১৯২৯এর ১৫ ডিসেম্বরএ টাউন হলে নীলচাষের পক্ষে আয়োজিত এক সভায় রামমোহন বলেন তিনি বাংলা আর বিহার ঘুরে দেখেছেন নীল চাষী রায়তেরা বেশ সুখে স্বচ্ছন্দে দিনযাপন করছে, ভাল জামাকাপড় পরছে। সেই সভাতেই দ্বারকানাথ বলেন তাঁর বাংলার নানান এলাকায় জমিদারি রয়েছে, আর নীলচাষে রায়ত আর নীলকর উভয়েই লাভবান হয়েছে। এরপর রামমোহন আর দ্বারকানাথের সই করা একটি প্রস্তাবনা লর্ড বেন্টিঙ্কের চরমতম সুপারিশ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাঠানো হয়। নীলকরেরা কিন্তু ১৮৩০এর বেন্টিঙ্কের পঞ্চম আইনেও খুশি ছিল না। এই আইনে বলা ছিল, দাদন নেওয়ার পর যদি কেনও রায়ত নীল চাষ না করে, তাহলে তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোপার্দ করা যাবে।
নীলকরদের আরও বেশি অত্যাচারকে আইনি বৈধতা দেওয়ার ব্রিটিশ-শহুরে ভারতীয়দের আন্দোলন পার্লামেন্টেও পৌঁছয়। ১৯৩১এ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সিলেক্ট কমিটি রামমোহনকে সনদসহ নানান বিষয়ে ৫৪টি মূল আর ১৩টি অতিরিক্ত প্রশ্ন করে। একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতে ইওরোপিয়দের জমি কেনার ফলে শিক্ষাবিস্তার, শিল্পায়ণ, কৃষিতে বিনিয়োগএরমত নয়টি সুফল ভোগকরতে পারে ভারত। এই ভাষাতেই আজকের বিদেশি বিনিয়োগের প্রবক্তারা ওকালতি করেন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের। যদিও তিনি কয়েকটি নগন্য কুফলের কথাও বলেন। রামমোহনের বক্তব্য পার্লামেন্ট রিপোর্টে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হলে, এর বিরুদ্ধে বাংলার জমিদারেরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রতিবাদপত্র পাঠান। এমনকী লর্ড মেকলেও রায়তদেরপ্রতি নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেন। ১৮৩৩এর সনদের ৮১ থেকে ৮৬ ধারা ভারতে ব্রিটিশ নাগরিকের যথেচ্ছ জমি কেনার আর বসবাসের সুযোগ এনে দেয়। ১৮৩৩এর সনদের প্রভাব ভারতীয় সমাজ অর্থনীতিতে সূদূর প্রসারী হবে – এই কজে, রামমোহন-দ্বারকানাথ জুটিটি সাম্রাজ্যের যে দায় নিজেদের বৃষসমস্কন্ধে তুনে নেবেন, তা আগামী দিনে ভারতে ঔপনিবেশিক দর্শনের ভিত গড়তে যোজনপ্রমাণ সাহায্য করবে।
১৮০০ শতক পর্যন্ত ভারতের বাজারে ব্রিটিশ দ্রব্যের চাহিদা ছিলই না প্রায়। তাই ভারতে প্রবাদ প্রতীম ম্যানচেস্টারের মিলগুলি প্রায় ধুঁকছিল। ১৭০০, ১৭২০তে দুবার ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় বস্ত্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়। ১৭৫৭ পর্যন্ত ব্যবসাটা প্রায় একতরফা ছিল – নানান দ্রব্যের বিনিময়ে ভারত বিদেশ থেকে সোনা আনত। ৫৭রপর ভারতই ব্রিটেনে একমাত্র উপনিবেশ যাকে চালানোর সাম্রাজ্যকে অর্থ ব্যয় করতে হত না, বরং ভারত থেকে উদ্বৃত্ত অর্থ নিয়ে ব্রিটেনের অর্থনীতির চাকাতো চলত বটেই, এমনকী অন্যান্য উপনিবেশের অর্থনীতিও গড়গড়িয়ে চলত। ১৮৩৩এর সনদ (আর এর সঙ্গে রামমোহন-দ্বারকানাথের সরাসরি ওকালতি) গৃহীত হওয়ার পরেই ভারত থেকে ব্রিটেনে কাঁচামালের রপ্তানির বহর বেড়ে যায় বহুগুণ। ভারত থেকে ব্রিটেনে ১৮১৩তে ৯ মিলিয়ন পাউণ্ডের সুতো রপ্তানি হত। ১৮৩৩এ তার পরিমান বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ মিলিয়ন আর ১৮৪৪ সালে সেই রপ্তানির পরিমান দাঁড়ায় ৮৮ মিলিয়ন পাউণ্ড। সনাতন ভারতের কারখানাগুলোর শ্মশান যাত্রা শুরু হয়, গ্রামীণ বাজার ধংস হয়। ভারতের বাজার ব্রিটিশ উত্পাদনে ছেয়ে যায়। ব্রিটিশ সভ্যতার অসীম অত্যাচার সয়েও ভারতীয় শিল্প যতটুকু উত্পাদন করছিল তার অধিকাংশ বন্ধ হয়ে যেতে থাকে গ্রামে গ্রামে সমাজে সমাজে। এই সময় থেকেই ব্রিটেনের জিডিপি দুই অংকের ওপরে উঠতে শুরু করে(এ প্রসঙ্গে ১৯১৩কে ভিত্তিবর্ষ ধরে ব্রিটেনের ঐ সময়ের জিডিপির ইতিবৃত্ত – ১৭২০-২১ – ২.১, ১৭৬০-৬১ – ২.৬, ১৭৭০-৭১ – ৩.৩,, ১৭৮০-৮১ – ৩.৫, ১৭৯০-৯১ – ৪.৬, ১৮০০-০১ – ৫.৭, ১৮১০-১১ – ৭.১, ১৮২০-২১ – ৯.৭, ১৮৩০-৩১ – ১৮.৩, ১৮৪০-৪১ – ১৯.৬। লক্ষ্য করুন ১৮০০র পর থেকে জিডিপি ৫এর উর্ধমুখী আর ৩০এর পর লাফিয়ে দুই অংক ছাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে কুড়ির ঘরে প্রবেশ করেছে)। শিল্পবিপ্লবের বেশকিছু হাতিয়ার যেমন স্পিনিংজেনি - স্বচলমাকু, ৭০ বছর আগে আবিষ্কার হলেও, পড়েছিল ঠাণ্ডাঘরে। তাকে চালানোর জন্য ভর্তুকির অর্থনীতির বাজারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল একটু একটু করে- সাম্রাজ্যের পাখির চোখ ছিল ভারতীয় বাজারেই দিকেই। ১৮৩৩ থেকে সেই ভারতীয় বাজারে লুঠপ্রতীমব্যবসা আর চিনকে ঘাড় ধরে আফিমে বুঁদ রাখার ব্রিটিশ ব্যবসারঘোমটারআড়ালে লড়াই(যদিও দুবার আফিম যুদ্ধও হয়েগেছে) - যার অন্যতম বাঙালি অংশিদার দ্বারকানাথ-রামমোহনসহ বেশকিছু ব্রিটিশ রেনেসাঁর উপজাত শহুরে জনগোষ্ঠী আর পারসি সমাজের অংশিদার, কামা, জেজে, টাটারা (ব্যবসায়ী পারসিদের আফিম ব্যবসার অর্থে গড়ে উঠেছে আজকের মুম্বই) - খুলেদিল শিল্পবিপ্লবের হাঁ মুখ। ব্রিটিশ লুণ্ঠনে ৭০ সাল ধরে একাদিক্রমে ভারতীয় শিল্পধংসকরণ প্রক্রিয়ায় ভেঙেপড়া ভারতীয় শিল্প সমাজের জ্বলন্ত চিতায় শেষ কাঠ। ১৮৩৩এর সনদ আর সাম্রাজ্যের আফিম আর নীলকরদের ভারতীয় বন্ধুদের উপনিবেশ গড়ার আন্দেলনের চক্রান্ত ভেঙেদেবে সনাতন ভারতীয় সমাজের শেষতম শিক্ষাব্যবস্থা আর শিল্প কাঠামোটিও। এর পরই ত্রিশের দশকের শেষ থেকে ম্যানচেষ্টারের মিলগুলোতে স্বচলমাকু ঘুরতে থাকবে দুর্দম গতিতে, প্রায় বিনাব্যয়ে ব্রিটেনে পাঠানো ভারতীয় কাঁচামালের ওপর ভিত্তিকরে।
রামমোহন আর দ্বারকানাথ, ভারত সমাজ ধংসে তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেও আধুনিক ভারতের প্রথম আধুনিক কারিগর-বুদ্ধিজীবি হয়ে উঠতে পারেন, আর যে সব নীলচাষী তাদেরমত আধুনিক মানুষের অত্যাচার সয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন তারা থেকে যান নীরবে। নীল বা আফিম বিদ্রোহের কেনো স্মরণ তিথিও পালিত হয়না। কার্ল মার্কসএর ভাবশিষ্য সুশোভন সরকারও রামমোহন-দ্বারকানাথপ্রমুখদের এই বিদ্রোহ বিরোধী, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদপন্থী আন্দোলনের পথ সরাসরি সমর্থন করতে বাধ্যহন কেননা তাঁদের গুরুঠাকুর কর্ল মার্কস নিজেই ভারতকে পশ্চাদপদী দেশ হিসেবে অভিহিত করে গিয়েছেন, তাই তাকে চোখের মাথা খেয়ে অস্বস্তিকরভাবে সাম্রাজ্যবাদী বন্ধুদের সমর্থন করতে হয়। এ পাপ তোমার এ পাপ আমার!
মনেরাখতেহবে, গ্রামীণ সমাজ লুঠেরা ব্রিটিশকে এক দিনও সুখে থাকতে দেয়নি। বছরের পর বছর ধরে তারা হাতে অস্ত্র তুলেছে, ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে সরকারকে। কোটি কোটি গ্রামীণ বিদ্রেহী বাঙালির সঙ্গে যুদ্ধে রক্ত হোলি খেলেছে ব্রিটিশ, মন্বন্তরের পর মন্বন্তরে নির্বিকারে কোটি কোটি বাঙালি আর ভারতীয় মেরেও সে সভ্য জাতি – জগত্সভার হর্তাকর্তাবিধাতা সে। সমাজের জাগতিক সম্পদ লুঠ, সমাজের জ্ঞাণ-প্রযুক্তি চুরি আর সমাজের হাজার হাজার বছর ধরে যে শিল্প পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল, তাকে ধংস করার প্রতিক্রিয়ায় সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ঘড়ুই বিদ্রোহ, খয়রা মাঝি বিদ্রোহ, চাকমা বিদ্রোহ, নীল ও আফিম চাষী বিদ্রোহ, মালঙ্গী বিদ্রোহ, পাহাড়িয়া বিদ্রোহ, সুবান্দিয়া বিদ্রাহ, নায়েক বিদ্রাহ, গারো বিদ্রাহ, ওয়াহবী বিদ্রাহ, ফরাজী বিদ্রোহ, সাঁওতাল-মুণ্ডা বিদ্রাহ, সিপাহি বিদ্রোহের পর বিদ্রোহের আগুনে যখন ফেটে পড়ছ ভারতীয় সনাতন সমাজ, তখন কলকাতায় বসে রামমোহন আর দ্বারকানাথের সুযোগ্য নেতৃত্বে বাঙালি বুদ্ধিজীবিরা প্রাণপনে চেষ্টা করে চলেছেন কীভাবে ব্রিটিশ সরকারের আরও ভালভাবে সেবা করা যায়, ব্রিটিশ চক্রান্তে সমাজেরকে টুকরো টুকরো করে ফেলার সরকারি কোম্পানির পরিকল্পনায় যথাসাধ্য বুদ্ধি নিয়োগ করে রাজাবাহাদুর, রাযবাহাদুর, রাজা উপাধি অর্জন করা যায়, সরকারের সঙ্গে মিলে মানুষ লুঠের ব্যবসায় আরও ধনী হওয়া যায়।
রামমোহন বা দ্বারকানাথ শুধু নয়, সে সময় অধিকাংশ শহুরে মধ্যবিত্তই ব্রিটিশদের প্রশ্রয়ে সনাতন ভারতের বিদ্রোহের বিরুদ্ধে প্রাণপাত করে উপনিবেশের পক্ষে সবলভাবে দাঁড়িয়েছেন। কেউ জানেন না নীল বিদ্রোহের সাহিত্যিক রূপকার দীনবন্ধু মিত্র শেষ বয়সে লুসাই যুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে রায়বাহাদুর উপাধি অর্জন করেন। দুর্জনদের বক্তব্য দীনবন্ধু কুকি বিদ্রোহের সময় আসমের ডাক প্রধান ছিলেন। তিনি কুকি বিদ্রোহীদের চলাচলের সংবাদ ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিক্রয় করে বিদ্রোহ ধংসের অন্যতম কারবারি হয়ে ওঠেন। শেষ বয়সে কোম্পানি সরকার নীল দর্পণের লেখককে তার বিদ্রোহ দমনের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সরকারি রায়বাহাদুর উপাধি দান করেন। আর ভারতের গ্রামীণ সমাজের প্রতিনিধি, তিতুমীর নীল চাষীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ১৮৩১ খৃষ্টাব্দে নারিকেলবাড়িয়ায় কর্নেল স্টুয়াটের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ বাহিনীর মোকাবিলা করেন। বীর তীতুমীর যুদ্ধে শহীদ হন। তার প্রধান অনুচর ও সহকারী গোলাম মাসুম ৩৫০ জন বিদ্রোহীসহ বন্দী হলেন। গোলাম মাসুমকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা হয়। শহুরে ব্রিটিশ বন্ধুদের মুখোশ না খুলতে পারার লজ্জা তার সঙ্গে বিদ্রাহীদের স্মরণ না করার লজ্জা, এই দুই লজ্জা আজও অধিকাংশ শহরবাসীকে কুরে কুরে খায় না। চক্রান্ত কী আজও চলছে না!
শিক্ষত পূর্বজদের সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে, নতমস্তকে আর বিনীতভাবে বলা যাক, এই সামান্য লেখায়, ক্ষুদ্র সামর্থে বাংলার যেসব স্বাধীনতাপ্রিয় সমাজ, পলাশি চক্রান্তের পর থেকে কোম্পনির শাসনের বিরুদ্ধে জান-প্রাণের পরোয়া না করে বিদ্রোহের ধ্বজা উড়িয়েছে, নতুন সময়ে বসে নতুন করে স্মরণ করতে চেষ্টা করি, শ্রদ্ধা জানাই সেইসব আপাতশান্ত অথচ স্বভাববিদ্রাহী সমাজের কাণ্ডারীদের, যারা তিল তিল করে পূর্বজদের বহু পরিশ্রমে গড়ে তোলা বাংলার সমাজের একটির পর একটি গ্রন্থি ভাঙতে দেখে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়ে ছিলেন। উপনিবেশের গ্রাস থেকে তাঁরা বাংলার সমাজ বাঁচাতে হয়ত সফল হননি, কিন্তু ব্রিটিশতামুকখাওয়া শহুরে ভারতের তৈরি সর্বগ্রাসী উপনিবেশিকতাবাদী দর্শনের বিরুদ্ধে প্রায় দেড়শ বছর ধরে বিদ্রোহী সমাজগুলির মাথারা উপনিবেশিক সরকারের তৈরি রূদ্ধপথভাঙার পথ তৈরি করে গিয়েছিলেন, তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাকে ভালবাসার শপথ গ্রহণের স্বোচ্চার বাণী। বিপ্লবী আন্দোলনের বিপরীতে শহুরে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার কর্মকাণ্ডও বিচার করার চেষ্টা করাযাক বিপ্লবের আয়নায়।
সেই প্রতিবাদী অথচ ভালবাসার পথ, মাঝখানের বছরগুলোতে একটু একটু করে ইওরোপিয় সাম্যবাদের প্রচণ্ডতায়, ধর্মীয় সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু মৌলবাদের হুঙ্কারে সাময়িকভাবে হারিয়ে যেতে যেতে কিন্তু আবার নতুন করে জীবন ফিরে পাচ্ছে। ঔপনিবেশিক শাসন পাকা করতে কোম্পানির অর্থ-দাক্ষিণ্যেপুষ্ট মহাপণ্ডিত হয়েওঠা জোনস বা ভারতভাঙার কারিগর ম্যাক্সমুলারের নানান ভাষা বা দার্শনিক তত্ত্বের তথাকথিত গবেষণামূলক আবিষ্কারে আজও ব্রিটিশ অনুগামী বাঙালি বুদ্ধজীবি মহল চমত্কৃত। বিশ্বে অন্যপথের দিশারী ঋষি কার্ল মার্কস পর্যন্ত ভারতের সনাতন সমাজ ভাঙার কাজে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের মদত দিয়েছেন, বলেছেন অপচয়ের এই বুর্জোয়া সমাজ উন্নততর সমাজ ব্যবস্থা। সেই সব ভাবনারমূলে বাঙলায় খুব একটা কুঠারাঘাত না হলেও বাঙলার বাইরের নানান কাজে সনাতন ভারত আবিষ্কারের পথ নতুন করে খুলছে – সাম্রাজ্যের বন্ধুদের নতুন করে চেনার কাজ শুরু হচ্ছে, নতুন করে দাবি উঠছে কৃতকর্মের জন্য সাম্রাজ্যের আজকের প্রতিনিধিদের ক্ষমা ভিক্ষার। আজ ঔপনিবেশিকতাবাদের বাইরে বেরিয়ে সনাতন বাংলার নিজস্ব জ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প চর্চার নথিকরণের কাজ হচ্ছে। তবে সেই কাজ আরো ভালভাবে সুসম্পন্ন হতেপারে যদি বিদ্রোহী বাংলার উত্তরসূরীরা ঔপনিবেশিক বাংলার কুজ্ঝ্বটিকা সরিয়ে বিদ্রোহের ইতিহাস রচনা আর বিদ্রোহীদের চরিতবাখানে কম্বুকণ্ঠ হন আর তথাকথিত আধুনিকতার ধ্বজাধারী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বন্ধুদের চক্রান্তের মুখোশ খুলে দিতে পারেন।