আমরা গুরুচণ্ডালিতে নেই।
Somnath অসাধারণ একটা লেখা লিখেছেন, রামকৃষ্ণর যৌনতা নিয়ে। যেহতু শেয়ার করতে পারছি না, তাই নকল করে দিলাম। অনুরোধ রইল এটিকে আরও বিস্তৃতি ঘটানোর।
গ্রাম বাংলাকে তার প্রযুক্তি, তার দর্শন, তার উতপাদন-বিতরণ ব্যবস্থা, তার ভাষা, কৃষ্টি সব বুঝতে গেলে তান্ত্রিক যৌনতা আর তার দর্র্শনকে বুঝতে হবে। ৭০ বছর আগে ভিক্টোরিয় পুরষতান্ত্রিক শুচিবায়ুতায় নবদ্বীপে রাধা ভাবে এক লোমশ গুরুদেবকে উদ্বাহু হয়ে নাচতে দেখে ওডিবিএলএর প্রণেতা আঁতকে উঠেছিলেন এবং তাঁকে নির্বিচারে সমর্থন করছেন চরম বাম বিনয় ঘোষ, সেই ঔপনিবেশিকতা আদতে পুরুষতান্ত্রিক ব্রাহ্মাচারের উদ্গার বই আর কিছু নয় - এই বোধটা না এলে গ্রাম-বাংলার আত্মার সঙ্গে মিল সম্ভব নয়।
বাংলার পরাজিত কৃষিসমাজ(লগে লগে গ্রামীন পরম্পরার শূদ্র-বৈশ্য উতপাদন-বিতরণ ব্যবস্থা যা প্রতিভূ) নিয়ে একমাত্র দ্বিমত রইল।
---
শ্রীরামকৃষ্ণের যৌনতা
শাক্যর একটা পুরোনো আলপটকা কমেন্ট নিয়ে অনেক ঝড় বইছে। কিন্তু সেগুলো বাদ দিয়ে এই টপিক অ্যাকাডেমিক দুনিয়ায় কিছু গুরুত্ব দাবি করে।
উইকি-তে একটা ইন্টারেস্টিং আলোচনা পাওয়া যায়- "রামচন্দ্র দত্তের শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনবৃত্তান্ত (১৮৮০) হল রামকৃষ্ণ পরমহংসের সর্বপ্রথম রচিত জীবনী গ্রন্থগুলির একটি। ধর্ম-বিশেষজ্ঞ নরসিংহ শীল [৬] ও জেফরি কৃপালের মতে,[৭] রামচন্দ্র দত্ত রচিত বইটি রামকৃষ্ণ পরমহংসের সবচেয়ে কলঙ্কিত জীবনী। তাঁরা লিখেছেন, "containing the lurid details of his sadhana as well as his quite suggestive encounters with his patron Mathur." তাঁরা ১৮৮৪ সালে স্বামী বিবেকানন্দের লেখা একটি চিঠির উল্লেখ করেছেন, যেখানে বিবেকানন্দ লিখেছেন, “যৌনতা ইত্যাদি সম্পর্কে সব অসংলগ্ন অমার্জিত ধারণাগুলি এড়িয়ে যাবে... কারণ অন্যান্য দেশের লোকেরা এগুলিকে অমার্জিত মনে করে। ইংরেজি ভাষায় তাঁর (রামকৃষ্ণ) জীবনী সারা পৃথিবী পড়বে।” [৮] বিবেকানন্দ রামচন্দ্র দত্তের রচিত জীবনীর অনুবাদকে অমার্জিত বলেছেন।[৮] তাঁরা বলেছেন যে, স্বামী বিবেকানন্দ সম্ভবত রামচন্দ্র দত্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন এবং রামকৃষ্ণ মিশন বইটির প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও এই ধরনের মামলার কোনো প্রমাণ নেই এবং স্বামী আত্মজ্ঞানানন্দ ও প্রব্রাজিকা ব্রজপ্রাণা ১৯৯৫ সালে লিখেছেন, রামচন্দ্র দত্তের লেখা বইটির ৯টি বাংলা সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে।[৯][১০] কৃপাল পরে অবশ্য রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃক বইটির প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে নিয়েছিলেন।[১১]"
নরসিংহ শীল এই প্রথম রামকৃষ্ণ জীবনী থেকে লিখছেন-Ramchandra Datta one of the early biographers of Ramakrishna is reported to have said, "We have heard many tales of the Brahmani but we hesitate to divulge them to the public."
এক্ষেত্রে রামকৃষ্ণের যৌনতা নিয়ে আলোচনার বিশেষ দরকার আছে মনে করি। বিশেষতঃ তাঁর সাধনায় যৌনতার প্রভাব ইত্যাদির। দক্ষিণবঙ্গের এক সাধক বিপরীত রতির সাধনা না করে দুম করে যত মত তত পথ বলে দিতে পারেন, এ বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। বিশেষতঃ তিনি যখন সুফিমত বা নানকপন্থাতেও সাধনা করেছেন। আর ভৈরবীর সঙ্গে এপিসোডটা নরেন্দ্রনাথের চ্যালাচামুন্ডারা সেন্সর করেছিল সে কথা ইতিহাসে ডকুমেন্টেড। ভাবলে দেখি নরেন্দ্রনাথের বেসিক স্কুলিং তো ব্রাহ্মদের হাতে। ফলে রোমা-রোল্যাঁ হয়ে ফ্রয়েডের পড়াশুনোয় ঢুকে আলোকপ্রাপ্ত জ্ঞানচর্চার চোখে ঝিলমিল লাগিয়ে দিয়েছিলেন যে ভদ্রলোক, তার প্যাকেজিংটা হয়ে যায় ব্রাহ্ম ঔপনিষদিক প্র্যাকটিকাল বেদান্তের মুখোশে। অথচ যে যৌন সাধনার ঈংগিত রামচন্দ্র দিচ্ছেন, যে যৌন অনুষঙ্গ ও ব্যাখ্যা ঠাকুর স্বয়ং করছেন, তা বাংলার প্রাচীন নিজস্ব ধারা। নারীভাবকে জেফ্রি কৃপাল ক্লোসেট হোমোসেক্সুয়ালিটি বা যৌন নিপীড়নের ফল ভাবছেন, কিন্তু আমরা জন্মে থেকে জানি রাধাভাব কী, বাৎসল্য কী? আউল বাউল সহজিয়ার বাংলায় যৌনতান্ত্রিক সাধককে গুরুর আসনে বসায় গৃহস্থ। আর এখানে তার উল্টোদিকে দাঁড়ায় আলোকপ্রাপ্ত শহর কলকাতা। যেখানে এগুলি স্ক্যান্ডাল। যেখানে কবিগানের নিম্নরুচি নিয়ে ফোর্ট উইলিয়াম শিক্ষিত বাবু নাক সিঁটকোন। আর, এই কলকাতা, এই সাহেবিপনা গৌরব অর্জন করে মন্বন্তরে মৃত বাংলার কৃষকসমাজের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে।
ঐ কেরেস্তানি আর ব্রাহ্ময়ানির মুখের ওপর খোড কলকাতার ভৌগোলিক খণ্ডে বসে গ্রামসমাজের হয়ে যিনি জবাব ছুঁড়ে দিতে পেরেছিলেন তিনিই শ্রীরামকৃষ্ণ। রেভারেন্ড থেকে ব্রাহ্ম আচার্য সবাই থ মেরে গেছিল তাঁর সামনে। জার্মান বা ফরাসি ভারত বিশেষজ্ঞ বুঝভুম্বুল হয়ে যাচ্ছিল। ইংরেজ অধ্যাপককে কবিতা বোঝাতে উদাহরণ দিতে হচ্ছিল এই প্রায় নিরক্ষর চাষীসমাজের অমার্জিত সাধকের।
রামকৃষ্ণকে আধুনিকতা জীবদ্দশায় ট্যাকেল করতে পারেনি, তাঁর মৃত্যুর পর বিবেকানন্দের দিগ্বিজয়ী প্যাকেজিং ঠাকুরের সব পরিকর মেনে নিতে পারেন নি। কেউ চেয়েছেন বিবেকানন্দকে রামকৃষ্ণ অর্ডার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে, কেউ নিজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্যাছেন আর কেউ বিবেকানন্দের বিশাল মেধার সামনে পরাভব মেনে মিশনারি হয়ে উঠেছেন।
তাই বাংলার পরাজিত কৃষিসমাজের পক্ষে দাঁড়িয়ে ইউরোপকে চ্যালেঞ্জ করতে গেলে রামকৃষ্ণ ভাবধারার উপর থেকে এই ব্রাহ্ম-ক্রিশ্চানি পর্দাটা সরিয়ে ফ্যালা ভীষণ দরকার। সে জন্যে, ঠাকুর মাপ করবেন, তাঁর যৌনতা বোঝা প্রচণ্ড প্রাসঙ্গিক এখন।