Sunday, December 2, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৯৪

অধিকাংশ যায়গায় প্রয়োজনীয় এবং কাঙ্ক্ষিত কাঁচামালের সহজলভ্যতার জন্যেই বাংলার বস্ত্র শিল্পের স্থানিকতার বিকাশ ঘটেছিল বিশেষগভাবে। বাংলায় প্রখ্যাততম এবং সব থেকে সূক্ষ্ম মসলিনের বিকাশ ঘটেছিল ঢাকা অঞ্চলে কারণ সেখানে সব থেকে ভালতম কাঁচামাল ফুটি তুলো চাষ হত। একইভাবে কাশিমবাজার এলাকায় রেশমের একচেটিয়া উৎপাদন হত তার কারণ এই ব্যবসা কেন্দ্রের আশেপাশের রেশম উৎপাদন হত। বাংলার বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে স্থানিকতা এবং একইসঙ্গে বিশেষীকরণ(spetialization) লেপ্টেলুপ্টে গিয়েছিল যে, বাংলার প্রখ্যাততম আড়ংগুলির নাম সেই উৎপাদন কেন্দ্রের নির্দিষ্ট উৎপাদনের নামেই রাখা হত। সে সময়ের তথ্যভাণ্ডার থেকে দুটো উদাহরণ তুলে এনে আমরা আমাদের বক্তব্যের সমর্থন করার চেষ্টা করব। মারাঠা হ্যঙ্গামের সময় ১৭৪১ সালে কাশিমবাজার কাউন্সিল লিখছে মারাঠা বর্গীরা চলে যাওয়ার আগে তারা তাফাতি আড়ঙের সব ক’টা পণ্য পুড়িয়ে দিয়ে যায়(Fact. Records, Kasimbazar, vol. 6, 26 May 1742)। বর্ধমান আর বীরভূমের গুরা উৎপাদন কেন্দ্রেগুলি বিভিন্ন বাণিজ্যিক খাতায় কিন্তু গুরা আড়ং নামে পরিচিত ছিল। ১৭৪২ সালে কাশিমবাজারেরে ব্রিটিশ কুঠিয়ালেরা লিখছে তারা গুরা পাচ্ছে না তার কারণ তারা যাকে গুরা আড়ং বলছে সেখানে খুব বেশি হলে four or five merchants that had any gomastas at the Gurrah auntngs(Ibid.,. 3 April 1742)। এধরণের হাজারো উদাহরণ/সূত্র পাওয়া যাবে কোম্পানির খাতায় যার দ্বারা আমরা প্রমান করতে পারি আড়ংগুলির স্থানিকতা এবং তাদের বিশেষীকরণটিও। আড়ং নামটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে উৎপাদন এবং উৎপাদন কেন্দ্রের স্থানীয়তার অনুষঙ্গটি।

আরও বেশ কিছু চলক এই উৎপাদন ব্যবস্থার স্থানীয়তারে বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। ১৭৩২ সালে লন্ডনের কোর্ট অব ডিরেক্টর্সদের লিখে ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিল জানাচ্ছে, শহুরে কুঠিতে গুরা তৈরি করা খুব কঠিন কাজ এবং সেটা যদি করতে হয়, তাহলে every piece [of garras] would be double the price, it is at the particular aurungs where the cotton grows and rice much cheaper' that garras were made(C & B. Abst., vol. 3, f. 180,,25 Feb. 1732)। তবে এটাও মনে করার কারণ নেই যে সব কটা আড়ং তাদের নিজেদের এলাকার সুতো থেকে কাপড় উৎপাদন করত। জন টেলর আমাদের জানাচ্ছেন, বেশ কিছু জেলা কেন্দ্রর আড়ং, যেখানে নানান ধরণের প্রখ্যাততম বস্ত্র উৎপাদন হত তারা grew little or no cotton এবং সেই সব এলাকা তাদের এলাকার বাইরের জেলা, প্রদেশ এমন কি দেশের বাইরে থেকে তুলো আনিয়ে উৎপাদন করত(Home.,Misc., vol. 456F, f.117)। এই ধরণের আড়ংএর সব থেকে বড় উদাহরণ হল বর্ধমান আর বীরভূম। বীরভূমে বছরে ১ লক্ষ মণ তুলো লাগত, কিন্তু সে, বছরে ৮০ মণের বেশি উৎপাদন করত না এবং বর্ধমান প্রায় ৫০ হাজার মন তুলো তার উৎপাদন এলাকার বাইরে থেকে আমদানি করত(N.K. Sinha, Economic History of Bengal, vol. 1, p. 104)। গুরা আর দোসুতির মত মোটা সুতোয় তৈরি কাপড় এই দুই জেলা উৎপাদন করত মূলত সুরাট তুলো দিয়ে। এবং সুরাট থেকে আমদানি করা সুতোর দামের হেরফের হলেই উতপাদিত বস্ত্রের দাম পরিবর্তিত হত(Beng. Letters Rec;d.,. vol. 23, ff. 51, 6.0; FWIHC, vol. I, pp. 917-18, 923)। ফলে আমরা স্থানিকতার যে দুটি বিষয় আলোচনা করলাম, কাঁচামালের সহজলভ্যতা এবং বংশপরম্পরার দক্ষতা আর জ্ঞান এর সঙ্গে অবশ্যই জুড়তে হবে চাল, সুতো, রেশমের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলির চরমতম বৈচিত্রের স্থানিকতা – অর্থাৎ নির্দিষ্ট পণ্য নির্দিষ্ট এলাকায় পাওয়া যাওয়ার নিশ্চিন্ততা। যার ফলে বাংলাজোড়া বস্ত্র শিল্পে স্থানিকতার বিকাশ ঘটেছিল স্বচ্ছন্দে। 

No comments: