Thursday, July 18, 2013

মিল মালিকদের তাঁবেদার ভারতসরকারের একচোখামিতে ১৫ বছরে উচ্ছেদ হয়েছেন ২৩ লক্ষ তাঁতির সঙ্গে দেড় কোটি মানুষ২, Govenment figure shows 23L weaves evicted in 15 years2

হাতে বোনা তাঁতের বাজেট বরাদ্দ কমার ফলে যে বিষয়টি ঘটেছে, সেটি হল  সরকারি পরিকল্পনায় উপেক্ষিত হওয়ায়, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পরিকল্পনার অভাবে হাতে চালানো তাঁতের ক্ষেত্র দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। ১৫ বছরে উচ্ছেদ হয়েছেন ২২ লক্ষেরও বেশি তাঁতি। সরকারের সব নজর আকর্ষণ করতে পেরেছে সংগঠিত বড় কলের কাপড় শিল্প। নিচের বাজেট বিশ্লেষণের তালিকা থেকে আমরা দেখব, পরিকল্পনা খাত থেকে অপরিকল্পনা খাতে ক্রমাগত বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। মোট পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ সেই পরিমানে বাড়ছে না।
তালিকা ১- বস্ত্র শিল্প মন্ত্রকের বাজেট বরাদ্দ(কোটি টাকায়)

বছর
বস্ত্র শিল্পের বাজেট
মোট বাজেট
হস্তশিল্পেমোট  বরাদ্দ

পরিকল্পনা খাতে
পরিকল্পনা বহির্ভূত
মোট
পরিকল্পনা খাতে
পরিকল্পনা বহির্ভূত
মোট

১৯৯৭-৯৮
১০৭.০০
৯৬.৫০
২০৩.৫০
২৬০.০০
৪৭৯.০৪
৭৩৯.০৪
২৭.৫
১৯৯৮-৯৯
৮৯.৮০
৬১.৮০
১৫১.৬০
২৬০.০০
৭২৬.৫৮
৯৮৬.৫৮
১৫.৩
১৯৯৯-০০
৮১.৮০
৫৬.৫০
১৩৮.৩০
২৬৬.০০
৭৪০.১০
১০০৬.১০
১৩.৭
২০০০-১
১১২.০০
৫৩.২৯
১৬৫.২৯
৪৫৭.০০
৭৫৪.৩০
১২১১.৩০
১৩.৬
২০০১-২
১১৬.০০
৪০.৫০
১৫৬.৫০
৬৫০.০০
৬৬০.৩০
১৩১০.৩০
১১.৯
২০০২-৩
১১৭.০০
৩৫.৮৩
১৫২.৮৩
৭১৫.০০
৮৭০.৫০
১৫৮৫.৫০
৯.৬৩
২০০৩-৪
১২৯.৭৭
১২৫.৯১
২৫৫.৬৮
৭৬০.০০
৯৪৭.৮৪
১৭০৭.৮৪
১৪.৯
২০০৪-৫
১১৯.৩৬
১৩২.৩৭
২৫১.৭৩
৮৭৮.০০
৯০২.৩১
১৭৮০.৩১
১৪.১
২০০৫-৬
১৩১.০০
৬৩.৮৯
১৯৪.৮৯
১১৫০.০০
৮৫৮.২৫
২০০৮।২৫
৯.৭
১০
২০০৬-৭
১৫০.০০
৯১.২৯
২৪১.২৯
১৩৪৯.৫০
১৬৯৬.২৫
৩০৪৫.৭৫
৭.৯
অর্থনীতির নিচের শ্রেণির ছাত্ররাও জানেন, পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ বাড়ার অর্থ হল সেই ক্ষেত্রে আগামী কয়েক বছরের জন্য নির্দিষ্ট সরকারি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ব্যয় বরাদ্দ, এবং কর্মকাণ্ডের বৃদ্ধি পাওয়া। অপর পক্ষে পরিকল্পনার বাইরের বাজেট বরাদ্দ বাড়ার অর্থ হল যেমন তেমন ভাবে একটি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ এবং সেটির পরিকল্পনামাফিক খরচের দিকে খুব একটা নজর না দেওয়া।
হাতের তাঁতে বরাদ্দ কমা এবং বরাদ্দ খরচ না হওয়া
হাতের তাঁতের বাজেট বরাদ্দ কমতে থাকার পাশাপাশি আরও একটা ঘটনা ক্রমাগত ঘটে চলেছে, সেটি হল, বাজেট বরাদ্দর যথেষ্ট পরিমানে পরিকল্পনা মাফিক খরচ না হওয়া এবং বরাদ্দ অবণ্টিত থেকে যাওয়া। বছর শেষের দিকে যখন বাজেট বরাদ্দের দিকে নতুন করে তাকানোর প্রয়োজন হয়(রিভিসন = পুনরমুল্যায়ন), তখন দেখা যায় সেই সময়, এই ক্ষেত্রের বাজেট বরাদ্দ ৫ থেকে ১০ শতাংশ পরিমানে কমেছে। দুটি কারনে রিভিসনের প্রয়োজন দেখা দেয়। সারা বছর কি ধরণের, কত পরিমাণ বরাদ্দ খরচ হয়েছে সেটি নজরদারি করা। সাধারণতঃ এই রিভিসনটি ঘটে ডিসেম্বর মাস নাগাদ। তখন বিশেষ কিছু বরাদ্দের নতুন মুল্যায়ন করা হয়। বাজেট ঘাটতি ব্যাবস্থাপনায় এ ধরণের মুল্যায়নে ঝুলি থেকে আসল বেড়াল বের হতে থাকে। মোটামুটি রাজনৈতিকভাবে যারা এ সময়ের আগে পর্যন্ত লবি করেছে তাদের দিকে ঝোল গড়িয়ে পড়ে। আর এর সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর দিকে নজরও দেওয়া হয়। ফলে যারা পেছনে পড়ে থাকে তাদের বরাদ্দ দিয়ে কমিয়ে দেওয়া হয়। এই পুনরমুল্যায়নে আদত কাজটি যা হয় তা হল, ঠিকঠাক লবি করতে না পারা হাতে চালানো তাঁত ক্রমাগত যেমন পরিকল্পনায় পিছিয়ে পড়ছে, তেমনি তার বরাদ্দও কাটছাঁট হচ্ছে দিনে দুপুরে। সরকার যে হাতে চালানো তাঁতকে বাঁচাতে পুরোপুরি ব্যর্থ, তার প্রমান আগের বাজেট তালিকাটি।
২০০৪-৫ শ্রম বিষয়ক সংসদের স্থায়ী কমিটি, তার ষষ্ঠ সমীক্ষায় হাতের তাঁতের ক্ষেত্রে বাজ়েট বরাদ্দকে ব্যবহার না করার বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে বলছে (সংসদে জমা পড়ে ২০০৫এর ২৫ এপ্রিল)। বছরের পর বছর সরকার, হাতে চালানো তাঁতের শিল্পীদের জন্য তৈরি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ ব্যবহার করে নি। বিশেষ করে বছরের পর বছর যে ভাবে পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে অর্থও বরাদ্দ বেড়ে চলেছে, সেই ট্রেন্ড দেখে কমিটি যথেষ্ট বিরক্তি প্রকাশ করেছে। শুধু বাৎসরিক মুল্যায়ন নয়, একটি নির্দিষ্ট বছরে সরকারের ব্যয় প্রমান করে সরকার কোন ক্ষেত্রকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে।
মুল্যায়ন এবং বাজেট বরাদ্দের মধ্যে পার্থক্য
প্রত্যেক বছরের হাতে চলা তাঁতের বাজেট বরাদ্দ বছরের শেষের মুল্যায়নে কমেছে এ তথ্য দিনের আলোর মত পরিষ্কার। এর একটাই মানে। সরকার তার বছরের শুরুর নিজের বরাদ্দ বাজেট যেমন খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি অনেক সময় সঠিক ভাবেও খরচ করে উঠতে পারে নি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দপ্তরগুলোর আমলাদের দুর্নীতি, অপ্রয়োজনে টাকা তোলা, ভুয়ো কাজ দেখিয়ে বরাদ্দ খরচ, এবং পরিকল্পনা বিহীন অর্থব্যয়। মানে স্পষ্ট, ভারত সরকারের কাছে ঐতিহ্যপূর্ণ তাঁতিদের কোনও অস্তিত্ব নেই তেমনি, তাঁতিরা বাজেট বরাদ্দের যতটুকু খুদকুঁড়ো পেয়ে থাকত, সেটি থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হতে থাকল বছরের পর বছর।
তালিকা ২- বস্ত্র শিল্প মন্ত্রকের মুল্যায়িত বাজেট বরাদ্দ(কোটি টাকায়)

বছর
হাতে চালানো তাঁত শিল্পের মোট বাজেট
হাতে চালানো তাঁত শিল্পের মূল্যায়িত বাজেট
পার্থক্য%

পরিকল্পনা খাতে
পরিকল্পনা বহির্ভূত
মোট
পরিকল্পনা খাতে
পরিকল্পনা বহির্ভূত
মোট

১৯৯৭-৯৮
৯৬.৩৯
৭৮.৩৭
১৭৪.৭৬
১০৭.০০
৯৬.৫০
২০৩.৫০
-১৪.১
১৯৯৮-৯৯
৮৯.৮০
৬১.৮০
১৫১.৬০
৮০.৭২
৫৮.০৬
১৩৮.৭৮
-৮.৪
১৯৯৯-০০
৮১.৮০
৫৬.৫০
১৩৮.৩০
৭৮.২৫
৪৬.৯২
১২৫.১৭
-৯.৪
২০০০-১
১১২.০০
৫৩.২৯
১৬৫.২৯
৮৫.০০
৪৫।৬৫
১৩০.৬৫
-২০.৯
২০০১-২
১১৬.০০
৪০.৫০
১৫৬.৫০
৯৫.৭৭
৩০.৬৭
১২৬.৪৪
-১৯.৯
২০০২-৩
১১৭.০০
৩৫.৮৩
১৫২.৮৩
১১২.১০
১০০.৩০
২১২.৪০
+৩৮।৯
২০০৩-৪
১২৯.৭৭
১২৫.৯১
২৫৫.৬৮
১১১.৩১
৮৪.০৬
১৯৫.৩৭
-২৩.৫
২০০৪-৫
১১৯.৩৬
১৩২.৩৭
২৫১.৭৩
১০৮.৯৬
৯০.৬৮
১৯৯.৬৪
-২০.৬
২০০৫-৬
১৩১.০০
৬৩.৮৯
১৯৪.৮৯
১৭৭.৬৪
৬৮.৪৯
২৪৬.১৩
+২৬.২৯

মোট
১০০৩.৭৩
৬৬৬.৫৯
১৬৭০.৩২
৯৪৬.১৪
৬০৩.২০
১৫৪৯.৩৪
-৭.২
আগের তালিকা থেকে পরিষ্কার মোট নয় বছরে ৭.২ শতাংশ বরাদ্দ কমেছে। কিন্তু যদি আমরা বছরের হিসেব ধরি, তাহলে, কোনও সর্বনিম্ন কমেছে ৮.৪ শতাংশ, তেমনি সর্বোচ্চ কমেছে ২৩.৫ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে ২০০৩-৪ এবং ২০০৫-৬এ মূল্যায়নে বরাদ্দ বেড়েছে। আনন্দ পাওয়ার কারন নেই। ২০০৩-৪এ কলে চলা তাঁতের হাঙ্ক ইয়ারনে সেনভ্যাট বরাদ্দ হয়েছিল ৭০ কোটি টাকা। এটিকে যদি বাদ দি, তাহলে সে বছর, ঐতিহ্যবাহী তাঁতিদের মূল্যায়নে  বরাদ্দ কমেছিল ৬.৭৫ শতাংশ।
২০০৫-৬এ মূল্যায়নে কিছুটা বরাদ্দ বাড়ার অনেকগুলি কারন আছে। ৫ কোটি টাকা ক্লাস্টারের জন্য বরাদ্দ হয়, দুটি বীমা প্রকল্পর জন্য ৩৫.৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয় দীনদয়াল হাতকরঘা প্রহোতসাহন যোজনায়। ২০০৫-৬এ অর্থ মন্ত্রী পালিনিয়াপ্পন চিদাম্বরম তাঁর বাজেট ঘোষণায় বলেন, ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত জীবন সুরক্ষার জন্য সরকার বয়ন শিল্পীদের জন্য অর্থও বরাদ্দ করেছে। শুধু ২ লাখ বুনকর এই প্রকল্পে সুবিধা পান। আমি এই বছর এই বিমার আওতায় ২০ লাখ বয়ন শিল্পীকে আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করছি। এর জন্য প্রতি বছর ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়াও সরকার স্বাস্থ্য বিমা চালু করছে। এর আওতায় ২০,০০০ বয়ন শিল্পী রয়েছেন। এই বিমাতেও ২ লক্ষ বয়ন শিল্পীকে আনার প্রস্তাব করছি। এর জন্যও প্রতি বছর আরও ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। কিন্তু পরের বছর এই পরিকল্পনায় বরাদ্দ করা হয় নি। ২০০৬-৭ সালে এই দুটি বীমা পরিকল্পনায় বরাদ্দ হল ২০ কোটি টাকা। এবং বুনকর বীমা যোজনায় কোনও বরাদ্দই রাখা হল না। হয়ত এই প্রকল্পটি আবার একটি পুনরমুল্যায়নের জন্য আজও অপেক্ষা করছে।

No comments: