Wednesday, February 15, 2017

পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল - আমাদের বক্তব্য


এবছরও কিছু ভাবনা যোগ করলাম...
মূল বক্তব্য একই রইল... কিছু নতুন তথ্য জোড়া গেল ...

গত বছর ইপ্সিতারা তাঁদের গুরুচণ্ডালী ব্লগে এই বইটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেই আলোচনায় কেউ কেউ বলছেন কিছুটা হলেও এই বইটিতে নাকি বলা হয়েছে মুসলমানের হানাদারিতে বাংলার জ্ঞানচর্চা গোল্লায় গেল। এছাড়া উপন্যাস হিসেবে এটি খুব খাজা - নীরদ চৌধুরীর ভাষায় শস্তা পেপারব্যাক জাতীয়।

আমাদের উত্তর-

ইসলামি আমলে সব জ্ঞানবিজ্ঞানচর্চা নষ্ট হয়ে গেল প্রীতম বসু তা বলেছেন এমন কথা বলা মুশকিল - উনি তা বলতে চেয়েছেন কি না প্রথম পাঠে বুঝি নি - বুঝতে হবে পরের দিকে কোনো একসময় পড়ে - একটু গোলা লোক আমরা - মাথা খুব পরিষ্কার নয় - প্রথম পাঠে সবকিছু বুঝতে পারি না। শ্রুতি একটা বড় অবলম্বন ছিল পড়ুয়া আর অধ্যাপকদের। শুধু পুঁথি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাপ্রযুক্তিচর্চা জ্ঞানচর্চার অবলম্বন ছিল না - এটা আমরা সক্কলে জানি - শুধু জ্ঞানদেওয়ার মত করে বলাগেল।

প্রায় দুশো বছর আগে ১৮০০ সালের তিরিশের দশকে চার্লস উইশের কলণ সম্বন্ধে লেখাটি তথাকথিত যুদ্ধবাজ ইসলাম পরবর্তী ব্রিটিশ অন্ধ্রে ভারতীয় অঙ্কচর্চার দুহাজার কাছাকাছি বছরের ধারাবাহিক উদাহরণ - এটা দেখিয়েছেন ভারতীয় অঙ্কের ইতিহাসকার ও গবেষক তাত্ত্বিক চন্দ্রকান্ত রাজু।

তবে আমাদের ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় না যে জ্ঞানচর্চার উদাহরণ দিয়েছেন সেগুলি শুধু বাংলার জ্ঞানচর্চা। যে অঙ্কের উদাহরণ দিয়েছেন, তা হয়ত ভারতীয় জ্ঞানচর্চা। তবে বাংলায় এ সময়ের আগেই ধাতুবিদ্যার রসরত্নসমুচ্চয় বা কৃষি পরাশরের মত প্রযুক্তির বিষয় কিন্তু লেখা হয়েছে, তন্ত্রে প্রচুর রসায়ন ধাতু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, অঙ্কে শ্রীধর এসেছেন, রাজা ভোজের নামে চলা যুক্তিকল্পতরু নামক জাহাজ গড়ার শাস্ত্র যে বাঙালির রচনা তা উল্লেখ করেছিলাম পরমের নৌবিদ্যা সংখ্যায় - যার ছাপ পাচ্ছি আওরঙ্গজেবের হয়ে সুজার বিরুদ্ধে লড়া মীর জুমলার বাংলার নৌ বহরে বা মীর জুমলার অসম আভিযানের বর্ণনায়।

শেষমেশ উপন্যাসের আঙ্গিক নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। সে বিচারের অধিকার আমাদের মত গ্রামীনদের আছে বলে মনে করি না। বাংলা লেখায় মা সরস্বতী আমাদের দলের সক্কলে। তার সময়ে সব থেকে বড় সাম্রাজ্য বন্ধু, মহাপণ্ডিত বিদ্যাসাগর মশাই বলে গিয়েছেন তিনি বাঙলা বাজারে দেবী সরস্বতীকে বাঁদর নাচ নাচাচ্ছেন - আমাদের লাখো টোল, চতুষ্পাঠী তিনি ব্রিটিশ সহযোগে তুলে দিয়েছেন, ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালির আর্থিক উদরপূর্তির জন্য। আমরা তুচ্ছ গ্রমীনেরা তো এবাবদে কোন ছার। আমাদেরও কিছুমিছু বলার আছে তাই বাধ্য হয়ে কলম ধরিমাত্র, তার বেশি কিছুই নয়।

আমরা শুধু বলতে চেয়েছিলাম প্রীতম বসুমশাই যা করেছেন, তা অন্তত বাঙলা ভাষায় ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনায় ব্যতিক্রম - কেননা বাংলা/ভারতের জ্ঞানচর্চার ইতিহাস খুব বেশি উপন্যাসে ধরা নেই - যদিও বাংলা ভাষায় খুব বেশি উপন্যাস পড়েছি এমন দাবি করা যাবে না। অধিকাংশ উপন্যাস রাজনীতির ঘণঘটা - হাজারি প্রসাদ দ্বিবেদীর বানভট্ট কি আত্মকথার অনুবাদই বাণভট্টের আত্মকথাই হোক বা মহাশ্বেতা দেবীর বর্গি হামলার সময়ের আন্ধারমাণিকই হোক বা চৈতন্যর সমসাময়িক মহাশ্বেতার বিবেকবিদায় পালাই হোক - উপন্যাসের কেন্দ্রে রাজনৈতিক ঘটনা - বিন্দুমাত্র জ্ঞানচর্চা বা প্রযুক্তি পরিচয়ের ছাপ নেই। একমাত্র বাংলার অর্থনীতি ধ্বংসের সময়টি অপূর্ব দক্ষতায় ধরেছিলেন চণ্ডীচরণ সেন মশাই - তথ্যে দাঁড়িয়ে থেকে।

ফলে উপন্যাসটি পড়ার এক বছর পরে বলতে পারি, তথ্যের গুণগত মানে প্রীতম বসুর উপন্যাস যথেষ্ট ব্যতিক্রমী। অনুরোধ থাকবে ঘটনার ঘনঘটা থেকে বেরিয়ে আপনারা নজর দিন তথ্যের ভিত্তিতে। তবেই বাংলার জ্ঞানচর্চা বাখানে প্রীতম বসুরদাদার চেষ্টা সার্থক হবে।

No comments: