Wednesday, March 15, 2017

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা১ - পঞ্চাঙ্গ প্রভাকর পঞ্চানন সাহিত্যাচার্য ।। ১৩১২সালে প্রকাশিত

লুঠেরা কর্পোরেট জ্ঞানচর্চায় আমাদের আপনারা নিলেনই না, তাতে আমার বয়েই গেল।
***তিথি হল এক দিনে চন্দ্র সূর্যের মধ্যে যে কৌণিক পার্থক্য হয় তাঁর মান - ১২ ডিগ্রি। ৩০টা তিথিতে এক মাস। অর্থাৎ ৩৬০ ডিগ্রি। মেকলে পদ্ধতিতে শিক্ষিতরা একে অঙ্ক বা জ্যোতির্বদ্যা না বলে কুসংস্কার বলেন - সেটা আসলে তাঁর শিক্ষা। এর সঙ্গে সংস্কার-কুসংস্কারের যোগ নেই।***



পশ্চিমি প্রাচ্যবিদ্যার্ণবেদের প্রচারে যে বন্ধুরা মনে করেন দেশিয় জ্ঞানচর্চা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রাচীন যুগের পরে, মনে করিয়ে দেওয়া যাক চার্লস উইশ ১৮৩৪ সাল নাগাদ তেলেঙ্গা প্রদেশে কলন বিদ্যাচর্চা দেখেছিলেন, লিখেছিলেন জ্ঞানলুঠের জন্য তৈরি এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকায়। জ্ঞানচর্চা সংক্রান্ত এ রকম হাজারো উদাহরণ দেওয়া যায় - সে কাজটি করেছেন ধরমপালজী তাঁর নানান লেখায় - উতসাহীরা দেখে নিতে পারেন।

বিদ্যাসাগর বা রামমোহন বা দ্বারকানাথ দেশে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাবের জন্য কর্পোরেট লুঠেরা, খুনি, অত্যাচারী শিক্ষা ব্যবস্থা এ দেশে প্রণয়নের জন্য ধুয়া তুলেছিলেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং কর্পোরেট স্বার্থবাহী এবং দেশের স্বার্থ বিরোধী।

এই বইটি প্রমাণ যে দেশে দেশজ জ্ঞান, লব্জ নির্ভর পণ্ডিতি যুক্তি(তা পশ্চিমি পদ্ধতিতে নাও হতে পারে) তর্কের অবকাশ শেষ হয়ে গিয়েছিল এ কথা যারা মনে করেন, তারা হয় লুঠেরা জ্ঞানচর্চার তরফদারি করছেন নয়ত মিথ্যা বলছেন। এর ফলে আমরা মনে করি পশ্চিমি জ্ঞানচর্চায় নাদ, জল্প, বিতণ্ডা(যেগুলোর মানে আপনারা ভুলে গিয়েছেন - মনে রেখেছেন ডিসকোর্স) ইত্যাদির স্থান আছে, দেশিয় বিদ্যা চর্চায় নেই।

পঞ্চানন মহাশয় দেশিয় পদ্ধতিতে অঙ্ক করেই কামাখ্যানাথ তর্কবাগীশের মত খণ্ডন করেছেন সেটাও উল্লেখ্য - সেটা আজ থেকে ১০০ বছর আগে। তিনি বলছেন, 'কোন সংক্রান্তির কত পূণ্যকাল? কোন মকর সঙ্ক্রান্তিতে গঙ্গাস্নান করিতে হয় বা তিল দান করিতে হয়, সে ব্যবস্থা স্মার্ত্যরা করিবেন। জ্যোতিষ শাস্ত্রের সহিত তাহার কোন সম্বন্ধ নাই। জ্যোতিষ শাস্ত্র সূক্ষ্ম সংক্রমণ কাল গণনা করিয়া দিয়া প্রস্থান করিবে।'। পণ্ডিতি আলোচনা মানে ধর্মীয় আলোচনা এমন তথ্য মিথ্যা প্রমান করে এই উদাহরণ।

১৩০০ সালের প্রথম দশকে দ্বারকামঠের অধীশ্বর শ্রীশ্রীশঙ্করাচার্যের নেতৃত্বে বোম্বাইতে একটি পঞ্চাঙ্গ শোধন মহাসভা আয়োজিত হয়। দৃকপ্রত্যয়সিদ্ধান্ত ও ধর্মশাস্ত্রের শৌত স্মার্ত্ত কর্মানুষ্ঠান, পজিকার গণনা কিভাবে করতে হবে তাই নিয়ে সেই সভায় সারাদেশের ১৫০ জন পণ্ডিতের স্বাক্ষরযুক্ত একটি নির্ণয়পত্র প্রকাশিত হয়। বাংলা থেকেও প্রতিনিধিত্ব করেন ৯ জন পণ্ডিত, তাঁদেরও স্বাক্ষর ছিল (যেমন গুপ্তপ্রেস পত্রিকার গণক বিশ্বম্ভর জ্যোতিষার্ণব, ধীরানন্দ কাব্যনিধি ইত্যাদি)। বিচারের সময় নাদ জল্প এবং বিতণ্ডা হয়.৮ দিন ধরে যে বিচার চলে তাঁর সাতটি প্রশ্ন আর সমাধান তারা ছাপান। সেটি ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯০৫ সালে হিতবাদীতে ছাপা হয়।

সংস্কৃত কলেজের জ্যোতিষের অধ্যাপক পঞ্চানন সাহিত্যাচার্য সেই সমগ্র বিষয়টি নিয়ে একটি বই লেখেন যার নাম পঞ্চাঙ্গ প্রভাকর। এখানে তিনি বিশদভাবে সাতটি প্রশ্নের কূট সমাধান বিষয়ে আালোচনা করেছেন।

সেটি নিয়ে আম জনতার আগ্রহ থাকবে না ধরে নিয়ে পরের লেখাতে দিচ্ছি।

এই প্রকাশনায় শুধু বলতে চাচ্ছি, লেখক এই বইএর উপসংহারে কামাখ্যানাথ তর্কবাগীশের গ্রহের গ্রহণ, উদয়, অস্ত ইত্যাদিতে সূর্য সিদ্ধান্ত অশুদ্ধ শুদ্ধ করার ইচ্ছেয় সম্মতি প্রকাশ করলেও তিথির সমস্ত পারিভাষিক মিথ্যের দাবিকে অযৌক্তিক বলে মনে করেন। তিনি লিখছেন, (এই বইতে) 'তিথি যে মিথ্যা কল্পনা নহে, যথার্থ, ইহার পদার্থ আছে, ইহা উত্তমরূপে বুঝাইয়াছি।...গ্রহণে ও তিথিতে গ্রহস্ফুটীকরণের প্রভেদ দেখাইবার জন্য, কতগুলি সিদ্ধান্ত বাক্য তুলিয়া তাহার সম্পূর্ণ মিথ্যা অর্থ কল্পনা করিয়া, যে কথার উত্থাপন করিয়াছিলেন, আমরা সেই সেই সিদ্ধান্ত বাক্যের যথার্থ অর্থ, করিয়া উত্তমরূপে মীমাংসা করিয়া দিয়াছি, যে প্রসিদ্ধ শাস্ত্র প্রণেতৃগণ তিথি ও গণনার জন্য একই প্রকার স্ফূট গ্রহ ব্যবহার ক্রিয়া থাকেন। স্ফূটী করণ ভেদ কোন সিদ্ধান্ত শাস্ত্রে নাই। যথার্থ উত্তরায়ণ সংক্রান্তির প্রায় বাইশ দিন পরে মকর রাশির স্নগক্রান্তি হয়। এই উভয় সংক্রান্তিতেই সূক্ষ্ম সংক্রমণ কাল গণিত দ্বারা নিরূপিত হয়া থাকে। কোন সংক্রান্তির কত পূণ্যকাল? কোন মকর সঙ্ক্রান্তিতে গঙ্গাস্নান ক্রিতে হয় বা তিল দান করিতে হয়, সে ব্যবস্থা স্মার্ত্যরা করিবেন। জ্যোতিষ শাস্ত্রের সহিত তাহার কোন সম্বন্ধ নাই। জ্যোতিষ শাস্ত্র সূক্ষ্ম সংক্রমণ কাল গণনা করিয়া দিয়া প্রস্থান করিবে।'

আদতে এই বিতর্ক হয় কর্পোরেট পড়াশোনার বাইরের জগতে - যার খবর মেকলে-ট্রেভলিয়নের পপৌত্র মধ্যবিত্ত আজও রাখে না।

আমাদের আপনারা আপনার লুঠেরা কর্পোরেট জ্ঞানচর্চায় নিলেনই না, তাতে আমার বয়েই গেল।

ধন্যবাদ।

No comments: