ছিয়াত্তরের মন্বন্তর
Still fresh in memory’s
eye the scene I view,
The shirvelled limbs, sunk
eyes, andlifted hue;
Still hear the mother’s
shrieks and infant mons।
Cries of despair
andagonizing mones,
In wild confusion dead and
dying lie;-
Hark to the jackal’s yell
and vulture’s cry,
The dogs fell howl, amidst
the glair of day
They riot unmolested on
their pray!
Dire scenes of horrir,
which no pain can trace,
Nor rolling years for
memory’s page efface। (জন শোরএর রচনা)
১৭৬৮ সনের
বঙ্গদেশে অত্যল্প শস্য উত্পন্ন হইয়াছিল। প্রজাগণ যে
করদিতে পারে এরূপ সাধ্য ছিল না। কিন্তু এ বত্সর প্রজাগণের নিকট হইতে কড়াক্রান্তি হিসাব করিয়া কর আদায় করা
হইল। কৃষকগণ আপন আপন গৃহের বীজ ধান্য পর্যন্ত বিক্রয় করিয়া কর দিতে হইল। প্রজার গৃহে
আর অধিক বীজ ধান্য রহিল না। এদিকে ইংরাজ বণিকগণ অনেক ধান্য ক্রয় করিয়া অধিকতর মূল্যে বিক্রয়ার্থ
মান্দ্রাজ প্রভৃতি প্রদেশে প্রেরণ করিতে লাগিলেন।
ইহার পর ১৭৬৯
সালে আবার অনাবৃষ্টি হইল। একদিকে কৃষকের গৃহে বীজ ধান্যের অভাব বহিয়াছে, তাহার উপর আবার অনাবৃষ্টি। সুতরাং ১৭৬৮
সাল অপেক্যাও এ বত্সর ইত্যল্প শস্য হইল। প্রায় সমুদার
ধান্য ক্ষেত্রই এক প্রকার শূণ্য হইয়া পড়িয়া রহিল। কলিকাতার
গবর্ণর দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় পূর্বেই সৈন্যদিগের নিমিত্ত যথেষ্ট চাউল ক্রয় করিয়া
রাখিলেন। সৈল্য দিগের প্রাণরক্যা হইলেই তাহাদের ন্যায় সঙ্গত বাণিজ্য চলিবে। দেশের লোকের
নিমিত্ত কে চিন্তা করে।
যে অল্প পরিমান
শস্য হইয়াছিল, তাহা বিক্রয় করিয়া প্রজাগণ স্বীয় স্বীয় দেয় কর আদার করিল। কার্টিয়ার
সাহেব এই সময় কলিকাতা গবর্ণর ছিলেন। তিনি কোর্ট অব ডিরেক্টরের নিকট লিখিলেন – কোন ভাবনা নাই। অনাবৃষ্টি
নিবন্ধন দেশে অধিক শস্য না হইলেও কর আদায় সম্বন্ধে কোন বিঘ্ন উপস্থিত হইবে না।
কিন্তু বত্সর
শেষ হইতে না হইতে ভায়ানক দুর্ভিক্ষ সমুপস্থিত হইল। দেশ শুদ্ধ
লোকের হাহাকারে বঙ্গদেশ পূর্ণ হইল। সহস্র সহস্র নর নারী সহস্র সহস্র বালক বালিকা দিন দিন অকালে মৃত্যুগ্রাসে
নিপতিত হইতে লাগিল। বঙ্গদেশ একেবারে শ্মশান হইয়া পড়িল।
Dire scenes of horrir, which no pain can trace,
Nor rolling years for memory’s page efface
বঙ্গদেশ অরাজক!
বঙ্গে আর এখন কোন প্রজাবত্সল রাজা নাই। এ দুর্ভিক্ষ
প্রপীড়িত লোকদিগকে যে কেহ এক মুষ্টি অন্ন দিয়া ইহাদের প্রাণ বাঁচাইবে এমন কোন লোক
নাই।
মহম্মদ রেজা
খাঁর হাতে রাজ্য শাসনের ভার রহিয়াছে, সে রাজপ্রাসাদে দুগ্ধফেননিভ শয্যায় শয়ণ করিয়া
রহিয়াছে। একবারও প্রজার দুরবস্থার বিষয় চিন্তা করে না। এ নরপিশাচের
হৃদয়ে দয়াধর্মের লেশমাত্রও নাই। এ নির্দয়ের নাম স্মরণ করিলেও মন অপবিত্র হয়।
দেশে অনেক ধনী
লোক রহিয়াছে। কিন্তু এবার আর সে ধনী লোকদিগের কিছু করিবার সাধ্য নাই। কি কৃষক, কি
ধনী, কাহারও ঘরে অন্ন নাই। ধনীর গৃহে যথেষ্ট রৌপ্যমুদ্রা আছে, যথেষ্ট স্বর্ণ মহর রহিয়াছে, কিন্তু
দেশে চাউল ক্রয় করিতে পারা যায় না। সুতরাং ধনী, দুঃখী, কৃষক, ভূম্যাধিকারী, সকলেরই সমান অবস্থা। সকলেই বলিতেছে মা অন্নপূর্ণা অনাহারে প্রাণ বিসর্জন হইল – মা অন্ন প্রদান কর। অন্ন-অন্ন-অন্ন- সকলের মুখে কেবল এই চিতকার শুনা যায়। কোথায় গেলে
অন্ন মিলিবে এই চিন্তা সকলের মনে উদয় হইল।
দেশের অনেক
ধান্য ইংরাজ ক্রয় করিয়া কলিকাতা রাখিয়াছেন। পূর্ণিয়া,
দিনাজপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশ হইতে লোক কলিকাতাভিমুখে
যাত্রা করিল। গৃহস্থের গৃহে কুলকামিনীগণ সন্তান বক্ষে করিয়া কলিকাতাভিমুখে চলিল। আহা! চন্দ্র
সূর্যের মুখ যাহারা কখনো অবলোকন করে নাই, যাহারা কখনও গৃহের বাহিরে বাহির হয় নাই,
আজ সেই কূলবধু সন্তান ক্রোড়ে করিয়া ভিখারিনীর বেশে কলিকাতা চলিল। স্বীয় স্বীয়
অঞ্চলে স্বর্ণমুদ্রা এবং বিবিধ আভরণ বান্ধিয়া একমুষ্ঠি অন্ন ক্রয় করিবার
প্রত্যাশায় দেশ ছাড়িয়া চলিল।
কিন্তু ইহাদের
মধ্যে অনেকেই কলিকাতা পর্যন্ত পৌঁছতেই সমর্থ হইল না। শতশত
কূলকামিনী, শতশত সুস্থকায় পুরুষ পথেই অনাহারে জীবন হারাইল। সন্তানবত্সলা
জননী সন্তান বক্ষে করিয়া কলিকাতা যাত্রা করিয়া ছিলেন, কিন্তু সন্তান অনাহারে
মরিয়াগেল। তাঁহার ক্রোড় শূণ্য হইল। জননী সন্তান শোকে এবং ক্ষুতপিপাসায় উন্মত্ততার ন্যায় হইয়া অনতিবিলম্বেই
মানবলীলা সম্বরণ করিলেন।
ভ্রান্ত নর-নারীগণ!
তোমরা বৃথা আশায় প্রতারিত হইয়া কলিকাতা চলিয়াছ। যে চাউল
কলিলাতায় সংগৃহীত হইয়াছে, তাহা তোমরা পাইবে না। তোমরা মরিলেই
কি আর বাঁচিলেই কি। তোমাদের নিমিত্ত কে চিন্তা করে। আর কি ভারতে
প্রজা বত্সল রামচন্দ্র আছেন। উদারচেতা আকবর আছেন। অর্থগৃধ্নু রাজা কি কখন প্রজার মঙ্গল কামনা করে। তাহার সৈন্যের
প্রাণ রক্ষা হইলেই হয়। সুতরাং সৈন্যদিগের নিমিত্ত তন্ডুল সংগৃহীত হইয়াছে। তাগহাদের
প্রাণ অতি মূল্যবান। তাহারা মরিয়াগেলে কে মানবমন্ডলীর স্বাধীণতার মূলে কুঠারাঘাত করিবে। কে মহম্মদ
রেজা খাঁর সদৃশ নরপিশাচের একাধিপত্য সংরক্ষণ করিবে।
কৃষক! তিমি কোন আশায় কলিকাতা চলিয়াছ। তুমি দেশের অন্নদাতা
হইলেও তোমাকে কেহই একমুষ্টি অন্ন দিবে না। ঐ দেখ, ধনীর গৃহে কুলকামিনীগণ স্বার্ণমুদ্রা
অঞ্চলে বান্ধিয়া তন্ডুল ক্রয় করিবার নিমিত্ত কলিকাতা যাইতেছে। ইহার একমুষ্ঠি অন্ন
মিলিলেও মিলিতে পারে। ইহার সঙ্গে টাকা রহিয়াছে। কিন্তু বিনামূল্যে
ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীগণ কাহাকেও একমুষ্ঠি অন্ন দিবে না। কৃষকগণ! তোমরা গৃহে
ফিরিয়া যাও। তোমাদের পরমায়ু এবার নিশ্চয় শেষ হইয়াছে। তোমার এ সংসার
পরিত্যাগ করাই ভাল। পরমেশ্বর তাহার অমৃত ক্রোড়ে তেমাকে স্থান প্রদান
করিবেন। এ নরপিশাচ পরিপূর্ণ শ্মশান সদৃশ বঙ্গদেশে থাকিয়া
তুমি কখন সুখ শান্তি লাভ করিতে পারিবেনা।(নন্দকুমার ও শতবত্সর পূর্বের বঙ্গ সমাজ – চন্ডীচরণ সেন)