এছাড়াও বলা
দরকার ইওরোপিয়রা বাংলার পরম্পরার ব্যবসার সংগঠনকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারে নি।
তাদের এই পরম্পরার প্রথা, নীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে, তাদের ব্যবসাকে বাংলার
ব্যবসার প্রথার মত করে সাজিয়ে গুজিয়ে নিতে হয়েছে। তবে তারা এই ব্যবসা ক্ষেত্রে
নতুন কিছু ধারণা দিতে পেরেছে, প্রধান সওদাগরের দপ্তর, অংশিদারি ব্যবস্থা, সোরা
ব্যবসায়ীদের দিয়ে অংশিদারি ব্যবস্থার ভিত তৈরি করে দেওয়া যাতে তারা নিজেদের মত করে
দাম নির্ণয়ে ভূমিকা পেশ করতে পারে। কিন্তু আধুনিকপূর্ব সামগ্রিক দক্ষিণ এশিয়
ব্যবসা ব্যবস্থায় এই পরিবর্তন খুব প্রভাবশালী কিছু ছিল না।
বাংলার ব্যবসা বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ
চরিত্র ছিল যে বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন সমাজের খুব বড় আর খুব ছোট ব্যবসায়ীর যৌথ
অবস্থান। এরা পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্র আর বিভিন্ন ভৌগোলিক এলাকায় ব্যবসা করত। বড়
ব্যবসায়ীদের মধ্যে জগতশেঠ, উমিচাঁদ এবং খ্বাজা আহমেদ ছিলেন ত্রিরত্ন, এদের হাতেই
বাংলার আর্থ এবং ব্যবসা ব্যবস্থার মূল চাবিকাঠি ধরা ছিল। তাদের কাজের ব্যপ্তি,
তাদের বাণিজ্য সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি এবং সাংগঠিত ব্যবসা কর্ম বিশ্লেষণ করে, এশিয়
ব্যবসা যে কিছু হকারদের যৌথ সমষ্টি(ordinary entrepreneurial character
of the Asian trade was a sum of peddling activities) এই তত্ত্বে উপনীত হওয়া যায় না।
ব্যবসাদারদের সঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে বসে থাকা মানুষদের যে
জোট, সেই জোট তাদের প্রাপ্ত ক্ষমতার বলে বাংলার রাজনীতি, প্রশাসন এবং আর্থিক
ক্ষেত্রে বিপুল প্রভাব ফেলেছিল তা এদের কাজকর্ম বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট বোঝা যায়।
অষ্টাদশ শতকের প্রথমের দিকে বাংলার সওদাগরেরা
ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির আজ্ঞাবহ ছিল না। এশিয় আর ইওরোপিয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে অষ্টাদশ
শতকের প্রথমপর্ব পর্যন্ত অংশিদারিত্ব বা পরস্পর নির্ভরশীলতা, পরের দিকে যৌথ উদ্যম(subjugation)ছিল ব্যবসায়িক যোগাযোগকর্মের প্রণোদনা।
বাংলা বা ভারতের অন্যান্য প্রান্তে ব্যবসা মূলত ছিল ব্যক্তি ব্যবসায়ীর ভূমিকা,
সেখানে গোষ্ঠীর ভূমিকা খুব বেশি ছিল না। ব্যবসায়ীরা মূলত ব্যক্তি বা পারিবারিকভাবে
কয়েকজন মিলে ব্যবসা করত। ইওরোপের ব্যবসায়িক সংগঠনে অব্যক্তিক (Impersonal) যে সম্পর্ক সংগঠন গড়ে উঠেছিল, তা এই বিশ্বে
অজানা ছিল। এমনকি পরস্পরের মধ্যে হাতধরাধরি করে এগোনোর ভূমিকা ছিল না। তবে
ব্যবসায়িক লেনদেন একটি জাতি বা সমাজের বা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত না – তার বাইরেও
প্রভূত পরিমানে হত। মুসলিম ব্যবসায়ীর হিন্দু বানিয়া বা হিন্দু বা আর্মেনীয়
ব্যবসায়ীর মুসলমান সঙ্গীর নির্দশনের অভাব ছিল না। শহরে প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়িক
শ্রেণী একই জাতিতে সংগঠিত হত মোটামুটি।
বাংলার বস্ত্র বয়ন শিল্পের বেশ কিছু
উল্লেখযোগ্য চরিত্র ছিল It
was basically a rural domestic
handicraft industry with extraordinary diffusion and marked
by extreme localization and
high specialization। বহু ক্ষেত্রে
চাষীরাই তাঁতে বসতেন। তাঁতি ছিলেন স্বনির্ভর কারিগর, স্ত্রী আর সন্তান তার সহায়ক
ছিল। পরিবার এখানে সামগ্রিক উৎপাদন দেখত, তার বাড়িটাই ছিল কারখানা। The rudimentary
character of the technique with emphasis on simple
instruments and a low ratio of. fixed to working capital implied
a minimal concentration of labour and capital in individual
units of production.। পলাশীপূর্ব
বাংলার তাঁতি-কারিগর বিপুল স্বাধীনতা ভোগ করত। উৎপাদনের কাঁচামালের স্বত্ত্ব ছিল
তাঁতির নিজের, নিজেই নিজের সুতো কিনত এবং সে যা উতপাদন করত তাত্ত্বিকভাবে তার মালিকানাও
তার ছিল। দাদনি ব্যবস্থা উৎপাদকের উৎপাদন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করত না - The dadni system at
most promoted the control of merchant capital over the producer
and not the process of production itself। পলাশীর পরে তাঁতিরা কোমপানির বেতনভূক কর্মচারী হয়ে পড়ে, এবং উৎপাদনের সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট সমস্ত কাঁচামালের নিয়ন্ত্রণ সে হারিয়ে ফেলে।