্রামে যাবে, গ্রামের মানুষেরা আরও স্বচ্ছল হবেন – গ্রামের মানুষের হাতে টাকা এলে রাজ্যের রোজগার বাড়বে। মনে রাখতে হবে, এমএসএমই আর গ্রামীন পরম্পরার ছোট উদ্যোগের শর্ত আলাদা, তাদের ভাবনা আলাদা, কাজের দর্শন আলাদা।
এসএমএসই ক্ষেত্রের সমস্যা হল -
ক। ন্যুনতম বিনিয়োগের শর্ত - সেবা ক্ষেত্রে ১০ লক্ষ টাকা, উতপাদনে ২৫ লক্ষ টাকা
খ। বিনিয়োগ খোঁজার আর কাঁচামাল পাওয়ার সমস্যা - সাধারণত উদ্যোগীর নিজের বিনিয়োগে এবং কাঁচামালে সাধারণত ব্যবসা শুরু করতে পারে না। ফলে প্রধানতম বিচার্য সেই ব্যবসা ব্যঙ্ক ঋণের উপয়োগী(ব্যাঙ্কেবল) কি না – সে বিনিয়োগ কোথায় পাবে আর কাঁচামাল কি করে পাবে এবং তা প্রক্রিয়া করে উৎপাদন তৈরি করবে।
গ। প্রযুক্তি - প্রযুক্তি তার নিজস্ব নয়। তাকে সেটা কিনতে হয়। তার পিছনে প্রচুর সময় অর্থ পরিশ্রম ব্যয় হয়। আর নতুন প্রযুক্তি এলে তাকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তার বিনিয়োগ, শ্রমশক্তি তার জন্য ব্যয় করার পরিকল্পনা করতে হয়।
ঘ। দক্ষতা – সাধারণত সেটাও উদ্যমীর থাকে না। তাকে হয় সেটা গাঁটের কড়ি ফেলে অর্জন করতে হয়, না হয় ভাড়া নিতে হয় কর্মীরূপে
ঙ। তার উৎপন্নের বাজার খুঁজতে হয়, লড়াই করতে হয় বাজারে থাকা বড় প্রতিযোগীর সঙ্গে।
কিন্তু এর তুলনায় বাংলার পরম্পরার গ্রামীণ ছোট উদ্যোগীদের নিজস্ব জোরের জায়গাটি দেখি -
১। বিনিয়োগ বিন্দুমাত্রই বড় সমস্যা নয় – সে তার জীবনে ১০ লক্ষ টাকা হয়ত রোজগারই করে না - অথচ সে তার নিজের কারখানার মালিক – সেটা তৈরি করতে সে ব্যাঙ্ক বা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে না।
২। কাঁচামাল সমস্যা নয়। শাঁখ, ধাতু আর তাঁত ছাড়া কাঁচামাল সাধারণত উদ্যোগী তার গ্রামের আশেপাশ থেকেই সংগ্রহ করে।
৩। তাকে দক্ষতা সংগ্রহের জন্য আলাদা করে পাঠ নিতে হয় না। পরম্পরার ছোট উদ্যোগীদের মূল কাঠামো হল তার বংশপরম্পরায় বয়ে যাওয়া সামাজিক দক্ষতা, যে দক্ষতা সে চারিয়ে দিয়ে যায় তার উত্তরপ্রজন্মের কাছে বা তার সমাজে।
৪। তার জোর বংশপরম্পরার সামাজিক বাপ-দাদার জ্ঞান। তার জ্ঞান সে হয় তার পরিবারের লোককে বা তার কর্মচারীকে দিয়ে যায় – ফলে সমাজে নিত্যনুতন দক্ষতা আর জ্ঞানে নতুন নতুন উদ্যোগী তৈরি হয়।
৫। প্রযুক্তির জন্যও তাকে কাউকে পয়সা দিতে হয় না, যন্ত্র সারাই করতে তাকে এমন কিছুই খরচ করতে হয় না বা যন্ত্র খারাপ হলে দক্ষ যন্ত্রবিদের জন্য তাকে হাপিত্যেস করে বসে থাকতে হয় না – সে সারাইয়ের দক্ষতা তার গ্রামেই থাকে - – নতুন প্রযুক্তি এলে পুরোনোকে ফেলে দিয়ে, তা সংগ্রহ করতে দৌড়োদৌড়ি করতে হয় না। নতুন প্রযুক্তি জোগাড় এবং কেনার জন্য বিনিয়োগ আর তা চালাবার জন্য শ্রমিক খুঁজতে হয় না। তার জোর বংশ পরম্পরার নিজস্ব সামাজিক প্রযুক্তি – এখনও জং না পড়া লোহা তৈরি করেন ডোকরা কামার – বড় রোলিংমিল নয়; আজও ভাল সুতো, শাড়ি, জামাকাপড় তৈরি হয় তাঁতে – কাপড় মিলে নয়; আজও সূক্ষ্ম শাঁখে কাজ হয় হাতে, যন্ত্রে নয়।
৬। আর বাজার সাধারণত তার নিজের, হাতের কাছের হাট, বাজার বা গঞ্জ, না হলে কাছের শহর।
৭। ছোট উতপাদকেদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার নিজস্ব উতপাদনের ইতিহাস, নিজস্ব প্রযুক্তির গর্ব, আর ঐতিহ্য যা বাংলার জ্ঞানচর্চা ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে – একদা বাঙ্গালার বিশ্বপরিচিতির সঙ্গে জড়িয়ে।
৮। আরও গুরুত্বপূর্ণ কথা এই উদ্যমে গ্রামের বা স্থানীয় শ্রমশক্তির নিয়োজন হয়। গ্রামের শ্রমিক আরও বেশি কাজ পায়। তাদের কাজ খুঁজতে গ্রামের বাইরে আর যেতে হয় না। আর বিনিয়োগের হারের তুলনায় গ্রামীন ছোট উদ্যোগে অনেক বেশি মানুষ নিয়োজিত হন, তাতে বেকার সমস্যার সমাধান হয়।
৯। আর যেহেতু তার উদ্যম বিদ্যুৎ নির্ভর নয়, রাসায়নিক নির্ভর নয় মূলত প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে তাকে উৎপাদন করতে হয় তাই তাকে বড় পুঁজির উতপাদনের সঙ্গে লড়াই করতে হয় না, তার উৎপাদন অনেক বেশি দামে শহুরে বাজারে বিকোয় – তার রোজগার, রাজ্যের রোজগার আর গ্রামের স্বনির্ভরতা বাড়ে। গান্ধীজীর গ্রামস্বরাজের স্বপ্ন সাকার হয়।
১০। এরা কেউ রাজ্যসরকার বা কেন্দ্র সরকারের ভর্তুকি বা বিনিয়োগ পেতে উতসাহী নয়। ফলে এই উদ্যোগী তৈরি করতে সরকারের বিন্দুমাত্র অর্থ ব্যয় হয় না; বরং সরকারের সঙ্গে গ্রামে বসে উৎপাদন করা উদ্যোগী গ্রামন্নয়নের কাযে অংশিদার হয়। তাকে আর উতপাদনের জন্য শহরে আসতে হয় না।
ফলে তাকে আলাদা করে যদি গ্রামীণ ছোট উতপাদকেদের উতসাহিত করা যায়, তাহলে যেমন গ্রামের টাকা গ্রামে থাকে, রাজ্যের টাকা রাজ্যে থাকে, তেমনি দক্ষ শ্রমিক রাজ্য ছেড়ে বিদেশে রোজগারের জন্য পাড়ি দেয় না।
9টি মন্তব্য
মন্তব্যগুলি
Uddipan Nath Here...are we trying to clearly establish that 'Traditional and Village based Enterprises' are distinct from 'micro, small and medium enterprises'? And therefore a Ministry needs to be dedicated for the 'Traditional and Village based Enterprises'. This needs to be examined whether 'Traditional and Village based Enterprises' are presently included under the 'micro, small and medium enterprises' by the government (Union), for statistical purposes.অনুবাদ দেখুন

লাইক
প্রত্যুত্তর
1
9 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Uddipan Nath I suppose the most significant point of distinction would be the community ownership of the applicable technologies and its roots in পরম্পরা (tradition)অনুবাদ দেখুন
পরিচালনা করুন
Uddipan Nath Another significant marker probably is the নিজস্ব প্রযুক্তির গর্ব (pride that comes from being the owner of a technology) and along with it the sense of control of one's own fate - in real sense being truly self reliant.অনুবাদ দেখুন
পরিচালনা করুন
Uddipan Nath And most importantly - the most significant impetus for creation of an independent Ministry for 'Traditional and Village based Enterprises' is because of this idea - এই উদ্যমে গ্রামের বা স্থানীয় শ্রমশক্তির নিয়োজন হয়। গ্রামের শ্রমিক আরও বেশি কাজ পায়। তাদের কাজ খুঁজতে গ্রামের বাইরে আর যেতে হয় না। আর বিনিয়োগের হারের তুলনায় গ্রামীন ছোট উদ্যোগে অনেক বেশি মানুষ নিয়োজিত হন, তাতে বেকার সমস্যার সমাধান হয়। Given that the Union & State Governments claim that they are focussed on policies that will generate more dignified and sustainable livelihoods (than the Indian economy is producing at present), it is important to recognize the pride factor that is associated with traditional and village based enterprises and the sense of dignity that comes to traditional and village based entrepreneur; besides such a craft being sustainable since - কাঁচামাল সমস্যা নয়। শাঁখ, ধাতু আর তাঁত ছাড়া কাঁচামাল সাধারণত উদ্যোগী তার গ্রামের আশেপাশ থেকেই সংগ্রহ করে।

লাইক
প্রত্যুত্তর
1
8 ঘণ্টা
পরিচালনা করুন
Uddipan Nath And besides, such enterprises are minimalist in terms of their energy consumption - again a big-big plus for environmental sustainability - all the more a pressing reason for an independent Ministry for 'Traditional and Village based Enterprises'অনুবাদ দেখুন
পরিচালনা করুন
Debdas Bandyopadhyay ন্যায্য দাবি। সমর্থন করি।

No comments: