Saturday, February 16, 2013

The Indian saltpeter trade, the military revolution and the rise of Britain as a global superpower. জেমস ডব্লিউ ফ্রে


পঞ্চম অংশ

জেমস ডব্লিউ  ফ্রে, অসকোস, উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক। তিনি বাঙলা সুবার পাটনার সোরা ব্যবসা সম্বন্ধে বিশদে ইতিহাস রচনা করেছেন. এই ইতিহাস যেমন মনোগ্রাহী, তেমনি বাঙলার ইতিহাস এবং প্রযুক্তি চর্চকদের আর শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার বিষয়. ব্রিটিশ আধিপত্য বিশ্লষণে নানান দিকগুলি এর আগে বিশদে বিশ্লেষিত হয়েছে, কিন্তু সেই আলোচনায় সোরার ভূমিকার কথা আর সেই উত্পাদনে বাঙলা সুবার পাটনার কথা খুব একটা উঠে আসে নি। বলা দরকার প্রাচীন কাল থেকেই ১৯০০ সাল পর্যন্ত পাটনা বিশ্ব সোরা বাজারে বিশাল এক ভূমিকা নিয়েছে. এই ইতিহাস আমরা বিশদে এই প্রবন্ধে কয়েকটি অংশে ভাগ করে দেখব. এবারে দ্বিতীয় অংশ. 
বিশ্বেন্দু



পাটনা সোরা ব্যবসার বিশ্বকেন্দ্র
পাটনায় সোরা ব্যবসা বুঝতে গেলে ভারতে সোরা তৈরির পদ্ধতিটি প্রথমে বোঝা দরকার পাটনা, তার আশেপাশের গঙ্গার শাখাপ্রশাখা ধরে যেসব গ্রামেগঞ্জে সোরা তৈরি হত, ব্রিটিশ নথিপত্রে সেগুলি সোরা মহল নামে খ্যাত যে সমাজ সোরা সংগ্রহ আর তৈরি করতেন তাঁদের বংশগত নাম ছিল নুনিয়া নুনিয়ারা আবার মাটির নানান কাজে নিযুক্ত সমাজের এক অংশ নুনিয়ারা সাধারণতঃ হিন্দু হতেন, তবে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাও কম ছিল না ১৬৩৮এ গুজরাট, রাজস্থানের নুনিয়াদের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে Albert von Mandelslo এর লেখা এবং আইনিআকবরির সূত্র ধরে বলা যায়, ভারতের অন্যান্য পণ্যের উত্পাদন ব্যবস্থার মতই সোরা তৈরিটিও ছিল বংশপরম্পররার ব্যবসা সারা কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া, ভারতে প্রায় একই ধরণের উত্পাদন পদ্ধতি অনুসরণ করা হত
বুদ্ধের আমলেরও আগে থেকেও ভারতে গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বিশ্বের যেকোনও দেশের তুলনায় বেশি সঙ্গে স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া, বৃষ্টির সময় গজিয়ে ওঠা প্রচুর গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ গরমের সময় পচেযাওয়ার দরুন এই এলাকার মাটি সোরা জন্মানোর আদর্শ ছিল নুনিয়ারা পশুদের মুত্র থেকে সোরা বার করত গ্রামে গঞ্জে নুনিয়াদের এধরণের মাটি সংগ্রহ কাজ ছিল কৃষকেরা দিনের এক নির্দিষ্ট সময় নিজেদের পশুগুলোকে নুনিয়াদের হাতে ছেড়ে দিত নুনিয়ারা এই গরুগুলোকে নিয়েযেত গ্রামের কোনও এক নির্দিষ্ট জমিতে(হয়ত ভাড়া করাও হতে পারে) জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তারা সেই জমিতে গোমুত্র ছড়িয়ে জমি চাষ করত অক্টোবরে বর্ষা শেষ হয়েগেলে মাটির ওপরে উঠে আসা নোনা স্তরটি চেঁছে তুলে নিত এই মাটি, নিজেদের পারিবারিক কারখানা যার দেশি নাম কোঠি, কাঠের জ্বালের উনুনে সেদ্ধ করে পটাসিয়াম আর নাইট্রেট আলাদা করত বাঁশের মাচা বানিয়ে তার উপর নুনিয়ারা নুনোমাটি জমিয়ে রাখত এই কাজটি সারা বছর ধরে করত তারা অন্যান্য ব্যবসারমতই কোঠির সমস্ত কাজ পরিবারের সদস্যরা করত পুরুষেরা মাটি সংগ্রহ করত আর স্ত্রী আর শিশুরা জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করত উনবিংশ শতকের এক ব্রিটিশ লেখক বলছেন অক্টোবর থেকে জুন, এই নয় মাসে একএকজন নুনিয়া ৬৩৪.২ থেকে ১১৫৫ কেজি পর্যন্ত সোরা তৈরি করত এর পর এটি যেত ইওরোপিয় কারখানায় সেখানে প্রসেস হওয়ার পর এই পরিমানটি কমত প্রায় ৪০-৬০ শতাংশ যা তৈরি হত, তার নাম কলমী সোরা ভিওসি ৮০-৮৫ শতাংশ শুদ্ধ সোরা রপ্তানি করে দেশে সেগুলোকে আরও শুদ্ধ করত
(ইওরোপিয়দের ক্ষমতা কেন্দ্রিক দৃষ্টিতে - বিশ্বেন্দু)নুনিয়ারা ছিল বেশ গরীব তাদের এই কাজ করতে অর্থ যোগাত অসমিয়া বণিকেরা(এর আগে নুনের ব্যবসায় দেখেছি অসমীয়া ব্যবসায়ীদের আধিপত্য - বিশ্বেন্দু) অসমিয়া বণিকেরা এই নাইট্রেট পাটনার দাদনি বণিকদের সরবরাহ করতেন আদতে দাদনি বণিকেরাই সোরা শিল্পের নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রে ছিল কুমকুম চট্টোপাধ্যায় বিশদে ১৭৩৩ থেকে ১৭৫৭ পর্যন্ত পাটনার সোরা ব্যবসার কাঠামো, ব্যবসাদার এবং নানান  মধ্যসত্ত্বভোগীদের লেখা থেকে আমরা পাই কী ভাবে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা এক্কেবারে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত শৃঙ্খল তৈরি করে তাদের ব্যবসার স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেছিল ১৭৫০এর আগে পর্যন্ত প্রাদেশিক শাসকদের প্রধান ব্যবসায়ী সরকারের অধীনে দাদানি বণিকেরা সাবকনট্রাকটর হিসেবে কাজ করত কাপড়ের ব্যবসা বেশ ছড়ানো ছাকলেও, সোরার ব্যবসা ছিল নিয়ন্ত্রিত এবং নির্দিষ্ট এলাকা ভিত্তিক নুন তৈরি করা হাতে গোণা নুনিয়া সোরা তৈরির অনুমতি পেত আদতে নুন আর সোরা তৈরির পদ্ধতি অনেকটা কাছাকাছি এবং একই ধাতে হাতেগোণা দাদনি বণিকের নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ী সোরা কেনার অনুমতি পেত
দাদনি বণিকেরা সরাসরি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সোরা ব্যবসায় যুক্ত ছিল খুব কমই দাদনি বণিক একটির বেশি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত থাকত অসমিয়াদের ১০০০টাকার দস্তখত দিতে হত এধরণের সংগঠিত বাজারে ইওরোপিয়রা ঢুকতে শুরু করে ১৬৮০ থেকে ভারতীয় বণিকেরা এক হয়ে নিজেদের স্বার্থ দেখতে শুরু করল সোরার দাম কমানোর জন্য ইওরোপিয় কেম্পানিগুলি বণিকদের একে অপরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিত মুঘল সরকার দাদনি বণিকদের পাশে দাঁড়ায়

No comments: