Sunday, November 24, 2019

কলকাতার এক অজানা জমিদারি আর অন্যান্য কিছু আনসান লেখা


জমিদারেরা বলেন মাড়েদের বাড়ি - চৌধুরী বা জমিদার বাড়ি নয়। জমিদারেরা এদের আজও জমিদার বলে স্বীকার অথচ দ্বারকানাথ মাড়েদের থেকে ২ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। ধার শোধ না করতে পারায় তিনি একটি তালুক তাঁদের নামে লিখে দেন।
প্রীতরাম মাড়, যিনি বাঁশের ব্যবসা করে অর্থ সঞ্চয় করেন। জাতিতে মাহিষ্য ছিলেন - বংশগত উপাধি ছিল দাস। বাঁশের ব্যবসার রমরমার জন্য মাড়(নদীতে ভাসানো বাঁশের ঝাড়কে বলত মাড়) উপাধি তিনি ব্যবহার করতেন।
সেই সময় গঙ্গা থেকে যে খাঁড়ি বেরিয়ে মারহাট্টা ডিচ হয়ে বিদ্যাধরীতে পড়ত, সেই ক্রিক ধরে জেলেদের বাস, আজকের রমানাথ কবিরাজ লেন। তারা কিন্তু দাসপুর থেকে চলে আসা। তার পাশেই মলঙ্গা লেন, আর চুনাপুকুর লেন - সব জল সংলগ্ন কাজ। এই জেলেরা গঙ্গায় কিন্তু মাছ ধরতেন না, তারা খাঁড়ি হয়ে বিদ্যাধরীতে পড়ে সুন্দরবনে চলে যেতেন মাছ ধরতে। মাছ নিয়ে তারা ফিরে আসতেন হয় ক্রিক ধরে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে - এখানে ছিল একটি বিশাল বিল, দেশি নৌকর আড্ডা। আর একটা জলপথ চলে যেত পিকনিক গার্ডেন হয়ে আজকের বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে। যেখানে ধাবা নামক একটা রেস্তোঁরা আছে সেখানে ছিল একটি চায়ের দোকান, হয়ত ১০০ বছর আগে বালিগঞ্জ তৈরি হওয়ার আগেও ছিল। সেটা ছিল বিসাল বড় মাছের আড়ত। প্রচুর কবিগানে কৈবর্ত অক্রুর দত্তের উল্লেখ পেয়েছি, যিনি পয়সা দিয়ে কায়স্থ শিরোমণি হয়েছিলেন, উপনিবেশে জাতে উঠতে। যেমন উঠেছিলেন তিলিরা, হেস্টিংসের বেনিয়ান কান্তবাবু। ব্রিটিশ শাসন আর পুঁজি যে আসলে জাত নিরপেক্ষ নয়, রাসমণি বা অক্রুর দত্তদের জাতে ওঠার চেষ্টা তার বড় প্রমান।
জমিদারি উচ্ছেদ হওয়ার শর্ত থেকে পানিদারিটা বাদ পড়ে যায়। শারদীয় আনন্দবাজার পত্রিকায় সুপ্রিয় চৌধুরির ভাগলপুরের পাণিদারদের নিয়ে লিখেছিলেন ‘জলভৈরব’ উপন্যাস।
---
এবারে রাসমণির পাণিদারির গল্প
গঙ্গায় ধীবরদের ওপর কর বসাল কোম্পানি। তারা এসে কেঁদে পড়ল ধীবর রাণীর কাছে। তো রাসমণি ছিলেন নিজে পাণিদার। গঙ্গার ইজারা নিলেন । ঘুসুড়ি থেকে মেটেবুরুজ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা দিয়ে । ঘুসুড়ি থেকে মেটেবুরুজ পর্যন্ত গঙ্গা শিকল দিয়ে বেঁধে দিলেন। কোম্পানির জাহাজের গতায়াত বন্ধ হয়ে গেল।
কোম্পানি প্রমাদ গুণল। তারপর সমঝোতা হল।জেলেরা মাছ ধরার সুযোগ পেল।
---
পাণিদার হল জল, মূলত গঙ্গা বা যে কোন নদীর একটি অংশের ওপর লিজ। নদীমাতৃক দেশে পাণিদারি এক সময় খব বড় পেশা মনে করা হত - অনেকতা জমিদারির মত। বঙ্গভাগের পর নিয়ম করে যখন জমিদারি উঠেগেল, তখনও কিন্তু পাণিদারি প্রথা/পেশা নিওষিদ্ধ হয় নি।



No comments: