Sunday, June 9, 2019

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - পরম্পরা ভিত্তিক জ্ঞান, দক্ষতা প্রযুক্তি বিষয়ে আলোচনা জরুরি - আগামী স্বচ্ছলতার ভাবনার জন্যে কেন অতীতে ঝুঁকে দেখা দরকার

কারিগরি অর্থনীতির অন্যতম তাত্ত্বিক Dipankarদা কয়েক বছর ধরে বাংলার নিজস্ব ব্রান্ডের কথা বলে আসছেন। গণ কমিটির তরফে Md Nahid Hasan ভাই আগামী ৮ জৈষ্ঠ পলাশী দিবসে পলাশীর আগের এবং পরের সময় ধরে আলোচনার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেখানে কারিগর সঙ্গঠনের পক্ষ থেকে আমরা কোন দৃষ্টিভঙ্গীতে আলোচনার ভাবনা ভাবছি তার ধরতাই দিতে এর আগের একটি লেখায় এক দুই এবং তিন অংশে আমাদের ভাবনার কথা বলেছি। আমরা বলার চেষ্টা করেছি অতীতের কাছে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আগামী দিনে আমরা কোথায় যেতে চাই, সেই পরিকল্পনার জন্যে আমাদের পলাশীর আশেপাশের সময় কারিগরদের আমাজিক এবং আর্থিক ঘুরে দেখতে হবে। আজও দুই বাংলায় যে সব বড় উতপাদন এবং ব্যবসা রমরম করে চলছে এমন কি সুদূর বিদেশেও, সেই ব্যবসার বড় অংশ নির্ভর করছে বাংলার জ্ঞান, দক্ষতা, প্রযুক্তির ওপর। চাইলে আজও এই সেবা, উতপাদনগুলি বিদ্যুৎ বিহীনভাবে তৈরি করা সম্ভব।
এই কাজটি অতীতে বাংলাজোড়া কারিগর করে দেখিয়েছিলেন কয়েক হাজার বছর ধরে। আজও যে সব বড় ব্যবসার কথা একনজরে আলোচনা করি, তার অধিকাংশই নির্ভরীল পরম্পরার জ্ঞান, দক্ষতা প্রযুক্তির ওপর।পলাশীর ৩০ বছর পরেও বাংলাইয় নিয়মিত সোনা এসেছে। তার আগে বাংলা ছিল বিশ্ব রূপো আর সোনার অন্যতম প্রধান গন্তব্যকেন্দ্র। কারিগরদের উতপাদন সেবা কিনতে হত রূপোর বিনিময়ে। সেই জন্যেই বাংলা ছিল সোনার বাংলা। আজও ভারতে টাকার নাম রুপিয়া।
দীপঙ্করদার লেখাতে যাওয়ার আগে আমি শুধুই গ্রামীন পরম্পরা উতপাদন ব্যবস্থার বাজারের জোরটা আলোচনা করব। বাংলায় সরকারি হিসেবে পরম্পরাভিত্তিক কারিগরদের সংখ্যা ৫০ লক্ষ, তাঁতি ৭.৫ লক্ষ এবং অভিকর শিল্পী আরও ৩ লক্ষ ধরে নিলাম ৬০ লক্ষ। অর্থাত এই বাংলার জনসংখ্যার মাত্র ৬ শতাংশ, যারা পূর্বজদের সামাজিক, পারিবারিক বা গোষ্ঠী জ্ঞান, দক্ষতা, প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করেন এবং সেবা দেন। এদের যদি বছরে ২০০০০ টাকা বাড়ি আনতে হয় অর্থাৎ মাসে দেড় হাজার টাকা রোজগার করতে হয়, অর্থাৎ দিনে ৫০ টাকা আয় করতে হয় তাহলে এই স্বনিযুক্তদেরে বছরে অন্তত ১ লক্ষ টাকার কাজ করতে হবে(যদিও করেন আরও অনেক বেশি)। তাহলে ৬০ লক্ষ পরম্পরার কারিগরদের বাতসরিক ব্যবসা হল ৬০ হাজার কোটি টাকা(আমাদের ধারণা এটা ২ লক্ষ কোটির কাছাকাছি)।
তাই দীপঙ্করদার বক্তব্য গ্রামীণ ও মফস্বলের কারিগররাই সম্ভবত এখনো বাংলার অৰ্থ ব্যবস্থার খুঁটি। আসুন এই 'অপ্রিয়' সত্যটা মেনে নিতে চেষ্টা করি। একটা ছোট্ট অনুসন্ধান থেকে কয়েকটি অনুমান করেছি । আবার বলছি এগুলো অনুমান মাত্র!
১) গত কয়েক দশকে বাংলা থেকে যে কয়টা ব্র্যান্ড নির্মাণ হয়েছে তার প্রায় ৯৯% ই কারিগরের পারম্পরিক জ্ঞান নির্ভর। মিষ্টি, শাড়ি, নানা ধরণের খাবার, জুতো এমন কি নকশাল নামক ৰাজনৈতিক ব্র্যান্ড টাও ( তর্কের খাতিরে ব্র্যান্ড ধরছি) পশ্চিমি জ্ঞান নির্ভর নয় ও এঁদের কারোরই কোনো মেধা স্বত্ব (পেটেন্ট) নেই।
২) উক্ত ব্র্যান্ড সমূহের উৎপাদন বিদ্যুৎ নির্ভর নয়। হলে ক্ষতি নেই। না হলেও চলে।
৩) পশ্চিমি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর কোনো ব্র্যান্ড ( একটি দুটি ছাড়া) আমরা মনে করতে পারছি না। এটা সম্ভবত সারা ভারতের ক্ষেত্রেই সত্যি।
৪) যতই পশ্চিমি জ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যার জাহির করি না কেন, আজও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আমরা সেই জ্ঞান নির্ভর নিজস্ব কোনো ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারিনি। পশ্চিমি জ্ঞান নির্ভর সমস্ত ব্রান্ডই নিদেশী সংস্থার মালিকানাধীন।
৫) পশ্চিমি বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের দম্ভ ত্যাগ করে আমাদের বোধ হয় পারম্পরিক দেশীয় জ্ঞান ও কারিগরদের প্রতি আরো বেশি শ্রদ্ধা শীল হওয়া উচিত।
তিনি কতগুলি ব্রান্ড উল্লেখ করেছেন, আমি বাংলাদেশের দুটি জুড়ে দিলাম
প্রাণ, অটবী, বাংলাদেশের বিশাল জামাকাপড়ের ব্যবসা, কুন্ডু স্পেশাল (১৯৩৩), ব্যানার্জী, ভোজ ক্যাটারার, বিজলি গ্রিল, কে সি দাস, বলরাম মল্লিক, ফুলিয়া, ধনেখালী, শান্তিপুর, কাটোয়া, কালনার তাঁত, কুকমী, কেও কারপিন, মহেন্দ্র দত্ত, সেনকো, পি সি চন্দ্র, অঞ্জলী জুয়েলার্স, মেন লান্ড চায়না, রাদু, শ্রীলেদার্স, তাল মিছরি, বেঙ্গল কেমিক্যাল, ভীমনাগ।
আলোচনা হোক।

No comments: