Saturday, September 28, 2013

প্রকাশিতব্য পরম পত্রিকা সম্পর্কে কয়েকটি কথা, Some aloud thoughts on a to be published Journal on Traditional, Knowledge, History, Technology, Movements of Bengal & India

পরম প্রিয় বন্ধুদের প্রতি পরমের একটি মুখবন্ধ
কলাবতী মুদ্রা আগামী নভেম্বর থেকে একটি পত্রিকা প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে। অনুমতি সাপক্ষে নাম হতেপারে হয়ত পরম। পরম্পরা অর্থে পরম। ভারতীয় জ্ঞানচর্চায় অসীম শব্দের অর্থে পরম। ছোট্ট নামের এই পত্রিকা প্রকাশের সমস্ত পরিকল্পনা প্রায় সমাপ্ত। অক্ষরজোড়ার কাজ চলছে। প্রথম পত্রিকাটির সাজনগুজন হবে দুর্গোপুজোর পরে। কলাবতী মুদ্রা শিল্পীদের দল দিল্লি থেকে ফিরে এলে।

পরম পত্রিকাটি আপাততঃ মাসিক। কলকাতা থেকে বেরোবে। ৪০ পাতার আশেপাশে। বিষয় বাংলার প্রযুক্তি, জ্ঞান, ইতিহাস, গ্রামীণ সংস্কৃতি বাখান। বাংলার নানান পত্রিকা এই ধরণের প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তাহলে নতুন একটি পত্রিকা কেন? পত্রিকাগুলি হয় অনিয়মিত, নয় খুব বেশী এ ধরণের প্রবন্ধ প্রকাশ করে না। অনেকে বাংলা চর্চা করেন, কিন্তু শুধুই এই বিষয়গুলি নিয়ে পড়ে থাকেন না। হয়ত বাজারের অভাব। লেখারও হয়ত অভাব। নিয়মিত শুধুই এ ধরণের লেখা প্রকাশের ধ্যানবিন্দুও তাদের নেই। আর যারা প্রকাশ করেন, তাদের কলেবর এত্ত বড় হয়, যে অনেকের তবিলের অসামর্থের দরুন কেনার সুযোগ হয় না। কলাবতী মুদ্রা বিগত কয়েক বছর এবং তার সঙ্গে জুড়ে থাকা উদ্যমীরা কয়েক দশক ধরে প্রযুক্তি আর ইতিহাস নথির কাজ করে চলেছেন। এ বিষয়ের লেখক, লেখা পাওয়ার সমস্যা তুলনামুলকভাবে কম। এক বছরের বিষয় নির্বাচনও হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেক সংখ্যার প্রধান লেখাগুলো হাতে রয়েছে। লেখা অদলবদল, মাসের আগুপিছু হতে পারে, নতুন কোনও বিষয়ও ঢুকে পড়তে পারে। সংখ্যা প্রস্তুতির মন, সম্পাদনার হাত, শুভানুধ্যায়ীদের ভাবনার মাথয় রেখে খোলা হৃদয়ে পরমের পরিকল্পনা চলছে।

পাঠক এবং প্রচার
পত্রিকার প্রচ্ছদ থেকে শুরু হয়ে শেষ পাতা পর্যন্ত লেখা থাকবে। পাঠক পত্রিকা নেবেন বিষয় দেখে, স্বআগ্রহে।  সাজসজ্জায় মোহিত হয়ে নয়।  যার এই বিষয়টিতে উৎসাহ আছে তিনি কিনবেন। সাজসজ্জা গুরুত্বপুর্ন। কিন্তু লেখার তুলনায় নয়। পরম পত্রিকার পাঠক সংখ্যা ধরে নিচ্ছি সীমিত। এই পত্রিকা বিকোবে এবং  বিনা মুল্যে ছড়াবে খুব বেশী হলে মাসে মোট ৫০০টা। নিয়ে আমরা  স্বপ্ন দেখি না। লেখকদের ২৫০ টাকা করে সাম্মানিক প্রদান করা হবে। তিন মাস পর থেকে। কেউ হাত বাড়িয়ে দিলে হাত ধরতে তৈরি।

পরমের অক্ষহৃদয়
ভারত/বাংলার বিস্তৃত সংস্কৃতি, জাতপাত(পক্ষে-বিপক্ষে), ধর্ম, জ্ঞান-ভাণ্ডার, ঐতিহ্য, ইতিহাস, প্রযুক্তি, সম্পদ, মেধা, ধনসম্বল, প্রতিষ্ঠান বিরোধী আন্দোলন, বিশ্বায়ন বিরোধী সংঘর্ষ, আন্দোলন, আলাপআলোচনা, ইয়োরোপ-আমেরিকিয় জ্ঞানচর্চার অধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই, লেখা, ভাবনা এবং ভারতে-বাংলায় সেই জ্ঞানচর্চার বাইরের কোনও উদ্যম, এক জাতি-একরাষ্ট্র-একভাষার নেশন স্টেট বিরোধী কোনও কিছু, গ্রাম সংস্কৃতিকে লৌকিক-আদিবাসী ইত্যাদি দাগিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে, উচ্চ-মধ্যবিত্তের ক্ষমতার পদলেহন এবং তার জন্য যা কিছু সে করতে পারে- তার বিরুদ্ধে ভাবনা, গ্রাম সংস্কৃতি-উতপাদন-ব্যবসার দর্শন- তাদের জোরের যায়গাটি নতুন করে ধরিয়ে দেওয়ার প্রবল পক্ষে, হর-গ্রামের আমাদেরমত সাধারণের কৃষ্টি, জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি, পরস্পরের সঙ্গে হাত ধরে থাকার প্রবল চেষ্টাকে এই ভঙ্গুর সময়ে তলিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি-মগজধলাইয়ের বিরুদ্ধে যে বা যারা দাঁড়াচ্ছেন তাদের পাশে সোচ্চার থাকা, এই বিশ্বায়নের করাল গ্রাসে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট বন্ধুত্ব, ছোট ছোট ভালবাসা, ছোট ছোট করে বেঁচে থাকাকে যতটা পারা যায় আমাদের মত করে তুলে ধরা, ধন-সম্পদ লুঠের সরকারি-বেসরকারি উদ্যমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো... এর সঙ্গে জুড়ে থাকা জানা না জানা বহু কিছু আমাদের এই পত্রিকার হৃদয়। 

কোন সংগঠন
পরম আপাততঃ কলাবতী মুদ্রা এবং বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘএর মুখপত্র হিসেবেও কাজ করবে।  আমাদের সংগঠন বঙ্গীয় পারম্পারিক কারু বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘ শিল্পীদের জেলায় জেলায় সংগঠিত করে এবং এটির গবেষণা সমিতি কলাবতী মুদ্রা। এ দুটিই প্রধানত চাঁদা ভিত্তিক সমিতি। সদস্য বন্ধুদের চাঁদায় নানান কাজ সংগঠিত হয়। সঙ্ঘের ১৭টি জেলায় জেলা সমিতি রয়েছে। 

কোন ভাষা
এই পত্রিকাতে মুলতঃ বাংলায় লেখা প্রবন্ধ প্রকাশ পাবে। অন্য ভাষায়ও লেখা প্রকাশ পেতে পারে। আমরা একটা পত্রিকা করতে চাইছি যেটি একটি পত্রিকা, একটা ভাষা, রাষ্ট্রের এই তৈরি করে দেওয়া গত ছাড়বে। বীরভূমের মহম্মদবাজারের কাছে আমাদের কিছু সাঁওতাল ভাষী বন্ধু সংগঠন এই ধরণের পত্রিকা করেন। তারা আমাদের অনুপ্রেরনা। 
তবে এখানে কিছু কথা রয়েছে। সম্পাদকেরা অন্য ভাষায় লেখা পেতে ইচ্ছুক। সেই লেখাটি সম্পাদক মণ্ডলীর সকলকে বুঝতে হবে। একজন সম্পাদক বাংলা ছাড়া কিছুই বোঝেন না, তিনি মধুমঙ্গল মালাকার। শোলা শিল্পী। সেই ভাষায় লেখা তাদেরকে কি করে বোঝাবেন, সেটি লেখকের দায়। পত্রিকায় কিভাবে বেরোবে সেটিও লেখকের দায়। কেননা বাস্তব হল, কলকাতায় কোনও তামিল বা সাদরি ভাষায় লেখা এলে সেটি কিভাবে পত্রিকায় ছাপব জানি না -বাংলা লিপিতে লেখা হয় এমন ভাষা ছাড়া। এই দায় লেখকেরই। যে ফন্টে লেখা হচ্ছে, সেটি পাঠালে এবং লেখাটি পেজমেকারে লিখলে কিছুটা হয়ত সমাধান করা যায়। বাংলায়  পাঠকের বোঝার জন্য, লেখক যদি আমাদের বিষয়টি বুঝিয়ে দেন, তাহলে আমাদের উদ্যোগে সেটির বাংলা সারাংশ করে দেব।আমাদের কাছে তামিল, সাদরি, ইংরেজি, সাঁওতালি, ফারসি, রাজবংশী, সোহেয়িলি সবের সমান গুরুত্ব। বাংলার গুরুত্ব একটু বেশি। 
বাংলায় কোনও উপভাষা আছে বলে আমরা মনে করি না - বিখ্যাতরা যা বলুকনা। সবকটিই নিজের পায়ে দাঁড়ানো ভাষা। হিন্দি, ইংরেজি ভাষা বাংলাকে আক্রমণ করলে নাকে কাঁদি, আর নিজেদের এলাকায়  ইংরেজি হিন্দি ভাষা ক্ষমতা প্রয়োগের অনুকরণ করে বাংলার অন্য ভাষাকে বাংলার উপভাষা বলি! ক্ষমতা কেন্দ্রিকতা আর কদিন?

ব্যবসা
পত্রিকা বন্ধুদের দানে চলবে। ছোট ব্যবসার বিজ্ঞাপন নেব। সরকারি বিজ্ঞাপন? এখনও কিছু নীতি ঠিক করি নি।  বাৎসরিক সদস্য করব। ১০০ টাকায়। আর থাকবে বন্ধুদের দান

পরমের বারোমাস্যা
মোটামুটি যে ১২টি পরম সংখ্যার পরিকল্পনা রা গিয়েছে-

প্রথম সংখ্যাটি লোহা ইস্পাত শিল্প নিয়ে। থাকবে ১) রস-রত্ন-সমুচ্চয়ে ধাতুর শ্রেণীবিভাগ।২) উনবিংশ শতকে ভারতের নানান অঞ্চলের লোহা-ইস্পাত শিল্পের বর্ননা। ৩) ঊজ় ইস্পাত।  ৪) মাড়িয়াদের লোহা তৈরির প্রযুক্তি। ৫) খাসি পাহাড়ের লোহা তৈরি প্রযুক্তি। ৬) বাংলার লোহা তৈরির ইতিহাস এবং মুণ্ডাদের লোহা তৈরির প্রযুক্তি। ৭) বাংলার ডোকরা কামার। ৮) সোনাধর বিশ্বকর্মাকে নিয়ে একটি লেখা। ৯) বাংলার কামারশালের ছবিপ্রতিবেদন।

দ্বিতীয় সংখ্যাটি হবে চাষ নিয়ে কৃষি পরাশর জয়াদি অনুবাদ করেছেন, কালধ্বনি প্রকাশ করেছে। সেটি নতুন আকারে, নতুন ভুমিকায় প্রকাশ পাবে। ১০০ বছরের পুরোনো কৃষি পরাশরের অনুবাদ থাকবে। ১০০ বছরের বেশি পুরনো কয়েকটি কৃষি পত্রিকার নানান বিষয়ে লেখার সঙ্গে কৃষি বিষয়ে পুরোনো কিছু রম্য রচনা। সঙ্গে আরও কিছু লেখা

তৃতীয়টি হবে বাংলার নুন উৎপাদন, মেদিনীপুরের নুন শিল্প, কোম্পানির লবণ মহল লুঠ, ধনী বাঙ্গালীদের নুনের ব্যবসা, রয় মক্সহ্যামের একটি লেখা- নুন শরীরে না গেলে কি কি প্রতিক্রিয়া তেপারে, আর সব শেষে বংলার নুন স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে একটি লেখা।

চতুর্থটি হবে বাংলা সুবার পাটনার সোরা শিল্প নিয়ে। সোরা শিল্পে সে সময় বাংলার সুবা ছিল বিশ্বের সেরা উৎপাদক। লেখা মোটামুটি তৈরিই আছে। 

পঞ্চম হবে ভারতের পাঠশালা, ওয়ার্ড ও অ্যাডামের সমীক্ষা, মাদ্রাজের পাঠশালে প্রযুক্তি পাঠ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাচর্চা, দেশিয় বিদ্যাচর্চার স্থান নিল ইয়োরোপীয় জ্ঞান চর্চা তার ক্রমবিবর্তন ইত্যাদি

ষষ্ঠ সংখ্যাটি হবে বাংলার বুনন শিল্প, প্রযুক্তি, ইতিহাস, তাঁতিদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভারত যেভাবে ইয়োরোপকে সুতোর পরিধেয় পরিয়ে সভ্য করল তার ইতিহাস এবং বাংলার মসলিন তৈরির প্রযুক্তি, ১৫০ বছরের প্রাচীন লেখা থেকে।

সপ্তমটি হবে বাংলার শাঁখ শিল্প। শাঁখারি, শাঁখ, শাঁখা নিয়ে মৌখিক সাহিত্য ইত্যাদি

অষ্টমটি হবে শোলা। শোলার বিভিন্ন শিল্প আর শিল্পী

নবমটি হবে হবে বাংলার মহিলা এবং তাঁদের শিক্ষার ঐতিহ্য নিয়ে

দশমটি বাংলার ব্রিটিশ বিরোধী গ্রামীণ স্বাধীনতা সংগ্রাম, এতদিন যেগুলোকে বিদ্রোহ নামে দেগে দেওয়া হয়েছিল।

একাদশে বাংলার নৌকো, জলযান ইত্যাদি। জয়াদি লিখবেন বাঙ্গালীর জীবনে নৌকো। ১৮০০ সালে আঁকা নৌকোর প্রচুর ছবি থাকবে।

দ্বাদশ খন্ডটি  বাংলার বাড়ি, ঘর, বাস ইত্যাদি নিয়ে।

এছাড়াও প্রত্যেক সংখ্যায় অন্য কিছু নিয়মিত বিষয় আর লেখা থাকবে। এক বর্নহিন্দু চা বাগানে কুলি হয়ে গিয়েছিল। তার স্মৃতিকথা ধারাবাহিক যাবে। ইচ্ছে আছে উইলিয়াম অ্যাডামের সমীক্ষাটি নিয়মিত প্রকাশ করা। আরও একটি উপন্যাস পাওয়া গিয়েছে কলকাতা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে জঙ্গল মহলে বাস করা ও চাষ করার কথা। প্রত্যেক সংখ্যায় রান্না বিষয়ে অবশ্যই একটি করে লেখা যাবে। একটি খন নাটক দ্বিতীয় সংখ্যা থেকে যাবে। বাংলার প্রত্যেকটি সমাজে রান্না শুধু শরীর বাঁচানো ছাড়াও বৃহত্তর সংস্কৃতির অংশ। জেলা ধরে ধরে, রান্না ধরে ধরে, মশলা, শাক সবজি ধরে ধরে, উনুন, জ্বালানি ধরে ধরে, ব্রত, আচার আচরণ ধর্ম ধরে ধরে রান্নার লেখা তৈরি হবে।

এক নজরে পরম
সম্পাদক – পার্থ পঞ্চাধ্যায়ী – ঘোল, রামনগর, পূর্ব মেদিনীপুর, ০৯৪৭৫২১৩৭৮৮,, মধুমঙ্গল মালাকার – মুস্কিপুর, বড়গ্রাম, উত্তর দিনাজপুর, ০৯৪৭৫০৯৬৮১১, বিশ্বেন্দু নন্দ - ২৪/১৮, নাবালিয়া পাড়া রোড, কলকাতা – ৮, ০৯১৬৩৮২৫৯৯৪, biswendu@yahoo.comhttp://lokfolk.blogspot.in/
চরিত্র – মাসিক
পাতা – ৪০এর আশেপাশে
বিষয় - বাংলার প্রযুক্তি, জ্ঞান, ইতিহাস, গ্রামীণ সংস্কৃতি
বিন্যাস – ৫০-৭০% মূল প্রবন্ধ। বাকি নিয়মিত বিষয়।
ভাষা – বাংলা ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষা
বিনিময় – ১০ টাকা
বছরের গ্রাহক – ১০০ টাকা

আপনাদের পরম-আত্মীয়তা কাম্য। উত্তরও চাই

বিশ্বেন্দু
প্রথম ১২টির প্রধান সম্পাদনার দায়িত্বে থাকা যৌথ-সম্পাদক, পরম