Tuesday, October 29, 2013

গড়িয়াহাটের মেলা, Gariahat Mela

গড়িয়াহাটের মেলার এই সংবাদটি প্রকাশ হয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকার
কলকাতার কড়চায়, ২৯ অক্টোবর, ২০১৩ সালে


লোকশিল্প
দুর্গাপুজোয় লোকশিল্পীদের কাজ দেখতে কলকাতা এখন অভ্যস্ত। এ বার শ্যামাপুজোয় অন্য ভাবে দেখা যাবে বাংলার লোকশিল্পীদের। থিমের মণ্ডপ সাজাতে নয়, শিল্পীরা আসছেন পুজো প্রাঙ্গণে তাঁদের শিল্পশৈলীর নমুনা নিয়ে প্রদর্শনীতে। আদি বালিগঞ্জ শ্রীশ্রীশ্যামা পূজা পরিষদ গড়িয়াহাটের মেঘমল্লার ভবনের পাশের রাস্তায় এই ব্যতিক্রমী পুজোর উদ্যোগে সঙ্গে পেয়েছেন কলাবতী মুদ্রা, বঙ্গীয় এবং পারম্পরিক কারু ও বস্ত্রশিল্পী সদস্যদের। দুই বাংলার শিল্পীরা আনছেন পূর্ব মেদিনীপুরের গালাপুতুল, চড়িদার মুখোশ, বীরভূমের কাঁথা, নয়া-র পট, বিকনা-র ডোকরা, গমিরা মুখোশ, বিষ্ণুপুরের তাস, নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল, আরও অনেক কিছুর সঙ্গে ঢাকা আর টাঙ্গাইলের কাপড়। প্রদর্শনী ৩১ অক্টোবর-৩ নভেম্বর। 

Sunday, October 27, 2013

বৈষম্যবাদী ভারত আর সুশীল সমাজ! Unequal India & us.

সুত্রঃ গুরুচন্ডালীর ইপ্সিতার একটা লিঙ্ক দেখলামhttp://www.youtube.com/watch?v=TlNQQyMaGis। আজিম প্রেমজীর বিশ্ববিদ্যালয়ে হর্ষ মন্দারের ভাষন - বৈষম্যবাদী ভারত।  সেই সুত্রে এই লেখা লেখা।




অহো! কি হর্ষ! ধনকুবেরতম আজিম প্রেমজির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের এক প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্ট বৈষম্যবাদী ভারত বিষয়ে পরম বক্তা! ডান হাতের তর্জনী তোলা, বোধহয় ঈশ্বরের দিকে। বিশ্বায়নের যুগে ঈশ্বরই একমাত্র সহায়। গনআন্দোলন কথার কথা। সুশীল সমাজের শহুরে সব আন্দোলনের মিছিল শেষ হয় ক্ষমতার পায়ে। কেউ যান ১০ জনপদ রোডে, কেউ যান আজিম প্রেমজ়িকে বোঝাতে, কেউ অন্য কোনওখানে, যেখানে ক্ষমতা কথা বলে, কাজ করে। বিশ্বায়নে জনগণের প্রভাব তুশ্চু!

বছর দশেক আগে হাতে আসে আইটিসির বাৎসরিক সমীক্ষা। সেই মহার্ঘ কর্পোরেট প্রকাশনায়, মহা মমতায়, সুশীল সমাজের ভাষায়, নানান ভাবে ভারত সমাজের কথা, জৈব চাষের কথা, লাভ এবং উন্নয়নের ফল ভাগাভাগির কথা কি গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছিল! চমৎকার সব বাণী!

ঘোমটা পরা অদ্ভুত উন্নয়নরঙ্গ!

গতকাল ভাজপার যে সাংসদকে চাড্ডি গালি দিয়েছি, আজ সে হয়ত মুলায়েম বা বাম দলে ভিড়ে অপুর্ব ধর্মনিপেক্ষ ছাপ পাচ্ছেন। কয়েক দশক আগে মায়াবতী ভাজপার বান্ধবী, আজ তিনি কংগ্রেসের ত্রাতা। সুশীল সমাজও জলে গল।

গতকাল যারা নিপীড়নমুখী ভারত রাষ্ট্রের প্রতাপী আমলা, আইসিএসদের উত্তরসূরী (অবোধ তারা জানতেন না কি চাকরি নিচ্ছেন!), তারা আজ সে ঘৃণিত কাজ ত্যাগ করে, ভারত সুধী সমাজের মননীয় মুখপত্র। বিশাল সব পুরস্কার জয় করছেন অবহেলে। সক্কলে সুশীল সমাজত্রাতা নেতা। শহুরে সমাজ এই আত্মবলিদানে অসম্ভব উদ্বাহু!

কাল ন্যাকের সদস্য! আজ পদত্যাগ করে ন্যাকা সাজা। যেন জানতেন না যে ন্যাক শুধুই নীতি প্রস্তাবকারী সংগঠন। নীতি তৈরি করে, কিন্তু মান্যতা দেয় না। পরে যেন বুঝে আত্মগ্লানিতে পদত্যাগ। ন্যাক শুধুমাত্র নৈবেদ্যর চূড়া, ক্ষমতার সঙ্গে থাকা মানুষদের গা ঘষাঘষিমাত্র। সেই সব সংগঠনে থেকে সুশীল সমাজে জাতে ওঠা। বিদেশের সুশীল সমাজে ঘোরার ব্যবস্থা। বড় বড় বক্তৃতা দিতে ডাক পাওয়া। এই সব কমিটিতে থেকে দেশে বিদেশে সামাজিক সম্মান অর্জন। ক্ষমতাকে কে না সম্মান করে!

সুশীল সমাজ ক্ষমতায়নে প্রভূত বিশ্বাসী!

আজিম প্রেমজিরা সেই ক্ষমতার মাত্র একটুকু অংশ প্রয়োগ করে, উচ্চমধ্যবিত্তদের নানান ছাড় দিয়ে ইনক্লুসিভ উন্নয়নের তত্বে বিশ্বাসী করান। সমাজের নেতাদের দিয়ে, নিজেদের মঞ্চে সেই সব তত্ব বলিয়ে নেন, ক্ষমতা আর রজমুদ্রার প্রভাবে।

বহুদিন ধরে যারা সরকারি বা কর্পোরেট চাকরি বা ব্যবসারসঙ্গে আন্দোলন করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি(এই পোড়া দেশের মানুষের কিচ্ছু হবে না ভেবে, আর পদাঘাতই শুধু পেলাম ভেবে), মনেকরি বিশ্বায়ন এক ঘোরতর বাস্তব। বিশ্বায়নের বিরুদ্ধতা করি। কিন্তু তার কোলে একটু যায়গা চাই। নিজের মত করে নিজের বাগান সাজিয়ে নিই। বড় অর্থ দান পাওয়ার হাতছানিকেই বাস্তব ভাবি। এইড অনুসর্গী বিদেশী সংগঠনসব, দেশী প্রেমজি, টাটামশাইরা ঝুলি উপড়ে দান দেন। এখন আমলাদের থেকেও বেশী রোজগার করি।

আমরা ছোট লোক, মুঢ, অজ্ঞ, মুর্খ, পিছিয়েপড়া, গেঁয়ো, পাশ্চাত্য সভ্যতার বিশালত্বের আকার বুঝিনা, অতীতের, আজকের শহুরেদের এই সব ঘটনাক্রম, বুঝতে পারিনি। আজও পারছিনা।

গ্রামের ছোটলোকেদের সংগঠনে জড়িয়ে রয়েছি। আমাদের পুর্বজরা ১৭৬৩ থেকে স্বাধীনতার লড়াই করেছেন। সে লড়াই আজও চলছে। কেন? স্বতঃসিদ্ধ! কোম্পানির আমল থেকেই বিশ্বায়নের মার বুঝি। তাই লড়াই বুঝি। তাই এই শহুরে এত্ত বড় বড় তত্ব বুঝছি না।

বিশ্বায়নের মার বুঝি। লড়াই বুঝি। প্রাক্তন আমলাদের এই লড়াইটা কেউ যদি বুঝিয়ে দেন দোয়া করে!

Friday, October 25, 2013

গড়িয়াহাটের মেলা, Crafts Exhibition at Gariahat

ওরা এই শ্যামা পুজায় এক্কেবারে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। না লৌকিক আঙ্গিকের তথাকথিত কোনও থিমের মন্ডপের চমক নয়, একেবারে বাংলার গ্রাম-শহরের যে মানুষগুলো বাংলারই নিজস্ব অতি প্রাচীন কারু শিল্পকে বুকেধরে আগলে রেখেছেন, তাদের শিল্পীকে নিয়ে আসছেন পুজো প্রাঙ্গনে, কলকাতার শিল্পী মানুষদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য, এবং অতি মমতায় তাদের পাশে দাঁড়াবার জন্য। ওঁরা আদি বালিগঞ্জ শ্রীশ্রীশ্যামা পূজা পরিষদঅক্টোবরের ৩১ থেকে নভেম্বরের ৩ পর্যন্ত, কলাবতী মুদ্রা, বঙ্গীয় এবং পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘের কারু ও বস্ত্র শিল্পী সদস্যদের সঙ্গে মিলে শেকড়ের সন্ধানে যেতে গিয়ে, এই ব্যতিক্রমী পুজোর আয়োজন করতে চলেছেন, গড়িয়াহাটার মেঘমল্লার বাড়ির পাশের রাস্তায় নাম দিয়েছেন লোককলা মেলা। আসছেন এ বাংলার ২১ জন জন এবং ও বাংলার ৫ জন শেকড়ে থাকা কারু ও বস্ত্র শিল্পী। ওপার বাংলা থেকে মুলতঃ আসছেন টাঙ্গাইল, ঢাকাই, মণিপুরি এবং অন্যান্য বস্ত্র ও পরিধেয় শিল্পীরা। এ বাংলা থেকে থাকছেন পুর্ব মেদিনীপুরের খড়ুইএর গালার পুতুল এবং কোলাঘাটের মোষের সিংএর দ্রব্য, বিষ্ণুপুর থেকে শাঁখ, নারকেল মালা, তালকাঠের তৈজস, পুরুলিয়া চড়িদা থেকে মুখোশ আর তসরের থান আর পরিধেয়, বীরভুম থেকে কাঁথাসেলাই, পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের শবর কলা, শিলদার পাথরের তৈজস আর নয়াগ্রামের পট, বাঁকুড়ার বিকনার ডোকরা, মালদার গাজোল, দিনাজপুরের ঊষাহরণ আর কুচবিহারের কালচিনির বাঁশের কাজ, দিনাজপুরের মহিষবাথানের কাঠের ও বাঁশের গমীরা মুখোশ, দিনাজপুরের ফতেপুরের পাটের ঢোকড়া, বর্ধমানের নতুন গ্রামের কাঠের পুতুল আর আসবাব, কলকাতার চামড়ার থলে, কলকাতা নতুন ধরনের ঘরসাজানোর মোমবাতি, জামাকাপড়, দক্ষিণ ২৪পরগনার পাটের বিনুনির থলে আর চটি, দার্জিলিংএর নক্সালবাড়ির কাঠের কাজ, বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাস, মাটির বীজের ধাতুর গয়না এবং আরও অনেক কিছু। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগে কলকাতার শেকড়ের খোঁজে থাকা শিল্পমোদী মানুষেরা অবশ্যই সামিল হবেন এই আশা করছেন উদ্যোক্তারা।


বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পী ছাড়া যারা যারা আসছেন-

সংখ্যা
নাম
কারু শিল্প
জেলা
১।
শিবাশিস হাজরা
ঘর সাজানোর জিনিস
কলকাতা
২।
মানোজ রায়
তসর
পুরুলিয়া
৩।
নিতাই নন্দী
শাঁখ, নারকেল মালা, তাল কাঠ
বিষ্ণুপুর
৪।
পুতুল কর্মকার
ডোকরা
বাঁকুড়া
৫।
ববিতা ব্যানার্জি
চামড়ার থলে
 কলকাতা
৬।
সাঞ্চিতা ঘোষ
সফট টয়েজ়
৭।
শিবানী দত্ত
টেরাকোটা
দক্ষিণ ২৪ পরগণা
৮।
মধু নায়েক
খেজুর পাতা
পশ্চিম মেদিনীপুর
৯।
শ্যামল মিস্ত্রী
পাথর
১০।
রেজিনা বিবি
কাথাফোঁড়
বীরভূম
১১।
নূর সেলিমা বিবি
১২।
ক্ষীরোদা বালা সারকার
ঢোকরা
দক্ষিণ  দিনাজপুর
১৩।
নমল রায়
বাঁশ
কোচবিহার
১৪।
শ্রীনাথ টুডু
মালদা
১৫।
দিলীপ ভাস্কর
কাঠের পুতুল
বর্ধমান
১৬।
বৃন্দাবন চন্দ
গালার পুতুল
পুর্ব মেদিনীপুর
১৭।
গুরুপদ চিত্রকর
পট
পশ্চিম মেদিনীপুর
১৮।
ষষ্ঠী জয়সোয়াল
পাট
উত্তর  দিনাজপুর
১৯।
সঞ্জুলাল সরকার
কাঠের মুখোশ
দক্ষিণ দিনাজপুর
২০।
সংগঠন


২১।
নারায়ণ চন্দ্র পইত
পাটের থলে, চটি
দক্ষিন ২৪ পরগণা

Saturday, October 19, 2013

এক কর্পোরেট শহরের মধ্যবিত্ত কর্পোরেটসেবী বাঙালিরা৪, Story of a Corporate City and Corporate Minded Bengali4

নীরদ চৌধুরী যাদের বাঁদরপুজক বলে গালি দিয়েছেন(সঙ্গে মার্ক্সও), তারা সাম্রাজ্যসেবী হয়ে উঠতে পারেন নি বলে শেষ বয়স পর্যন্ত হাহুতাশ করেছেন, সেই গাঁইয়া জাঠরা, হিন্দিভাষীরা, আমাদের উদ্ধার করলেন। ১৫০ টাকার পাটের জুতো, ২০০ টাকার পাটের থলে তারা দরদাম না করেই কিনলেন। অনেকে ৭/৮টাও। তারা যে সকলে মধ্যবিত্ত তাও নয়। পাশের বাজারে মুরগি আর ছাগল কাটা ইসলাম ধর্বালম্বী ছেলে ছোকরারা অনেক কিছু কিনল। অন্য প্রদেশের হিন্দিভাষী মধ্যবিত্তরাও কিনলেন বহু কিছু। অথচ এদেরই বুকের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে, বুকের চুল উপড়ে এই শহরটি বানিয়েছিলেন দলিত কন্যা মায়াবতী; যেমন করে জলপাইগুড়ির চাঁদমনি চা বাগান উচ্ছেদ করে, বোলপুর, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার কৃষক উচ্ছেদ করে নানান পশ্চিমধন্য শহর বানিয়েছিলেন বামপন্থীরা।
আলাপ হল লেনা তাউএর সঙ্গে। বয়স ৭০ এর ওপর হাট্টাকাট্টা চাষি। তার ছিল ৩০ একর জমিন। ভাই বেরাদারদের আরও কয়েকশ একর চাষ জমি হড়পে নিয়ে মায়াবতী সরকার উপহার দিয়েছে জে পি গ্রুপকে। তারা আবার সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছে কয়েকশ বড় মাঝারি কোম্পানিকে। লেনাতাউ আর তাঁর আত্মীয়দের জমিতেই গড়ে উঠেছে বুদ্ধ রেসিং সার্কিট। কোনও রাজনৈতিক দল তাদের পাশে দাঁড়ায় নি। মুলায়ম ক্ষমতায় এসে নকল করছেন মায়াবতীর উন্নয়ন কর্মকান্ড। তাউএরা আদালতে গিয়ে শহর তৈরির স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। আজও লড়ছেন জমিহাঙ্গর বাড়িমাফিয়া আর তাদের সর্বভারতীয় মধ্যবিত্ত সেবকদের বিরুদ্ধে, যার একটা বড় অংশ বাঙালি, এনজিও। আমরা ছিলাম হিমসাগর অ্যাপার্টমেন্টে। আধা সেনা বর্ডার রোডসের কর্মীদের থাকার যায়গা। ভোলা বলল এই এলাকার সব থেকে বড় এলাকা দখল করেছে সেনাবাহিনী। রাষ্ট্র-কর্পোরেট-সেনাবাহিনীরস্বার্থের কি অদ্ভুত গলাগলি। অফিসারদের বউদের সমিতি কয়েক হাজার বাড়ি বানিয়ে সেনা কর্মীদের বেচেছে লাভ করেছে কয়েকশ কোটি টাকা। দেখলাম ইন্ডো-টিবেটান পুলিসসহ আরও অনেক আধা সেনার কর্মিদের বাসস্থান। তার এক/দু কিমি দূরে খালি মাঠে চাষ হচ্ছে। এরকম এক হৃদয়হীন শহরে চাষের মাঠ দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল।

এক বিহারী চাকুরীজীবী তার সন্তানের হাত ধরে এসেছেন। তিনি প্রত্যেকটা শিল্পের সামনে গিয়ে জানছেন, সন্তানকে বোঝাচ্ছেন, আর বলছেন বাঙ্গালিরা খুবই সংস্কৃতিবান। বলছেন, দেখেছ কি সুন্দর সব শিল্পদ্রব্য বানিয়েছেন বাঙ্গালিরা! তিনি মোটামুটি সবদ্রব্যগুলি কিনছেন একটা একটা করে। একটা কিনছেন আর সন্তানের হাতে দিয়ে অনুভব করাচ্ছেন তার গড়ন, ধরন, রঙ। খুব গর্বভরে। এই মানুষদের দেখে ভয়ও লাগছিল, এরা খুব তাড়াতাড়ি লুপ্ত হয়ে যাবেন কিনা ভেবে, আর ভালোও লাগছিল যে, এখনও গ্রামীণ ভারত টিকে রয়েছে। এই মানুষগুলো সেই টিকে থাকাকে তাদের সাধ্যমত সাহায্য করছেন। বলা উচিতছিল, কিন্তু বলতে পারলাম না, ইংরেজ সময় থেকেই কর্পোরেটসেব্য বাঙ্গালিরা নিজেদের শিল্প সচেতন হিসেবে সারা ভারতে প্রচার দিয়েছে। কিন্তু সত্যিটা এক্কেবারে বিপ্রতীপ। আপনাদেরমত, আজ আর কোনও ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত, তার সন্তানকে হাত ধরে শিকড়ের সন্ধান দেয় না। বাংলা ভাষা, বাংলাকে না জানার গর্ব অনুভব করে।  এক কর্মকর্তা কথার টানে এখনও মেদিনীপুরের মাটির গন্ধ পরিষ্কার। তিনি দোকানে এসে একটা শিল্প কিনে ছেলের হাতে দিয়ে বললেন, ও বাংলা ভুলেছে, ওর সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলুন।

এক কর্পোরেট শহরের মধ্যবিত্ত কর্পোরেটসেবী বাঙালিরা৩, Story of a Corporate City and Corporate Minded Bengali3

গ্রেটার নয়ডা কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত কর্পোরেট পরিকল্পিত শহর। মানুষ সেখানে রাস্তায় হাঁটে না। রাস্তাগুলি অশ্লীল রকম চওড়া। রাস্তার ধারে আরও একটা রাস্তা। নাম সার্ভিস রোড। প্রত্যেকটা রাস্তা আরও একটি রাস্তাকে কেটেছে উল্লম্বভাবে। রাস্তায় বাঁক খুব কম, যাতে সাঁজোয়া বাহিনী বিনা বাধায় চলাচল করতে পারে। অনেক দূর পর্যন্ত খালি চোখে নজরদারি করা যায়। কোনও আক্রমণকারী সহজে আক্রমণ করে পালিয়ে যেতে না পারে, তার জন্য রাস্তা আর রাস্তার পাশগুলি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। পশ্চিমের শহর পরিকল্পনায়, প্রতিবাদীদের সহজে গুলি করে বা মারণ হাউই চালিয়ে মেরে ফেলা যায়। মলের বাইরে অন্য দোকান প্রায় নেই। হকারদের সঙ্গে লাল আলোজ্বালা পুলিশের গাড়ি হকার পুলিশ খেলা খেলে। শেষ পর্যন্ত জয় অদম্য হকারদের হয়। এই শহরের অপচয়তম গাড়ি দৌড়ের মাঠের নাম গৌতম বুদ্ধ। জেলাটির নাম গৌতম বুদ্ধ নগর।
এমত এক ‘পরিকল্পিত আধুনিকতম’ বৌদ্ধিক শহরে বাঙ্গালীদের দুর্গোপুজোয় আমাদের সংগঠনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলাম। মেলার মাঠে বাঙ্গালিরা দলবেঁধে আসছেন। অথচ অবাঙ্গালীরাই মুলতঃ ক্রেতা। বাঙ্গালীদের দেখে মনেহয় বেশ উচ্চমধ্যবিত্ত। গায়ে মহার্ঘ্য পরিধেয়। বাহনও বেশ খরুচে। সে শহরে সময় কাটাতে তাদের যেতে হয় শপিং মলে। অন্য কোনও সংস্কৃতিকর্ম যে নেই। ফলে তারা যে অর্থ খরচ করেন না তাও নয়। সেখানে গেলেতো কেনাকেটা করতে হয়। ছোট একটি শপিং মলের বাইরের সাজানো গোজানো একটি দোকানে মেসিনের চা ১৫ টাকা, এক রত্তি পান ১৫ টাকা। পাই ১ আর ২ সেক্টরের রাস্তার ধারের ব্যতিক্রমী কাঁচা তরকারির দোকানে আলু ৪০ থেকে ৬০ টাকা। পেঁয়াজ ৬০ ১০০ টাকা। প্রায় প্রত্যেকের হাতে দামি ২০,০০০+ মোবাইল।
প্রত্যেক বাঙ্গালি মাঠে ঢুকলেই কেমন পাল্টে যাচ্ছেন। যে ১২টা দোকান হয়েছিল তাতে স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় এমন প্রায় কিছুই ছিল না। প্রত্যেকটা শিল্পের বাংলায় জন্ম, এমন এক অদৃশ্য ছাপ বহন করছিল। দু একজন বাদ দিয়ে প্রায় প্রত্যেকেই সাধারন সব দ্রব্যের তৈরির উপাদান জিগ্যেস করছিলেন। অনেকেই পাট, বাঁশ, পোড়ামাটি বা মোষের শিং চিনতে পারছিলেন না। চিনিয়ে দিলেও মুখ বেঁকিয়ে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন। এক মহিলা জিগ্যেস করলেন পোড়ামাটির গয়নায় জল পড়লে গলে যাবে না তো! এক বাঙালি উত্তরপ্রদেশের গরমে কোট টাই পরে, ১৫০ টাকার পাটের জুতো ৫০ টাকায় কিনতে চাইলেন। বললেন পাটের দাম তিনি জানেন, তাই এর বেশী দেওয়া যায় না। তার হাতে ধরা স্যামসঙ্গের ৩০ হাজারি+ ট্যাবলেট। বাধ্য হয়ে বলাগেল এই মোবাইলটি কেনার সময় তিনি দর দাম করতে পেরে ছিলেন কিনা? এটির মূল দাম কত কে বলে দেবে? যখন শপিং মলের মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যান তার টিকিট কেনার সময় দরাদরি করতে পারেন কিনা? সরকারি রান্নার গ্যাস গাড়ির তেল কেনার সময় দরাদরি করা যায় কিনা? বিমানের টিকিট কাটতে দরাদরি করা যায় কি না? উনি শেষমেশ আমাদের মুর্খ দেগে এগিয়ে গেলেন পুজো মন্ডপে দেবীর পায়ে প্রণতি জানাতে। পায়জামা পাঞ্জাবি পরিহিত এক বাঙালি মোষের শিঙের নানান দ্রব্য হাতে তুলে দেখছিলেন। দাম শুনে কপাল কুঁচকলেন। বললেন এর ইউটিলিটি কি? কেন এটি কিনব? বাড়িতে স্টিলের তৈজসপত্র রয়েছে। মোষের শিঙের জিনিস কেন? সেই কোনকালে রামমোহন এ দেশে বহন করে নিয়ে এসেছিলেন উপযোগিতাবাদ। তার রেশ যে এই ব্যক্তিটি ঘরে রেখেছেন, সেই তথ্য চোখের সামনে দেখে বেশ পুলকিত হচ্ছিলাম। 

এক কর্পোরেট শহরের মধ্যবিত্ত কর্পোরেটসেবী বাঙালিরা২, Story of a Corporate City and Corporate Minded Bengali2

এসব দিয়ে চিনলাম কর্পোরেট শহর গ্রেটার নয়ডা আর তার অন্যতম বাসিন্দা প্রবাসী বাঙ্গালীদের। গ্রেটার নয়ডা কালীবাড়ির পুজোয় যাওয়ার অন্যতম উৎসাহ ছিল উদ্যোক্তাদের উদাত্ত আহ্ববান, নম্র ব্যবহার। ছোটবেলা থেকেই প্রবাসী বাঙ্গালীদের নিয়ে গ্যাদ্গ্যাদে নানান সব লেখা পড়ে মুগ্ধ ছিলাম। জানতাম তারা বিদেশে বাংলার দূত। বিদেশে অনেক কষ্ট করে বাংলার সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখছেন। মাস চারেক আগে গ্রেটার নয়ডার ওয়াইএমসিএতে প্রদর্শনী করে যে মানসিক শক্তি অর্জন করেছি, সেটিও আমাদের এই মেলায় টেনে নিয়ে গিয়েছে। তবে মেলায় করার আগে বুঝিনি, বিদেশের বাঙ্গালিরা বাপদাদার অনুসরনে, বিদেশী কর্পোরেট সংস্কৃতি, নিজ দায়িত্বে বাঁচিয়ে রাখছেন।
ষষ্ঠীতে দোকান সাজিয়ে বসি। কিন্তু খুব একটা কিছু বিক্কিরি হয় নি। পরের দিন সক্কাল থেকেই বিকেল পর্যন্ত টানা ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টি। সন্ধ্যে জুড়ে ব্যাপক ঠাণ্ডা। মানুষ এলেন কম। তার পরের দুদিন ভাল বিক্কিরি হল ঠিকই, কিন্তু মনে প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল। মেলায় যদি স্থানীয় অবাঙ্গালীরা না আসতেন, তাহলে যা নিয়ে গিয়েছিলাম, তার ৯০% ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হত। মেলায় বাঙ্গালিদেরই সংখ্যাধিক্য। অথচ বাঙ্গালিদের কেনার আগ্রহ কম। কেউ ২০০ টাকার বেশী জিনিস কিনছেন না। তাও দর দাম করে, দর কমিয়ে এনে। সেই ইংরেজ আমল থেকে মধ্য-উচ্চবিত্ত বাঙালি কর্পোরেটসেবী। ব্রিটিশদের ভারত লুঠ কারবারের সহায়ক, ভাগীদার। আজও সেই মানসিকতা বদলায় নি। ১৭৫৭র আগে থেকেই দাদনী বনিক এবং সরকারের নানান ধরনের দপ্তরের সঙ্গে জুড়ে থাকা আমলারা একটু একটু করে সারা বাংলা শুষে ব্রিটিশরাষ্ট্র গড়ায় বড্ড উদ্যমী ছিলেন। ক্রমশঃ কলকাতায় থিতু হচ্ছেন। পলাশীর পর এই উদ্যম উদ্দাম গতিতে দৌড়েছে। ১৯৪৭এর পর সেটি আরও জোর পেয়েছে।
১৭৬৩ থেকে যখন সারা দেশ ফেটে পড়েছে স্বাধীনতার লড়াইতে তখন প্রথমে ক্লাইভ, পরে হেস্টিংস আর কর্নওয়ালিসের সঙ্গে মিলে নবকৃষ্ণ, কৃষ্ণকান্ত নন্দী, নন্দকুমার, রেজা খাঁ, দেবী সিং, গঙ্গা গোবিন্দ সিং, প্রাণকৃষ্ণ বসু আর তাদের উত্তরাধীকারেরা ব্রিটিশসৃষ্ট ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামক গণহত্যায় প্রাণপাত করে রেকর্ড পরিমাণ খাজনা তুলছে, সর্বস্বহীন গ্রামীণদের ট্যাঁক কেটে, আধমরা বাঙ্গালি-বিহারীর ওপর অবর্ননীর অত্যাচার চালিয়েছে। সে প্রবাহে রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র, দ্বারকানাথ ঠাকুরদের আবির্ভাব। তারা আজও এত বিখ্যাত কেন? লুঠেরা ব্রিটিশ রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছেন। কর্পোরেট বাঙালি সেই প্রতিদান দিচ্ছে। সেই রেশ আজও চলছে। ভাঙাপায়ে কেপ টাউনে জাহাজে রামমোহন রায় ফ্রান্সের ত্রিবর্ন পতাকা স্যালুট করেন। কিন্তু তার বা তার দেশের কোম্পানি পোষিত নীলকরেরা, রায়তদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে এইটুকু তথ্য ভারতের আধুনিক মানুষটি চেয়েও দেখলেন না।
বাঙালি মধ্যবিত্তদের জীবনে কর্পোরেটভজন অন্যতমগুরুত্বপুর্নকর্ম। অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যবিত্ত মানুষের তুলনায় বাঙালি একটু বেশীই কর্পোরেটাসেবী। তার বাবা, ঠাকুদ্দা, তার ঠাকুদ্দা কখনও সরাসরি, কখনও পরোক্ষে সেবা করেগিয়েছে ব্রিটিশ সিংহের। পশ্চিমি সভ্যতার ভিত্তিভূমি কর্পোরেটিয় লুঠভিত্তিক অত্যাচার। বাল্যকাল থেকেই লুঠেরা কর্পোরেটধন্য হয়ে উঠতে বিদ্যালয়ের পড়াশোনায় সে প্রাণপাত করেছে। কত ভালভাবে কর্পোরেটদের সেবা করাযায় সেই তত্বে নিজেকে নিজের শেকড়ের সঙ্গে বিযুক্ত করে গড়ে তুলেছে চরম দাস্য মনোভাবে। একটু স্বচ্ছল পরিবার হলে, বা জলপানি নিয়ে ইংলন্ডে(আজ জুড়েছে আমেরিকা) পড়া, চাকুরি, বাস আর একটু বেশি হলে মেম বিবাহ; শেষ জীবনে নীরদ চৌধুরীর মত আরও বেশী সাম্রাজ্য সেবায় মন দেয়ন। বড় বড় মিডিয়াধন্যসব পুরস্কার পাওন। আর ভারতের ভালোর জ্যাঠামশাই হয়ে বসন। এর বাইরে মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীর জীবনে সব কিছু শূন্য। যে সব হতভাগ্য সমুদ্রপার হতে পারেন না, বা বিখ্যাত হতে পারেন না? তাদের মনের ছোট্ট কোনায় পুষে থাকে একটুকরো ইয়োরোপ বা আমেরিকা আর বিশাল বড় দীর্ঘশ্বাস। শয়নে, বসনে, ব্যাসনে, বলনে শুধুই ইয়োরোপ, আমেরিকার জীবনযাত্রার হনুকরন। জীবনে, মরণে কর্পোরেটধুম্রসেবন।

এক কর্পোরেট শহরের মধ্যবিত্ত কর্পোরেটসেবী বাঙালিরা১, Story of a Corporate City and Corporate Minded Bengali1

২০১৩র দুর্গোপুজোয় সদ্য দিল্লির পাশের উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডা থেকে বাংলার কারুশিল্প প্রদর্শনী করে ফিরলাম। এই প্রেক্ষিতে কয়েকটি অভিজ্ঞতা এবং তৎসংক্রান্ত কিছু অনুভূতি শোনানোর অনুমতি চাইছি।
২০১৩র মে মাসে গ্রেটার নয়ডায়, এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাঙ্কের মিটিং এবং এশিয়ার নানান উন্নয়নকর্মের বিরোধিতায় অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলাম। ছিলাম ওয়াইএমসিএতে। সেই এলাকাটি সাজিয়েও ছিলাম পশ্চিমবঙ্গের ২০জন গ্রামশিল্পকর্মী। পশ্চিমবঙ্গের নানান শিল্প দ্রব্যেরও প্রদর্শনী ছিল। মিছিল, মিটিং, আলোচনা এবং সেই সঙ্গে বাংলার নানান গ্রাম শিল্পের প্রদর্শন করতে গিয়ে অন্যরকম অনুভূতি অর্জন হয়েছিল। এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে আলাপ হয় স্থানীয় বাঙালি সংগঠনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে। আমাদের সজ্জা উপকরণ এবং শিল্পীদের দেখে, গ্রেটার নয়ডার দুর্গোপুজোয় এ ধরনের একটি প্রদর্শনী করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। চেয়েছিলাম থাকার যায়গা আর প্রদর্শনীর স্থল। রাজি হলেন। কলকাতার ফিরে বেশ কয়েক মাস কথা চালাচালির পর ঠিক হল, আমরা ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমী এই পাঁচ দিন বাংলার শিল্পকলার ঝাঁকি প্রদর্শন করব।
পুজোর সময় প্রায় ১২ জনের দল নিয়ে পৌঁছলাম গ্রেটার নয়ডার কালীবাড়ি। উদ্যোক্তারা খুব কিছু খারাপ ব্যবস্থা আর ব্যবহার করেন নি। শুধু কয়েকটি সাধারণ অসুবিধে ছাড়া। আমাদের রেখে ছিলেন খুব বড় একটি ফ্ল্যাটে। বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয় নি। হয়েছিল গতায়াতের। সেটি মেলা স্থান থেকে অন্ততঃ ৪ কিমি দূরে। এমন এক শহরে, যে শহরকে দেখলে মনে হয়, রাস্তায় হাঁটা কঠোরভাবে বারন আর তিন চাকা অটো ছাড়া যে কোনও গনযান নিষিদ্ধ। প্রথমের দিকে মাঝরাতে মেলা শেষ হওয়ায় আমরা যারা প্রায়শঃই হুব্বা বনেছি। ফিরব কি করে জানিনা। প্রত্যেকের হয় দুচাকা নয় চার চাকা বাহন। দু চাকা কম, চার চাকা বেশী। সস্তার চারচাকা কম, দামি চারচাকা বেশী। দুচাকাওয়ালারা কিছুটা হলেও নিম্ন শ্রেণীর বাঙালি। বাঁচিয়েছে বালুরঘাটের ২৫/২৫ বছরের ৬ ফুটিয়া ভোলা। অটো চালায়। তার সঙ্গে আসা যাওয়ার রফা করে নিয়েছিলাম।
সব থেকে বড় দুর্ঘটনা হল বৃষ্টিতে। মেলার কোনও দোকানের ছাদেই ত্রিপল ঢাকার ব্যবস্থা করেন নি উদ্যোক্তারা। সপ্তমীর ভোররাতের বৃষ্টি। কাপড়ের ছাদ উপড়ে, দোকানের প্রায় সব জিনিস ভিজিয়ে দেয়। এমনকি মূল প্যান্ডেলে প্রতিমার মাথার ছাদ চুইয়ে জল পড়ছে। আমরা অনেকেই বেঁচে গিয়েছি কেননা আমাদের শিল্প দ্রব্য সব প্রকৃতির সন্তান। তবুও কিছুটা ক্ষতিতো হয়েইছে। আর খাবার? একটি ঝুপড়ি ছাড়া বড়, ছোট খাবার দোকান নেই। মেলায় একটি খাবারের দোকান ছিল, সপ্তমী থেকে। মেদিনীপুরের এক ব্যক্তির। তিনি স্থানীয় বাজারে(মানে শপিং মলে) দোকান চালান। এগ রোল ৩৫ টাকা। সেই দামের শুরু। মাঠে সেউ পুরি আর ভেল পুরি। এক প্লেট ৩০ টাকা। মুজফফরপুরের এক বৃদ্ধ ঝুপড়িওয়ালা আমাদের উদ্ধার করেন। মেলা স্থল থেকে যেতে হত অন্ততঃ আধ কিমিদূরে খেতে। সকালে পাঁচ রুটি তরকারি ২৫ টাকা, আর দুপুরে ভাত, ডাল আর একটা তরকারী(পুজোর দিন, তাই নিরামিষ) ২৫ টাকা। ডিম ভাজা ১০ টাকা। ভাত, ডাল, মাছ বা মুরগি ৫০ টাকা। গরম গরম সব নিরামিষ খাবার বেশ তৃপ্তি করে খেতাম।