উত্তররঙ্গ শেষে দ্য সানডে ইন্ডিয়ান পত্রিকা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে. প্রশংসার ছলে বেশ কিছু বিসদৃশ সমালোচনাও তারা করেন. মেলায় উপস্থিত একজন শিল্পী মেলা বিষয়ে খুবই কটু কথা বলেন, এবং পত্রিকার প্রতিবেদক সেটি প্রকাশ করেন, কিন্তু সংগঠণদের বক্তব্য ছাড়াই. এ ছাড়াও বেশ কিছু অসংগতি লেখায় ছিল, যা উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে সংগঠণ মনে করেছে.
এ উদ্দেশ্য মাসখানেক পূর্বে সংগঠণ পত্রিকাকে একটি চিঠি পাঠায়. বিশ্বস্ত সূত্রে সংবাদ, পত্রিকায় এই চিঠিটি প্রকাশিত হবে না. আজও সেই চিঠি খামবন্ধই রয়েছে.
পত্রিকায় প্রতিবেদনের বেশ কিছু অংশে জনমানসে সংঘ সম্বন্ধে বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে. তাই সংঘ বাধ্য হয়ে সেই প্রতিবাদপত্রটি প্রকাশ করতে বাধ্য হল.
মাননীয়
সম্পাদক মহাশয় সমীপেষু,
দ্য
সানডে ইন্ডিয়ান, বাঙলা সংস্করণ,
কলকাতা।
মহাশয়,
বাঙলার গ্রামীণ শিল্পীদের তৈরি একমাত্র এবং একবছর আগে তৈরি হওয়া একটি
সংগঠণ, বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্রশিল্পী সংগঠণের সঙ্গে একযোগে বাংলার
ব্রতচারী সমিতি, গুরুসদয় সংগ্রহশালা এবং কলাবতী মুদ্রা উত্তররঙ্গ ১২ আয়োজন
করে। এই
ঘটনাটি আপনাদের পত্রিকায় এতটা স্থান পাওয়া আশাতীত। মেলার যে
২০-২২টি প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্রিকা-সংবাদপত্রে প্রকাশ পেয়েছে, এটি সম্ভবতঃ দীর্ঘতম
এবং মানবিকও। কর্পোরেট, সরকারি, বেসরকারি দাতাসংস্থার দান ছাড়া শুধুই বন্ধুদের সাহায্য
ভিত্তিকরে কলকাতা শহরের বাইরে, তালপাকা গরমে, গ্ল্যামারহীন গ্রামীণ শিল্পীদের নিয়ে
১১দিনের, চারটি সংস্থার উদ্যোগে এ ধরণের একটি অনুষ্ঠান প্রচারে আপনাদের সামিল হওয়া
আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। ১০ই জুন, ২০১২ সংখ্যায় অন্তরঙ্গ উত্তবঙ্গ প্রতিবেদনের জন্য উদ্যোক্তাদের পক্ষে বঙ্গীয় পারম্পরিক
কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘের পরম্পরাগত প্রাণঢালা ধন্যবাদ।
উত্তররঙ্গ ১২র সংগঠকদের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনে দর্শণগত ১৫ দফা ফরিয়াদ। চারটি সংগঠণের
পক্ষে চিঠিটা লিখছে বঙ্গীয়
পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ। বেশ বড় হলেও, আশাকরি সম্পাদকের নজর কাড়বে। নইলে হয়ত জনমানসে
ভুল তথ্য যাবে।
১) শ্রদ্ধেয় শ্রীনেপাল সুত্রধরের প্রসঙ্গ। সংঘ প্রধাণ
তিনি। সংগঠণের গুরুজীও। তিনি
কলামণি পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং ভারত সরকার তাঁকে শিল্পগুরু উপাধি দিয়েছেন। বিদেশে যাওয়ার
সঙ্গে প্রতিবেদনে এই পরিচয়গুলো উল্লেখ করলে ভালহত। ছোটখাট চেহারার
শ্রদ্ধেয় নেপাল সূত্রধর যৌবনে সাংবাদিক কথিত আমেরিকা-ফিলাডেলফিয়া-ওয়াশিংটন যেতে
পারেননি।
সান্ত্বনা পুরস্কারটি পেয়েছেন নেহাত বৃদ্ধ বয়সেই।
২)তাঁর আরও বড় পরিচয়, বাঙলার পারম্পরিক শিল্পীরা যে
জেলা ভিত্তিক সংগঠণ তৈরি করেছেন, সেই সংগঠণের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তিনি। এই সংগঠণ শুধু বাঙলার
গ্রামীণ শিল্পীরাই নিজেদের হাতেই তৈরি করেন নি, সংগঠণের নানান সিদ্ধান্ত শিল্পীরা নিজেরা
নেন। অন্য
সংগঠণের তুলনায় অনেকটা খোলামেলাভাবেও নিতে পারেন। সংঘের প্রশাসনিক
নিয়ন্ত্রণ শিল্পীদেরই হাতে। বাঙলায় এধরণের সংগঠণ হাতে গোনা। যে সব সংগঠণ রয়েছে মূলতঃ সংগঠক মধ্যবিত্তদের হাতে তৈরি। শিল্পীদের ভাল
করার জন্য, উন্নয়ণের জন্য সংগঠণ তৈরি হয়। শিল্পীরা সেখানে নিমিত্ত, পুতুলমাত্র। তাঁরা শুধুই হাতির বড়
দাঁত, দেখানোর জন্য। পশ্চিমবঙ্গে সংঘেরমত সংগঠণ বিরল। সেই বিরল সংগঠণে গুরুজী নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সংঘ গর্বিত। তিনি উত্তররঙ্গ
১২ সংগঠকদের মাথা। মেলার প্রধাণতম উদ্যোক্তা। এইটুকুর বেশি আর কিছু সংঘ বলছে না। মেলার নানান প্রচারপত্র এবং চিঠিটির অনুমোদক কিন্তু গুরুজীই। তবে সংঘ
দার্শণিক ভাবে মনে করে, মতবিরোধ সংগঠণের প্রশাসন এবং কাজকর্মের সহায়ক।
৩) এবার তোরণের বিষয়টি। নুন আনতে সংঘের পান্তা
ফুরোয়। সংঘের সম্বল শুধু
পারম্পরিক শিল্পীদের দেয় সদস্য চাঁদা আর বন্ধুদের ভালবাসা নামক অমূল্য দান। মেলায় তোরণ গড়ন বিষয়ে এই শহুরে
রসিকতাটা কী খুব প্রয়োজন ছিল! ৩০ হাজারের বিপুলতম সংখ্যাটি প্রতিবেদক উল্লেখ
করেছেন, সেটি তো তোরণ স্পনসরশিপ চাওয়ার টাকা। বরাদ্দ অর্থ নয়। কার অর্থ, কে
বরাদ্দ করে! মেলার মাসখানেক আগে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অন্য সিদ্ধান্ত না হওয়া
পর্যন্ত, সংঘ একটাও স্পনসরশিপ অথবা দাতা সংস্থার দান নেবে না।
৪) এমত অবস্থায় কলকাতার নানান পুজোয় পুরস্কার পাওয়া দিনাজপুরের
খুনিয়াডাঙির যে কাঠ-বাঁশ শিল্প সমবায়ের সদস্য শিল্পীদের তোরণটি তৈরি করার কথা ছিল
তাঁরা অর্থাভাবে জোকায় আসতে পারেন নি। সংঘ অভিকর শিল্পীদের দল ছাড়া কোনও সদস্যকেই আসা যাওয়ার অর্থ, মাপলপত্র
আনার অর্থ দিতে পারেনি। শুধু দোকান তৈরি, থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। ব্রতচারী
সমিতি দিয়েছিল থাকার পরিকাঠামো, আর গুরুসদয় সংগ্রশালা মেলার মাঠ আর প্রদর্শণীর
স্থান।
সংঘ তোরণ করিয়েদেরও আসা যাওয়ার অর্থ দিতে পারেনি। তাঁরাও আসতে
পারেন নি।
পরেরবারের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সংঘ সদস্যদের কথায় আস্থা রাখে। সংঘে সদস্যদের স্বাধীণতা অনেক বেশি। এটিতো শিল্পীদের সংগঠণ।
৫) না, দুটো তোরণের একটাও তৈরি হয় নি। তার জন্য সংঘ বিন্দুমাত্রও
লজ্জিত নয়। উত্তররঙ্গ ১২য় সংঘের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বাঙলা আর বাঙলার বাইরে শিল্পগুলোর পরিচয় করানো
এবং শিল্পীদের ঐতিহ্যের বাজার ধরা। শহরের বাবুদের তোরণ দেখানো নয়। যদিও হলে ভাল হত। তবে দুটোতেই সে সফল। তার একটা উদাহরণ আপনাদের পত্রিকায় দীর্ঘ প্রতিবেদন। অন্যটি মেলায়
শিল্পীদের বিক্রির পরিমান।
৬) শহুরে মধ্যবিত্তনন্দিত কর্পোরেটিয় গ্লসে সংঘ লালায়িত
নয়। অকেন্দ্রীভূত পারম্পরিকতার দর্শণেই সে ঋদ্ধ। তাই কলকাতা শহর
ছাড়িয়ে জোকায় মেলার আযোজন। ধণীবন্ধু, কর্পোরেট, বিজ্ঞাপণ, আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা এবং সরকারি সাহায্য
না নেওয়া এমন একটি একবছর বয়সী গ্রামীণ শিল্পীদের তৈরি সংঘের কলকাতার বাইরে,
অত্যধিক গরমে ১১ দিন ধরে চলে অন্ততঃ ১০ লাখ টাকা বিক্রি হওয়া মেলার উদারহণ বিনীতভাবে চাইছি। এই পোড়া
বাংলায় আর একটা হয়ত সংঘ-বন্ধু পাব।
৭) নাটক কিংবা পাঁচালি বিষয়ে বোধহয় আরও একটু বিশদে বললে
ভাল হত। নাটক
এবং পাঁচালি দুটোই হয়েছে। এসেছিল
খন নাটক। তাঁরা
দুদিন দুটো নাটক করেছেন। এসেছিল
গম্ভীরা নাচ। তারাও
দুদিন অভিনয় করেছেন। এসেছিল
বিষহরা এবং সত্যপীর। তারাও
দুদিন করে অভিনয় করেছেন।
উদ্বোধনে ছিল গায়ে কাঁটা দেওয়া বাঙলার ব্রতচারী সমিতির রায়বেঁশে আর ঢালি। কলাবতী মুদ্রার
শিল্পীরা অন্য দিনগুলি বাঙলার নৃত্য প্রদর্শণ করেছে। এগুলোও উল্লেখ
করলে বোধহয় ভাল হত। সিদ্ধান্তের স্বাধীণতা আপনাদের।
৮) হ্যাঁ, অনেক কিছু করার ছিল। মেচ নাটকের ২৮
জন অভিনেতা। কামাক্ষ্যাগুড়ি
থেকে কলকাতায় আনতে পারেনি অর্থের জন্য। মেচ সমাজের নেতা দারেন ঈশ্বরারি গত বছর সংঘের জলপাইগুড়ির যুগ্ম-সম্পাদক
ছিলেন। রাভা
নৃত্যে ১৮ জন সদস্য। তাই ধুপগুড়িরও
১০ কিমি ভিতরে গয়েরকাটা জঙ্গলের রাভা গ্রাম থেকে কলকাতায় আসা যাওয়ার অর্থ জোগাড়
করতে পারে নি। রাভা সমাজের নেতা গনাত রাভাও গত বছর সংঘের জলপাইগুড়ির যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। অর্থের জন্য
ঘোড়া নাচও করতে পারেনি। খন আর গম্ভীরার
মোট ১৩ জনের আসাযাওয়ার অর্থ জোগাড় করতে পেরেছিল সংঘ। দিয়েছিলেন
সংঘের সম্পাদক মধুমঙ্গল।
কোচবিহারের যতীন গীদালের দলের ১১ জনেরও অর্থ দিয়েছিলেন ভাওয়াইয়া গায়ক,
জনপ্রতিনিধি, আব্বাসউদ্দিন স্মরণ সমিতির সুখবিলাস বর্মামহাশয়। এগুলি উল্লেখ
না করলে পাপ হয়।
৮) সদস্য শিল্পীদের ন্যুনতম পারিশ্রমিকতো দূরস্থান, যাদের
আসার কথা ছিল তাদের অনেকরই যাতাযাতের টাকা তুলতে পারেনি সংঘ। তাঁরাও আসেতে
পারেন নি। এটাই
বাস্তব। সাধ অনেক ছিল। সাধ্য
মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছে। সংঘ দুটোকে মেলাতে পারেনি সবসময়। স্বীকার করতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা নেই।
১০) কর্মশালাতো হয়েছেই। আপনাদের
সাংবাদিক কদিন মেলায় এসেছেন এই প্রতিবেদন রচনা করতে, সেই কুরুচিকর কচকচানিতে
যাচ্ছি না। কিন্তু
বাঙলার ব্রতচারী সমিতির সদস্যসহ আরও অনেক স্থানীয় মানুষ প্রায় রোজ বিকেলে প্রণম্য
শিল্পীদের সঙ্গে কর্মশালা করেছেন, গুরুসদয় সংগ্রশালার বিরাট প্রদর্শণী কক্ষেতে। প্রয়োজনে এই
মেলার অন্যতম সংগঠক, সমিতির অশোকজী অথবা গুরুসদয় সংগ্রহশালার প্রধান, ড. বিজন মন্ডল
অথবা সংঘের কাউকে একটা ফোনাঘাত অন্ততঃ করা যেত। সংঘের দুই
সম্পাদক, নেপাল গুরুজী এবং মধুমঙ্গল মালাকার, কাঠ শিল্পী ভবানী বিশ্বাসসহ আরও
অনেকেই কর্মশালা করেছেন।
১১) না। একদিনও গল্প বলা হয় নি। যে বন্ধুর মেলার ১১ দিন আর মেলার আগের ১ দিন, মোট ১২ দিন খাওয়ার দেওয়ার কথা
ছিল তিনি প্রথম এক বেলার খাওয়ার দিয়েই ভেগে পড়লেন। প্রথম ৮দিন
গড়ে রোজ প্রায় ১০০ জনের বেশি শিল্পীর খাওয়ার যোগাড়ের দায়। সংঘের তখন মাথার
ঘায়ে কুকুর পাগল অবস্থা। জয়া মিত্র আর কেন্দ্রিয় সরকারে হায়দ্রাবাদে চাকরি করা মধুমিতা
মুখোপাধ্যায়ের গল্পবলার আসরটি পরিচালনার কথা ছিল। ব্যক্তিগত
কারণে তাঁদের কেউই আসতে পারেন নি। জয়াদি এসেছেন শেষ দিন। তাঁরা এলেও হয়ত করাও যেত। তখন সংগঠকদের প্রধাণ চিন্তা রোজকার খাওয়ার জোগাড়। এর জন্য
ব্রতচারী সমিতির তথাকথিত গরীব রাঁধুনির দল যা করেছেন, তা সংঘ সারা জীবন কৃতজ্ঞ
চিত্তে মনে রাখবে।
মনেরাখবে সেই দুই শ্রদ্ধেয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দম্পতির দান, যারা সংঘের দুর্দিনে তাঁদের
দুমাসের পেনসনের টাকা তুলে দিয়েছিলেন সংঘের হাতে। এই সুযোগে প্রকাশ্যে
সংঘ তাঁদের সকলকে প্রণাম জানাল। দুঃখের দিনেই বন্ধু পাওয়া যায়। সংঘ বন্ধু খুঁজছে। সংঘ ভাগ্যবান। কিন্তু কোনও অজুহাত নয়। অনেককিছুই সে পারেনি।
১২) মেলায় একমাত্র অংশগ্রহণকারী যিনি সংঘের সদস্য নন। তাই সংঘ ঠিক করেছে, নুরজাহান বেগমকে নিয়ে একটা কথাও বলবে না। সংঘের উত্তরে
তার কথা শোনা যাবে না। একতরফা হয়ে যাবে। তিনি কি করেছেন, সংঘ কী করেছে, তিনি কত পরিমাণ বিক্রি করেছেন, কত পরিমান
বিক্রি করতে তাঁকে সংঘ সাহায্য করেছে তার বিশদ গায়ন গাইছে না। শ্রদ্ধেয়া রুবি পালচৌধুরী মেলায় এসে তাঁর কত দ্রব্য কিনেছেন, সে তথ্য হয়ত ক্রাফটস কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গলএর হিসেবে পাওয়া যাবে। নুরজাহান মেলার
অব্যবস্থা, মেলা করিয়েদের অপমান বিষয়ে অনেক কথা বললেন (কুত্সা রটালেন বলছি না)। নিরাপত্তার কথা
বলেছেন।
ডাকাতির কথা বলেছেন।
ক্ষতিপূরণের কথা বলেছেন।
জোরগলায় বলেছেন ভাল শিল্পীরা যাতে মেলায় না আসে তিনি দায়িত্ব নিয়েই দেখবেন। আপনারাও লিখলেন। ভাল কথা। আপনারা
বীরভূমে ফোনধাওয়া করে এত্তসব জানলেন। সংঘের একটিও বক্তব্য জানলেন না! প্রতিবেদনে ভারসাম্য থাকল কী! তবু পত্রিকাকে
সাংবাদিকতার এথিক্স নিয়ে গ্রামীণ আনপড় শিল্পীদের সংঘের কোনও কিছু বলা ধৃষ্টতা।
১৩) মহাশ্বেতা দেবীর আশীর্বাণীর ফ্লেক্স, অথবা মেলা প্রাঙ্গণে অতি
সাধারণ মাপের ফ্লেক্স সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে চুপই থাকারই সিদ্ধান্ত নিল সংঘ। তিনি এতই বড়
মাপের মানুষ তাঁকে নিয়ে কেনও বিতর্কে জড়াতে চায় না সংঘ। তাঁর
আশীর্বাণী পেয়েছে সংঘ। তিনি
আমাদের আশীর্বাদ দেওয়ার যোগ্য মনে করেছেন, সংঘের সদস্যদের কাছে এটাই বড়় কথা। আপনারাও তার আশীর্বাণীর
অংশবিশেষ তুলে দিয়েছেন।
ধন্যবাদ।
১৪) মেলা ঘেরা দেওয়াল জুড়ে শ্রদ্ধেয় সম্পাদক নেপাল সূত্রধর অথবা পটুয়া
বাহার চিত্রকরের আঁকা ছবি একবারওকী প্রতিবেদকের চোখে পড়ল না। শ্রদ্ধেয় বাহার
চিত্রকরের সঙ্গে ছিলেন তাঁর শ্যালিকা শ্রদ্ধেয় জামেলা চিত্রকর। নিজগুণে তিনিও
বড় শিল্পী। এটি উল্লেখ করলে সবারই বোধহয় ভাললাগত।
১৫) সংঘ সারা বাঙলার পারম্পরিক শিল্পীদের হাতে তৈরি
সংগঠণ। সংঘের মেলায় সংঘের ১৪টি জেলার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। রয়েছেন তাবড়
তাবড় পারম্পরিক দেশিয় আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যবাহী শিল্পী, যাদের অধিকাংশই বংশ
পরম্পরায় বাংলার প্রবল শিল্পীত ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন। তাদের অনেকেই
স্বভাবগতভাবে মুখচোরা।
দার্শনিকভাবে খুবই নম্র। এত বড়
মেলা সংগঠণে তাঁদের উদ্যম হয়ত চোখে পড়ে না। নীরব কর্মী, কিন্তু সংঘের সংগঠণে তাঁদের ভূমিকা অসম্ভব কার্যকর। এমত মহাতেজ
থাকতে সংঘের সংগঠণের একজনমাত্র সাধারণতম সংগঠকের নাম উল্লেখকরা, য়ৌথগ্রাম্য মানসিকতার পরিপন্থী। খুব ভাল
হত যদি সংগঠকরূপে পুরুলিয়ার নেপাল সূত্রধর, দিনাজপুরের মধুমঙ্গল মালাকার, ২৪
পরগণার পাট শিল্পী নারায়ণ পৈত, বর্ধমানের গয়না শিল্পী সোধন দাস, বীরভূমের গয়না
শিল্পী শেখ বাদল আর মনোজ কাজী, নবদ্বীপের পিতল শিল্পী রবীন্দ্রনাথ পাল, বেলপাহাড়ির
পাথর শিল্পী শ্যামল মিস্ত্রি, উত্তর ২৪ পরগণার চামড়া শিল্পী নির্মল কর্মকার, নীলগঞ্জের
কাঠের তৈজস শিল্পী বুলবুল কর্মকার, বাঁকুড়ার শঙ্খ শিল্পী নিতাই নন্দী, উষাহরণের বাঁশ
শিল্পী শান্তি বৈশ্য, কোচবিহারের বাঁশ শিল্পী গৌরাঙ্গ বর্মণ, সংঘের প্রথম সদস্য, ছিনাথ
বহুরূপীর শিষ্যর শিষ্য ৭২ বছর বয়সী বীরভূমের সুবল দাসবৈরাগ্য, নাটক লিখে জেলখাটা
খন শিল্পী ৮২ বছরের মাধাই রায় মহান্তরমত উপস্থিত ৪০ জনের সংঘ সদস্যের কারো কারোর
নাম ব্যবহার করলে বাঙলার গ্রামীণ দর্শণকে সম্মান জানানো যেত।
সংঘের অগণিত সদস্য, সম্পাদকেদের অনুমতি নিয়ে বিশ্বেন্দু
নন্দ এইটুকু বলছে, তাঁর চতুর্দশ পূর্বজর ভাগ্যভাল তারমত একজন সাধারণতম নাগরিক, শিল্পীদের
তৈরি সংঘের সঙ্গে মিশে, সংগঠণ করতে গিয়ে বাঙলার ঐতিহ্যকে হাতে ছুঁতে পারছে। বাঙলার
পারম্পরিক শিল্পীদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারার যোগ্যতা তার ছিল না। যদি না সে এই
সংগঠণের সংস্পর্শে আসত। এর
থেকে বড় পাওনা একজন শিল্পবন্ধু-গবেষক-সংগঠকের জীবনে আর কী হতে পারে। আপনাদের
সাংবাদিক হয়ত মেলাক্লান্ত বিশ্বেন্দুকে দেখে তাঁর সহানুভূতির কথা বলতে চেয়েছেন। তাকে বিশ্বেন্দুর
পক্ষে ধন্যবাদ। কখোনো শহুরে আলোয় মুখোশকেই মুখ বলেই ভ্রম হয়।
সংঘ জানে সংগঠণ করা ছেলের বা মেয়ের কারোর হাতেরই মোয়া নয়। সংগঠণ সংগঠই। মেলা মেলাই। সংঘের কেন্দ্রিয় মেলাটি প্রত্যেক বছরও অনুষ্ঠিত হবেই, এই প্রতিশ্রুতি চার
উদ্যোক্তার পক্ষ থেকে সংঘ দিচ্ছে।
যেসব শিল্পের আসার কথা ছিল অথবা যাদের সম্মান দেবে সংঘ
ভেবেছিল, যাঁদের কথা লিখেছেন প্রতিবেদক তাঁদের অনেকেই আসেন নি। বড্ড দেরিতে এই
তথ্যটুকু প্রতিবেদককে জানানো গেল।
প্রথম বছর তো! অনেকেই বেড়ার বাইরে থেকে লক্ষ্য করছেন। হয়ত দেখছেন
সংঘজোটের উত্তররঙ্গ ১২ কতদূর যায়।
আরারও বলি উদ্যোক্তাদের একটা ফোন করলে বোধহয় সঠিক সংবাদ
পাওয়া যেত।
সব শেষে আপনাদের ধন্যবাদ দিয়ে বলি ভিক্ষে চাই না মা,
কুকুর সামলাও।
অলমিতি,
উত্তররঙ্গ
১২র চার উদ্যোক্তার পক্ষে,
বঙ্গীয়
পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘের সারা বাঙলার গ্রামীণ পারম্পরিক সদস্যরা