Saturday, December 29, 2018

বাংলা কখন চাষ নির্ভর হল? - অথবা উর্বর বাংলায় কৃষি শ্রমিক তৈরির প্রক্রিয়া

দক্ষিণ ভারতে চেঙ্গলপেট্টুর রিপোর্ট বলছে কৃষিতে ২৭% মানুষ, কিন্তু অস্বাভাবিক উর্বরতা ছিল, আজকের জাপানের কৃষি উতপাদকতার সমান, হয়তবা একটু বেশি। দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইতে যদি এই উতপাদনের হার হয় তাহলে বাংলায় কত ছিল ভাবাই যায়। 
অন্যান্য অঞ্চলের কারিগরেরা শহরে থাকতেন। বিপরীতে বাংলায় কারিগরেরা অধিকাংশই গ্রামে থাকতেন। তারা অমরশুমে চাষ করতেন, চাষীরা অমরশুমে কিছু না কিছুর কারিগর ছিলেন।
১৭৫৭র পর মীরজাফরের আমল থেকেই ব্যবসা দখল হচ্ছিল, মীর কাশিমের একটা প্রখ্যাত চিঠিই আছে এ নিয়ে।পলাশীর পরপরই দিনাজপুরে আর্মেনিয় বণিকের নুন গোলার ৫ লক্ষ মণ নুন দখলের কাণ্ড নিয়ে চণ্ডীচরণও তার নথি-উপন্যাসে লেখেন।
ছিয়াত্তরের পর কয়েক বছর বাংলায় চাষ করার লোক ছিল না। তার আগেই ১৭৬৫র পর শিল্পে প্রথম ধাক্কাটা আসে সুপুরি, নুন আর তামাক উৎপাদন আর ব্যবসা জাতীয়করণ করার পরে।
তারপরের বড় ধাক্কাটা আসে কয়েক দশকজুড়ে তাঁতের আড়ং আর কারখানা ধ্বংস করার পরে যে নথিকরণটা করেছেন চণ্ডীচরণ সেন নন্দকুমার উপন্যাসে। এছাড়াও বাংলা লুঠের অর্থে হাজারো পণ্য তখন বাংলায় ঢুকছে, সেগুলোর এখানকার উতপাদকেদের উচ্ছেদ করা হয় গায়ের জোরে - যাকে তারা আর তাদের অনুচরেরা প্রচুর উতপাদনের বন্যায় কারিগরেরা ভেসে গ্যাল বলছেন।একটামাত্র উদাহরণ জানি ঢাকার তাঁতিদের উচ্ছেদ কাণ্ড। কয়েক বছরেরে মধ্যে ঢাকা শহর জনশূন্য হয়েগেল। দুজন টেলরের লেখা পড়ুন, বুঝবেন। এরা কোথায় গেলেন? সক্কলে মাঠে নামলেন।
আরও বড় ধাক্কা এল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরে ভদ্রদের জমি দখলের পরে। বহু চাষী জমি হারালেন। হয়ে গ্যালেন কৃষিশ্রমিক।
এই হল উর্বর বাংলার কৃষি শ্রমিক তৈরির প্রক্রিয়া।

কারিগর চাষীরা কখন ডাকাত হল

রাণী ভবানীর দেওয়ান দয়ারাম রায় লড়াই করে লুঠ করা পণ্য কেড়ে আনলেন ইংরেজ বণিকদের থেকে।রাণীর বোয়ালিয়া কুঠিতে রাখা এই পণ্য দখল করতে সেনা নিয়ে এল ইংরেজরা। একই সঙ্গে বাংলার নানান এলাকায় চলতে লাগল পাইক ইত্যাদিদের স্বাধীনতার লড়াই। এই দুই অভিজ্ঞতায় জমিদারদের সমস্ত নগদী সৈন্য বরখাস্ত করল ইংরেজরা - নগদী সৈন্য মানে অস্থায়ী সৈন্য, যারা চাষ ছাড়াও ছাউনিতে থেকে যুদ্ধ করত - বিহারী পাইক ছাড়া আর কিছুই রাখতে পারল না জমিদারেরা। গনগনির মাঠে এক দিনেই কয়েক হাজার পাইককে কামানের সামনে বেঁধে আর গাছে ঝুলিয়ে হত্যা করল ইংরেজরা।
বাগদী, ডোম ইত্যাদি সক্কলে ডাকাত হল। ডোমেরা আজও অসাধারণ বাঁশের কাজ করেন। এরা জমিদার স্বচ্ছল আর ইংরেজদের ওপর আক্রমন করতেন।
এগুলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত্রের আগে। চিরস্থায়ী পরে আরও ব্যাপক হারে। কারিগরেরা চাষীরা ডাকাত হল।

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - মিথ-মিথ্যা মুক্ত আওরঙ্গজেব - অড্রে ট্রুস্কের ব্যতিক্রমী কাজ

পলাশী উত্তর সময়ে উপনিবেশ তার লুঠ, খুন, গণহত্যা, অত্যাচার, অনাচার, অভিচার, অরাজক অবস্থা ঢাকার জন্যে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে এক সময়ের বিশ্বকেন্দ্র এশিয়া, তার কেন্দ্র উপমহাদেশ, উপমহাদেশের প্রধানতম উর্বর এলাকা বাংলা ভূখণ্ডের স্বচ্ছলতার জন্যে দায়ি সামাজিক কাঠামোগুলো ভাঙতে পরিকল্পিত মিথ্যা তত্ত্ব তথ্য ছড়ানো শুরু করে। নবাবি আমলের ঐতিহাসিকদের দিয়ে প্রায় অসত্য ইতিহাস লিখিয়ে বাংলা দখলের উপযোগিতা প্রমান করে।
শশাঙ্ক, পাল, সেন, সুলতানি, মুঘল এবং নবাবি আমলে বাংলা ভূখণ্ড ধারাবাহিক বিশ্ব বাণিজ্য প্রচেষ্টায় অসীম উচ্চতায় উঠেছিল। রাজা, পাদশা, সুলতান, নবাবেরা সুপ্রাচীন এশিয় সামাজিক রীতিনীতি মেনে সামাজিক কারিগর উৎপাদন ব্যবস্থাকে শুধু জোরদারই করেন নি, একই সঙ্গে কারিগর, চাষী এবং অন্যান্য সেবাদায়ীদের যতটা পারা যায় সামাজিক সুরক্ষা দিয়েছিলেন। তারাই ছিলেন চাষী আর কারিগরদের শেষ পালক।সারা বিশ্বের বণিকেরা ছুটে আসতেন বাংগালায় ঘাঁটি গেড়ে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে।
বাংলায় শুধু অসামান্য কারিগরই ছিলেন না দুর্দান্ত কৃষকও ছিলেন। দুরন্ত কৃষকেরা বাংলার বিপুল অকৃষি কারিগরদেরই মুখে নিরন্তর অন্ন জোগান নি, তাঁরা উপমহাদেশের কৃষি ঘাটতি এলাকা এবং মহাদেশের নানান দেশে খাবার রপ্তানি করেছেন নিয়মিত। প্রাকৃতিক সামরিক দুর্যোগে কৃষকদের বিনা সুদে হয়ত বা নামমাত্র সুদে তাকাভি নামক ঋণ দেওয়া হত। কৃষক কারিগরের ওপর যে কোন রকম অত্যাচার শক্ত হাতে দমন করা হত নবাব/পাদশার নির্দেশে। মুর্শিদকুলির দরবারে জমিদারেরা ভয়ে থাকতেন যদি তার এলাকায় প্রজাদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ আসে।অভিযোগ তৎক্ষণাৎ বিচার করে প্রমান হলে জমিদারদের বৈকুণ্ঠ দেখানোর ব্যবস্থা থাকত।
তো ক্ষমতায় আসার এক দশক পেরোনোর পরেই বাংলা-বিহারে বিপুল গণহত্যা নামিয়ে আনে কোম্পানি সরকার। মানুষের দুখ লাঞ্ছনা দুরছাই করে সেই বছরইগুলিতেই সব থেকে বেশি রাজস্ব আদায় করে। ব্যবসা দখল, কৃষক কারিগর উচ্ছেদ, এলাকায় এলাকায় শাসন কাঠামোর অবলুপ্তি ঘটতে থাকে। ভদ্রবিত্তরা লুঠ-অত্যাচারের শরিক হয়ে দেশিয় জ্ঞান তুলে দিতে থাকে ব্রিটিশদের, যাতে তাদের লুঠকর্মটা সঠিকভাবে সমাধা হয়।
এই সামগ্রিক গোলোযোগের অবস্থা চাপা দিতে উপনিবেশ আর তার বন্ধুরা ব্রিটিশ সুশাসনের ঢাক পেটানোর সঙ্গে পলাশীপূর্ব অসত্য অরাজক অবস্থার কথা কম্বুকণ্ঠে বলতে থাকে। আড়াই শতকের মিথ্যা ছড়ানোর এই ঔপনিবেশিক প্রচারে অনেকের সঙ্গে দুই প্রকৃত শাসক সিরাজ আর আওরঙ্গজেবের গায়ে যথেষ্ট কালি ছেটানোর কাজ করেন প্রখ্যাত প্রথিতযশারা। ব্রিটিশপূর্ব সময়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সদ্ভাব ছিল না এবং ধর্মীয় ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে মুসলমান শাসকেরা(নানান লব্জের মধ্যে শাসকদের জাত বিচারের লব্জটাও উপনিবেশের দান, যদিও পশ্চিমিরা নিজেদের খ্রিষ্ট শাসক কোনও দিনই বলে নি) হিন্দুদের ওপর অমেয় অত্যাচার করেছে, বেশ কয়েক হাজার মন্দির ধ্বংস করেছে ইত্যাদি রটনা রটিয়েছে যতটা সম্ভব।
আওরঙ্গজেবের কথিত ধর্মান্ধতা এবং তার সময়ের নানান বিষয়ের পাদশার তথাকথিত অপারগতা নিয়ে যদুনাথ সরকারের অসাধারণ কিছু পথভাঙ্গা কাজের(যেমন মুঘল এডমিনিস্ট্রেশন) মধ্যে দগদগে ঘায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে আওরঙ্গজেব সম্বন্ধে অমেয় অনৃত তথ্য। বঙ্গ-পাঞ্জাব ভাগের বহু আগে থেকেই এই আরোপিত ইতিহাস স্বচ্ছল, পশ্চিমি শিক্ষায় শিক্ষিত উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিপুল প্রভাব ফেলেছে। এর ধাক্কা আজও গোটা উপমহাদেশীয় দেশগুলি সামলাতে সামলাতে নাজেহাল।
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, নিখিলনাথ রায়, ইত্যাদিরা আরোপিত ইতিহাসের কুয়াশা সরিয়ে সত্যের যে লড়াই লড়েছিলেন, সে কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন রিচার্ড ঈটন এবং খুব সম্প্রতি অড্রে ট্রুস্কে এবং সুশীল চৌধুরী মশাই। ট্রুস্কে অসামান্য দক্ষতায় যেভাবে ঘৃণিত আওরঙ্গজেবের দোষ গুণ এবং তার সময়ের রাজনৈতিক ভাবনায় প্রণোদিত পাদশা হিসেবে মানবিক বিচার করেছেন, সে প্রচেষ্টা দুর্লভ। সাম্প্রতিককালে রাজীব কিনরা রাইটিং সেলফ রাইটিং এম্পায়ার বইতে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত তিনজন গুরুত্বপূর্ণ পাদশার সঙ্গে কাজ করা মুন্সি চন্দর ভান ব্রাহ্মণের জীবন এবং সেই সঙ্গে মুঘল শুলইকুল(সবার জন্যে শান্তি) নীতি নিয়ে বিশদে অসাধারণ আলোচনা করেছেন।
যুবা প্রকাশক আত্মজা পাবলিশার্সএর Arunava, অড্রের এই বইটার অনুবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অসম্ভব ব্যতিক্রমী। আবেগতাড়িত হয়ে বইটা অনুবাদ করেছিলাম এই আশায়, যে ভদ্ররা এতদিন মিথ্যেগুলিকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছেন, তাদের রাজত্ব অন্তত এই বাংলায় গিয়েছে এবং যে সপম্প্রীতির পরিবেশ এই রাজ্যে গড়ে উঠেছে, তাতে এই বই প্রকাশ একমাত্র বাংলাতেই ঘটতে পারে। তবুও মনে আশংকা ছিল, যে ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার সূত্র অবলম্বন করে একদল যেভাবে বিদ্বেষের প্রদাহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে, সেই পরিবেশে কোন প্রকাশক এই অনুবাদটি প্রকাশ করতে উৎসাহী আদৌ হবেন কি না। আশংকা মিথ্যে প্রমান করে অকুতোভয় অরুণাভ এই বইটা প্রকাশ করতে যে সব ঝামেলা সামলেছে, তা অনন্য সাধারণ উদাহরণ হয়ে থাকবে বাংলা প্রকাশনা জগতে।
আওরঙ্গজেবের মিথ-মিথ্যে ভাঙ্গার এই উপনিবেশবিরোধী প্রচেষ্টায় বন্ধুরা স্বাগত।

বাঙালি অলস মিথ ভাঙ্গা

যে সব বিখ্যাত অখ্যাতরা বাঙালিকে অলস দাগিয়ে দ্যায়, তারা উচ্চবর্ণ বা রাষ্ট্র/কর্পোরেট প্রভুদের কৃপাধন্য। একটা ছোট্ট উদাহরন দেওয়া যাক। গত ৬০ বছর ঝি লোকাল করে কলকাত্তিয়া অভিজাত ভদ্রবিত্ত বাবু বাড়িতে যে সব দিদি সুন্দরবন থেকে রোজ এসে বাসন মাজা থেকে কুটনো কাটা থেকে ঘর মোছা ইত্যাদির মত অসীম দক্ষতার এবং একই সঙ্গে গায়ে গতরে খাটা কাজ সমাধা করে দিয়ে যান ঝড় জল শীত গরম উপেক্ষা করে, যে অমেয় পরিশ্রমের ঘাড়ে পা দিয়ে কলকাতার কর্পোরেট চাকুরে/পেশাদার মহিলারা এবং তার চাকুরে/ব্যবসায়ী/পেশাদার বর থোক টাকা মাইনে পান/রোজগার করেন, রাজনীতি সমাজ উন্নয়ন কৃষ্টি-সৃষ্টি করে নাম কামান সেই দক্ষতা আর শ্রমটা যদি তিনি এবং তাঁর অর্ধাঙ্গন ঘরের সোফায় বসে গতর নাড়িয়ে দেখতে না পেয়ে থাকে, এবং সব ধরণের বাঙ্গালিকেই অলস বলে নিরন্তর ভেঙ্গিয়ে যান, তাহলে এই মিথটা থেকেই বা কি ভেঙ্গেইবা কি? অরূপদার অঙ্ক অনুযায়ী ৪-৬% উচ্চবর্ণ গতর খাটিয়ে কাজও করবে না, জীবনে এই লব্জটা পাল্টাবেও না। আনন্দবাজার-সুনীলগাঙ্গুলির যৌথ প্রচার সার্থক। সার্বিক বাংলায় তাদের মতের দর্শনের প্রভাব নগণ্য। নাহলে আনন্দবাজারের পিঠচাপড়ানিতে বুদ্ধবাবু এখনও ছড়ি ঘোরাতেন টাটার বকলমে আর মমতা ব্যনার্জী নতুন করে অনশনের প্রস্তুতি নিতেন।
বাঙালি অলস মিথ ভাঙ্গা২
১) কোনও দিন কোন চাষীকে বলতে শুনেছেন ভাই আপনারা ধানের যা দাম দ্যান তা দিয়ে আমার পরিবারের ক্ষুণ্ণিপোষায় না, খেটে খেটে আমার পিঠ বেঁকে গ্যাছে, অথচ আপনি আমায় আলসে বলেছেন, এবার থেকে নিজের ভাতটা নিজেই চাষ করে নিন,
২) কোনও দিন বাবুদের থেকে তুই-তোকারি শোনা কোন রিক্সাচালককে বলতে শুনেছেন ১০ টাকায় মহাই এর থেকে বেশি দূর নিয়ে যাওয়া যায় না, আপনি আমায় আলসে বলেছেন এবারে গতর খাটিয়ে বাকি পথ হেঁটে যান
৩) কোনও দিন মাথা নামিয়ে জুতো সেলাই করা আপনারা যাদের নীচ বলেন সেই চর্মকার আর্ধেক জুতো সেলাই বা রং করে বলছেন যে মজুরি দ্যান তাতে মুখে ভাত তোলা কষ্ট, তাছাড়া আপনি আমায় আলসে বলেছেন। বাকিটা নিজেরা করে নেবেন ভাই।
এই কথাগুলি যদি চাকরিজীবি/ঔপনিবেশিক পেশাদার বাঙ্গালির মুখে নিরন্তর ছুঁড়ে দিতে থাকেন এবং শিক্ষিতমন্য বাঙ্গালির মুখের ওপর পাল্টা তুই-তোকারি লেপে দিতে থাকেন কয়েক শত পরম্পরার পেশার পেশাজীবি তাহলে কি দাঁড়ায়?
সামগ্রিকভাবে বাঙালি দক্ষ, পরিশ্রমী, বুদ্ধিমান, উদ্ভাবনী ক্ষতাসম্পন্ন, পরশ্রম ভোগী নয় তদুপরি সামাজিক। 

জয় বাংলা।
কারিগর বাঙালি দীর্ঘজীবি হোক।

Friday, December 7, 2018

বাংলা অশিক্ষিত এবং হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আমাদের মত বাংলা-অশক্ষিতদের কতগুলো বাংলা দৃষ্টি দিয়েছিলেন। সময়ের পলিতে কিছু কিছু দৃষ্টিভঙ্গী হয়ত পাল্টেছে কিন্তু তিনি যে ঠ্যালা দিয়ে বাংলা অক্ষে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, তার ভূমিকা আজ স্বীকার না করলে মহাপাতকী হতে হবে। এটা বলা যায় একলব্যি
১) ১০০০ বছর আগে বাগদী ইত্যাদিরা রাজা ছিল যেখান থেকে সাধারণ জীবনবৃত্তের খোঁজের যাত্রা, হকার-কারিগরদের আশ্রয় গ্রহন
২) পটুয়ারা বৌদ্ধদের সময়ের পেশা, তাদের তখন নাম ছিল মষ্করী
৩) হাতি পোষমানাবার শাস্ত্র এবং মুণি পালকাপ্য বাংলাতেই আবির্ভূত হন (আসামে আউনিয়াঁটি সত্রতে হস্তীবিদ্যার্ণব পুথি হাতির দাঁত থেকে তৈরি পূর্ণাবয়ব ৫x৭ পাটি দেখে এসেছি)
৪) ধর্মের প্রতীক কুর্ম, বৌদ্ধ চৈত্যের ইঙ্গিতিক রূপ - যা পরে ভুল প্রমানিত হয়েছে কিন্তু ধর্ম যে রাঢ বাংলার কৃষ্টিতে বিপুল বিশাল ভূমিকা পালন করেছে তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন
৫) কোন পরিবেশে বৌদ্ধ শ্রমণেরা ইস্লামে আশ্রয় নিলেন তার ভূমিকা - যা নিয়ে পরে বিনয় ঘোষ বিশদে কাজ করবেন কর্তাভজা বা সতীমা আলোচনায় বাংলার গণআচারে ইসলামের প্রভাব।
৬) গাজন বাংলার সার্বজনীন উৎসব
৭) বেনের মেয়ে পড়ে প্রথম বুঝলাম বাঙালি এক সময় বিপুল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও করত
8) দীপঙ্কর তিব্বতে চলে গেলে বাংলা আঁধার হয়ে যাবে - দীপঙ্করের গুরু নাঢ়পাদের জবানে মন্তব্যটি প্রকাশ করে বৌদ্ধ মঠে পঠন প্রক্রিয়ার অন্তর্নিহিত ভালনারেবিলিটি প্রকাশ করেছেন। সেই রাস্তা ধরে বুঝতে চেষ্টা করি আক্রমনকারীর লুঠ বা খুন অত্যাচার সইতে পারল না কেন বৌদ্ধ পঠন ব্যবস্থা। হরপ্রসাদের মত স্টেটিস্ট জ্ঞানী দীপঙ্করের সঙ্গে রত্নাকর শান্তি নাঢ় পাদ, বা নাঢ়ী ইত্যাদির জ্ঞানচর্চা আলোচনাটি করেছিলেন বলেই বুঝলাম কেন্দ্রিভূত যে কোন ব্যবস্থাই ভঙ্গুর, তাকে রাষ্ট্রীয় ঠ্যাকনা দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। রাজারা সরে গেলে ঠ্যাকনা সরে যায় আর ব্যবস্থার ভূমিশয্যানিশ্চিত করে।
আরও অনেক কিছু যা এক্ষুণি মনে পড়ছে না।

Tuesday, December 4, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী১১১

তাঁতিদের গরীবির অভিযোগ
তাঁতিদের রোজগার যাই হোক না কেন,  অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধের আমাদের আলোচ্য সময় ধরে এবং সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধেও তাঁতিদের আর্থিক অবস্থা শুধু খারাপই ছিল না, নিরবিচ্ছিন্নভাবে তথ্য বলছে তারা গরীবও ছিল এমন অভিযোগ রয়েছে(S. Chaudhuri, Trade and Commercial Organization, pp. 237-38 প্রবন্ধ দেখুন সেখানে আমি ভুলভাবে বলেছি 'the lot of the poor weavers' remained the same 'despite the increase in production and competition amongst buyers'.)। weavers· are too poor to be trusted with [advance] money' বা none of the weavers worth any money বা necessitous circumstances of the weavers বা the poverty of the weavers obliges the gomastah to be very careful in the advance of money' এইসব লব্জগুলি বিভিন্ন ইওরোপিয় তথ্যসূত্রে বলা হয়েছে (BPC, vol. 11, f. 289, 28 Aug. 1736; Fact. Records, Kasimbazar, vol. 6, 12 June 1743, 2 July 1743, 1 Marc,:h 1744; Fact. Records, Dacca, vol.~. ~ilnex to Cons1,dt., 17 Nov. 1754; FV(IHC, vol. I, pp. 811, 824, 919)। এই লব্জগুলি লেখা হত আদতে ব্যবসায়ি বা গোমস্তাদের বেশি কাপড়ের দাম দাবি করার প্রেক্ষিতে। তবে কোম্পানি আমলারা তাঁতিদের দারিদ্রের কথা কয়েকবার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বিপুল পরিমান তাঁত বস্ত্র উৎপাদন, তাঁতিদের দরকষাকষি করার ক্ষমতা আর দক্ষতার প্রেক্ষিতে তাঁতিদের চরম দারিদ্রের অভিযোগের বয়ানটা কিছুতেই খাপ খায় না। এই প্রেক্ষিতে ওর্মের ভাবনাটা গুরুত্বপূর্ণ, ... the dread of extortion or violence from the officers of the district to which he [the weaver] belongs, makes it prudence in him to appear; and to be poor; .s. o that the chapman who sets him to work, finds him destitute of every thing but his loom, and is therefore obliged to furnish him with money, ... in order to purchase materials, and to subsist him until his work is finished .... (Orme, Historical Fragments, p. 9)। এই দৃষ্টিভঙ্গীটা যদি সত্য হয়, তাহলে তাঁতিদের দারিদ্র্য কি সত্যি না ওপর ওপর দেখানোর?
আজকে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে এই বিষয়ে বলা খুব সহজসাধ্য কাজ নয়। সাম্প্রতিক এক গবেষক বলেছেন, the poverty of the weavers remains an unidentified historical concept, আমার মনে হয় এই দৃষ্টিভঙ্গীটাই আপাতত ঠিক(K.N. Chaudhuri, Trading World, p. 270. Also see his general argument on the subject, pp. 268-71)। তাঁতিদের দারিদ্রের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলির বিরুদ্ধাচরণ করে কোন কিছু নতুন সিদ্ধান্তে আসা খুবই সমস্যার, যদিও সেসময় বাংলার তাঁতিরা বিপুল বস্ত্র উৎপাদন করেছেন। কোম্পানির মহাফেজখানায় যে সব তথ্য রাখা আছে তার থেকে এটা প্রমান হয় যে তাঁতি আর কারিগরেরা বুঝতেন, জানতেন যে তাদের তৈরি বস্ত্রের একটা বিশ্ব এবং বিপুল বাজার আছে বা যখন দাম দস্তুর করা হচ্ছে তারা যুক্তি দিচ্ছেন, afford them a sustenance স্তরে পারবেন না বা নানান ধরণের সামগ্রীর দাম বাড়ার দরুণ তারা বলছেন যে পণ্যের দাম না বাড়ালে এই কাজ করা সম্ভব নয় ইত্যাদি(উদাহরণস্বরূপ দেখুন see BPC, vot 16, f. 371, 14 Dec: 1743; Fact. Records, Kasimbazar; vol. 6, 6 Dec. 1743; Fact. Records, Dacca; vol. 3, 17 Nov. 1754)। এমন কি এটাও আমরা পাচ্ছি যে কোন একটা বিশেষ কাপড়, সামগ্রীর দাম বাড়ার দরুণ উতপাদন করা যাচ্ছেনা তখন, অথবা আরও বেশি ভাল দাম পাওয়ার জন্যে তাঁরা পরিকল্পনা করে নতুন ধরণের কাপড় তৈরি করছেন ইত্যাদি(BPC, vol. 17, f.129, 11 June 1744; f. 151, 12 July 1744)। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তাঁতিকে যেহেতু শুধুই দাদন দেওয়া হত, ব্যবসায়ী বা কোম্পানি তাঁতিকে সুতো দিত না, তাই তার পক্ষে বাজার থেকে নানান ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সুতো দিয়ে কিছুটা নিজের রোজগারের হেরফের করা সম্ভব ছিল (এবং সেই জন্যে হয়ত, তাঁতি জানে সে কেমন করে তাঁত বুনবে লব্জটার উদ্ভব হয়েছে? - অনুবাদক), আগেই আমরা দেখিয়েছি জন টেলারের হিসেব অনুযায়ী দামি কাপড় তৈরিতে তাঁতির ৪১ টাকা থাকত, কিন্তু সে এমন সুতো ব্যবহার করত যে তার লভ্যাংশ আরও ৬টাকা বাড়িয়ে নিয়ে ৪৭টাকা করে নিতে পারত (Home Misc., vol. 456 F, 'ff. 145-49)। ১৬৮৯ স্যর জন চাইল্ড বলছেন, তাঁতিরা যদি এতই গরীব হয়, যে তারা দাদন ছাড়া পণ্য উৎপাদন করতে পারবে না, তারা আদতে সত্যই গরীব নয়, কারণ তারা নগদে খদ্দেরদের পণ্য বিক্রি করে(DB, vol. 92, f. 69, 11 Sept. 1689)। এটা বাস্তব যে পাইকারি খরদদারেরা, বিশেষ করে এশিয় বণিকেরা যেমন কোম্পানির হয়ে অগ্রিম দিয়ে কাপড়ের বরাত দিতেন, তেমনি নিজেদের ব্যবসার জন্যে কিন্তু নগদ দিয়েই কাপড় কিনতেন।

আমাদের আলোচ্য সময়ে এই বিষয়ে এত পরস্পর বিরোধী তথ্য আছে তাঁতিদের নিয়ে, তা দিয়ে কি করে আমরা তাঁতিদের দারিদ্র্য বিশ্লেষণ করি, যদিও সেটা সতিই হয়! আমাদের মনে রাখতে হবে চাষীদের মত তাঁতিরাও এক জাতি নয় – এবং এই সমাজে স্তরীভবন সম্ভব ছিল। বিভিন্ন তথ্য থেকে পরিষ্কার যে সে সময় নানান স্তরের তাঁতি ছিল, এক দিকে যেমন প্রধান তাঁতি ছিল তেমনি ছিল সাধারণ তাঁতি আর তার সহায়ক, ছিল গ্রামস্তরে পরিবার ভিত্তিক পুরো সময়ের তাঁতি।  

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী১১০

এ প্রসঙ্গে এও মনে রাখা দরকার তাঁতির রোজগারের শতাংশ নির্ভর করে কি ধরণের কাপড় এবং সেই কাপড় বানাতে কি ধরণের প্রযুক্তু ব্যবহার হচ্ছে তার ওপর। ১৭৫৬ সালে কাশিমবাজারে বিভিন্ন ধরণের তাফেতার উৎপাদন খরচ আমরা ৬.৬ তালিকায় লিখেছি।
এই তালিকা থেকে জানতে পারছি আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ তথ্য, সেটি হল তাঁতির মোট ব্যায়ের শতাংশের তুলনায় রোজগারের পরিমান, কোনও ভাবেই প্রকৃত রোজগারের সঙ্গে তুলনীয় নয় – বিভিন্ন রঙের তাফেতা থেকে তার রোজগার ৯.৬ থেকে ১৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারত, যদিও প্রতি পিসে তার সাম্মানিক (remuneration) একই থাকত ১ টাকা ৪ আনা। এটা চিরসত্য নয় যে মধ্য অষ্টাদশ শতকের তুলনায় অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে কোন তাঁতি রেশমের তাফেতা বুনে কম রোজগার করবে আর একজন তাঁতি মোটা সুতোর গুরা বুনে তুলনামূলকভাবে বেশি রোজগার করবে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, মাসে বা বছরে একজন তাঁতি কোন কাপড় কতগুলো বুনছে এটা জানলে আমরা তার মাসে/বছরের রোজগার কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারি। অষ্টাদশ শতকে এই ধরণের কোন তথ্য আমাদেরে হাতে নেই। ফলে আমরা যে সময় নিয়ে আলোচনা করছি, সেই সময়ে একজন তাঁতির রোজগার কি ছিল এটা আন্দাজ করা খুবই কঠিন।
একইভাবে তাঁত শিল্পের সঙ্গে জুড়ে থাকা অন্যান্য কারিগর কত রোজগার করে, সে হিসেব আমরা শুধুই আন্দাজ করতে পারি মাত্র। এর আগে আমরা দেখেছি সমাজের প্রায় প্রত্যেক স্তর থেকে আসা সুতো কাটনি/কাটনারা যদিও পুরোসময়ে কাজ করতেন না, আংশিক সময়েই তুলো কেটে সুতো বানাতেন, তাঁত শিল্পে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। আমরা দেখেছি পুর্ণ সময়ের সুতো কাটনি তাঁত শিল্পে এক্কেবারেই অজানা ছিল না, আমরা যে সময়ের কথা আলোচনা করছি, সেই সময়েও। তবুও বলা দরকার চাষী-কৃষক এবং তাঁতি পরিবারে কাটনা ছিল মোটামুটি আংশিক সময়ের মহিলা শ্রম, দক্ষতা নির্ভর কারিগরি। কিন্তু এটাও বলা যাক অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ভালতম সুতো কাটনারা কিন্তু পূর্ণ সময়ের কারিগর ছিলেন এবং তারা তাদের বাড়ির কাজ সহায়ক (servants) দিয়ে করাতেন(N.K. Sinha, Economic History of Bengal, vol. I, p. 184)। জন টেলরের হিসেবে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ঢাকার দক্ষ কাটনারা দৈনিক তিন ঘন্টা কাজ করে মাসে ১২ থেকে ১৪ আনা পর্যন্ত রোজগার করতেন(টেলরের সমীক্ষা থেকে এই অঙ্কটা পাওয়া গিয়েছে, Home, Misc., vol. 456F., ff. 131)। ১৭৯০ সালের এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে দক্ষতম এবং উদ্যমী মহিলারা মাসে ৩টাকাও রোজগার করছেন(Proceedings of the Board of Trade, 2 July to 31 Aug. 1790, quoted in N.K. Sinha, Economic History of Bengal, vol. I, p. 184)। যতদূর সম্ভব এই মহিলারা পূর্ণ সময় ধরে কাজ করতেন। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে এই ধরণের দক্ষতম কাটনারা তাঁতিদের থেকে অগ্রিম বরাত পেতেন (Fact. Records, Kasimbazar, vol. 16, 23 April 1751; Home Misc., 456 F, f. 153)। এই তথ্য যদি সত্য হয় তাহলে এই ধরণের দক্ষ কাটনি অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদে প্রায় এই পরিমান বা হয়ত এর থেকে বেশি অর্থ রোজগার করতেন, যখন বাংলার মসলিন আর দামি ক্যালকোর মত মত সূক্ষ্ম বস্ত্রের চাহিদা আরও অনেক বেশি ছিল।
এখানে বলা দরকার কাটনার রোজগার তার দক্ষতা অনুসারী এবং কি ধরণের সুতো সে কাটছে তার ওপর নির্ভরশীল। আমরা অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে হিসেব করেছি যে, যে সব মহিলা মাঝারি এবং সূক্ষ্ম মসলিনের সুতো কাটতেন সারা সময়ের জন্যে তারা মাসে ২টাকা আর যারা মোটা কাপড়ের সুতো কাটতেন তারা ১২-১৪ আনা রোজগার করতেন(N.K. Sinha, Economic History of Bengal, vol. 'I, p. 184)। এই তথ্য থেকে আমরা অষ্টাদশ শতকের প্রথমের দিকের কাটনাদের রোজগারের অঙ্কটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারি, অন্তত অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকের রোজগারের তুলনায় বেশ বেশিই হওয়া উচিত। ড্যানিশ সূত্র থেকে ধোবির খরচের হিসেব পাচ্ছি ২০ পিস গুরা ধুয়ে সে ২টাকা রোজগার করত(Ole Felbaeck, 'Cloth Production in Bengal', BPP, vol. XXXVI, p. 132)। কশিদা কারিগর, রিফু কারিগর ইত্যাদিরা মূলত চুক্তি কারিগর হিসেবে কাজ করতেন ফলে এদের রোজগারের হিসেব করা অসাধ্যকর্ম।

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী১০৯

১৭৮৯এর ড্যানিশ সমীক্ষা – আমাদের আলোচ্য সময়ের পরে ঠিকই কিন্তু আমরা যে সময় নিয়ে আলোচনা করছি তার কাছাকাছি এবং সে জন্যে প্রাসঙ্গিক, বীরভূমের গুরা তাঁতিদের রোজগারের বিশদ বিবরণ দিয়েছে, সে বিবরণ একটু বড় হলেও তুলে দ্দেওয়া জরুরি বলে মনে করলাম The weaver's wages differ according to whetper the demand for clotlis in the aurungs is great or small; during the weaver's bad season-December, January, February-his pay for one piece of gurrah is generally no more than 10 annas; normally it is 11 to 12 annas and sometimes slightly more; if the weaver is an able worker he might finish his piece in five: and. a half to six days; but when his feast days are deducted he is able at most to produce four and a half to five pieces per month, by which he is generally estimated to earn three sicca rupees and-when times are best-three and a half rupees at most; if his family is able to help him, especially with cleaqing and spinning the cotton, this is estimated at one fourth of his earning, but no more. Three to four rupees per month are thus the best weaver's, highest earnings if. he is fully employed. (Ole Feldbaeck, 'Cloth Production in Bengal', BPP, vol. LXXXVI, July-Dec. 1967, p. 130)।
ওপরের বর্ণনা থেকে একটা বিষয় বোঝা যাচ্ছে তাঁতিদের রোজগার নানান চলকের বাড়াকমার ওপর নির্ভরশীল ছিল - বছরের কোন মরশুমে বিক্রি হচ্ছে, সে সময়ে বাজারে প্রতিযোগিতার চরিত্র কি ছিল, পরিবারের এবং নির্ভরশীলদের থেকে সাহায্য পাওয়ার চরিত্র এবং সব শেষে তার নিজের কর্মোদ্যম। যদিও গুরা তাঁতিরা খুব বেশি দক্ষ বলে বিবেচিত হত না, ১৭৮৭ সালে জন বেবের হিসেবে, গোলাঘরের গুরার থেকে ভাল গুণমানের সুত রুমালের কারিগরেরা গুরার থেকে বেশি রোজগার করতেন। এই হিসেবে ১) সাধারণ তাঁতির প্রতিমাস রোজগার ৩টাকা, ২) মাঝারি তাঁতির প্রতিমাস রোজগার ৫টাকা ৩) ভাল/দক্ষ তাঁতির রোজগার ৭.৫ টাকা প্রতিমাস(Proceedings of the Board of Trade, 24 Feb. 1787, quoted in N .K. Sinha, Ecortomic History of Be_ngal, vol. I, p. 176)।
এই হিসেবটায় একটু বাড়িয়ে ধরা আছে। টেলরের হিসেবে আগেই দেখেছি অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে সোনারগাঁওএর দক্ষতম তাঁতি মাসে ৩.৫ টাকা খুব বেশি হলে রোজগার করে। এখানে আরও একটা বিষয় ধরা দরকার, সুতোর দাম ওঠাপড়ার ওপর নির্ভর করত তাঁতির রোজগারের পরিমান। তাঁতি যেহেতু নিজেই সুতোর সরবরাহকারী তাই তুলোর খারাপ ফসল বা তুলো/সুতোর দাম বাড়লে তার রোজগারে কোপ পড়ে। ১৭৮৯এর সমীক্ষাসূত্রে আমরা সেটাই দেখেছি, ৬.৪ তালিকা দেখুন।
৬.৪ তালিকা সূত্রে দেখুন কোন সাধারণ বছরে কোন এক বিশেষ প্রকার কাপড়ের বুননের খরচের প্রেক্ষিতে তাঁতির রোজগার ছিল ৩১-৩৭%। তুলো/সুতোর দাম বাড়লে এই রোজগারের পরিমান ১০% পর্যন্ত কমে যেত। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বলা দরকার কোম্পানির আমলা ওপরের হিসেব তৈরির সময় লিখেছে, the profit of weaver ... for last year (i.e. 1788) did not appear more than was actually necessary to afford an ordinary subsistence(৯৭)। ৬.৪ তালিকার তথ্যগুলি বিশ্লেষণের একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল, কম দামের কাপড় যেমন বাফতা বোনা তাঁতির লাভের শতাংশ দামি কাপড়, খাসা তৈরি করার তাঁতির লাভের শতাংশের থেকে বেশি। এমন কি যদি সুতোর দামে চড়া বৃদ্ধি হয়, তাহলে খাসা তাঁতির রোজগার যতটা কমে, বাফতার তাঁতির রোজগার সেই তুলনায় খুব বেশি কমে না। ১৭৮০তে তাঁতির লাভের শতাংশ মোট উৎপাদন ব্যয়ের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করত এই তথ্যটা ড্যানিশ সমীক্ষা থেকে ৬.৫ তালিকা থেকে পাচ্ছি।

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী১০৮

বাংলার বস্ত্র শিল্পের তাঁতি এবং অন্যান্য কারিগরের রোজগার কত ছিল সে নিয়ে আমাদের হাতে খুব বেশি তথ্য সূত্র নেই। একটাই ১৭৩৬ সালের তথ্য দেখানো যায় যেখানে ঢাকা কুঠিয়াল লিখছেন যে চরকা কাটনি এবং men that served weavers কাজ করে a pun [one pun of cauris] and their rice (BPC, vol. 11, f. 289, 28 Aug. 1736)।  সে সময় চাল পাওয়া যেত এক টাকায় ২ মন চাল এবং কারিগরেরা তাদের কাজের বিনিময়ে ২ সের চাল দৈনিক পেত তাহলে চাল বাবদ তার মাসিক মুদ্রায় রোজগার হত ৪৮ পণ কড়ি এবং মাসে সে যদি ৩০ পন কড়ি মুদ্রা শ্রমের বিনিময়ে পাতেন তাহলে তার মাসিক মুদ্রার রোজগার ৭৮ পণ কড়ি বা ১৯.৫ আনা বা ১টাকা সাড়ে তিন আনা(4 pun of cauris = 1 anna, 16 annas = 1 Rupee)। এই হিসেবে মোটামুটি জন টেলরের দেওয়া অঙ্ক সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায় – মধ্য অষ্টাদশ শতকে একজন সাধারণ তাঁতির মাসিক রোজগার ছিল ১টাকা থেকে দেড় টাকা(ঢাকা কুঠিয়াল জানিয়েছিল ১৭৩৮ সালে চালের দাম এটাকায় ২ মন ২০ সের থেকে ৩ মন(Bengal and Madras Papers, vol. II, p. 34, Fort William Consultati6ns, 11 Dec. 1752; BPC, vol. 26, f..21,t, l 'l Dec. 1752; James Long, Unpublished Record, (ed\ M.P. Saha, p. 40,· doc. no. 103) ঢাকার কুঠিয়াল দাম বেশ বাড়িয়েই বলছিল কারণ তাকে যে বেশি দামে কাপড় দেওয়া হয়েছিল, সেই ব্যাপারটার ন্যায্যতা প্রতিপাদন করতে সে দাম বাড়ার বিষটা তুলেছিল। তাই মোটামুটি ধরে নিয়েছি টাকায় ২ মন চালের দাম)। ওপরের আলোচনা থেকে যে গুরুত্বপূর্ন তথ্যটা উঠে এল সেটা হল, পুরো সময়ের কাজ করা চরকা কাটনি একজন তাঁতির সহায়ক বা তাঁতির সমান রোজগার করত।

অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে তাঁতি, কাটুনি এবং ধোবির রোজগার নিয়ে বেশ কিছু অঙ্ক কষা হয়েছে। জন টেলরের হিসেবে মলবুস খাস – সম্রাটের পরার কাপড়, বাংলার সূক্ষ্ম বস্ত্রের মধ্যে অগ্রগণ্য – থেকে ঢাকার সোনারগাঁওতে ৬ মাস ধরে ৩ জন বোনার নেট লাভ – যেখানে প্রধান তাঁতি সুতো সরবরাহ করত, তাঁতি বুনত এবং তাঁতির সাহায্যকারী নানান কাজে সাহায্য করত – মোট ৪৭ টাকা(আসলে ৪১টাকা, কিন্তু তাঁতি সুতোর সূক্ষ্ম হেরফের করে আরও ৬টাকা বাঁচাতে পারত)। তাঁতিকে প্রধান তাঁতি মাসে ৩-৩.৫ টাকা আর  তার সাহায্যকারীকে ১.৫-১.৭৫টাকার বিনিময়ে কাজে লাগাত। টেলর সযত্নে বলছেন এই লাভ খুবই কম কারণ, less even than what the weavers are understood to make by several other high priced assortm.ents of this province(Ibid., f. 145-47)। ওপরে যে রোজগারের হিসেব দেওয়া গেল, সেটা কিন্তু দামিতম কাপড় তৈরির মজুরি, গড় তাঁতির মজুরি হিসেবে ধরে নেওয়া ঠিক নয়। টেলর নিজে এই বিষয়টা বিশ্লেষণ করে পরে বলছেন, তাঁতির মজুরি খুব দামি কাপড়ের জন্যে ২.৫ থেকে ৩.৫ টাকা এবং তার সহকারী পায় ১টাকা থেকে ২ টাকা(Ibid., f. 205)। যদিও ওপরে টেলরের দেওয়া সর্বোচ্চ হার প্রায় কাছাকাছি, কিন্তু ন্যুনতম হারে কিছু পার্থক্য রয়েছে। তার অর্থ ঢাকার সাধারণ তাঁতির রোজগার দক্ষ দামি শাড়ি তৈরির তাঁতির থেকে কম ছিল। 

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী১০৭

দরকষাকষি
বাংলার তাঁতিরা উদ্ভাবনী ক্ষমতায় কারোর থেকে পিছিয়ে ছিল না। ১৭২১ সালে লন্ডনের কর্তারা, কোর্ট অব ডিরেক্টর্সরা লিখলেন are ingenious enough to make very .near imi.tation' of apy kind of piece-goods(DB, vol. 100, f. 586, para. 29, 26 April 1721)। তাঁতিরা যে এই উদ্ভাবনের কাজটা শুধু আরও একটু বেশি অর্থনৈতিক রোজগারের উৎসাহে করছে এটা না মনে করাই ভাল। বস্ত্র সজ্জা আঙ্গিকের পরিবর্তন অথবা আকারের পরিবর্তনে দাম বাড়ত অবশ্যম্ভাবীভাবে। এই কাজগুলি তাঁতিদের দিয়ে করাতে না পারলে কোম্পানির কুঠিয়ালেরা লিখত the people cannot be persuaded to alter their method অথবা they are so inept (C & B. Abstr., vol. 4, f. 81,para. 138, 24Jan. 1735; f.241, para. 58, 31 Dec. 1737)। ১৭৩৯ সালে কোম্পানির ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল দেখল বালেশ্বর থেকে পাঠানো খুব খারাপ উপরন্তু বড্ড দামি, বালেশ্বরের কুঠিয়ালেরা লিখল the cloth being one covid and half increased in length occasions the dearness ওদিকে তাঁতিরা তাদের জানিয়েছিল they cannot make it cheaper,or better at the price and say they will not receive the dadney for this year's investment(BPC, vol. 13, f. 473vo, 6, Feb .. 1739)। ১৭৪৪ সালে কাশিমবাজার কাউন্সিল কলকাতাকে জানাল লুঙ্গি রুমালে তারা বিনিয়োগ করতে পারছে না তার কারণ, the weavers were formerly beat down in the price so much that they could not go on with them and had turned their hands to making other sort of Romalls that yielded more profit (Ibid., vol. 17, f. 129, 11 June 1744.)। সেই বছরেই কোম্পানি দোসুতি নিয়ে চুক্তি করতে প্রভূত ঝামেলায় পড়ল কারণ ব্যবসায়ীরা তাদের জানাল তাঁতিরা সেইগুলি তৈরি করতে ইচ্ছুক নয় কারণ সেগুলি গুরা তৈরি করার তুলনায় অনেক বেশি সময় লাগছে এবং yielded them less profit(Ibid., vol. 17, f. 151, 12 July.1744)।
এই যে উদাহরণগুলি দিলাম তাতে পরিষ্কার যে বাঙালি তাঁতিরা বাজারের গতিময়তা সম্বন্ধে এক্কেবারেই অজ্ঞ ছিলেন না এবং তারা দরকষাকষি করতে অভ্যস্ত ছিলেন; পলাশীপরবর্তী কালে এই দরসস্তুর করার ক্ষমতা তাদের শেষ হয়েছিল। এটা বাস্তব যে তাঁতি বহু ব্যবসায়ীর থেকে দাদন নিত না ঠিকই, কিন্তু তবুও তাঁতিকে এক্কেবারে বেঁধে রাখা যেত না, খোলা বাজারেও তার পণ্য বিক্রি করার স্বাধীনতা সে অর্জন করেছিল পলাশীপূর্ব সময়ে। যে বহুসময় কোম্পানি বা ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পাদিত হওয়া চুক্তির বাইরের চরিত্রের বস্ত্র উৎপাদন করত, যখন ব্যবসায়ী বা কোম্পানি প্রতিনিধি সেই কাপড় খারজ করে দিত সে তখন সেই বাতিল হওয়া পণ্য অন্য বণিক বা খলা বাজারে বিক্রি করে দিত। ১৭২৭ সালে দাদনি বণিকেরা ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলকে জানাল তাদের গোমস্তা তাঁতিদের অগ্রিম দেওয়া সত্ত্বেও তাদের মনে হয়েছে প্রত্যেকটি আড়ংএ কাপড়ের চাহিদা এত বেশি যে, তাদের আশংকা the weavers would make it late before they could be able to give their goods [since] they had taken money of the Dutch, French and other people so lhat the prices were not only risen but the goods as soon as they were made were immediately divided, some to one nation arid some to another(Ibid., vol. 6, f. 348, 9 Jan. 1727)। তাঁতিদের যখন এমন দাম দেওয়া হত যা তাদের মনোমত নয়, তাঁতিরা সেই চুক্তি সম্পাদন করত না। ১৭৫৪ সালে চাঁদিপুরে পাঠানো টমাস হাইন্ডম্যানের সমীক্ষায় জানায় যে তাঁতিরা তাকে বলেছে যে কোম্পানি কাপড়ের বিনিময়ে যে দাম তাদের দিচ্ছে, তাই দিয়ে তাদের গ্রাসাচ্ছদন হয় না। তিনি খুব চেষ্টা করে হাতে গোণা পিস-গুড জোগার করে বুঝতে পেরেছেন তাঁতিদের বক্তব্যে অবশ্যই সারবত্তা আছে(Fact. Records, Dacca, vol. 3, Annex. to Consult., 17 Nov. 1574)। পলাশীপূর্ব ঢাকার অবস্থা কুঠিয়াল কমার্সিয়াল রেসিডেন্ট জন বব জানিয়েছিলেন ১৭৮৯এর সমীক্ষায়, The manufacturer in treating for the sale of his materiaf and labour could say 'you do not offer me the price sufficient therefore I will not sell this assortment to you' and the purchaser was in a position to say 'you demand too much therefore I will not buy of you unless you will be more reasonable(Quoted in N.K. Sinha, Economic History of Bengal, vol. I, p. 25)।

ঢাকারা জন্যে যে ১৭৫৭র পুর্ব অবস্থা সত্য, সেই সত্য সারা বাংলার জন্যে প্রযোজ্য। পলাশীপূর্ব সময়ে তাঁতিরা without oppression, restrictions, limitations and prohibition তাঁত বস্ত্র তৈরি করত, এই দৃষ্টিভঙ্গী অসম্ভব সত্য ছিল(Ibid., p. 159)। ১৭৫৭র আগে কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ আমলারা বাংলার তাঁতিদের বর্ণনা করেছেন diffusion of commerce, general opulence, readiness of sales, ইত্যাদি লব্জে(Verelst's letter to the Court of Directors, 5 April 1769, FWIHC, vol. V, pp. 19, 546-548)।

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী১০৬

গতিশীলতা
তাঁতিদের ভৌগোলিক গতিশীলতা বিষয়ে আমরা বলতে পারি যে সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের উদাহরণে আমরা দেখি যে তাঁতিরা তাদের বাসস্থান থেকে প্রায়শই নড়তে চাইতেন না, এমন কি বিপুল বিশাল অর্থনৈতিক দুর্যোগেও। তাঁতিদের না নড়ার সেই মানসিকতা যে পরে আমাদের আলোচ্য সময়ে পাল্টেছে এমন মনে করার কোন কারণ নেই (S. Chaudhuri, Trade and Commercial Organization, p. 151, বলা হয়েছে ১৬৬০ সালে কাশিমবাজার থেকে তাঁতিদের তুলে এনে হুগলীতে বসাতে বেশ ঝামেলা পোয়াতে হয়েছিল এবং একই সঙ্গে তাদের মাদ্রাজে নিয়ে যেতেও ব্যর্থ হয়েছিল, কারণ for their caste and lineage is such that they shall lose their birth right if they come upon salt water)। তবে এই সময়ে আমরা লক্ষ্য করি যে, বেআইনি আদায়, অত্যাচার বা ধারের চাপে বহু সময় তাঁতিরা তাদের গ্রাম থেকে পালিয়ে যেতেন। তবে তাঁতিদের কাজের ওপর অতিরিক্ত চাপ আর বাধ্যবাধকতা কোন প্রভাব ফেলত কি না তা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। ওর্মে বলছেন If guards were placed upon the [weaving] village which is the only method of compulsion that can be used, the alarm would be taken; and half of the country, by the retreat of these people [presumably weavers], wouldl be depopulated in a day's time(Orme, Historical Fragments, p. 411)। গ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির খাতায় খুব একটা দুর্লভ ছিল না (Beng. Letters Recd., vol. 22, f.298, para. 80, 18 Sept. 1752; FWIHC, vol. I, p. 606)। জুগদিয়ার ব্রিটিশ কুঠিয়াল ১৭৫১ সালে লিখছেন, dread of the nawab's extortions তাদের বেশ কিছু তাঁতি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে(Fact. Records, Dacca, vol. 3, Annex. to Consult., 17 Nov. 1754)। খাসা জোগাড় করতে চাঁদপুরে টমাস হিন্ডম্যানকে পাঠানো হলে তিনি ঢাকায় জানাচ্ছেন, দালাল আর পাইকারদের ধার শুধতে না পেরে তাদের তাঁতিরা পালিয়ে গিয়েছেন, have thrown more money into their hands than they were able to account for (N.K. Sinha, Economic History of Bengal, vol. I, p.157)।

গ্রাম ছাড়ার এই ধরণের প্রচুর উদাহরণ কোম্পানির তথ্যে সুপ্রচুর। মারাঠা হ্যাঙ্গামে, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি প্রভাবিত পশ্চিম প্রান্তবাংলার বহু তাঁতি উত্তরবংগের নানান এলাকায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। ১৭৪৫ সালে কলকাতার দাদনি বণিকেরা কাপড়ের দাম বারাবার দাবি করেছিলেন কারণ the late troubles in the country [the Maratha invasion] and the extortion of the government had ruined numbers of weavers and made them fly another parts(J3PC, yol. 17, f. 495, 21 March 1745.)। আবার যখন দাদনি বণিকদের ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল জানাল যে তারা কেন কাপড়ের জন্যে এত বেশি অর্থ দাবি জানাচ্ছে, uch extravagant prices and proposing to contract for so few goods', দাদনি বণিকেরা জানাল, on account of dearness of cotton, rice and oil and everything in general at the aurungs, and most of the weavers being obliged to fly from their place of residence on acoount of the government and troubles in the country (BPC, vol. 25, f. 125vo, 25 April 1752)। এছাড়াও আরও কিছু উদাহরণ আছে যদিও খুব বেশি নয়, কাজের অভাবে তাঁতিরা তাদের গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। জুগদিয়ার ব্রিটিশ কুঠিয়াল ১৭৫০ সালে ঢাকাকে লিখছেন, তারা যদি প্রয়োজনীয় অর্থ না পাঠায়, এবং তাঁতিদের যদি কাজ না দেওয়া যায় তাহলে তারা leave the aurungs for want of work(Beng. Letters Recd., vol. 21, f. 25, para,: 59, 23 Aug. 1750)। ১৭৫১ সালে দাদনি বণিকেরা জানিয়েছিলেন তারা জামাওয়ার সরবরাহ করতে পারবেন না তার কারণ, the weavers who used to work inJamawars were gone-from thence হয়ত প্রয়োজনীয় কাজের অভাবে(NAI, Home Misc., vol. 16, ff. 183-84, para. 7l, Letter to Court, 4 Feb. 1751)। এই সব উদাহরণ কিন্তু অতি রোজগারের প্রভাবে এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার উদ্যমের ভৌগোলিক গতিময়তার খুব বেশি উদাহরণ হতে পারে না। এর একটা বড় কারণ হয়ত বাংলার বস্ত্র শিল্প মূলত গ্রামীন পরিবারভিত্তিক উদ্যম এবং একটি জাতের থাকবন্দীর মধ্যে আটকে ছিল। একমাত্র ১৭৫০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাঁতিদের ফোর্ট উইলিয়ামের চত্বরে আনতে সফল হয়েছিলেন, তবে এটা খুব সীমিত পরিসরে হয়েছিল(BPC, vol. 29, f. 157vo., 11 August 1757)। ওপরের আলোচনার সূত্র ধরে সহজভাবে বলতে পারি, সাম্প্রতিক উদাহরণে দেখা গিয়েছে বাংলার তাঁতিরা করমণ্ডলের তাঁতিদের তুলনায় অনেক কম গতিশীল ছিল(S, Arasaratnam, 'Weavers, 'Merchants and Cqmpany', IESHR, vol. XVII, no. 3, p.274)।