Sunday, March 29, 2020

দিল্লিতে শাহজাহানের সময়ের কফি হাউস বা খাওয়াখানা

[ছবিতে তুর্কি কফিহাউস]
শাহজাহানের আমলে দিল্লিতে অর্থাৎ শাহজাহানবাদে খাওয়াখানায় চিন্তাশীলেরা আসতেন কিফির স্বাদ নিয়ে আড্ডা দিতে। কবিরাও জড়ো হতেন। বিলায়েতে অর্থাত মধ্য প্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ায় বহু খাওয়াখানা ছিল। সেগুলো মার্জিত রুচির এবং কমনীয়। অভিজাতরাও আড্ডা দিতেন। উচ্চভাবনার মানুষ, সুমিষ্ঠ বক্তা, কবি এবং গায়কেরা সেসব আড্ডাখানার শান ছিলেন।
শাহজাহানাবাদে এবং চাঁদনিচকে বেশ কয়েকটা দোকান ছিল। চাঁদনিচকের আড্ডাখানায় মহার্ঘ কফি অবলম্বনে অভিজাতরা কাব্যের মত করে সুরেলা ভাষায় আড্ডা দিতেন। মধ্যবিত্তরাও সেখানে যেত কিন্তু বেশিদিন টিকতে পারত না। অনেকেই অর্থ সাশ্রয় করতে বাজারে তৈরি কফি কিনে খেত। মিতব্যয়ীরা বাড়িতে ভৃত্যর বানানো কফি সঙ্গে করে নিয়ে যেত।

আকবরের খাদ্য রাজনীতি৩ আইনিআকবরি

আইনিআকবরিতে আবুলফজল যে ধণাঢ্যতার বর্ণনা দিচ্ছেন, তার প্রতিফলন পাচ্ছি এক পাদ্রির বর্ণনায়,
'সম্রাটের জন্যে তৈরি খাবার খুবই ব্যয়বহুল ছিল, অন্তত ৪০টি পদের খাদ্য রোজ সাজানো থাকত। রাজকীয় খাবার ঘরে খাবারগুলি আসত লিলেন কাপড় দিয়ে আটকিয়ে। এই বন্ধনটা হেঁসেলে নিজের ছাপ্পা দিয়ে আটকে দিতেন রাঁধুনি, যাতে রাস্তায় কেউ পাত্রে বিষ দিতে না পারে। খাওয়ার ঘরের দরজা অবদি যুবকের দল সেগুলি বয়ে নিয়ে আসত, অন্যান্যরা তাদের পাশাপাশি পাহারা দিয়ে হেঁটে আসত। এখানেই খোজাদের হাতে তুলে দেওয়া হত খাবার। সেই পাত্রগুলি সম্রাটের সামনে সাজানোর কাজ করত মেয়েরা। তিনি একা একাই খেতেন। তবে মাঝে মাঝে জনভোজসভাতেও তাঁকে যোগ দিতে হত। রেশমের চাদরে জড়ানো কুশনে মোড়া বিদেশি লতাপাতায় সাজানো হেলানো পালঙ্কে বসতেন।'
পাদশার মহিমা তৈরি করা ছাড়াও এই বর্ণনাটির আকর্ষণীয় দিক হল বিপুল বিশাল ঐশ্বর্যের মধ্যে একা বসে খাওয়ার চিত্রটি। গুরুত্বপূর্ণ হল মহিলাদের ভূমিকা - তারা কিন্তু সম্রাটের সঙ্গী হয় না। হুমায়ুনের সময় দেখেছি মহিলারা পাদসার সঙ্গে খাবারের অংশিদার হচ্ছেন। এখানে মহিলাদের কাজ হল শুধুই পরিবেশন করা এবং পরিবেশ উজ্জল করা। হারেমের খাবারের আলাদা ব্যবস্থাপনা ততদিনে তৈরি হয়ে গিয়েছে।
আবুল ফজল লিখছেন 'মহামহিম হিংসায় বিশ্বাস করতেন না, হিংসায় আহত হতেন। তিনি প্রজাদের জীবন দিতে ভালবাসতেন - জীবন নিতেন না। তিনি মাসের পর মাস মাংস থেকে দূরে থাকতেন (অজ ঘিজা-ই গোস্ত ফারেজ আওয়ারদ) এবং তিনি ভাবতেনই না। ঐহিক বিষয় নিয়ে তাঁর কোনও উতসাহই ছিল না। চব্বিশ ঘন্টায় মাত্র একবার খেতেন। কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাইতেন। সন্ধ্যেয় কিছুটা অবসর নিতেন আর কিছুটা সকালে। রাতে যেন তিনি হাঁটতেন।'
আবুল ফজল বলছেন, সম্রাট যদিও খুবই কম খেতেন, কিন্তু খাদ্যের ঐশ্বর্য, বৈচিত্র বজায় রাখার নির্দেশ দিতেন। তিনি মাংস খেতেন না, বা জীব হত্যাকে ঘৃণা করতেন, কিন্তু বিপুল মুঘল সাহিত্যে শিকারের প্রভূত আয়োজন দেখি। যদিও ঐতিহাসেকেরা বলছেন শিকারের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্রশস্ত্রের পরীক্ষা করা, শক্তি দেখানো, কিন্তু সেখানে জীব হত্যা হত।

আকবরের খাদ্য রাজনীতি২ আইনিআকবরি

আবুলফজল আইনইআকবরিতে সাম্রাজ্যের খাদ্য তত্ত্ব বিষয়ে বিতর্ক তৈরি করছেন নানান সূত্র অবলম্বনে - প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্যের ক্ষমতা এবং অবস্থান বয়ান। সাম্রাজ্যের হেঁসেল তত্ত্ব উপস্থপন করতে গিয়ে তিনি লেখেন আইনিমতবাখ(āʾīn-i mat̤baḵẖ)। পাদশাহের জীবনে খাদ্যের ভূমিকা বিষয়ে তিনি বললেন,
'মহামহিমের কারুণিক দৃষ্টি হেঁসেলেও পতিত হয়েছিল এবং সেই বিষয়ে তাঁর প্রাজ্ঞ নির্দেশনাও ামাদের পাথেয় হয়। তিনি জানতেন শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে (ইতিদালিমিজাজ), শরীরের ক্ষমতা(তাওয়ানায়ি তন) তৈরি করতে, শরীরের ভেতরের এবং বাইরের মাধুর্য, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে বজায় রাখতে, সঠিক(মুনাসিব) খাদ্য গ্রহণ জরুরি। খাদ্য গ্রহণের জ্ঞান মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়। মহামহিমের উচ্চমানসিকতা, অনুগ্রহের মনোভাব, বিশ্বজনীন ক্ষমারভাব ছিল বলেই তিনি ঘুম এবং খাদ্যগ্রহণ প্রায় ত্যাগ করেছিলেন। মানব সমাজের ঐহিক এবং পারমার্থিক নেতৃত্বের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বলেই কোনও দিন আজকে কী রান্না হয়েছে বাক্যটা শোনা যায় নি। ২৪ ঘন্টায় মহামহিম একবার খাদ্য গ্রহণ করেন, এবং মানসিক পরিতৃপ্তি পাওয়ার আগেই খাওয়া বন্ধ করেন। তার খাওয়ার গ্রহণের নির্দিষ্ট সময় ছিল না, যদিও ভৃত্যরা সব সময় তৈরি থাকত, তার নির্দেশ পাওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে যাতে খাবার পরিবেশন করা যায়।'
রান্নাঘর নিয়ে পাদশার উৎসাহ সম্বন্ধে আবুলফজল লিখছেন '
প্রায় সব দেশের রাঁধুনি(পাজান্দাগানি হর কিশ্বর) নানান ধরণের, বিভিন্ন রঙের দাদা শস্য, তরিতরকারি, মাংস, তেল, মিষ্টি এবং শাকপাতা দিয়ে খাবার তৈরি করত। ভোজসভায় অভিজাতরা(বুজুর্গাঁ) যাতে এটা আন ওটা আন বলতে না পারেন, সে জন্যে মহামহিমের নির্দেশে সব ধরণের খাবার রোজ তৈরি করা হত... '
ওপরের দীর্ঘ উক্তি থেকে পরিষ্কার পাদশার হেঁসেল নিয়ে উৎসাহের ধরণটি। মাথায় রাখতে হবে এি বর্ণনা আকবরের খাদ্যোল্লাস নয়, বরং খাদ্য কীভাবে মানুষকে পুষ্টি আহরণ করিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে তার মুখড়া তৈরি করার বয়ান। অথচ তার নিজের খাদ্য গ্রহন বিষয়ে আকবর পাদশা কতটা উদাসীন। নিজে খুবই কম খেলেও তাঁর নির্দেশ ছিল, every day such dishes are prepared as the notables can scarcely command at their feasts।
অন্যভাষায় বলতে গেলে পাদশা ভোজসভাকে তার খাদ্য গ্রহণের জন্যে যত না ব্যবহার করতেন, তার থেকে বেশি ব্যবহার করতেন খাদ্য রাজনীতির জন্যে, তার ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যে - যাতে কেউ না বলতে পারে এটা লাও ওটা লাও।
পরের অংশে আমরা অন্য বর্ণনায় ঢুকব।

আকবরের খাদ্য রাজনীতি১ আইনিআকবরি

ভূমিকা
বাবর দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট অঞ্চলে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হলেও, সাম্রাজ্যের ভৌগোলিক বিস্তৃতি, তাত্ত্বিক ভিত তৈরি করেন আকবর বাদশা। মাথায় রাখবেন আকবরের তাত্ত্বিক, ডান হাত, আমলাদের মধ্যে অগ্রগণ্য আবুল ফজল নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই ইতিহাসপঞ্জী আকবরনামা লিখেছেন। আকবরনামার পঞ্চম অংশ আইনিআকবরি শুধুই তত্ত্বের কচকচি নয়, আইন...এর পাঁচ খণ্ডের পঞ্চম অংশটা ব্যবহার করা হল রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক অবস্থান গড়ে তুলতে। সাম্রাজ্যের ভিত্তি হিসেবে আবুল ফজল আকবরকে অভিহিত করেন আন্দলুসিয় সুফি দার্শনিক ইবন অল আরবির (১১৬৫-১২৪০) তত্ত্ব অনুসরণ করে পরম মানুষ বা ইনিসানিকামিল; এই ইনিসানিকামিলের হাত ধরেই তৈরি হবে মুঘল সাম্রাজ্য।
আবুল ফজল আইনিআকবরিকে ব্যবহার করেন আগামী দিনের আমলা-অভিজাতদের তাত্ত্বিক হ্যান্ডবুক হিসেবে। পাদশার রাজত্বে অঙ্কন, স্থাপত্য, বাড়িঘর সজ্জা, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, কৃষি, রাজস্ব, কারখানা, আস্তাবল, মুদ্রা বিনোদন ইত্যাদির গাইডবুকিয় ভিত্তিভূমি তৈরি করেন।প্রথম বইটা সাম্রাজ্যের ঘরবাড়ি, পরেরটি সেনা বাহিনী, তৃতীয়তে প্রশাসন, চতুর্থতে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজা হিন্দুদের বিশ্বাস, পঞ্চমটি আকবরের রূপরসগন্ধ বর্ণনা এবং শেষ হয়েছে আবুলফজলের মন্তব্যে।
স্টিফেন ব্লেক শাহজাহানাবাদ - দ্য সভরেন সিটি ইন মুঘল ইন্ডিয়া বইতে বলছেন, আইনিআকবরির উদ্দেশ্য পাদশা আকবরের ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং প্রতিভা নির্ভর করে মুঘল সাম্রাজ্য তত্ত্ব তৈরি করা। ব্লেক সাম্রাজ্যকে বলছেন পিতৃতান্ত্রিক-আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আইনের প্রথম খণ্ডে সাম্রাজ্য চালনায় হারেম, জামাকাপড় এবং রান্নাঘর গঠনের বিস্তৃত বর্ণনা আছে - আছে আস্তাবল তৈরি, স্থাপত্যের তত্ত্ব, টাঁকশালের কাঠামো, রাষ্ট্রীয় অস্ত্রাগার এবং খাজাঞ্চিখানার গঠন নির্দেশ।
মুঘল সাম্রাজ্যের ব্যক্তিগত পরিসর আর গণ-রাজনৈতিক পরিসরের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না - গণকে ধরা হত গৃহস্থালির বিস্তৃত রূপ - সেই জন্যে মুঘল গৃহস্থালি হয়ে ওঠে সাম্রাজ্যের দর্শনীয় অংশ। ফলে রান্নাঘরে
সাম্রাজ্যের সদস্যদের জন্যে খাওয়ার তৈরিও রাষ্ট্র গঠনের অংশ হয়ে ওঠে। আবুল ফজল একটা গোটা অধ্যায় রান্নাঘর বর্ণনায় ব্যয় করেন। আইনে জুড়ে যায় পানীয় দপ্তর বা আবদার খানা, যেখানে বাজারের নানান ফল ইত্যাদির দামও উল্লিখিত হয়। এইভাবে সাম্রাজ্য তার হাত ছড়িয়ে দেয় বাজারের পানে।
(চলবে)

নুরজাহানের থালা

থালাটিকে ঘিরে পদ্মের আঙ্গিকের সোনার তারে চুনি, পান্না এবং সবুজ কাঁচ বসানো লতাপাতার আলপনা।
ছবি সথবিজ

নূর জাহানের সোনার চামচ

৫০০ বছর আগে মাণ্ডুর সুলতান ঘিয়াস শাহের সমোসা তৈরির প্রণালী



খোল তৈরির মশলা
১.৫ কাপ ময়দা
৪ বড় চামচ চৌকো ঠান্ডা মাখন
আধ চামচ নুন
১ চামচ চিনি
১ চুটকি হিং
১ চামচ জিরে
১/৪ চামচ মেথি
১ চামচ ধনে
১টি বড় পেঁয়াজ, কুচো করে কাটা
মাংসের মশলা
১/২ কিলো ভেড়ার কাঁধের মাংসের কিমা হলুদ, ১ চামচ আদা শুকনো, /৪ চামচ গোলমরিচ, গুঁড়ো, ১/৪ চামচ নুন, ১ চামচ গলানো ঘি দিয়ে মাখা
পদ্ধতি
পাহাড়ি ভেডা/হরিণের কাঁধের মাংস কিমা করে হলুদ, জিরে, হিং, ধনে, মেথি, এলাচ, লবঙ্গ মাখাও
সুন্দর মিষ্টি গন্ধ এবং হিং যুক্ত ঘিতে [আগুণে বসাবার পরে গরম হয়ে যাওয়ার পরে], মাংস দিয়ে ভাল করে রান্না কর
লেবুর রস এবং গোলমরচ দাও, পোয়া সের শুকনো আদা এবং এক সের কুচোনো পেঁয়াজ দিয়ে নাড়িয়েচাড়িয়ে নামিয়ে দাও
এবারে এক রতি করে কর্পূর এবং কস্তুরি দাও
কিছু বড় কিছু ছোট সমোসার আকারে খোল করে তাতে মাংসের পুর দাও
এবারে এই ছোট বড় সমোসাগুলি সুন্দর গন্ধযুক্ত ঘিতে ভাজ
সাজানোর সময় এতে সিরকা[ভিনিগার] এবং লেবুর জল দাও
পরিবেশন কর আর খাও

৫০০ বছর আগে ঘিয়াস শাহের পলান্ন এবং জাফরান মাংস



পলান্ন[Pilaf] এবং জাফরান মাংস
তোমার লাগবে
১ চামচ ঘি
১ চুটকি জাফরানের টুকরো
১ চামচ এলাচ
১ কাপ জল
১ কাপ নারকেল দুধ
১ কাপ লাল লম্বা চাল[ব্রাউন রাইস]
১/২ চামচ নুন
৩ ফোটা গোলাপ জল
১ চামচ কোরানো নারকেল
পদ্ধতি
মাংস ধুয়ে নাও
রান্নার পাত্রে মিষ্টি গন্ধ যুক্ত ঘি দাও, ঘি গরম হলে তাতে আন্দাজমত জাফরান, গোলাপ জল, কর্পুর মেশাও। এই মিশ্রণটি মাংসে ঢেলে দাও। মাংসে এগুলি মিশে গেলে কিছুটা জল দিয়ে রেখে দাও। এলাচ, লবঙ্গ, ধনিয়া, মৌরি, দারুচিনি, কাসিয়া, জিরা এবং মেথি থেঁতলে একটি মসলিন কাপড়ে মুড়ে মাংসের সঙ্গে রেখে দাও। এবারে আগুণ দাও।
কাজুবাদাম, পাইনের শাঁস, পেস্তাবাদাম, এবং কিসমিস তেঁতুলের জলে গরম করে মাংসে মেশাও।
মাংস রান্না হয়ে গেলে গোলাপ জল, কর্পুর, কস্তুরি আর অম্বরমিশয়ে পরিবেশন কর।
---
একই পদ্ধতিতে তিতির, কোয়েল, মোরগা এবং কবুতর রান্না কর।
---
মন্তব্য
আজ যেভাবে আমরা পোলাও বা পলান্ন খাই, তার থেকে এটা কিছুটা আলাদা। মাংসের সঙ্গে চাল মেশাবার কথা বলা নেই কিন্তু। চালটাও কিন্তু সাদা লম্বা দানার চাল নয়। লাল চাল। গন্ধযুক্ত চাল নয়।
দুধ বা নারকেল উপকরণ হিসেবে দেওয়া হলেও পদ্ধতিতে সেটা কীভাবে যুক্ত হবে সেটা বলা নেই। আমার ধারণা চালটা আলাদা রান্না হত নারকেল কুচো আর নারকেল দুধে।

৫ শতাব্দ আগে ঘিয়াস শাহের মুর্গা কাবাব

মুরগা কাবাব
১ কিলো মুরগা ঠ্যাং, কিমাকার
১/২ চামচ নুন
১ চামচ তুলসি(বাসিল) কুচোনো
১ চামচ পুদিনা কুচোনো
১ চামচ পার্সলে, কুচনো
১ চামচ লেবুর রস
১ চামচ সূর্যমুখী তেল
১ চামচ ধনেপাতা(cilantro leaves)
যেখানে আগুন সহজলভ্য, সেসব অঞ্চলে শিকারকরা পাখি বা ভেড়ার মাংস দিয়ে শিকে ভরা মাংস রান্না করার আরেকটি পদ্ধতি
মাংস পরিষ্কার জলে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে সেদ্ধ করে নাও
নুন, হিং এবং বিভিন্ন কুচোনো পাতা(পট হার্ব) সেদ্ধ করে নাও,
নুন, লেবুর জল দাও দাও সব কিছু একসঙ্গে মেখে দড়ি দিয়ে বেঁধে অনেকক্ষণ রেখে দাও।
এর পরে শিকে গেঁথে ঝলসে নাও।

আওরঙ্গজেবের সময় খিচুড়ি রান্না প্রক্রিয়া

তেলে রসুন ভাজতে থাক, তাতে গোল গোল করে কাটা পেঁয়াজ দিতে থাক, দারচিনি এবং অন্যান্য মশলা দাও এবং ভাজতে থাক। এবারে জিরে দাও এবং আঁচ থেকে নামিয়ে নাও।
এবারে মুগডাল তেলে ভাজ। ভাজা শেষ হলে ঘিটা ঝরিয়ে নাও।
ডালে চাল দাও। ভাল করে মেশাও।
আগে যে মশলাটা বানিয়ে রেখেছিলে চাল ডালের মিশ্রণের সঙ্গেও মেশাও।
এবারে আদা এবং গরম জল দাও।
ওপরে হাত খুলে ঘি ছড়িয়ে দাও।
কম আঁচে রান্না করতে থাক।

মুঘল সময়ের খাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে কিছু তথ্য

দিল্লির নাম যখন শাহজাহানাবাদ ছিল, সে সময় শহরে প্রচুর কফি হাউস ছিল, লেখক, চিত্রকর, অভিজাতরা সেখানে এসে কবিতা, রাজনীতি আলোচনা করতেন
ব্রিটিশেরা যেহেতু খাওয়ার আগে বা পরেও হাত ধুতেন না, তাই শাহজাহান ব্রিটিশ দূতদের সঙ্গে এক টেবলে বসে খান নি। ব্রিটিশরা যেহেতু খাওয়ার সময় জল খেতেন, আর হাগুর পরে যেহেতু ছুঁচোতেন না, কাগজ ব্যবহার করতেন, সেটাও শাহজাহানের না পসন্দ ছিল।
শাহি খাওয়া শুরু হত বিসমিল্লাইরহমানইরহিম আবৃত্তি করে; শেষ হত সর্বশক্তিমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে। জেনানা মহলে অনেকেই একত্রে খেতেন; কিন্তু বহু রাজ্ঞী এবং অভিজাত তাদের নিজেদের মহলেই খাওয়ার সারতেন।
সম্রাট কোনও কোনও দিন সব রাজ্ঞী নিয়ে একযোগে খাবার সারতেন। সেদিন হত উৎসবের রাত।
দরবারের বাইরে তাঁবু খাঁটানো হলে সম্রাটের তাঁবুর আশেপাশেই(নজদিকই দৌলতখানা-ইয়ি ওয়ালা) বিধিবদ্ধ সরাইখানা তৈরি করা হত। সারাদিন পরিশ্রম করা যে কোনও মানুষ তাঁবু ক্ষেত্রে ঢুকে সরাই খানায় থাকত anyone who reached the exalted camp at night after a long day’s journey and could not find the accommodations of someone familiar to him …make any necessary inquiries so that he could eventually locate his destination। এই অস্থায়ী বসস্থানগুলি তৈরি হত বিশাল একটা মশাল/ফানুসের নিচে যার নাম আকাশদীপ, যাকে চন্দর ভান বলছেন চিরাগ-ইআসমান। ভাবনাটা ছিল এমনই মুঘল বাহিনীর পাশ দিয়ে যাওয়া কোনও অপরিচিত যার কোনও থাকার যায়গা নেই অথচ রাত্রিবাস প্রয়োজন, তাকেও সেবা করত বাহিনী।

সারনামেইহুমায়ুন থেকে অটোমান পারস্যে উৎসবে বিভিন্ন কারিগর সংঘের মিছিলে অংশ গ্রহনের ছবি

 কফি হাউসের কারিগরেরা মিছিলে অংশ নিত। তারা তাদের দোকানের মডেল নিয়ে হাঁটত। তামা কারিগর, স্বর্ণকার, দর্জিরা থাকত। কারিগর প্রধানেরা সামনে থাকতেন। বিভিন্ন মডেল নিয়ে হাঁটত কারিগরেরা। কারিগরদের সঙ্গে হাঁটত সোনা রূপা ইত্যাদি পরিধান করে শয়ে শয়ে শিক্ষানিবিশীরা।

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - বিশ্বকে এশিয়ার/ইসলাম বিশ্বের দান - কফি হাউস

'alcohol got people drunk
Coffee made people think'
ফলে প্রাচীন তুর্কিতে কফি পানে কঠোর শাস্তি দেওয়া হত; ব্রিটেনে দ্বিতীয় চার্লস কফি হাউসগুলো বন্ধ করে দেন।
প্রথম কফি হাউস শুরু হয় কনস্টান্টিনোপলে খিভা হান নামে ১৪৭৫এ। তুর্কি আইন অনুযায়ী মহিলারা দৈনন্দিনের বরাদ্দ কফি না পেলে পুরুষটির বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করতে পারত। এর পর থেকে আরব বিশ্বে কফি সেবন বিদ্যুতের মত ছড়িয়ে পড়তে থাকে; আরব বিশ্বের দেখাদেখি কফি ইওরোপেও বিপুল বিশাল স্থান করে নেয়।




দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কফি আসে ১৬০০য় সুফিসন্ত বাবা বুদানের হাত ধরে। মক্কা তীর্থ করে ফেরার পথে তিনি মোকা বন্দর থেকে লুকিয়ে কফি আনেন দক্ষিণ ভারতের চিকমাগালুরে। লেখক আর কে নায়ায়ণ অসামান্য মন্তব্য করেছেন ভারতে কফির শুরুয়াত হয়েছে সন্তের হাত ধরে, সাম্রাজ্য বদৌলত নয় - তিনি জানতেন কফির উপকারিতা।





লন্ডনে ১৬৫০এর দশকে প্রথম কফিহাউসের জন্ম হয়। এডওয়ার্ড লয়েডের ১৬৯০তে এবচার্চ লেনের কফি হাউসে বিপুল ভিড় হতে থাকে।
 





ইসলাম অঞ্চল থেকে আসার জন্যে ইতালিতে তৃতীয় পোপ ভিনসেন্ট কফিকে শয়তানের পানীয় নাম দেন। কিন্তু তিনি কফিতে এতই আসক্ত হয়ে পড়েন যে শেষ অবদি তিনি এটিকে ব্যাপটাইজড করে নেন।
রোমে কফি গ্রেকো(কফি হাউস)তে বুদ্ধিজীবিদের আড্ডা বসত।




দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন কফি হাউস কলকাতায়। কলকাতায় আরও দুটি আছে যাদবপুরে এবং চাঁদনিচক এলাকায়, কিন্তু আড্ডাবাজদের জন্যে কলেজ স্ট্রিটেরটাই সর্বাধিক অগ্রাধিকার পায়। আমি দিল্লি আর ব্যাঙ্গালোরেও কফি হাউসে গিয়েছি, কলকাতার তিনটির তুলনায় বেশ ফিকে।

আকবরের খাদ্যাভ্যাস এবং অন্যান্য



খাবার নিয়ে বাবরের কোনও ঝামেলা ছিল না। কিন্তু হুমায়ুন খাবারের সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক স্থাপন শুরু করেছিলেন, কিন্তু আকবর প্রথম খাবারের সঙ্গে আভিজাত্য, সম্মান বোধ ইত্যাদি যোগ করেন।
আকবরকে খাবার সাজিয়ে দিত খোজারা ঠিকই কিন্তু খাদ্য তৈরির শৃঙ্খলায় বহু মানুষ জুড়েছিলেন। পশু পালক থেকে রাজকীয় হাকিম অবদি সক্কলে। হাকিম দৈনন্দিনের খাবারের পরিকল্পনা করতেন যাতে সম্রাট এবং অভিজাতদের সঠিক পুষ্টি ইত্যাদি খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে যায়। বিরিয়ানির প্রতিটি দানা রূপোর তেলে(সেটা কী) ভেজানো থাকত যা কামোদ্দীপনার কাজ করত। কিন্তু যে খাবারটি তৈরি হত মাঠে বা খামারে তাকে লালনপালন করাও একটা বড় কাজ ছিল। কলিন টাইলর সেন বলছেন রাজকীয় মুরগিগুলিকে গোলাপ জলে জাফরান মিশিয়ে খাওয়ানো হত এবং কস্তুরি আর চন্দন তেল দিয়ে ডলাইমালাই করা হত রোজ। আকবরের রান্না ঘরে বা আবদার খানায় ছিলেন প্রধান বাবর্চি, মুন্সি, একজন খানইখানান বা স্টোর কিপার, টেস্টার, করণিক বাহিনী এবং ভারত আর পারস্য থেকে আসা রাঁধুনি সহ সহ ৪০০ জনের বাহিনী। খাদ্য সোনা রূপো পাথর এবং মাটির বাসনে সাজানো হত। ঢাকা থাকত কাপড় দিয়ে। পাহাড় থেকে আনা হত জল ঠাণ্ডা করার বরফ এবং সেটি দিয়ে নানান মিষ্টান্ন তৈরি হত।
আকবর তিনদিন নিরামিশ খেতেন। শুধুই পান করতেন গঙ্গাজল। বাগানের গোলাপের জল করে তরকারিতে দেওয়া হত। কিছু কিছু খাদ্য প্রয়োজনের জন্যে তৈরি করা হত যেমন সানিবুশা বা সমোসা অথবা ঘি আদা এলাচ, মেথি এবং লবঙ্গ দিয়ে রান্না করা পালং শাক, হারিসা - ভাঙা গম গজি আর দারুচিনি দিয়ে মাংস, হালিম - তরকারিওয়ালা মাংস, ইয়াখনি বা মাংসের শুরুয়া, বা গোটা ঝলসানো ভেড়া।
আগেই বলেছি খাবারের সময় দীর্ঘ এটিকেট পালন করা হত। বাবর একবার কাশি রুখতে গিয়ে প্রায় মারাই যাচ্ছিলেন। অনেকেই বলেছেন সম্রাটের সঙ্গে খাওয়ার খুবই ঝকমারি ছিল। কিন্তু সেই অভ্যেসগুলো ক্রমশ অভিজাতদের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।
পাতে খাওয়ার দেওয়ার একটা বিশদ ব্যবস্থা ছিল। রান্না হওয়ার সময় মূল রাঁধুনি এবং বাকওয়াল প্রথম খাওয়ারের স্বাদ নিতেন। তারপরে স্বাদ নিতেন মীরবাকওয়াল। তার পাঞ্জার ছাপ পাওয়ার পরেই কোন কোন বাসনে খাওয়ার সম্রাট সকাশে যাচ্ছে তার একটা হিসেব রাখা হত - যাতে রান্না ঘর থেকে খাওয়ার ঘরে যাওয়ার পথে কোনও বাসন পরিবর্তিত না হয়। এই খাদ্যগুলি প্রহরী দিয়ে বহন করে নিয়ে যাওয়া হত। কার্পেটের ওপরে একটা কাপড় পেতে সেগুলো সাহিয়ে রাখা হত। রুটি, আচার এবং অন্যান্য মশলা ইত্যাদিও সেলাই করা থলেতে দেওয়া হত। সিলগুলি খোলার পরে নতুন করে মীরবাকাওয়াল আবার সেগুলি স্বাদ নিতেন। তারপরে সম্রাটের খাওয়া শুরু হত।
এখন এই অবদি থাক, ভবিষ্যতে বাকিটা হবে
সূত্র - আইনি আকবরির পাঁচটি খণ্ড, কলিন টেলর সেনের কারি আর গ্লোবাল হিস্ট্রি, লেজলি কলিংহ্যামের কারি আ টেল অব কুকস এন্ড কনকারারস। সালমা হুসেন দ্য এম্পারার টেবল, আর্ট অব মুঘল কুইজিন

প্রসঙ্গ গেঁদা ফুল

ভদ্রবিত্তের দায় নবজাগরণের ইকোসিস্টেমে
বা ভারতীয়ত্বের ঐক্য-বাক্য জাত মাণিক্যে
শুধু হিন্দি সাম্রাজ্যবাদকে দোষ চাপিয়েই কী পার পাবে বাংলাবাদীরা? বাম গণসঙ্গীত লেখক, সুরকার সলিল চৌধুরী যে সব অশহুরে সুর নিয়েছেন তাঁর কোনও আঙ্গিক লেখেন নি, তিনি প্রচলিত লিখেছেন, দায় স্বীকার করেন নি - এবং এই সুরের আত্মীকরণের(ঝেড়ে দেওয়া আর বললাম না কারণ তাদের অনেকেই আমার ছোটবেলার আইডল) প্রবণতা বহুকাল ধরে চলেছে, আজও চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে।
বাংলায় বাংলার বাইরে থাকা যে সব বাঙালি, দল এবং ব্যক্তি ফোক গেয়ে, ফোক লিখে, ফোকের সুর বনিয়ে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করেন, তাদের সেই পঞ্চাশ বছর আগেও অশহুরে কৃষ্টির প্রতি কোনও দায় ছিল না আজও কোনও দায়িত্ব নেই।তাদের দায় নবজাগরণের ইকোসিস্টেমে আর ভারতীয়ত্বের ঐক্য বাক্য জাত মাণিক্যে। মেকলে এবং বেকনিয় তত্ত্বে জারিত নবজাগরিত বাঙ্গালির বেড়ে ওঠাতেই সমস্যা, শুধু হিন্দি সাম্রাজ্যবাদকে দুষে কী হবে?
ইওরোপের তৈরি সমগ্র ফোকতন্ত্র ঔপনিবেশিক সমাজবিদ আর নৃতাত্ত্বিকদের জাতিবাদী অবদান, ধ্রুপদীত্বের বাইরে ছোট ছোট মানুষ, লিটল কালচার নিয়ে নিজেদের পিঠ চাপড়ানো। ব্রেখট থেকে হালের ইওরো-আমেরিকিয় তাত্ত্বিকেরা সক্কলে ফোকিয়,আদার তত্ত্বে মশগুল।
এতে বাংলার গ্রাম সমাজের কোনও কিছুই যায় আসে না। গ্রামীনেরা যেমন ছিল ৫০ বছর আগে আজও তেমন আছে।
আন্তর্জাতিক ফোক ব্যবসার পতন হোক।
নবজাগরিত ফোকিয় বাঙ্গালির পতন হোক।

গ্রামীনেরা এক আছে বলাতে বন্ধুদের গোঁসা হয়েছে

আমরা পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম গ্রামীনেরা একই নেই?
২৫০ বছর ধরে নবজাগরণীয়রা তাদের অশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলেছে, তাদের কৃষ্টিকে যা ইচ্ছে তাই ভাবে ব্যবহার করে ধনী মানী হয়েছে। এর বদলে তারা কী শহুরেদের থেকে রয়্যালটি দাবি করেছে? অথবা তারা কি জানতে চেয়েছে তোমরা কেন আমাদের একতরফা অশিক্ষিত বলছ? একবারও আমাদের সাথে আলোচনা করেছ? নাহ, নবজাগরণীয়রা করে নি তো! সেদিনও নবজাগরনীয় শিক্ষিতরা তাদের সম্পদ চুরি লুঠ করেছিল, আজও তারাই সেগুলো চুরি লুঠ করে চলেছে। তার বাজার লুঠ হচ্ছে, তার জীবিকা লুঠ হচ্ছে। নেহেরুর আমল থেকে মোদির আমল অবদি বলপ্রয়োগ করে বাসস্থান দখল করা হয়েছে, তারা কী পাল্টা দিয়েছে? নাহ দেয় নি। শহুরেদের প্রতি গ্রামীনেরা কখনো বিদ্বেষ দেখিয়েছে? উলটে দিন যত যাচ্ছে শহুরেরা গ্রামীনদের উচ্ছেদ করে চলেছে।
এরপরেও বলব গ্রামীনেরা পাল্টে গিয়েছে।
আশ্চর্য!!!

একটি পরিকল্পনা

হ্যাঁ, আরেকটু সময় যাক। বাবার স্মৃতিতে একটা বই করার ইচ্ছে আছে। বাবার প্রয়ানের পরে ভেবেছিলাম খুব তাড়াতাড়ি করব। কিন্তু ভেবে দেখলাম একটু দেরিই করি। আমার বহুকালের পরিকল্পনা ষাটের দশকে যে সব সিপিয়াই ক্যাডার কলকাতায় বা বাংলার নানান প্রান্তে ছিলেন তাদের সেই সময়ের স্মৃতি কথা সঙ্কলিত করার - সে সময় নিয়্র নেতাদের বয়ান আছে, ক্যাডারেরা বিষ্ময়করভাবে চুপ। অথচ টুকরো টুকরোভাবে যা শুনেছি সেটা দিয়ে সে সময়ের একটা জনইতিহাস দাঁড় করানো যায়। বাবা বা মা ষাটের দশকে কলকাতায় কাটিয়েছেন, সে সময় নিয়ে দুজনকে লিখতে বলে বলে পারি নি, বাবা চলে গেছেন, মা আছেন। এরকম বহু ৭০ ঊর্ধ্ব মানুষ আছেন, যাদের স্মৃতি একসঙ্গে জড়ো করা দরকার। এটা যৌথভাবে করা দরকার ২০ বছর সময় ধরে ৬২/৬৩র প্রথম ভাঙ্গন থেকে ৮৩/৮৪ শেষ ভাঙ্গন

Apurba Muktikami বিশ্বেন্দু নন্দ, বিপ্লব মাজী বিমলা-অনন্ত মাজী‌কে নি‌য়ে তেভাগার যে কাজটা ক‌রে‌ছেন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, আপ‌নি এর'ম কোন উ‌দ্যোগ নি‌লে খুব ভা‌লো হ‌বে। এ সংক্রান্ত কা‌জে এই অধম কোন প্রয়োজ‌নে লাগ‌তে পার‌লে নি‌র্দ্বিধায় জানা‌বেন।

বিশ্বেন্দু নন্দ কৃতজ্ঞতা জানাই Apurba
গতকালই Rajasriর সঙ্গে, অজয়-রাণী দাশগুপ্ত, জগদীশ দাশগুপ্ত, সতীন চক্রবর্তীর কথা হচ্ছিল। এই আমি বহুকাল এই পথ থেকে সরে এসেছি, কিন্তু আমার বেড়ে ওঠার সময়টা গড়ে দিয়েছিলেন এই সব মানুষেরা এবং আর প্রচুর নাম না জানা মানুষ, যাঁরা আজ নেই। তাই
 লিখে, কর্মীদের স্মৃতিকথা প্রকাশ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ছাড়া অন্য কোনও পথ জানা নেই।
হকার সংঘের Saktimanদা আছেন, যাঁর অসামান্য স্মৃতি অবলম্বন করে বার বার ঐ সময়ে ফেরত যাই। কংগ্রেসে কিছু বাম মনোভাবাপন্ন নেতা/কর্মী আছেন যারা এই কাজে সহায়ক হতে পারেন, বাবার সঙ্গে খুবই ভাল যোগাযোগ ছিল সৌগত রায়ের - উনি আজ ধরাছোঁয়ার বাইরে। সতীন চক্রবর্তীর তিন খণ্ডের লেখা সমগ্র প্রকাশের সময় কাজ করেছিলাম। সন্তোষ ভট্টাচার্য আমায় অত্যধিক স্নেহ করতেন। সেদিন দিলীপ সিনহার সঙ্গে কথা হচ্ছিল এসব বিষয়ে। আছেন Sankarদা। Sujitদা, উজ্জ্বলদা, মৃদুলদা, বাবার বন্ধু প্রয়াত সংকর্ষণ রায়চৌধুরীর পুত্র ন্যাংটো কালের বন্ধু নিখিলেশ, স্ত্রী দীপা জেঠিমা, সুদীপ রায়ের স্ত্রী আইভি কাকিমা, মারা গেলেন পুলক সেনরায় ইত্যাদি। অনেকেই আছেন যারা সে সময় খুবই সক্রিয় ছিলেন।
আমরা যারা এদের উত্তরপ্রজন্ম, যারা সে সময়টা দেখেছি, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাসে এদের স্মৃতি কথা নেই, সেই শূন্যস্থানটা পূরণ করে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ একান্ত জরুরি।
আমি থাইরয়েডে ভুগি। অনেকের নাম ভুলেছি। এই কাজটা একযোগে করতে পারলে ভাল লাগবে।


Apurba Muktikami বিশ্বেন্দু নন্দ, সতীন চক্রবর্তী তো ছ‌য়ের দশ‌কে কং‌গ্রে‌সে গি‌য়ে‌ছি‌লেন, ওনার রচনাসংগ্রহ বে‌রি‌য়ে‌ছে না‌কি?

Apurba Muktikami আ‌মি Soumyabrata Guhathakurtaকে ট্যাগ করলুম, সৌম্যদার বাবা বেণু গুহঠাকুরতা সি‌পিআই হ‌য়ে ইউসি‌পিআই‌তে ছি‌লেন।

ওনাকে আমি খুব চিনতাম। আমি এবং নিখিলেশ যখন সপ্তাহে নয়ের দশকের প্রথম পাদে কাজ করতাম, তখন উনি আসতেন নিয়মিত এবং ্সোভিয়েতের পতন বিষয়ে ওনার একটা বইও ছিল যতদূরসম্ভব মনে পড়ছে। উনি আমায় খুবই স্নেহ করতেন।

সতীনবাবু সাতের দশকের প্রথম দিকে সিপিয়াই-কং জোটের পক্ষে প্রিয়-সোমেন-সৌগতদের মেন্টর ছিলেন। হ্যাঁ আমার বাবা এবং অনার পুত্র সৌম্যদা, জার্মানিতে ছিলেন, এখন যতদূরসম্ভব শান্তিনিকেতনে পড়ান, উদ্যোগে তিন খণ্ডে খেপে খেপে বই বার হয়। কোনও খণ্ডই আমার কাছে নেই, সৌম্যদার কাছে খোঁজ করে দেখতে হবে।

দিলীপ মুখোপাধ্যায়, সন্তোষবাবুর সময় কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক ছিলেন, পরে দিলীপ সিংহের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে ছিলেন, তিনিও সতীনবাবুর প্রবন্ধ সংকলনেরএর প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন।

সৌম্য চক্রবর্তী আমে‌রিকায় ছি‌লেন, এখন গেষ্ট হিসা‌বে বিশ্বভারতী‌তেও পড়ান, ওনা‌কে জা‌নি। সতীন চক্রবর্তী, খা‌লেদ চৌধুরী, রণ‌জিৎ সিংহ‌দের লোকসংগীত সংগ্র‌হের কাজও অসাধারণ।

 সতীন চক্রবর্তীর তিন খণ্ডের লেখা তাঁর জন্মশতবর্ষের সময় কোথাও খুঁজে পাইনি। শিবনারায়ন রায় (এখন চলছে তাঁর জন্মশতবর্ষ –আনন্দবাজার/এই স্ম্য/দেশ-এ একটি শব্দ এখনও প্রকাশিত হয় নি) একটি পুস্তক সমীক্ষায় সতীনবাবুর মার্ক্স-চর্চার তারিফ করেছিলেন।

রোমাঞ্চকর সতেরটি মুহুর্ত ।। উইলিয়ান সেমিওনভ

আঠেরোটা কাহিনী। অসামান্য টানটান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকের ঘটনা। জার্মানির এসএস বাহিনীর মধ্যস্তরের এক রুশ গুপ্তচর বুঝতে পারছেন হিটলারের কয়েকজন আস্থাভাজন সেনানায়ক পশ্চিমি শক্তির সঙ্গে দরকষাকষি করতে মরিয়া। তিনি খবরটা মস্কোকে জানাতে ব্যস্ত।
তিনি জানেন না মস্কো ততদিনে জেনে গেছে হিমলার সহ কোন কোন উচ্চস্তরের সেনানায়ক যুদ্ধ শেষ করার জন্যে মরিয়া।
---
মণীষা থেকে কেনা বইটা আমি দান করেদিয়েছিলাম যতদূর সম্ভব। আমার কাছে পিডিফ নেই। কারোর কাছে থাকলে জানাবেন।

Saturday, March 28, 2020

আফটার দ্য প্রফেট - দ্য এপিক স্টোরি অব দ্য শিয়া-সুন্নি স্প্লিট ইন ইসলাম - লেসলি হ্যাজলেটন

নামেই প্রকাশ দ্য ফার্স্ট মুসলিম বইএর লেখক, লেসলি যাত্রা শুরু করেছেন নবির প্রয়ানের সময় থেকে। শেষ টেনেছেন আজকের মধ্যপ্রাচ্যের দ্বন্দ্বে সেই ইতিহাস কীভাবে ছায়া ফেলছে, তার বর্ণনায়। গল্পটা সক্কলে প্রায় জানেন, তাই ঢুকছি না। কিন্তু লেসলির অনন্যতা হল তিনি আমাদের দেখিয়ে দেন যে এই অঞ্চলের মানুষের কারবালার আবেগ বুশ, তাঁর পরামর্শদাতারা, পশ্চিমি দেশগুলো জানত বুঝত না। তারা যদি সেটা জানত, তাহলে নজফ বা কারবালার দেশে অন্তত সেনাবাহিনী পাঠানোর বেয়াকুফি করত না। অথবা শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব উস্কে পরস্পরকে লড়িয়ে এই অঞ্চলে নিজেদের স্বার্থ নিরাপদ চেষ্টা করত না। মাথায় রাখতে হবে এই কারবালা আবেগকে বুঝতে না পেরে ১৯৮০র দশকে আমেরিকা সরাসরি হাত পুড়িয়েছে। তাত্ত্বিক আলি শারিয়তিকে হত্যা করেও ইরানি বিপ্লবের দুঃস্বপ্ন থেকে সে আজও মুক্তি পায় নি। যে কারবালা আবেগকে খোমেইনি কাজে লাগিয়েছিলেন প্যারিসে থেকে, সেটা আজও মুছে যায় নি। ফলে পরমাণু অস্ত্রের স্বপ্ন দেখা ইরাণের পক্ষে বিশ্বরাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকতে এই আবেগ কাজে লাগিয়ে শাহাদতের জন্যে উতসর্গীকৃত মানুষ পাওয়া অসম্ভব হয় না।
এশিয়, সময়, জীবনচর্যা ইত্যাদি বিষয়ে কিছু ইওরোসেন্ট্রিক মন্তব্য বাদ দিলে মোটামুটি পছন্দই হল বইটা। মহিলাদের চরিত্র অসামান্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, ঝরঝরে সাংবাদিক ঋজু গদ্য অবলম্বন করে।
---
ইংরেজিতে খুব বেশি স্বচ্ছন্দ নই। বাংলা বইএর সন্ধান চাই। বাঙ্গালির দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করে লেসলির মত করে এশিয় রাজনীতি বুঝব। অনুরোধ থাকল সক্কলের কাছে।