Sunday, June 23, 2019

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ

সুশীল চৌধুরী, অমিয় বাগচী এবং নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিনহা বেশ কিছু নতুন দৃষ্টিভঙ্গী দিয়েছেন। উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের কাছে তাদের ব্যবহৃত তথ্যগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবসময় হয়ত সব তত্ত্বে মতের মিল নাও হতে পারে, বিশেষ করে ইওরোপিয় কেন্দ্রিভূত, বড় পুঁজি নিবেশিত আর বিদ্যুতিক প্রযুক্তি নির্ভর বিকাশের পথই এই তিন বাঙালি বিদ্বান মেনে নিয়েছেন। আমরা যারা কারিগর অর্থনীতিতে আস্থা পেশকরি, তাদের ভাবনাটা অনেকটা আলাদা। কিন্তু তারা বিভিন্ন মহাফেজখানা ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করে যে সব তথ্য ব্যবহার করেছেন তার গুরুত্ব অপরিসীম। কারিগর বা দেশিয় অর্থনীতি নিয়ে যে সব মানুষ উৎসাহী, তাদের এই সব তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে, নিজেদের তত্ত্বের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করা দরকার।
নরেন্দ্রকৃষ্ণ বাংলার অর্থনীতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলছেন কিভাবে পলাশীর পরে লুঠের পসরা সাজিয়ে বসল ব্রিটিশ। যদিও এর আগে দাদাভাই নৌরোজি বা বাংলার রমেশ দত্ত, কোম্পানি অর্থনীতিকে লুঠের রাজত্ব বলছেন, কিন্তু একই সঙ্গে রামবাগানের দত্তজ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে নির্দ্বিধায় সমর্থন করছেন, এবং শেষ অবদি মহারানীর উন্নয়নকর্মে তাঁর আস্থা অবিচল ছিল। আইসিএসগিরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি 'সুসভ্য' লন্ডনেই থেকে যান এবং জগদীশকে তিনি প্রায় লন্ডনের অধিবাসীই বানিয়ে তুলেছিলেন। যাই হোক নরেন্দ্রকৃষ্ণ কিন্তু একপ্রকার রাষ্ট্রবাদী মানুষ। এটা মূলত উপনিবেশের দান, বিশেষ করে বেকনিয় স্পিরিট। এই লুঠেরা বেকনিয় স্পিরিট থেকে বেরোনো খুব জরুরি।
দ্বিতীয়জন অমিয় কুমার বাগচী। সামগ্রিক ঔপনিবেশিক সময়কে কিভাবে দেখা দরকার, সেই চোখটি তিনি তৈরি করে দিয়ে যান। মার্ক্সবাদী হওয়ায় তাঁকে কেন বহুকাল এড়িয়েছিলাম এ কথা এর আগে বিশেষ করে ইরফান হাবিব বা ইতিহাস অর্থনীতি আলোচনায় বহুবার বলেছি। বলতে বিন্দুমাত্র বাধা নেই, তিনি আমায় কান ধরতে বাধ্য করেছেন। বইটি অসাধারণ বললে কম বলা হয়। ২০০ বছরের ব্রিটিশ রাজত্বকে নির্দ্বিধায় বিশ্বের সর্বপ্রথম স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট পলিসির সময় বলে আখ্যা দিয়েছেন। এক কথায় ঔপনিবেশিক সময় বুঝতে এর থেকে যোগ্য লব্জ আর নেই। আমার জ্ঞানে, তিনিই প্রথম ঔপনিবেশিক মার্ক্সীয় তাত্ত্বিক, যিনি নতুন করে এঙ্গাস ম্যাডিসনকৃত জিডিপির অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তৃতীয়জন বাংলার একদম নিজস্ব ইতিহাসকার সুশীল চৌধুরী। খুব কম পঠিত। আমি ঔপনিবেশিক বাংলা বুঝতে ওম প্রকাশ, কীর্র্তি নারায়ণ চৌধুরী, রজত রায়, তপন রায়চৌধুরী ইত্যাদির বাইরে বেরোতেই পারছিলাম না। অমিয় বাগচী দেরি করে পড়া যে কোনও উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মীর কাছে যেমন চরম ক্ষতিকর, তেমনি সুশীল চৌধুরী দেরি করে পড়া পলাশীপূর্ব বাংলার আসল চেহারা বুঝতে বাধা সৃষ্টি করে ফলে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে সমস্যা হতে পারে। পলাশীপূর্ব এক শতাব্দের অর্থনীতি, ইতিহাস এবং রাজনৈতিক অবস্থার যে সব ভুল তথ্য মাথায় থানা গেড়ে বসে থাকে প্রত্যেক ইংরেজি শিক্ষিত বাঙ্গালির তার ভিত আমূল নাড়িয়ে দেন অসামান্য তথ্য, যুক্তি আর উপস্থাপনার জোরে। আগেও বিশদে লিখেছি আবারও লিখছি, উপনিবেশপূর্ব বাংলা বুঝতে কেন সুশীল চৌধুরী অত্যাবশ্যক তার কয়েকটা কথা চুম্বকে উল্লেখ করে এই লেখায় ইতিটানব। ১/ সিংহাসনে বসা সিরাজ অন্য মানুষ; ২/ পলাশীর জন্যে ইংরেজ কোম্পানি এবং আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবার লালসা একমাত্র দায়ি; ৩/ কোনও ইওরোপিয় কোম্পানিই খুব ধনশালী ছিল না, তাদের থেকে অনেক গুণ বেশি ধনশালী ছিল দেশিয়/এশিয় বণিকেরা; ৪/ ব্রিটিশ কোম্পানির ব্যবসাটাই অনৈতিক। তারা জাল ফরমান, নিশান ইত্যাদি করে ব্যবসা করেছে; ৫/ বাংলার মত ব্যবসায় উদৃত্ত জনপদ বিশ্বে আর ছিল না; ৬/ কারিগরেরা স্বাধীন ছিল, তারা দাদন ফিরিয়ে দিতে পারত; হাত না বদল হওয়া অবদি সে ছিল তার পণ্যের মালিক, দাদন দেওয়া ব্যবসায়ী নয়; ৭/ বাংলার বহু পণ্য একচেটিয়া ব্যবসা করত সারা বিশ্বে; ৮/ বাংলার সঙ্গে ইওরোপিয় ব্যবসা ছিল মাত্র ১০%, বাকিটা নিজের দেশে এশিয়া আর আফ্রিকায় - এ কাজ এখনো হয় নি।
পলাশী দিবসে এই তিন পথিকৃতকে প্রণাম জানালাম।

Sunday, June 9, 2019

কেন আজ পলাশীকে ঘুরে দেখা? শুধুই কি অতীতাচার?

ঢাকা বাতিঘরে আলোচনা শুরুর আগে পলাশী বিষয়ে তিনটে মূল ধরতাই দেওয়া দরকার, আজকে দাঁড়িয়ে পলাশীর ২৬২ বছর পরেও আমরা কেন সেই সময়টা ছুঁতে চাইছি।
এক।
পলাশী বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের সময় সারণিতে গুরুত্বতম বিন্দু, যে বিন্দুকে ব্যবহার করে ইওরোপ, এশিয়া/আফ্রিকার সঙ্গে কয়েক হাজার বছরের ঘাটতি বাণিজ্যের হেঁটমুণ্ড ঊর্ধপদ করল, যে বাংলা সে সময় ছিল বিশ্ব ধনসম্পদের সিঙ্ক, ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৫ - এই সাত বছর বাংলার সেই অমিত সম্পদ লুঠে পশ্চিম ইওরোপের ধনসম্পদে অপুষ্ট দ্বীপ রাষ্ট্রটি সম্পদশালী হল এবং বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠ লুঠেরা অত্যাচারী খুনি সামরিক রাষ্ট্র হয়ে উঠল।
১৭৫৭য় কার্যত তার দখলে চলে যাওয়া সোনার বাংলায় সে ক্রমশ নামিয়ে আনল অমিয় কুমার বাগচী কথিত ২০০ বছর ধরে স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট পলিসি, যে নীতিগুলির মধ্যে প্রধানতমগুলি ছিল নুন সুপুরি আফিম চট বাঁশের মত হাজারো নগণ্য ব্যবসার একচেটিয়া করণ, বাংলার রাজস্বকে ব্যবহার করে বিনামূল্যে বা অর্ধমূল্যে বাংলায় পণ্য সংগ্রহ এবং সেই আর্থিক এবং ধনসম্বল নিজের দেশে লুঠেরা এককেন্দ্রিক শিল্পতে বিনিয়োগ করা, ১১৭৬তে পরিকল্পিত গণহত্যা করে বাংলার জনসংখ্যা একতৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা যাতে নিয়মিত বাংলার ব্যবসায়িক গঞ্জ হাট এবং বাজার দখল করা যায়, কম মূল্যে বিনামূল্যে নিজের দেশের শিল্পের জন্যে কাঁচামাল রপ্তানি করা যায়, বাংলার উতপাদন ব্যবস্থার বিশিল্পায়ণ করা হল, ১৭৯৩তে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হল যার ফলে বাংলার জমির বাজার তৈরি হয় এবং এর সঙ্গে শিল্প ধংসের ফলে বিশাল কারিগর দিন মজুর এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত নানান দেশে দাস খাটতে যেতে বাধ্য হয়। সাম্রাজ্য একই সঙ্গে রেনেলকে দিয়ে মুঘল মানচিত্র আর সমীক্ষা জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সম্পদ লুঠের জন্যে মানচিত্র আর কোলব্রুককে কাজে লাগিয়ে পণ্য উতপাদন সমীক্ষা করায়, যে নীতি, জ্ঞান হাতিয়ারগুলি ব্যবহার করে শুরুতে বাংলা পরে গোটা উপমহাদেশকে অধমর্ণ করবে চিরকালের মত আর ইওরোপকে বসবে চালকের আসনে, হবে উত্তমর্ণ। আজকে ইওরোপিয় যে সব সেবা বা প্রযুক্তি পাই তার সলতে পাকানো বিভিন্ন উপনিবেশের জ্ঞান ধার করে, মেট্রোপলিটনে নয়।
দুই।
এই সামগ্রিক ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উতপাদক কারিগর আর হকারদেরে চাষীদের নিষ্ক্রমণ ঘটল।পলাশীর আগে যে জ্ঞান দক্ষতা বাজার নির্ভর করে কারিগরেরা এই উপমহাদেশকে সোনার বাংলা বানিয়েছিলেন, ইওরোপকে নতুন ফ্যাশান দিয়েছিলেন, উপনিবেশের কবল থেকে মুক্তির পরও কারিগরদের তো পুনর্বাসন ঘটলই না, একই সঙ্গে উপমহাদেশিয় তিনটি প্রধানতম দেশের অধমর্ণতাও ঘুচল না উপমহাদেশ ভাগের আট দশক পরেও।
এই দুটি ঘটনার মধ্যে আমরা মনে করি বিপুল যোগসূত্র আছে। আজও পশ্চিমের ধারের জ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, বিদ্যায় বলীয়ান হয়েও উপমহাদেশিয় ত্রয়ী অধমর্ণই থেকে গেলাম। পলাশীর ৪ দশক পরেও যে উপমহাদেশিয় ভৌগোলিক ভূখণ্ডর জিডিপি ছিল ২৫, যে উপমহাদেশের পূবভাগের জিডিপি ছিল ৬, আজকের ভারত ভূখণ্ড তদানীন্তন বাংলার ৬ জিডিপি ছুঁতেই হিমিশিম।
তিন।
যে নিজের দেশের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না যে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গী। যার ইতিহাস চর্চা নেই সে খড়ের মানুষ।
আমাদের শিক্ষক কারিগরদের দেখানো পথে, গণ কমিটির ডাকে ৬ জৈষ্ঠ বিকেল চারটে থেকে ফেলে আসা সময়টাকে দেখব।
জয় বাংলা।

এই সভ্যতা কারিগরদের, এই সভ্যতা শূদ্রদের, এই সভ্যতা চাষীদের, এই সভ্যতা বৈশ্যদের - এই সভ্যতা বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান-আদিবাসী সমাজের

সেই সমাজের ধারকবাহকদের প্রণাম জানাই, যারা আমার মত দেশ সমাজ সম্বন্ধে অজ্ঞানী, পরম্পরায় আস্থাহীন সংখ্যালঘু ভদ্রবিত্ত সমাজ থেকে যাওয়া হেঁটমুণ্ডঊর্ধপদী মানুষকে অসীম গ্রামীন ঔদার্যে বাংলার শক্ত কিন্তু অসীম শিল্পসৌকর্যময় মাটিতে দাঁড় করাবার চেষ্টা করছেন। প্রথমে পথের ব্যবসায়ী, পরে গ্রামীন পরম্পরার কারিগর এবং সেবা দেওয়া মানুষদের পায়ের কাছে বসে যা শিখেছি, যতকিঞ্চিত অর্জন করেছি, তা অর্থনীতির সাম্মানিক শ্রেণীতে বসে পারি নি। বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান-আদিবাসী সভ্যতার তৈরি চাষী-হকার-কারিগরি অর্থনীতিই যে উপমহাদের ধারক, ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রন্মোত্ত কর্পোরেট সমাজ কতটা ভঙ্গুর, তা চোখের সামনে দেখেছি ২০০৮ ইওরোপিয় অর্থনীতির বিষ বাষ্প রুখে দিল হকার-চাষী-কারিগরদের তৈরি কারিগর অর্থনীতি।
২০০৮এর পর বোঝাগেল চাষী-হকার-কারিগর অর্থনীতির জোর। বোঝালেন আমার মাঠের কারিগরি কারখানার পথের ঘাটের হকার-চাষী-কারিগর শিক্ষকেরা। মাথা নামানো শিক্ষার্থী হয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম চাষী-হকার-কারিগরদের অতীত ইতিহাস। ততদিনে শিক্ষক হিসেবে এসে গিয়েছেন ধরমপালজী, চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন উপনিবেশের জ্ঞানলুঠের ইতিহাস। এক্কেবারে ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়া কারিগরদের বুঝতে উপনিবেশবাদ বোঝা জরুরি, সেটা ধরিয়ে দিলেন ক্লদ আলভারেজ, আশিস নন্দী, বিনয় লাল, প্রসন্নন পার্থসারথী, ক্রিস বেইলি, যদুনাথ সরকার, জগদীশ নারায়ণ সরকার, সঞ্জয় সুব্রহ্ম্যম, কপিল রাজ, রাজীব কিনরা, রস গোমানস, বার্নার্ড কোহন, নিক রবিনস, নিকোলাস ড্রিকস, অর্জুন আপ্পাদুরাই, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বিনয় ঘোষ, বিনয় লাল, বীণা তলোয়ার, রুবি লাল, অর্জুনদেব সেনশর্মা এবং আরও অনেকে।শেষে পেলাম অমিয় বাগচী মশাইকে। সে এক অসাধারণ উপনিবেশ বোঝার তারিকা। পরে নরেন্দ্র কৃষ্ণ সিংহ, কীর্তি নায়ারণ চৌধুরী, ওম প্রকাশ এবং সুশীল চৌধুরী বাংলার আর্থিক ইতিহাস বুঝতে শেখালেন। জয়া মিত্র আর অনুপম মিশ্র সমাজকে, দেশের প্রযুক্তিকে ভালবাসার স্রোতে নামিয়ে দিলেন।
কত যে বন্ধ দ্বার খুলে যেতে শুরু করল - বাংলায় ঘুরতে ঘুরতে - যদুপুর, হরিরামপুর, মহেন্দ্র, ভীমের জাঙ্গাল, আমাতি, ভীমপুজা, লক্ষ্মীপুজা, বালি যাত্রা উতসব, খুদুরকুনি, বেরা ভাসান আমায় ঘাড় ধরে বোঝাল মানুষ আর ইতিহাসের সম্পর্ক - গভীরে যেতে হয়, তার মত করে বুঝতে হয়! যদুনাথ সরকারের মুঘল এডমিনিস্ট্রেশন অনুবাদ করে বুঝলাম ঔপনিবেশপূর্ব সরকারগুলছে চাষী-কারিগরদের পালক ছিল।
সক্কলের মধ্যে ব্যতিক্রম সুশীলবাবু। আমি তাঁর একলব্য শিষ্য। বাংলার ইতিহাস পড়ার তথ্যগুলিই নতুন করে বুঝতে শেখালেন - এ সবেই কারিগরদের কৃতি আর বাংলার সমৃদ্ধিকে বোঝার চাবিকাঠি আছে বুঝতে পারার অবস্থায় এসেছি - হয়ত। তিনিও চলে গেলেন তাঁর সঙ্গে কোনও সামনা সামনি আলোচনার সুযোগ না দিয়ে। কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়, চণ্ডীচরণ সেন, নিখিলনাথ রায় দীনেশচন্দ্র সেন, কিছুটা রজত রায়, আবদুল করিম, সুবোধ মুখোপাধ্যায়কে অনুসরণ করেছি।
সব শেষে আমায় যে সঙ্গঠন শিখিয়ে পড়িয়ে দেশ দেখার চোখ তৈরি করে দিয়েছে তার সম্পাদক Madhumangal Malakar এবং হাজারো হকার কারিগর।সব শেষে ধন্যবাদ Somnathকেও।

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - পরম্পরা ভিত্তিক জ্ঞান, দক্ষতা প্রযুক্তি বিষয়ে আলোচনা জরুরি - আগামী স্বচ্ছলতার ভাবনার জন্যে কেন অতীতে ঝুঁকে দেখা দরকার

কারিগরি অর্থনীতির অন্যতম তাত্ত্বিক Dipankarদা কয়েক বছর ধরে বাংলার নিজস্ব ব্রান্ডের কথা বলে আসছেন। গণ কমিটির তরফে Md Nahid Hasan ভাই আগামী ৮ জৈষ্ঠ পলাশী দিবসে পলাশীর আগের এবং পরের সময় ধরে আলোচনার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেখানে কারিগর সঙ্গঠনের পক্ষ থেকে আমরা কোন দৃষ্টিভঙ্গীতে আলোচনার ভাবনা ভাবছি তার ধরতাই দিতে এর আগের একটি লেখায় এক দুই এবং তিন অংশে আমাদের ভাবনার কথা বলেছি। আমরা বলার চেষ্টা করেছি অতীতের কাছে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আগামী দিনে আমরা কোথায় যেতে চাই, সেই পরিকল্পনার জন্যে আমাদের পলাশীর আশেপাশের সময় কারিগরদের আমাজিক এবং আর্থিক ঘুরে দেখতে হবে। আজও দুই বাংলায় যে সব বড় উতপাদন এবং ব্যবসা রমরম করে চলছে এমন কি সুদূর বিদেশেও, সেই ব্যবসার বড় অংশ নির্ভর করছে বাংলার জ্ঞান, দক্ষতা, প্রযুক্তির ওপর। চাইলে আজও এই সেবা, উতপাদনগুলি বিদ্যুৎ বিহীনভাবে তৈরি করা সম্ভব।
এই কাজটি অতীতে বাংলাজোড়া কারিগর করে দেখিয়েছিলেন কয়েক হাজার বছর ধরে। আজও যে সব বড় ব্যবসার কথা একনজরে আলোচনা করি, তার অধিকাংশই নির্ভরীল পরম্পরার জ্ঞান, দক্ষতা প্রযুক্তির ওপর।পলাশীর ৩০ বছর পরেও বাংলাইয় নিয়মিত সোনা এসেছে। তার আগে বাংলা ছিল বিশ্ব রূপো আর সোনার অন্যতম প্রধান গন্তব্যকেন্দ্র। কারিগরদের উতপাদন সেবা কিনতে হত রূপোর বিনিময়ে। সেই জন্যেই বাংলা ছিল সোনার বাংলা। আজও ভারতে টাকার নাম রুপিয়া।
দীপঙ্করদার লেখাতে যাওয়ার আগে আমি শুধুই গ্রামীন পরম্পরা উতপাদন ব্যবস্থার বাজারের জোরটা আলোচনা করব। বাংলায় সরকারি হিসেবে পরম্পরাভিত্তিক কারিগরদের সংখ্যা ৫০ লক্ষ, তাঁতি ৭.৫ লক্ষ এবং অভিকর শিল্পী আরও ৩ লক্ষ ধরে নিলাম ৬০ লক্ষ। অর্থাত এই বাংলার জনসংখ্যার মাত্র ৬ শতাংশ, যারা পূর্বজদের সামাজিক, পারিবারিক বা গোষ্ঠী জ্ঞান, দক্ষতা, প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করেন এবং সেবা দেন। এদের যদি বছরে ২০০০০ টাকা বাড়ি আনতে হয় অর্থাৎ মাসে দেড় হাজার টাকা রোজগার করতে হয়, অর্থাৎ দিনে ৫০ টাকা আয় করতে হয় তাহলে এই স্বনিযুক্তদেরে বছরে অন্তত ১ লক্ষ টাকার কাজ করতে হবে(যদিও করেন আরও অনেক বেশি)। তাহলে ৬০ লক্ষ পরম্পরার কারিগরদের বাতসরিক ব্যবসা হল ৬০ হাজার কোটি টাকা(আমাদের ধারণা এটা ২ লক্ষ কোটির কাছাকাছি)।
তাই দীপঙ্করদার বক্তব্য গ্রামীণ ও মফস্বলের কারিগররাই সম্ভবত এখনো বাংলার অৰ্থ ব্যবস্থার খুঁটি। আসুন এই 'অপ্রিয়' সত্যটা মেনে নিতে চেষ্টা করি। একটা ছোট্ট অনুসন্ধান থেকে কয়েকটি অনুমান করেছি । আবার বলছি এগুলো অনুমান মাত্র!
১) গত কয়েক দশকে বাংলা থেকে যে কয়টা ব্র্যান্ড নির্মাণ হয়েছে তার প্রায় ৯৯% ই কারিগরের পারম্পরিক জ্ঞান নির্ভর। মিষ্টি, শাড়ি, নানা ধরণের খাবার, জুতো এমন কি নকশাল নামক ৰাজনৈতিক ব্র্যান্ড টাও ( তর্কের খাতিরে ব্র্যান্ড ধরছি) পশ্চিমি জ্ঞান নির্ভর নয় ও এঁদের কারোরই কোনো মেধা স্বত্ব (পেটেন্ট) নেই।
২) উক্ত ব্র্যান্ড সমূহের উৎপাদন বিদ্যুৎ নির্ভর নয়। হলে ক্ষতি নেই। না হলেও চলে।
৩) পশ্চিমি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর কোনো ব্র্যান্ড ( একটি দুটি ছাড়া) আমরা মনে করতে পারছি না। এটা সম্ভবত সারা ভারতের ক্ষেত্রেই সত্যি।
৪) যতই পশ্চিমি জ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যার জাহির করি না কেন, আজও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আমরা সেই জ্ঞান নির্ভর নিজস্ব কোনো ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারিনি। পশ্চিমি জ্ঞান নির্ভর সমস্ত ব্রান্ডই নিদেশী সংস্থার মালিকানাধীন।
৫) পশ্চিমি বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের দম্ভ ত্যাগ করে আমাদের বোধ হয় পারম্পরিক দেশীয় জ্ঞান ও কারিগরদের প্রতি আরো বেশি শ্রদ্ধা শীল হওয়া উচিত।
তিনি কতগুলি ব্রান্ড উল্লেখ করেছেন, আমি বাংলাদেশের দুটি জুড়ে দিলাম
প্রাণ, অটবী, বাংলাদেশের বিশাল জামাকাপড়ের ব্যবসা, কুন্ডু স্পেশাল (১৯৩৩), ব্যানার্জী, ভোজ ক্যাটারার, বিজলি গ্রিল, কে সি দাস, বলরাম মল্লিক, ফুলিয়া, ধনেখালী, শান্তিপুর, কাটোয়া, কালনার তাঁত, কুকমী, কেও কারপিন, মহেন্দ্র দত্ত, সেনকো, পি সি চন্দ্র, অঞ্জলী জুয়েলার্স, মেন লান্ড চায়না, রাদু, শ্রীলেদার্স, তাল মিছরি, বেঙ্গল কেমিক্যাল, ভীমনাগ।
আলোচনা হোক।

Monday, June 3, 2019

রাণী রাসমণির সম্পত্তির লুঠপাট - বাংলায় সব শূদ্র জমিদারির এক অবস্থা

পশ্চিম বাংলায় রাসমনীদের সম্পত্তির পরিমান কত জানেন? ষাট লক্ষ হেক্টর।সাবেক ১৪৫ তৌজির একমাত্র মালিক বলতে রানীরাসমনী এস্টেটের শ‍্যমলী দাস ও তার দুই ছেলে অমল ও অম্লানকেই বোঝায়।আজ ঐ পরিবারের পুরোনো কিছু কাগজ পত্র হাতড়ে দেখছিলাম কিভাবে একটি রয়‍্যাল পরিবারকে সম্পূর্ন শেষ করে দেওয়া হয়েছিল।যাদের ১৪৫ তৌজির পরিমান ছিল হালিশহর থেকে নামখানা।এই পরিবারটির পাশে কোনদিন কোন সরকার দাঁড়ায়নি।যেখানে ১৯৫৩ সালের এস্টেট অধিগ্রহন আইনে সমস্ত জমিজমা অধিগ্রহন করা হলেও এদের কোনরুপ ক্ষতিপুরন দেওয়া হয়নি।যা নিয়ে ভুমিজীবি বনাম রাজ‍্য সরকারের একটি মামলায় কোলকাতা মহামান‍্য উচ্চান‍্যায়ালয় পরিস্কার তার রায়ে জানিয়েছিল উপযুক্ত ন‍্যায‍্য ক্ষতিপুরন দিয়েই অধিগ্রহন করতে হবে।না হলে পুরো প্রক্রিয়াই বেআইনি বলে গন‍্য হবে।যা আরো একটি মামলায় মহামান‍্য সুপ্রীম কোর্ট এই পরিবারের আইনি অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে গিয়ে লিবার্টি দিয়েছিলেন।যা তাদের স্হাবর সম্পত্তির উপর দাবিকেই প্রতিষ্ঠিত করে।যা নিয়ে এই এস্টেটের পক্ষ থেকে শ‍্যমলী দাস আইনের সমস্ত দরজায় কড়া নেড়েও সফল হননি।যেখানে ২০০৮ সালের ওয়েষ্ট বেঙ্গল ল‍্যান্ড এন্ড রেভিনিউ দপ্তরের এক তদন্ত রিপোর্টে এদের সম্পত্তি যে জাল করে লুট করা হয়েছে সে বিষয়ে পরিস্কার করে দিয়েছে।যেখানে এই পরিবারটিকে শেষ করার পিছনে সবচেয়ে বড় চক্রান্তকারী ছিলেন তৎকালিন এদের সোলিসিটার ফার্ম আশোক কৃষ্ঞ দত্ত।অথচ এদের বিরুদ্ধে শত অভিযোগ সত‍্যেও কোন এনকোয়ারি হয়নি।তার কারন রাসমনীদের অধিকাংশ জমিজমাই লুট করে ভাগ করে নিয়েছে অবাঙালি শিল্পপতিরা।এদের মধ‍্যে আছে পোদ্দার,বিনায়ক,থেকে রমেশ গান্ধীর মতো মানুষেরা।পুরোনো ফাইল পত্র ঘেঁটে দেখছিলাম এদের স্হাবর সম্পত্তির পরিমান কোথায়কোথায়।সল্টলেক,নিউটাউন,রাজারহাট,ইএম বাই পাস,কসবা,চৌবাগা,মুকুন্দপুর,সন্তোষপুর,কত লিখবো।আশ্চর্যের বিষয় একটি বাঙালি রয়‍্যাল পরিবারের এমন অবস্হার মুলে বাঙালিরাই সবচেয়ে বেশি দায়ি।এদের সম্পত্তি সবচেয়ে বেশি জালিয়াতি হয়েছে বাম আমলে যখন মুখ‍্যমন্ত্রী ছিলেন জ‍্যোতি বসু,পর্বর্তি সময় বুদ্ধদেব ভট‍্যাচার্য,মেয়র হিসাবে দায় অবশ‍্যই নিতে হবে তৎকালিন কলকাতার মেয়র সুব্রত মুখার্জি পরে বিকাশ ভট‍্যাচার্যদের।এরা চাইলে হয়তো কিছুটা ন‍্যায় বিচার এই পরিবারকে দেওয়া সম্ভব হতো।কিন্তু যেকোন কারনেই সেটা তারা করেনি যেখানে লুটের মাল জলের দরে ফলের রস কেনার মতোআত্মসাৎ করেগেছে,তোলাসিয়া,বিনায়ক
লিখেছেন subhasis ghosh

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - তবুও ভদ্রবিত্তের কিস্যু যায় আসে না - ছিয়াত্তর আর নবজগরনীয় উত্তরপুরুষদের দায়




একদিন ধর্মতলা বা শাহবাগে মিটিং, তিন দিন নিজের কর্মস্থলে প্রতিবাদ আন্দোলন, একদিন বাজারে-আলোয় প্রতিবাদী জ্বালাময়ী লেখনি, বুমের সামনে বৈপ্লবিক ভাষণের আন্দোলন আন্দোলন খেলার সুবাদে মধ্যরাত্রে প্রেয়সী বা প্রেমিকের পৃষ্ঠকণ্ডুয়ন নিয়েই তাঁর প্রতিষ্ঠান বিরোধী প্রতিবাদের বিশ্ব।
যে বাঙালি একসময় মসলিন বানিয়ে রূপো আনত, যে বাঙালি একসময় জং ছাড়া ইস্পাত বানাত, যে বাঙালি কন্যা ঘোড়া চড়ে যুদ্ধ করত, যে বাঙালি অজন্তা ইলোরা খোদাই করেছে, যে বাঙালি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মহাযানী গুম্ফায় ছবি এঁকেছে, যে বাঙালি একসময় তর এলাকায় অচাষী কারিগর আর সারা বিশ্বকে নুন, চাল, পান, সুপুরি খাইয়েছে, যে বাঙালি নবাবের অভয়হস্ত মাথায় নিয়ে চোখ চোখ রেখে লুঠেরা সওদাগরদের দেওয়া অগ্রিম ফিরিয়ে দিয়েছে, সেই বাঙ্গালিকে ব্রিটিশ-বন্ধু ভদ্রবিত্ত জাতিবাদী রাষ্ট্র ওবিসি, এসটি, এসসি, সংখ্যালঘু নামে সংরক্ষণ দেয়। এ লজ্জা সমূহের। এ পাপ তোমার আমার।
Arupsankar দার এই ভিডিওটি রেজা খাঁ, গঙ্গা গোবিন্দ সিঙ্গি, নন্দকুমার আর তাদের সময়ের উচ্চমধ্যবিত্তের অনাচারের। সম্পদ, জ্ঞান লুঠ, পাইকারি হারে খুন, উতপাদন ব্যবস্থা ধ্বংসের স্পষ্ট নিদর্শন। আজ আমরা সক্কলে সেই অদৃশ্য দায় বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। প্রত্যেকের পরিধেয়তে সেই রক্তের দাগ অদৃশ্যভাবে লেগে আছে।
জেনেশুনেবুঝে উত্তরপুরুষের জাগতিক সমৃদ্ধির জন্যে পূর্বজরা বাংলা ভাঙ্গার সঙ্গী হয়েছিলেন। যার জেরে তাদের উত্তরপুরুষ নবজাগরনীয় ভদ্রবিত্তদের আজ এই সামাজিক অধিষ্ঠান, সেই পাপটি স্খালন করার উদ্যম নিয়েছেন অরূপদা এবং তাঁর অসাধারণ সাথীরা।
সুটেডবুটেডফুটফুটেডদের গুডিগুডি ফিলগুড প্রতিবাদের অলক্ষ্যে ঘোমটা উপনিবেশ তোষণ বা তাঁর চাপিয়ে দেওয়া ঐতিহাসিক তথ্য কথন নয়, ছোটলোক শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার বাংলার অধিবাসীদের তৈরি করা কারিগর সমাজের ওপর যে অবর্ণনীয় অত্যাচার, খুন লুঠ ধ্বংস নামিয়ে চ্এচচনেছিল তাঁর এককণাও ঔপনিবেশিক ইতিহাসে বলা নেই, সেই অভাব পূর্ণ করতে অরূপদা আর তাঁর দলের এই নব্য ইতিহাস কথন।
আরও পাস্খলন হোক।
---
শেষে একটাই ফরিয়াদ মন্বন্তর নয় গণহত্যা। 
এই গণহত্যাটা বুঝেশুনেই করেছিল লুঠেরা খুনি ব্রিটিশ-ভদ্রবিত্তজুটি।

ভদ্র ও অভদ্র

যে বাঙালি একসময় কারিগরি করে রূপো আনত, যে বাঙালি মসলিন প্রযুক্তির উদ্ভাবক, যে বাঙালি একসময় জং ছাড়া ইস্পাত বানাত, যে বাঙালি কন্যা ঘোড়া চড়ে যুদ্ধ করত, যে বাঙালি অজন্তা ইলোরা খোদাই করেছে, যে বাঙালি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মহাযানী গুম্ফায় ছবি এঁকেছে, যে বাঙালি একসময় তর এলাকায় অচাষী কারিগর আর সারা বিশ্বকে নুন, চাল, পান, সুপুরি খাইয়েছে, যে বাঙালি নবাবের অভয়হস্ত মাথায় নিয়ে চোখ চোখ রেখে লুঠেরা সওদাগরদের দেওয়া অগ্রিম ফিরিয়ে দিয়েছে, সেই বাঙ্গালিকে ব্রিটিশ-বন্ধু ভদ্রবিত্ত জাতিবাদী রাষ্ট্র ওবিসি, এসটি, এসসি, সংখ্যালঘু নামে সংরক্ষণ দেয়। অর্থনীতি ধরে রাখা এই মানুষদের পিছিয়ে পড়া বলে, অশিক্ষিত বলে। 
কেন? তারা লুঠও করে নি, ছিয়াত্তর-উনপঞ্চাশ ঘটায় নি, ভদ্রবিত্তর মত ব্রিটিশ দালালি করে ক্ষমতায় যায় নি বা ব্রিটিশকে উপমহাদেশ লুঠতে সাহায্য করে নি, ইংরেজি শিখে দেশের মানুষকে অশিক্ষিত বলে নি।
এ লজ্জা সমূহের। 
এ পাপ তোমার আমার।

মসলিন পরিহিত হুঁকা হাতে ঢাকার নারী

১৭৮৯ সালে ফ্রান্সিসকো রেনাল্ডির আঁকা মসলিন পরিহিত হুঁকা হাতে ঢাকার নারী।
ছবিটিতে আন্দাজ করা হচ্ছে একজন বিবি বাড়ির একটি ছোট ঘরে দামি কালীনের ওপরে রাখা তাকিয়ার ওপর হেলান দিয়ে হাতে গড়গড়ার নল নিয়েছেন। তাঁর বাঁ হাতে দামি অলঙ্কার এবং গলায় হার। হুঁকো ছাড়াও আছে একটি পানদান, এবং অলঙ্কৃত জুতো।.
তিনি পরে আছেন সবুজ আর কমলা রঙের কাজের সোনার ব্রোকেডওয়ালা বুটিদার অসম্ভব দামি পেশোয়াজি কুর্তা। পেশোয়াজ দিয়ে মাথা ঢেকেছেন। তার দুপাট্টাটি দুপাশে পরা যায় এমন শাল বা স্কার্ফ আর পাড়টি সোনালি মসলিন জরির কাজ করা।প্রচুর গহনা পরে আছেন গলায় হার, হাতে চুড়ি, কানে বড় কানছাবি, বিশাল নাকছাবি, পায়ে নুপুর, পা আর হাতের প্রত্যেক আংগুলে দামি পাথর রত্নরাজির আংটি। যে আলো ঘরেতে পড়েছে, এটি বিশ্লেষণ করে বোঝা যাচ্ছে ছবিটি হয় জানুয়ারি মাসের বিকেল ৫.৪৫এ অথবা আগস্টের ৭টায় আঁকা হয়েছে। ছবিটি ১৭৮৯ সালের আগস্টে আঁকা হয়েছে।
আঁকিয়ে সম্বন্ধে কিছু কথা
ফ্রান্সিসকো রোনাল্ডির সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। ১৭৭৬এ রয়্যাল একাডেমি স্কুল থেকে বেরিয়ে ওয়েলসের আঁকিয়ে টমাস জোনসের সঙ্গে ইতালি যান। ১৭৮৩তে লন্ডনে ফিরে এসে ২ পর্তুগাল স্ট্রিটে আঁকার কাজ করতে থাকেন কিন্তু খুব বেশি সুবিধে করতে পারেন না।
১৭৮৫তে তিনি ভারতে আসার জন্যে কোম্পানির কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিনি কলকাতা পৌঁছন ১৭৮৬র আগস্টে। দশ বছর তিনি কলকাতা, লখনৌএর আওধের নবাব উজির আসফুদৌলা এবং ঢাকায় কাটান। সে সময় ভারতে ছবি আঁকার কাজ করতে গেলেও সরকারের অনুমতি লাগত। তার সঙ্গে সে সময় ছিলেন উইলিয়াম হজেস, জন জোফানি, টিলি কেটল, ওজিস হাম্ফ্রে(আর কাজ ইয়েল এন্টার ফর ব্রিটিশ আর্টসে আছে)। তারা নবাব, ব্রিটিশ সেনানায়ক, পুরুষ অভিজাতর ছবি আঁকলেও মহিলাদের খুব বেশি ছবি আঁকা নেই। তিনি ১৭৯৬তে লন্ডনে ফিরে যান। ৯৭ সালের গ্রীষ্মে তিনি রয়্যাল একাডেমিতে একটি প্রদর্শনী করেন। তার পরে ইতিহাসে আর তাঁর কোনও খোঁজ মেলে নি।
-
২০১৪তে ছবিটি টুইটারে শেয়ার করেন উইলিয়াম ডালরিম্পল
বয়ানটা পেয়েছি http://angustrumble.blogspot.com/…/lab…/nabobs%20and%20bibis সূত্রে