Tuesday, September 27, 2016

উপনিবেশবাদ বিরোধী চর্চা ফোক শব্দের উৎস সন্ধানে৪

থেয়ন কন্যা মিসরীয় হাইপাশিয়ার হত্যা

খ্রিষ্ট নানান সাহিত্যে বিশেষ করে ওল্ড টেস্টামেন্ট বা এজিকিয়েলের বইতে যারা সূর্যের উপাদনা করবে তাদের ধ্বংস করার কথা বলা হল, Slay utterly old and young, both maids, and little children, and women
(Ezekiel 9:6)। প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্ট ধর্মের বাইরে থাকা যে কোন জীবনচর্যা, জ্ঞানচর্চা ধ্বংসের যে ব্যাপক উদযাপন চলতে থাকে, যাতে চার্চ অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার সুযোগ পায়, তার ছোট্ট একটা উদাহরণ দেওয়া যায় থেয়ন কন্যা হাইপাশিয়ার হত্যার ঘটনায়।

হাইপাশিয়া ছিলেন গ্রন্থাগারিক, অঙ্কবিদ, জ্যোতির্বিদ, এবং নব্যপ্লেটোনিয় দার্শনিক। সমস্ত কিছুতেই প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্ট ধার্মিকদের প্রচণ্ড আপত্তি – হাইপাশিয়ার কাজে খ্রিষ্টধর্মের সমাজপতিরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে শুরু করেন, তারা তাকে শত্রু দেগে দেন। খ্রিষ্ট ধর্মতত্ত্বের বাইরে সমস্ত কিছুকে শয়তানি দর্শন বা বিদ্যা দেগে দেওয়া হল যাতে সেগুলি নির্বিবাদে ধ্বংস করে ফেলা যায়। তাদের চোখে অঙ্কবিদ আর জ্যোতির্বিদ মানে জাদুগর বিশেষ, আর খ্রিষ্ট ধর্মের বাইরে থাকা দার্শনিক বিপজ্জনক মানুষ এবং খ্রিষ্ট ধর্মের চরম শত্রু। হাইপাশিয়া সেসময়ের জনমান্য শিক্ষক, তার বক্তৃতার জন্য প্রখ্যাত ছিলেন। হাইপাশিয়ার ছাত্র ছিলেন সাইরিনের সাইনেসিয়াস। হাইপাশিয়াকে লেখা তাঁর কিছু চিঠির সূত্র ধরে আমরা জানতে পারি হাইপাশিয়া জল পরিশোধনের প্রযুক্তি, জলের উচ্চতা মাপার প্রইয়ুক্তি, তরলের ভূকর্ষ মাপার তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন।

৪১২ সালে সিরিল আলেকজান্দ্রিয়ায় সমাজপতি হলেন। তিনি প্রচার করা শুরু করলেন হাইপাশিয়ার সঙ্গে মিশরের পুরোহিতদের জ্ঞানীদের যে যোগ তা অনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক। জনগণকে খেপিয়ে তুলে সিরিল গ্রন্থাগারে যাওয়ার পথে জনগণকে দিয়ে হাইপাশিয়াকে গ্রেপ্তার করালেন। থিওডোসিয়াস সম্রাট এবং বিশপদের বিশপ হয়ে ওঠার ছ বছরে কি ঘটেছিল তার ইতিহাস আসলে শুধু হাইপাশিয়ার মতকে ধ্বংস করা নয়, সামগ্রিকভাবে পাগান মতাবলম্বীদের মুছে ফেলার ইতিহাস। আদতে হাইপাশিয়ার মতবাদ এতই প্রভাবশালী হয়ে উঠতে শুরু করে যে প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্টধর্ম তাকে সিঁদুরে মেঘ হিসেবে গণ্য করে। একদিন একটি খ্রিষ্ট জন মিছিল তাকে দখল এবং পিটিয়ে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে ফেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সিরিলের নেতৃত্বে যে পাগান ধ্বংস কাজ শুরু হয়েছিল তা হাইপাশিয়ার হত্যার মধ্যে দিয়ে তুঙ্গে উঠতে শুরু করে। সিরিল এবারে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় হয়ে উঠলেন সন্ত সিরিল। এর পর যারা খ্রিষ্ট ভগবানের বিরুদ্ধাচরণ করেছে বা তাকে মান্য করে নি তাদের সরাসরি হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে তার নির্দেশে। অত্যাচার করে কনফেশান নেওয়ার পদ্ধতি বার করা হল নিত্যনৈমিত্তিকভাবে। বহু মানুষকে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হল, কিছু মানুষকে বন্দী করা হল আর কিছু পালিয়ে গেলেন মিশর থেকে। অবিশ্বাসীদের ধর্মস্থান দখল করতে করতে চার্চ হয়ে উঠল ধনীতম ধর্মব্যবসায়ী। শার্লিম্যানের সময় একদিনে ৪৫০০ সাক্সনকে হত্যা করা হয়।

তো আমরা দেখলাম কন্সট্যান্টাইন বা তার পরের গ্রাসিয়ান, দ্বিতীয় ভ্যালেন্টিনিয়ান, এবং প্রথম থিওডোসিয়াসএর সময় পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্টধর্ম ক্ষমতায় থাকলেও মোট জনসংখ্যার তুলনায় তাদের আনুপাত খুবই নগণ্য ছিল। যারা সে সময়ে খ্রিষ্ট ধর্মের বিরোধিতা করেছে, তাদের ‘সত্য ধর্মের শত্রু’ দাগিয়ে দিয়ে তাদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়, যারা পূর্বের পাগান সম্রাটদের পক্ষ নিয়েছিলেন তাদের হত্যা করা হয়।

গিবন বলছেন, The edict of Milan, the great charter of toleration, had confirmed to each individual of the Roman world the privilege of choosing and professing his own religion. But this inestimable privilege was soon violated; with the knowledge of truth the emperor imbibed the maxims of persecution; and the sects which dissented from the Catholic Church wre afflicted and oppressed by the triumph of Christianity

মিলানের নির্দেশ(এডিক্ট অব মিলান) জারি করেন কন্সট্যান্টাইন এবং সম্রাট লিসিনিয়াস ৩১৩ সালে যা আদতে ইওরোপিয় সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্টান ধর্মকে মানিয়ে নেওয়ার(টোলিওরেসন অব খ্রিস্টানিটি) পথ। কিন্তু যত প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্ট ধর্মালবম্বীরা বাড়তে থাকে মানিয়ে নেওয়ার পথে থাকা তত্ত্বে আস্থাবান খ্রিষ্ট মানুষের সংখ্যা কমতে থাকে। প্রথম থিওডোডিয়াস খ্রিষ্টধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্মরূপে ঘোষণা করলেন এবং পাগান আর খ্রিষ্ট ধর্ম বিশ্বাসের বাইরে থাকা মানুষদের বিরুদ্ধে ধ্বংস অভিযান তীব্র করলেন।

সে সময় রাষ্ট্রের সরাসরি অর্থ এবং ক্ষমতার আনুকূল্যে চার্চ হাজার হাজার বছরের নানান জ্ঞানচর্চা, নানান ধর্ম চর্চা, নানান অপ্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্টিয় ধর্ম/জীবনচর্যা মুছে ফেলতে উদ্যমী হয়ে উঠল, যাতে ইওরোপে তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে। তৃতীয় ও চতুর্থ শতে অখ্রিষ্টিয় মানুষদের ওপর খ্রিষ্টিয়দের পশুদের মত ব্যবহারের অভিযোগ ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্ট ধর্মের বাইরে যত ধর্ম সব নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল, ধর্মীয় সমস্ত সম্পত্তি রোজগার কেড়ে নেওয়া হল, মহিলা ধর্মপ্রচারকদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল, মৃতদের কবরখানায় কবর দেওয়া নিষিদ্ধ করা হল, মন্দির, উপাসনাগৃহ ধ্বংস বা বন্ধ বা লুঠ করা হল বা সেগুলি চার্চে রূপান্তরিত করা হল। প্রাচীন ধর্মের, ধর্মবিশ্বাসীদের সমস্ত শেকড় ধ্বংস এবং উতপাটন করে নব্য প্রতিষ্ঠিত প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্ট ধর্মের একা থাকার জমি তৈরি করা হল।

Monday, September 26, 2016

উপনিবেশবাদ বিরোধী চর্চা - ফোক শব্দের উৎস সন্ধানে৩

এর পরে জুলিয়ান এবং ভ্যালেন্সিনিয়ানের রাজত্বের কুড়ি বছরের সহনশীলতার সময় বাদ দিলে মিলানের বিশপ সন্ত এয়াম্ব্রোসের তত্ত্বে উদ্বুদ্ধ হওয়া শাসক, গ্রাসিয়ান, দ্বিতীয় ভ্যালেন্টিনিয়ান, এবং প্রথম থিওডোসিয়াস আবার পাগান বিরোধী অভিযান কায়েম করেন। গ্রাসিয়ান পাগান পুরোহিত, মহিলা আগুণ পুজক পুরোহিত ভেস্টাল ভার্জিনসদের রোজগার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করেন, এবং অল্টার অব ভিক্ট্রিকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
পশ্চিম রোম সাম্রাজ্যের সম্রাট হয়ে বসেন এর পর ভ্যালেন্সিয়ান, তিনি পাগানদের অল্টার অব ভিক্ট্রি ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। তিনিও নতুন করে বলি দেওয়া আর মন্দিরে যাওয়া নিষিদ্ধ করেন আবার। মন্দিরগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
পূর্ব সাম্রাজ্যে বসেন থিওডোসিয়াস - তিনি বলি, ভক্তের নিজের ওপর ধর্মীয় নিপীড়ন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করেন। রাজত্বের শেষ দিকে(৩৯১ সালে) তিনি যে নির্দেশ জারি করেন তার নাম থিওডোসিয়ান ডিক্রি(সূত্র পূর্বএ উল্লিখিত) - তা সার্বিকভাবে পাগানতত্ত্ব নিষিদ্ধ করণ করার প্রথম ধাপ - সার্বিকভাবে সমস্ত পাগান তত্ত্বের পাগান আচার পাগান গোষ্ঠী নিষিদ্ধ হল।
৩৯২তে তিনি সামগ্রিক সাম্রাজ্যের আধিকারী হয়ে পাগান ধ্বংসে উঠে পড়ে লাগেন - পাগান পুরহিতদের হত্যা, মন্দির লুঠ ধ্বংস - পাগানদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়েন, এমনকি বাড়িতে ধর্মচর্চা করা হচ্ছে জানাগেলে তা দণ্ডদায়ী হত। তবুও সার্বিক অত্যাচারের মধ্যেও পাগানেরা গোপনে তাদের ধর্ম চর্চা চালিয়ে যেতে থাকেন। ৩৯৩ সালে তিনি অলিম্পিক খেলা নিষিদ্ধ করেন(R. MacMullen, "Christianizing The Roman Empire A.D.100-400, Yale University Press, 1984, ISBN 0-300-03642-6)।
রোম সাম্রাজ্যের পতন হওয়া পর্যন্ত পাগানদের বিরুদ্ধে রাষ্টীয় নিপীড়ন চলতে থাকে। তার পরের সম্রাট আর্কাডিয়াস, অনারিয়াস, দ্বিতীয় থিওডোসিয়াস, মার্সিয়ান, এবং লিও দ্য থ্রাসিয়ান প্রথম সেই পাগান বিরোধী নীতি চালিয়ে যেতে থাকেন।
তবুও সাম্রাজ্যের অভিজাতরা, প্রজারা অধিকাংশ পাগান ধর্মে বিশ্বাসী। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হতে থাকে। রাষ্ট্রের অত্যাচারে খ্রিষ্ট ধর্ম পালন করলেও গোপনে ভু জনগণ পাগান জীবনযাত্রা চালিয়ে যেতে থাকেন।
কিছু পাগান সরাসরি রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন আর তাদের ধর্মীয় তত্ত্বে দখলদারি ধ্বন্সের বিরুদ্ধে গলা চড়াতে থাকলে তাদের সমস্ত সাহিত্য ধ্বংস করা শুরু হয়। খ্রিষ্টিয়রা সমস্ত পাগান রাজনৈতিক লেখা ধ্বংস করে।
তার পরে আবার কিছু বছর পাগানদের বিরুদ্ধে লড়াই থেমে যায়।

উপনিবেশবাদ বিরোধী চর্চা - ফোক শব্দের উৎস সন্ধানে২


দ্বিতীয় কন্সট্যান্টিয়াস ক্ষমতায় এসে পাগানদের বলি দেওয়ার প্রথা রোধ করেন আইন করে। তার নিজের বিশ্বাস ছিল "Cesset superstitio; sacrificiorum aboleatur insania" অর্থাৎ কুসংস্কার নির্মূল হোক, বলি দেওয়ার ধর্মান্ধ প্রথা বিলুপ্ত হোক (Let superstition cease; let the folly of sacrifices be abolished)। সরকারি নিয়ম পালন না করলে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হল।(সূত্র http://www.tertullian.net/…/libanius_pro_templis_02_trans.h…)
তিনি কিছু মন্দির বন্ধ করালেন, সেখানে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন এবং সরকারি যত ভর্তুকি ছিল সব তুলে নিলেন।(সূত্র পূর্বের দেওয়া হিস্ট্রি অব চার্চ আর "The Codex Theodosianus On Religion", XVI.x.4, 4 CE)। জনগণকে পাগান মন্দির দখল/ধ্বংসে উৎসাহিত করা হল, বহু খ্রিষ্ট বিশ্বাসী পাগানদের পরিকাঠামো ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লাগে।
তবুও জনগণেশের অধিকাংশ কিন্তু পাগান বিশ্বাসী - প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্ট অনুগামী নন। খ্রিষ্টিয় ধর্মতত্ত্ব অনুসারে জ্যোতিষী, জাদুটোনায় বিশ্বাসী জাদুগর এবং অন্যান্য পুরোহিতদের ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে। মনে মনে ভয় তার এই ধারনাকে লুঠ করে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার সিংহাসন দখল করে নিতে পারে।
হেবারম্যান(C. G. Herbermann & Georg Grupp, "Constantine the Great", Catholic Encyclopedia, 1911, New Advent web site.) বলছেন পাগান বিরোধী আইন মধ্য যুগে ইনকুইজিশন চালাতে সাহায্য করেছিল।

উপনিবেশবাদ বিরোধী চর্চা - ফোক শব্দের উৎস সন্ধানে১

প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্টধর্ম(যা খ্রিষ্টর সহনশীলতার শিক্ষার সম্পূর্ণ বিরোধী) প্রাথমিকভাবে ইওরোপে গ্রাম সমাজ, তার জ্ঞানচর্চা, তার ধর্ম বিশ্বাস, তার জীবনধারণের পদ্ধতির ওপর প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্টধার্মিক বিশ্বাস, আচার আচরণ চাপিয়ে দিতে থাকে। অন্যদিকে গায়ের জোরে রাষ্ট্র পাগান(যা আদতে বহু ছোট ছোট ধর্মীয় এবং আচার বিশিষ্ট জীবনধারণ, তার মধ্যে কিছু ছোট খ্রিষ্ট বিশ্বাসী গোষ্ঠীও ছিল) বিশ্বাস, জীবনযাত্রা, ধর্মবিশ্বাস, মন্দির তৈরি করা, বলি দেওয়া ইত্যাদিকে প্রথমে তিলে তিলে পরে আইন করে ধ্বংস করে সাম্রাজ্যিক খ্রিষ্ট ধর্মের বাইরে যত ছোট খ্রিষ্ট বিশ্বাসী গোষ্ঠী, অন্যান্য অখ্রিষ্টিয় সমাজের ওপর লুঠ আর খুনের রাজত্ব কায়েম করে। ৩০০ শতে ইওরোপে শাসন করা কনস্টানটাইনের ঘোষণা ছিল, "The God of the Christians was indeed a jealous God who tolerated no other gods beside him. The Church could never acknowledge that she stood on the same plane with other religious bodies, she conquered for herself one domain after another"(সূত্র "Constantine the Great". Catholic Encyclopedia. New York: Robert Appleton Company. )
এছাড়াও
He(অর্থাৎ Constantine) resorted to derogatory and contemptuous comments relating to the old religion; writing of the "true obstinacy" of the pagans, of their "misguided rites and ceremonial", and of their "temples of lying" contrasted with "the splendours of the home of truth"(সূত্র Hughes, Philip (1949), "6", A History of the Church, I, Sheed & Ward)
তখনও পূর্ব ইওরোপে প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিষ্টরা জনসংখ্যার অর্ধেক আর পশ্চিম ইওরোপে মাত্র কুড়ি শতাংশ।
তার কয়েকশ বছর পরে নিজেদের মহাদেশে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ধ্বংস করে সে এক ধর্ম, এক রাষ্ট্র, এক জাতি সুলভ ধারণাটি নিয়ে দ্বিতীয়বার ইসলামের ওপর আক্রমণ শানায় ধর্ম যুদ্ধের নাম করে।

রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলাবতী মুদ্রার যৌথ ব্যবস্থাপনায় এবং ভারতীয় মানববিজ্ঞানসর্বেক্ষণের সহায়তায় গ্রামচর্চা সম্মেলন

রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়, ৬, ৭ আশ্বিন ১৪২৩
বন্ধুরা, আমরা কলাবতী মুদ্রা, বা বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘ, বঙ্গীয় পারম্পরিক অভিকর শিল্পী সঙ্ঘর সদস্যরা প্রায় চার বছর ধরে বাঙলার গ্রাম বিষয়ক জ্ঞানচর্চা বিষয়ে সম্মেলন আয়োজনের স্বপ্ন দেখতাম। বহু সংগঠনের সঙ্গে কথা হয়েছে, অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু সে কাজটি বাস্তবে আয়োজিত করা যায় নি, যতদিন না রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় আর ভারতীয় মানববিজ্ঞানসর্বেক্ষণ এক যোগ হয় নি কলাবতী মুদ্রার প্রস্তাবনায়।
প্রায় মাস চারেক আগে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য বঙ্গরত্ন অনিল ভুইমালিকে এ বিষয়ে সকুন্ঠিত প্রস্তাব দিতে তিনি এক কথায় রাজি হয়ে যান। তার কিছু পরে কলকাতায় ভারতীয় মানব বিজ্ঞান সর্বেক্ষণের পূর্বাঞ্চলের উপনির্দেশক কাকলি চক্রবর্তী প্রস্তাবের পরিকল্পনা শুনে জানান, এই সম্মেলনে তারা আহারের বন্দোবস্ত করে দিতে পারেন - বাকি খরচ উদ্যোক্তাদের বহন করতে হবে।
প্রাথমিকভাবে কলাবতী মুদ্রা বক্তা হিসেবে প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে, সম্প্রীত চক্রবর্তী, সৌমিক মুখার্জী, অনুপম পাল এবং বাংলাদেশের অধ্যাপক গবেষক শাহিনুর রহমান টুটুলকে রাজি করায় তাঁদের কাজের কথাগুলি তুলে ধরার জন্য। জয়া মিত্র ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য যেতে পারেন নি। আর শাহিনুর অসুস্থ হয়ে পড়ায় আসতে পারেন নি - কিন্তু লেখা ও ছবি পাঠিয়েছিলেন, সেটি বিতরণ করা হয়।
তো এই আশ্বাসে বুক বেঁধে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় নিবন্ধক ড পঙ্কজ কুণ্ডু এবং সহ নিবন্ধক মাননীয় নির্ঝর সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় এবং অধ্যাপক দীপক বর্মন এবং কলাবতী মুদ্রার লেখক এবং সাংবাদিক সুনীল চন্দ আর কলাবতী মুদ্রার অছি সদস্য মধুমঙ্গল মালাকারের প্রচণ্ড খাটাখাটনিতে এই দুদিনের (প্রাথমিকভাবে কথা ছিল দেড় দিনের; পরে দেখা গেল তা পুরো দু দিন টানতে হল) সম্মেলনটি পরিকল্পনা করা হতে শুরু করল। সম্মেলনের সংবাদ পেয়ে বাংলা জুড়ে বহু গবেষক, অধ্যাপক, চর্চাকারীও তাদের গবেষণালব্ধ উপলব্ধি উপস্থিত করার আগ্রহ জানানোয়, মূল তিনটি পর্বের সঙ্গে আরও তিনটি পর্ব যোগ করতে হল।
শুরুর দিন মাননীয় উপাচার্য মহাশয় অনিল ভুইমালি, নিবন্ধক মাননীয় ড পঙ্কজ কুণ্ডু এবং সহ নিবন্ধক মাননীয় নির্ঝর সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির দুই সদস্য মাননীয় ড তাপস মোহান্ত এবং মাননীয় ড অশোক দাস আর মধুমঙ্গল মালাকারের উপস্থিতিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন। শুরুর ভাষণ দেন উপাচার্য মহাশয় এবং বলেন বিশ্ববিদ্যালয় আগামি দিনে গ্রামীনচর্চার ওপর জোর দেবে। গ্রামীন প্রযুক্তি বিষয়ে তাঁরা প্রথমে একটি কম সময়ের প্রশিক্ষণ এবং পরে দুবছরের পাঠ্যক্রম আয়জনের কথা ভাবছেন। তিনি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকবৃন্দ সম্মেলনের আয়োজকদের শুভেচ্ছা জানান।
৬ আশ্বিন, শুরু হল গ্রামচর্চা সম্মেলন। একটি নতুন শব্দ, নতুন অইওরোপিয় অভিধায় গ্রামকে দেখার চেষ্টার প্রচেষ্টা। অন্তত দুশ দর্শক, অংশগ্রহনকারীর উপস্থিত ছিলেন প্রথম দিনে, দ্বিতীয় দিনে প্রায় অরররধেক হয়। বলা দরকার বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘ আর বঙ্গীয় পারম্পরিক অভিকর শিল্পী সংঘের ৫০ জনের কাছাকাছি সদস্য প্রথম দিন সারাদিন প্রায় উপস্থিত ছিলেন। সংঘের যুবা সদস্যরা খুব সক্রিয় ছিলেন, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতোকোত্তর শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যক্রমের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। তাদের অবদান ভোলার নয়।
আরও বলা দরকার শ্রোতাদের সক্রিয় সহযোগিতায় এবং উদ্যমে আর উত্তপ্ত তাত্ত্বিক বিতর্কে এই অনুষ্ঠানটি শেষ হয় - বিশেষ করে দ্বিতীয় দিনে তৃতীয় মূলপর্বে লোক সংস্কৃতি বনাম গ্রামচর্চা বিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের মাননীয় সহকারী জেলাশাসক অমল রায়, দীপঙ্কর দে এবং বিশ্বেন্দু নন্দের উচ্চগ্রামের মতান্তরী বিতর্ক বহু মানুষকে এ বিষয়ে আগামী দিনে আরও গভীরে যেতে ভাবাবে।
উদ্যোক্তা, কলাবতী মুদ্রার পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য মহাশয়ের নেতৃত্বে প্রত্যেকজন কর্মী, রায়গঞ্জ শহর এবং দুই দিনাজপুরের নানান উতসাহী আলোচন শ্রোতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সংঘের সদস্যদেরকে শুভেচ্ছা, কৃতজ্ঞতা জানানো গেল।

Monday, September 19, 2016

অলীক বিশ্বগ্রাম্য স্বপ্ন

...দিনাজপুরের মধুমঙ্গল মালাকার সহাস্যে হাত ধরলেন চিনা গ্রাম উতপাদক মা হুইএর,
...জলপাইগুড়ির সিতিন রাভা কোমরে বাঁধা তাঁত নিয়ে কথা বলছেন মেক্সিকোর রুমা হোসের তাঁতের সঙ্গে
...দশাবতার তাসের শীতল ফৌজদার গাছের রঙ নিয়ে রাঙিয়ে দিচ্ছে তুর্কির বাবরের পট
...রাজবংশী মালতী রায় মাটির চাকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে ঘাণার গুমুম্বার হাতে গড়া মাটির কলসির ছাওয়ায়
...নেপাল সূত্রধরের ঝুমুরের সুরে মুখোশে রং মাখছে পেরুর গ্রামীন তৈলচিত্রী সান্তানা
...রাবণকাটা নাচের ছন্দে নেচে উঠছে তাতার মহিলারা
...মুর্শিদাবাদের বেরা ভাসানোর আলোয় ভেসে যাচ্ছে মিশরের নীল নদ
...ডোকরা কামার অনিল কর্মকারের ধাতুর পাত্রে ধাতু রাখছে সাহারার ওকাম্বো
...বীরভূমের রোশেনারার নক্সীকাঁথার মাঠে মিশে যাচ্ছে যশোরের সাব্রিনার সূঁচ
...কাঁধে বাঁক নিয়ে মেদিনীপুরের চন্দনপুরের কাঁসার বাসন/মুণ্ডমূর্তি বিক্রেতা রাম জানা সীমান্ত উজিয়ে তামুক ফুঁকছেন করাচীর মাজারের পাশের মহল্লার জাকিরের ধাতু ঢালাই কারখানায়
...বাড়িতে যত্ন করে শীতকালে বড়ি দেওয়া মালতীর চোখের আলোয় ভেসে যাচ্ছে ইরাকের শামিমার শিকড় আর স্বজন হারানোর আর্তি
...হরিশের চাষের নীল রং নিংড়ে য়ুনানের তাঁতি বুনছে স্বপ্নের মসলিন
...বৃন্দাবনের গালার পুতুল সীমান্ত নিংড়ে দোড়চ্ছে লাওস-ভিয়েতনামের পানে
...মাধইদাসমোহান্তর একতারার তারসপ্তকে লেপ্টে রয়েছেন ইরাণের চাষী
...পটিদারদের আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে কথা বলছেন য়ুগোস্লাভিয়ার পটিদার মামলুক
...চাঁদের পথ চেয়ে আজো বসে আছেন সিঙ্গুরের সিংহল পাটন গ্রাম থেকে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া বিজয় সিঙ্ঘের উত্তরসূরীরা
স্বপ্ন ভেঙ্গে দেখি সীমান্তের কাঁটাজালে রাম জানা ফেলেনি হয়ে ত্রিভঙ্গ, সূর্য তার পিতলের মুণ্ডমূর্তিতে পড়ে জল চকচকে চোখে বলছে ঠিক দিন একদিন আসবেই...আসবেই...আসবেই...
মধুমঙ্গলেরা জানেন একদিন না একদিন এক দেশের গ্রামীন উতপাদক অন্য দেশের উতপাদকের চোখে চোখ, হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ দিয়ে বলবে এ বিশ্ব আমরাই ঠিকানা, এ বিশ্ব আমরাই গড়েছি...
সেই অনাগত সীমান্তের বেড়াহীন দিনের দিকে তা্কিয়ে আজ বাংলার গ্রাম শিল্পীরা...লড়ে যান...