Tuesday, March 17, 2020

শান্তি রক্ষিত

সপ্তম শতে তিব্বতের রাজা কিন-স্রোন-ৎসন-গাম্পোর সময় বৌদ্ধপন্থ তিব্বতে প্রবেশ ঘটে। তিনি উসামান্য উদ্যমে ভারতীয় বৌদ্ধ জ্ঞানীদের তিব্বতে তাঁর রাজ্যে নিয়ে এসে বৌদ্ধপন্থের অবিকৃত সংস্করণ তিব্বতিদের কাছে উপস্থিত করার কাজ শুরু করেন। এই কাজের সম্মানে স্বয়ং রাজা এবং তাঁর দুই স্ত্রী আজও তিব্বতীদের চোখে বোধিসত্ত্বরূপে পূজিত হন।
অষ্টম শতকে তিব্বতের সিংহাসনে আররেক রাজা আসীন হন। তাঁর নাম খ্রি-স্রোন-দেউ-ৎসান। তার জন্ম বছর ৭২৮ এবং পরিনির্বান লাভ করেন ৮৬৪তে। তিনি বৌদ্ধপন্থের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তার রাজত্বে বৌদ্ধপন্থের মূল নীতিগুলি প্রচারের জন্যে ভারত থেকে বেশ কয়েকজন পণ্ডিতকে আহ্বান করে নিয়ে আসেন। তিনিই আচার্য শান্তি রক্ষিতকে তাঁর রাজ্যে আহ্বান করেন।
শান্তি রক্ষিতের জন্ম গোপালের রাজত্বে। গোপাল রাজত্ব করেন ৭০৫ খ্রি অবদি। যতদূর সম্ভব তিনি জাহোরের (বাংলায়?) রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিব্বতে পরিব্রাজনের পূর্বে তিনি নালন্দার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অধ্যাপক হিসেবে। তাঁর অময়ে শান্তি রক্ষিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি স্বতন্ত্র মাধ্যমিক আঙ্গিকের প্রবক্তা। তিব্বতি রাজা খ্রি-স্রোন-দেউ-ৎসান, তার কর্মের পরিচয় পেয়ে তাঁকে রাজদরবারে আহ্বান জানান। যখন শান্তি রক্ষিত তিব্বতের কাছাকাছি পৌঁছন, রাজা তার মন্ত্রীদের সেনাবাহিনী সহকারে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে পাঠান এবং স্বয়ং রাজা তাঁকে রাজ প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান।
তিব্বতে তাঁর প্রধান কাজ হয় বৌদ্ধপন্থের প্রচার ও প্রসার। তাঁর নির্দেশে ৭৪৯খ্রিতে রাজা তিব্বতের সান-ইয়ে নামক প্রথম বৌদ্ধ মঠটি তৈরি করান। এই মঠটি ওদন্তপুর বিহারের অনুকরণে তৈরি হয়। আচার্য শান্তি রক্ষিতকে নতুন বিহারের মঠাধ্যক্ষ রূপে মনোনীত হন। একাদিক্রমে তের বছর তিব্বতে বৌদ্ধপন্থ প্রচারের কাজ করে ৭৬২খ্রিতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার কাজের শ্রদ্ধা হেতু তিনি তিব্বতে আচার্য বোধিসত্ত্ব নামে পরিচিত হন। তিব্বতিতে তাঁর নাম হল শি-ওয়া-হৎশো।
বাদ-ন্যায়-বৃত্তি-বিপঞ্চিতার্থ, যেটি ধর্ম কীর্তি রচিত বাদ-ন্যায়ের ওপর টিকা এবং তত্ত্ব-সংগ্রহ-কারিকা, এই দুটি বই তাঁর নামে উদ্ধার করা গিয়েছে।

No comments: