ভাওয়াইয়া গানের একটি ধারা হলো চটকা গান। এ গান নাচুনে গান বলেও পরিচিত। এ গান আসাম, জলপাইগুড়ি, গোয়ালপাড়া অঞ্চলে প্রচলিত । চুটকি কথা থেকেই চটকা কথাটি এসেছে। এর আভিধানক অর্থ হলো যে গানে কান্তি, সৌন্দর্য, সৌষ্ঠব প্রতিভাত হয়। যেখানে রাজবংশী সম্প্রদায় আছে সেখানেই এ গানের প্রচলন বেশি।। চটকা রাজবংশী সম্প্রদায়ের নিজস্ব লোকসংগীত। সব ধরনের ঘরোয়া ব্যাপার নিয়েই এ গান রচিত।। সাধারণত প্রেম বিষয়ক বা গভীর ব্যঞ্জনাময় সমাজ চিত্র বা হালকা চটুল কথাবার্তাই এ গানের বিষয়বস্তু। কখনো আবার প্রকাশ পায় গভীর দীর্ঘশ্বাসের মর্মবেদনা। সুর ও ছন্দের দিক থেকে চটকা গানের সুর চটুল ও নাচুনে এবং তার গতিও দ্রুত। উত্তরবঙ্গের একটি চটকা গানের নমুনা:
হাত ধরিয়া কন্যা কওরে/কন্যা না করেন আর গোস্যা/ তোমার বাড়িত যাইতে কন্যা/পায় পড়ল ফুসা
এছাড়া একটি জনপ্রিয় চটকা গানের নমুনা:
প্রেম জানে না রসিক কালাচাঁদ/ওসে গুইওে মরে/কতদিনে বন্ধুর সনে হরি দর্শন বন্ধুরে।
যদিও সুরের কাঠামো ভাওয়াইয়া গানের মতো তবুও এ গান দ্রুত ছন্দে গীত হয় বলে গায়কীতে হাস্য-ব্যাঙ্গাত্মক রস ফুটে ওঠে।
উত্তরবঙ্গের গ্রামে-গঞ্জে জনগণের মনোরঞ্জের জন্য বিভিন্ন উপকথা বা বেদ-পুরাণের কাহিনী নিয়ে তৈরি হতো বিভিন্ন পালা গান বা পালাটিয়া গান, এই পালাটিয়া গানে দীর্য় সময় ধরে একঘেয়ে সুরে গাওয়ায় শ্রোতাদের মাঝে মনোরঞ্জনের জন্য মূল গায়ক (আঞ্চলিক ভায়ায় ‘‘গীদাল’) সাময়িক স্বস্তির জন্য কিছু ভাঙা গান পরিবেশন করেন। এই ভাঙ্গা গানের সঙ্গে মূল গানের কোনো সম্পর্ক থাকত না, মূল পালাটিয়া গানের একঘেয়েমি কাটাতেই মূল কাহিনী থেকে সরে এসে পরিবেশিত হয় হালকা ছন্দ বা হাস্যরসের কিছু গান। স্বভাবতই এ গান কিছুটা কৌতুক মিশ্রিত হয়। চটুল ছন্দের লঘু বিষয়ের রঙ্গ-হাস্যরসে মিশ্রিত এসব ভাঙা গান বিশেষতঃ পালাটিয়া গানের টানা সুর থেকে স্বতন্ত্র। অন্যভাবেও বলা যায় জনজীবনের ভাবগম্ভীর অবস্থা থেকে সাময়িক বিচ্যুতি। ভাওয়াইয়া গান যেমন অনুভূতির দ্বারা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করার গান, গায়কী অনুযায়ী চটকা গান সেই জাতীয় গান নয়। ভাওয়াইয়া যেখানে বিচ্ছেদ আত্মবিলাপের দীর্ঘ রেশ সেখানে চটকার চটুল ছন্দ নৃত্যের লাস্যভঙ্গিতে আনে আশার সঞ্চার, আরোপিত মনে আনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের একাগ্র সাধনা। উদাস করা হৃদয়ও আশার নিবিড়তায় ঘর বাঁেধ এক টুকরো আশ্রয়ের জন্য, নিভৃতে পাবার পরম সৌভাগ্যের জন্য। চটুলর ছন্দের গভীরে যে স্থিরতা আছে তারই আলোড়নের বহিঃপ্রকাশ ঘটে দয়িতার অন্তরে, দুঃখ-সুখের আঘাত তীব্র হয় প্রাণে। চটকা গান ভাওয়াইয়া গানের পাশাপশি চললেও ভাওয়াইয়া গান যদি হয় বিরহের বা না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস, চটকা গান তবে মিলনের স্বচ্ছন্দ আবেগ।
চটকা গানের সঙ্গে মারফতি গানের খানিকটা মিল পাওয়া যায়, কেবল ছন্দ ও পরিবেশনার ক্ষেত্রে।। অবশ্য মারফতি গানের সুর হয় নিচু পর্দায়, চটকা গানের শুরু পঞ্চম থেকে। অন্যদিকে চটকায় যেখানে চটুল ভাবের গানের কথা ও সুরের প্রকাশ, মারফতি গানে প্রকাশ হয় আত্মনিবেদন। এই চটুল ভাবই চটকায় উচুঁ পর্দায় সুর বাধতে বাধ্য করে। এই চটকদারি গায়কীাই এর প্রাণভোমরা এবং গায়কীর স্বকীয়তা।
চটকা গান মূলত বিধৃত-দাদরা বা ডাবল দাদরা তালের। এ গানের সুর তার ছন্দের ন্যায় কাটা কাটা, তাই গানের এক কলি থেকে অন্য কেিলতে যাওয়ার সময় মিড়ের চল নেই রয়েছে ছন্দময় তালের বিন্যাস। গান ও সুরের প্রকাশে শব্দের উপর যে শ্বাসাঘাত তার জন্য এ গানের অন্যতম প্রধান আনুষাঙ্গিক বাদ্যযন্ত্র বিশেষ ধরনের দোতারা। দোতারার কাটা কাটা ছন্দ চটকার প্রকাশভঙ্গির সঙ্গে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ। কথার আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ভাওয়াইয়া কাঠামোয় সুরারোপিত এই গানের গায়কীতে বিশেষ ধরনের রীতি আছে যা উত্তর বাংলার লোককৃষ্টি, যা সহজ-সরল জীবনের দৈনন্দিন ছবি, আনন্দ-উচ্ছ্বাস, হাসি-কান্না, ঠাট্টা-মশকরার অনাবিল আনন্দের সাংগীতিক প্রকাশ।
০০ শাহনাজ জয়া ০০
Lokfolk লোকফোক forum of folk লোক tribal আদিবাসী culture সংস্কৃতি of West Bengal পশ্চিমবঙ্গ, বাংলা. LOKFOLK is Bengal বাংলা India's ভারতের traditional পারম্পরিক knowledge system জ্ঞানভাণ্ডার, history ইতিহাস, Indigenous technology প্রযুক্তি. We have two mass bodies গনসংগঠন Bongiyo Paromporik Kaaru O ও Bastro Shilpi Sangho; Bongiyo Paromporik Aavikaar Shilpi Sangho. Journal পত্রিকা, PARAM, পরম. Picture - KaaliKaach কালিকাচ, Dinajpur দিনাজপুর, Madhumangal মধুমঙ্গল Malakar মালাকার
Monday, September 6, 2010
চটকা গান
লেবেলসমূহ:
Chatka,
folk commuities,
FolkSong,
North Bengal
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment